بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৩২/ আস-সাজদাহ | As-Sajda | سورة السجدة আয়াতঃ ৩০ মাক্কী
৩২ : ১১ قُلۡ یَتَوَفّٰىكُمۡ مَّلَكُ الۡمَوۡتِ الَّذِیۡ وُكِّلَ بِكُمۡ ثُمَّ اِلٰی رَبِّكُمۡ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۱۱﴾
قل یتوفىكم ملك الموت الذی وكل بكم ثم الی ربكم ترجعون ﴿۱۱﴾
• বল, ‘তোমাদেরকে মৃত্যু দেবে মৃত্যুর ফেরেশতা যাকে তোমাদের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে’।

-আল-বায়ান

• বল, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে, অতঃপর তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।

-তাইসিরুল

• বলঃ তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর মালাক/ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তীত হবে।

-মুজিবুর রহমান

• Say, "The angel of death will take you who has been entrusted with you. Then to your Lord you will be returned."

-Sahih International

১১. বলুন, তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে।(১) তারপর তোমাদের রবের কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

(১) আলোচ্য আয়াতে “মালাকুল মাউত” এক বচনে বর্ণনা করা হয়েছে, অথচ অপর আয়াতে রয়েছে “ফেরেশতাগণ যাদের প্রাণ বিয়োগ ঘটায়।” [সূরা আল-আনআমঃ ৬১] এতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, “মালাকুল মাউত” একাকী এ কাজ সম্পন্ন করেন না; বহু ফেরেশতা তাঁর অধীনে এ কাজে অংশগ্রহণ করেন। [কুরতুবী, আদওয়াউল-বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) বল, ‘মৃত্যুর ফিরিশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে, যাকে তোমাদের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।[1] অবশেষে তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে আনা হবে।’

[1] অর্থাৎ, তাঁর কাজই এই যে, যখন তোমাদের মৃত্যুর সময় হবে, তখন সে এসে আত্মা হরণ করবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১২ وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الۡمُجۡرِمُوۡنَ نَاكِسُوۡا رُءُوۡسِهِمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ ؕ رَبَّنَاۤ اَبۡصَرۡنَا وَ سَمِعۡنَا فَارۡجِعۡنَا نَعۡمَلۡ صَالِحًا اِنَّا مُوۡقِنُوۡنَ ﴿۱۲﴾
و لو تری اذ المجرمون ناكسوا رءوسهم عند ربهم ربنا ابصرنا و سمعنا فارجعنا نعمل صالحا انا موقنون ﴿۱۲﴾
• আর যদি তুমি দেখতে, যখন অপরাধীরা তাদের রবের সামনে মাথানত হয়ে থাকবে! (তারা বলবে) ‘হে আমাদের রব, আমরা দেখেছি ও শুনেছি, কাজেই আমাদেরকে পুনরায় পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী’।

-আল-বায়ান

• তুমি যদি দেখতে যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে (আর বলবে), হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম; কাজেই আমাদেরকে আবার পাঠিয়ে দিন, আমরা ভাল কাজ করব, আমরা (এখন) দৃঢ় বিশ্বাসী।

-তাইসিরুল

• এবং হায়! তুমি যদি দেখতে! যখন অপরাধীরা তাদের রবের সামনে অধোবদন হয়ে বলবেঃ হে আমাদের রাবব! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম; এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ করুন, আমরা সৎ কাজ করব, আমরাতো দৃঢ় বিশ্বাসী।

-মুজিবুর রহমান

• If you could but see when the criminals are hanging their heads before their Lord, [saying], "Our Lord, we have seen and heard, so return us [to the world]; we will work righteousness. Indeed, we are [now] certain."

-Sahih International

১২. আর আপনি যদি দেখতেন! যখন অপরাধীরা তাদের রবের নিকট অবনত মস্তকে বলবে, হে আমাদের রব! আমরা দেখলাম ও শুনলাম, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ফেরত পাঠান, আমরা সৎকাজ করব, নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী।(১)

(১) অন্য আয়াতে আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তাদেরকে যদি ফেরৎ দেয়া হত, তবে তারা পুনরায় আল্লাহর দ্বীনের উপর মিথ্যারোপ করত। আল্লাহ বলেন, “আপনি যদি দেখতে পেতেন যখন তাদেরকে আগুনের উপর দাঁড় করান হবে তখন তারা বলবে, হায়! যদি আমাদেরকে ফেরত পাঠান হত, আর আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ না করতাম এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। বরং আগে তারা যা গোপন করত তা এখন তাদের কাছে প্ৰকাশ হয়ে গিয়েছে। আর তারা আবার ফিরে গেলেও তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল আবার তারা তাই করত এবং নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।” [সূরা আল-আন’আম: ২৭–২৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) যদি তুমি দেখতে! অপরাধীরা যখন তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে মাথা নত করে[1] বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম; [2] এখন তুমি আমাদের পুনরায় (পৃথিবীতে) পাঠিয়ে দাও, আমরা সৎকাজ করব। নিশ্চয়ই আমরা (এখন) দৃঢ় বিশ্বাসী।’ [3]

[1] অর্থাৎ, নিজেদের কুফরী, শিরক এবং অবাধ্যতা দরুন লজ্জিত হওয়ার কারণে।

[2] অর্থাৎ, যা মিথ্যা মনে করতাম, তা দেখলাম এবং যা অস্বীকার করতাম, তা শুনলাম। অথবা তোমার শাস্তির হুমকির সত্যতা দেখলাম এবং পয়গম্বরগণের সত্যতা শুনলাম। কিন্তু সেই সময়কার দেখা ও শোনা কোন কাজে আসবে না।

[3] এখন দৃঢ় বিশ্বাস করলেও লাভ কি? এখন তো আল্লাহর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে, যা ভোগ করতেই হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১৩ وَ لَوۡ شِئۡنَا لَاٰتَیۡنَا كُلَّ نَفۡسٍ هُدٰىهَا وَ لٰكِنۡ حَقَّ الۡقَوۡلُ مِنِّیۡ لَاَمۡلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۳﴾
و لو شئنا لاتینا كل نفس هدىها و لكن حق القول منی لاملـٔن جهنم من الجنۃ و الناس اجمعین ﴿۱۳﴾
• আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দান করতাম। কিন্তু আমার কথাই সত্যে পরিণত হবে যে, ‘নিশ্চয় আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব’।

-আল-বায়ান

• আমি যদি ইচ্ছে করতাম তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎ পথে পরিচালিত করতাম। কিন্তু আমার (এ) কথা অবশ্যই সত্য প্রতিপন্ন হবেঃ আমি নিশ্চয়ই জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ মিলিয়ে পূর্ণ করব।

-তাইসিরুল

• আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎ পথে পরিচালিত করতে পারতাম; কিন্তু আমার এ কথা অবশ্যই সত্যঃ আমি নিশ্চয়ই জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব।

-মুজিবুর রহমান

• And if We had willed, We could have given every soul its guidance, but the word from Me will come into effect [that] "I will surely fill Hell with jinn and people all together.

-Sahih International

১৩. আর আমরা ইচ্ছে করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হেদায়াত দিতাম(১); কিন্তু আমার পক্ষ থেকে এ কথা অবশ্যই সাব্যস্ত যে, আমি নিশ্চয় কতেক জিন ও মানুষের সমন্বয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব।

(১) কাতাদাহ বলেন, যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তারা সবাই ঈমান আনত। আর যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তাদের উপর আসমান থেকে এমন কোন নিদর্শন নাযিল করতেন, যা দেখার পর তারা সবাই সেটার সামনে মাথা নত করে দিত। কিন্তু তিনি জোর করে ঈমানে নিয়ে আসতে চান না। কারণ, তাঁর কাছ থেকে তাদের উপর একটি বাণী সত্য হয়েছে যে, তিনি তাদের দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করবেন। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎপথে পরিচালিত করতাম।[1] কিন্তু আমার এ কথা যথার্থ সত্য যে, আমি নিশ্চয়ই মানব ও দানব উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব। [2]

[1] অর্থাৎ, পৃথিবীতে; কিন্তু সে হিদায়াত (সৎপথে পরিচালনা) জোরপূর্বক হতো, যাতে পরীক্ষার সুযোগ হতো না।

[2] অর্থাৎ, মানুষ ও জিনের মধ্যে যারা জাহান্নামে যাবে, তাদের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করার ব্যাপারে আমার কথার সত্যতা প্রমাণ হয়ে গেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১৪ فَذُوۡقُوۡا بِمَا نَسِیۡتُمۡ لِقَآءَ یَوۡمِكُمۡ هٰذَا ۚ اِنَّا نَسِیۡنٰكُمۡ وَ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡخُلۡدِ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۴﴾
فذوقوا بما نسیتم لقآء یومكم هذا انا نسینكم و ذوقوا عذاب الخلد بما كنتم تعملون ﴿۱۴﴾
• কাজেই তোমরা তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতকে যে ভুলে গিয়েছিলে, তার স্বাদ তোমরা আস্বাদন কর। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ভুলে গিয়েছি, আর তোমরা যা করতে, তার জন্য তোমরা স্থায়ী আযাব ভোগ কর।

-আল-বায়ান

• কাজেই (শাস্তির) স্বাদ গ্রহণ কর, কেননা এ দিনের সাক্ষাৎকে তোমরা ভুলে গিয়েছিলে, আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেছি। তোমরা চিরস্থায়ী শাস্তি আস্বাদন করতে থাক, তোমরা যা করছিলে তার কারণে।

-তাইসিরুল

• এখন শাস্তি আস্বাদন কর, কারণ আজকের এই সাক্ষাৎকারের কথা তোমরা বিস্মৃত হয়েছিলে। আমিও তোমাদেরকে বিস্মৃত হলাম, তোমরা যা করতে তজ্জন্য তোমরা স্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাক।

-মুজিবুর রহমান

• So taste [punishment] because you forgot the meeting of this, your Day; indeed, We have [accordingly] forgotten you. And taste the punishment of eternity for what you used to do."

-Sahih International

১৪. কাজেই শাস্তি আস্বাদন কর, কারণ তোমাদের এ দিনের সাক্ষাতের কথা তোমরা ভুলে গিয়েছিলে। আমরাও তোমাদেরকে পরিত্যাগ করলাম।(১) আর তোমরা যা আমল করতে তার জন্য তোমরা স্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাক।

(১) এখানে نسي শব্দের অর্থ পরিত্যাগ করা, ছেড়ে যাওয়া। আরবী ভাষায় এ শব্দটি ভুলে যাওয়া, ছেড়ে দেয়া এ দুটি অর্থেই ব্যবহৃত হয়। [তাবারী; কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) সুতরাং (ওদেরকে বলা হবে,) তোমরা শাস্তি আস্বাদন কর। কারণ, আজকের এ সাক্ষাতের কথা তোমরা ভুলে গিয়েছিলে। আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেছি।[1] তোমরা যা করতে তার জন্য তোমরা চিরকালের শাস্তি ভোগ করতে থাক।

[1] অর্থাৎ, যেমন তোমরা পৃথিবীতে আমাকে ভুলে ছিলে, তেমনি আজ আমি তোমাদের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করব। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা কিছু ভুলেন না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১৫ اِنَّمَا یُؤۡمِنُ بِاٰیٰتِنَا الَّذِیۡنَ اِذَا ذُكِّرُوۡا بِهَا خَرُّوۡا سُجَّدًا وَّ سَبَّحُوۡا بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَ هُمۡ لَا یَسۡتَكۡبِرُوۡنَ ﴿ٛ۱۵﴾ (سُجود‎‎)
انما یؤمن بایتنا الذین اذا ذكروا بها خروا سجدا و سبحوا بحمد ربهم و هم لا یستكبرون ﴿ٛ۱۵﴾ (سجود‎‎)
• আমার আয়াতসমূহ কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ করে। আর তারা অহঙ্কার করে না। [সাজদাহ] ۩

-আল-বায়ান

• আমার নিদর্শনাবলীতে কেবল তারাই বিশ্বাস করে যাদেরকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আর তারা অহংকার করে না। [সাজদাহ] ۩

-তাইসিরুল

• শুধু তারাই আমার নিদর্শনাবলী বিশ্বাস করে যারা ওর দ্বারা উপদিষ্ট হলে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করেনা। [সাজদাহ] ۩

-মুজিবুর রহমান

• Only those believe in Our verses who, when they are reminded by them, fall down in prostration and exalt [Allah] with praise of their Lord, and they are not arrogant.

-Sahih International

১৫. শুধু তারাই আমাদের আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, যারা সেটার দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের সপ্ৰশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা অহংকার করে না। [সাজদাহ] ۩

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহ বিশ্বাস করে,[1] যাদেরকে ওর দ্বারা উপদেশ দেওয়া হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে[2] এবং তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে[3] এবং অহংকার করে না। [4] [সাজদাহ] ۩

[1] অর্থাৎ, তা সত্য বলে মানে ও তার দ্বারা উপকৃত হয়।

[2] অর্থাৎ আল্লাহর আয়াতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাঁর প্রতাপ ও শাস্তিকে ভয় করে।

[3] অর্থাৎ, প্রতিপালককে ঐ সকল জিনিস থেকে পবিত্র ঘোষণা করে, যা তাঁর সত্তার জন্য শোভনীয় নয় এবং তার সাথে সাথে তাঁর নিয়ামতের উপর তাঁর প্রশংসা বর্ণনা করে থাকে; যার মধ্যে সর্ববৃহৎ ও পূর্ণাঙ্গ নিয়ামত হল ঈমানের প্রতি হিদায়াত। অর্থাৎ তারা সিজদাতে (سُبحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه) (سُبحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى وَبِحَمْدِه) ইত্যাদি পড়ে।

[4] অর্থাৎ, আনুগত্য ও মান্য করার পথ অবলম্বন করে; মূর্খ ও কাফেরদের মত অহংকার করে না। কারণ আল্লাহর ইবাদত থেকে অহংকারবশতঃ বিরত থাকা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ) অর্থাৎ, যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিন ৬০ আয়াত) যার ফলে ঈমানদারগণের অবস্থা তাদের বিপরীত হয়ে থাকে; তাঁরা আল্লাহর সামনে সর্বাবস্থায় নিজেকে নগণ্য, ছোট, মিসকীন ও বিনয়ী প্রকাশ করে। ---- (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১৬ تَتَجَافٰی جُنُوۡبُهُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا ۫ وَّ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿۱۶﴾
تتجافی جنوبهم عن المضاجع یدعون ربهم خوفا و طمعا و مما رزقنهم ینفقون ﴿۱۶﴾
• তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।

-আল-বায়ান

• তারা তাদের (দেহের) পার্শ্বগুলো বিছানা থেকে আলাদা ক’রে (জাহান্নামের) ভীতি ও (জান্নাতের) আশা নিয়ে তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তাত্থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে।

-তাইসিরুল

• তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের রাববকে ডাকে আশায় ও আশংকায়, এবং তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি তা হতে তারা ব্যয় করে।

-মুজিবুর রহমান

• They arise from [their] beds; they supplicate their Lord in fear and aspiration, and from what We have provided them, they spend.

-Sahih International

১৬. তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা হতে দূরে থাকে(১) তারা তাদের রবকে ডাকে আশংকা ও আশায়(২) এবং আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

(১) অর্থাৎ আয়েশ-আরাম করে রাত কাটাবার পরিবর্তে তারা নিজেদের রবের ইবাদাত করে। তাদের অবস্থাএমন সবদুনিয়াপূজারীদের মতো নয় যাদের দিনের পরিশ্রমের কষ্ট দূর করার জন্য রাতে নাচ-গান, শরাব পান ও খেলা তামাশার মতো আমোদ প্রমোদের প্রয়োজন হয়। এর পরিবর্তে তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, সারা দিন নিজেদের দায়িত্ব পালন করে কাজ শেষে এসে দাঁড়ায় তারা নিজেদের রবের সামনে। তাঁকে স্মরণ করে রাত কাটিয়ে দেয়। তাঁর ভয়ে কাঁপতে থাকে এবং তাঁর কাছেই নিজেদের সমস্ত আশা-আকাংখা সমৰ্পণ করে। [দেখুন: মুয়াস্‌সার, কুরতুবী, বাগভী]

(২) আয়াতে মুমিনগণের এক গুণ এই বলে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদের শরীরের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে এবং শয্যা পরিত্যাগ করে আল্লাহর যিকর ও দো'আয় আত্মনিয়োগ করে। কেননা, এরা মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তিকে ভয় করে এবং তাঁর করুণা ও পূণ্যের আশা করে থাকে। আশা-নিরাশাপূর্ণ এ অবস্থা তাদেরকে যিকর ও দো'আর জন্য ব্যাকুল করে রাখে। অধিকাংশ মুফাসসিরগণের মতে শয্যা পরিত্যাগ করে যিকর ও দো আয় আত্মনিয়োগ করার অর্থ তাহাজ্জুদ ও নফল সালাত যা ঘুম থেকে উঠার পর গভীর রাতে পড়া হয়। হাদীসের অপরাপর বর্ণনা থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়।

মা'আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা নবীজীর সঙ্গে সফরে ছিলাম, সফরকালে একদিন আমি আরজ করলাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে এমন কোন আমল বলে দিন যার মাধ্যমে আমি জান্নাত লাভ করতে পারি এবং জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি পেতে পারি। তিনি বললেন, তুমি তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বস্তু প্রার্থনা করেছ। কিন্তু আল্লাহ পাক যার জন্যে তা সহজ করে দেন তার পক্ষে তা লাভ করা অতি সহজ। অতঃপর বললেন, সে আমল এই যে, আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোন অংশীদার স্থাপন করবে না। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্ৰদান করবে, সাওম রাখবে এবং বায়তুল্লাহ শরীফের হাজ সম্পন্ন করবে। অতঃপর তিনি বললেন, এসো, তোমাকে পুণ্য দ্বারের সন্ধান দিয়ে দেই, (তা এই যে,) সাওম হচ্ছে ঢাল স্বরূপ (যা শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়)। আর সদকা মানুষের পাপানল নির্বাপিত করে দেয়। অনুরূপভাবে মানুষের গভীর রাতের সালাত; এই বলে কোরআন মজীদের উল্লেখিত আয়াত তেলাওয়াত করেন। [তিরমিযী: ২৬১৬, ইবনে মাজাহ: ৩৯৭৩, মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৩১]

সাহাবী আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু, প্রখ্যাত তাবেয়ী কাতাদাহ ও যাহহাক রাহেমাহুমাল্লাহ বলেন যে, সেসব লোকও শয্যা থেকে শরীরের পার্শ্বদেশ পৃথক হয়ে থাকা গুণের অধিকারী, যারা এশা ও ফজর উভয় সালাত জামা'আতের সাথে আদায় করেন। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, উল্লেখিত আয়াত যারা এশার সালাতের পূর্বে শয্যা গ্ৰহণ না করে, এশার জামাতের জন্য প্রতীক্ষারত থাকেন, তাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। [আবু দাউদ: ১৩২১, তিরমিযী: ৩১৯৬] ইবনে-কাসীর ও অন্যান্য তাফসীরকারগণ বলছেন যে, এসব বক্তব্যের মধ্যে পরস্পর কোন বিরোধ নেই। প্রকৃতপক্ষে এরা সকলেই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে শেষরাতের সালাতই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) তারা শয্যা ত্যাগ করে[1] আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে[2] এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে। [3]

[1] অর্থাৎ রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে, তওবা ও ইস্তিগফার করে, আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা এবং দু’আ ও রোদন করে।

[2] অর্থাৎ, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের আশাও রাখে এবং তাঁর ক্রোধ ও শাস্তির ব্যাপারে ভীত-শঙ্কিতও হয়। শুধু আশা আর আশা রাখে না যে, আমলই ত্যাগ করে বসে। (যেমন যারা আমল করে না এবং যারা নোংরা আমল করে তাদের অভ্যাস।) আর তাঁর শাস্তিকে এমন ভয় করে না যে, আল্লাহর রহমত থেকে একেবারে নিরাশ হয়ে যায়। কারণ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়াও কুফরী ও ভ্রষ্টতা।

[3] ‘দান করে’ বলতে ওয়াজিব স্বাদকা (যাকাত) এবং সাধারণ দান উভয়ই শামিল। ঈমানদারগণ নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী উভয়কেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১৭ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٌ مَّاۤ اُخۡفِیَ لَهُمۡ مِّنۡ قُرَّۃِ اَعۡیُنٍ ۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۷﴾
فلا تعلم نفس ما اخفی لهم من قرۃ اعین جزآء بما كانوا یعملون ﴿۱۷﴾
• অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।

-আল-বায়ান

• কোন ব্যক্তিই (এখন) জানে না চোখ জুড়ানো কী (জিনিস) তাদের জন্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কাজের পুরস্কার হিসেবে।

-তাইসিরুল

• কেহই জানেনা, তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি কি প্রতিদান লুকায়িত রয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।

-মুজিবুর রহমান

• And no soul knows what has been hidden for them of comfort for eyes as reward for what they used to do.

-Sahih International

১৭. অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!(১)

(১) হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেন, আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আমিএমন সবজিনিস তৈরী করে রেখেছি যা কখনো কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষ কোনদিন তা কল্পনাও করতে পারে না।” [বুখারী: ৪৭৭৯; মুসলিম: ১৮৯, ২৪২৪]

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌কে বললেন, জান্নাতে কার অবস্থানগত মর্যাদা সবচেয়ে সামান্য হবে? তিনি বললেন, সে এক ব্যক্তি, তাকে সমস্ত জান্নাতীরা জান্নাতে প্ৰবেশ করার পরে জান্নাতের নিকট নিয়ে আসা হবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্ৰবেশ কর। সে বলবে, হে রব! সবাই তাদের স্থান নিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের যা নেবার তা নিয়েছে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি কি সন্তুষ্ট হবে, যদি তোমাকে দুনিয়ার বাদশাদের রাজত্বের মত রাজত্ব দেয়া হয়? সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। তখন তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তা-ই রইল, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ। পঞ্চম বারে আল্লাহ বলবেন, তুমি কি সন্তুষ্ট হয়েছ? সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। তখন তিনি বলবেন, এটা তোমার জন্য, তাছাড়া অনুরূপ দশগুণ। আর তোমার জন্য থাকবে তাতে যা তোমার মন চায়, তোমার চোখ শান্তি করে, সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। সে বলবে, হে রব! (এই যদি আমার অবস্থা হয়) তবে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারীর কি অবস্থা? তিনি বলবেন, তাদের জন্য আমি নিজ হাতে তাদের সম্মানের বীজ বপন করেছি, আর তাতে আমার মোহর মেরে দিয়েছি। সুতরাং কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি, আর কোন মানুষের মনে তা উদিত হয়নি। তারপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [মুসলিম: ১৮৯]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ জান্নাতে যাবে নেয়ামত প্রাপ্ত হবে, সে কোনদিন নিরাশ হবে না, তার কাপড় পুরনো হবে না, আর তার যৌবন নিঃশেষ হবে না।” [মুসলিম: ২৮৩৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ[1] নয়ন-প্রীতিকর কি (পুরস্কার) লুকিয়ে রাখা হয়েছে।[2]

[1] এতে বুঝা যায় যে, আল্লাহর রহমতের অধিকারী হতে হলে নেক আমল অপরিহার্য।

[2] نفسٌ শব্দটি ‘নাকিরাহ’ যাতে ব্যাপকতার অর্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ঐ সকল নিয়ামত যা আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত মু’মিনদের জন্য লুক্কায়িত রেখেছেন, যা দেখে তাঁদের চোখ জুড়িয়ে যাবে, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। এর ব্যাখ্যা নবী (সাঃ) হাদীসে কুদসীতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য ঐ সকল বস্তু প্রস্তুত রেখেছি যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের কল্পনায়ও তা আসেনি।’’

(সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা সিজদাহ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১৮ اَفَمَنۡ كَانَ مُؤۡمِنًا كَمَنۡ كَانَ فَاسِقًا ؕؔ لَا یَسۡتَوٗنَ ﴿۱۸﴾؃
افمن كان مؤمنا كمن كان فاسقا لا یستوٗن ﴿۱۸﴾؃
• যে ব্যক্তি মুমিন সে কি ফাসিক ব্যক্তির মত? তারা সমান নয়।

-আল-বায়ান

• তবে কি, মু’মিন ব্যক্তি পাপাচারীর ন্যায় (হতে পারে)? তারা সমান নয়।

-তাইসিরুল

• তাহলে কি যে ব্যক্তি মু’মিন হয়েছে সে পাপাচারীর ন্যায়? তারা সমান নয়।

-মুজিবুর রহমান

• Then is one who was a believer like one who was defiantly disobedient? They are not equal.

-Sahih International

১৮. সুতরাং যে ব্যাক্তি মুমিন, সে কি তার ন্যায় যে ফাসেক?(১) তারা সমান নয়।

(১) এখানে মুমিন ও ফাসেকের দুটি বিপরীতমুখী পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। মুমিন বলতে এমন লোক বুঝানো হয়েছে, যে আল্লাহকে নিজের রব ও একমাত্র উপাস্য মেনে নিয়ে আল্লাহ তাঁর নবী-রাসূলদের মাধ্যমে যে আইন-কানুন পাঠিয়েছেন তার আনুগত্য করে। পক্ষান্তরে ফাসেক হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যে ফাসেকী আনুগত্য থেকে বের হয়ে আসা বা অন্যকথায় বিদ্রোহ, বল্লাহীন স্বেচ্ছাচারী মনোবৃত্তি ও আল্লাহ ছাড়া অন্য সত্তার আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করে। [দেখুন: তাবারী, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) বিশ্বাসী কি সত্যত্যাগীর মতই? [1] ওরা কখনও সমান হতে পারে না।

[1] এটা অস্বীকৃতি বাচক জিজ্ঞাসা। অর্থাৎ, আল্লাহর নিকট বিশ্বাসী মু’মিন ও সত্যত্যাগী কাফের সমান নয়; বরং তাদের উভয়ের মাঝে বিরাট পার্থক্য ও ব্যবধান হবে। মু’মিন আল্লাহর মেহমান হয়ে সম্মানের পাত্র হবে। আর ফাসেক ও কাফের শাস্তির শিকলে বাঁধা অবস্থায় জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে জ্বলতে থাকবে। এ মর্মে অন্য স্থানেও বর্ণনা রয়েছে। যেমন সূরা জাসিয়া১২, সূরা স্বাদ ২৮, সূরা হাশর ২০ আয়াত ইত্যাদি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ১৯ اَمَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمۡ جَنّٰتُ الۡمَاۡوٰی ۫ نُزُلًۢا بِمَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۹﴾
اما الذین امنوا و عملوا الصلحت فلهم جنت الماوی نزلا بما كانوا یعملون ﴿۱۹﴾
• যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের বাসস্থান হবে জান্নাত, তারা যা করত তার আপ্যায়ন হিসেবে।

-আল-বায়ান

• যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদের বাসস্থান হবে জান্নাত, তারা যে কাজ করত তার আপ্যায়ন স্বরূপ।

-তাইসিরুল

• যারা ঈমান আনে এবং সৎ কাজ করে তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ তাদের আপ্যায়নের জন্য জান্নাত হবে তাদের বাসস্থল।

-মুজিবুর রহমান

• As for those who believed and did righteous deeds, for them will be the Gardens of Refuge as accommodation for what they used to do.

-Sahih International

১৯. যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতের বাসস্থান।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) যারা বিশ্বাস করে সৎকাজ করে, তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের আপ্যায়নের জন্য জান্নাত হবে তাদের বাসস্থান।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩২ : ২০ وَ اَمَّا الَّذِیۡنَ فَسَقُوۡا فَمَاۡوٰىهُمُ النَّارُ ؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوۡۤا اَنۡ یَّخۡرُجُوۡا مِنۡهَاۤ اُعِیۡدُوۡا فِیۡهَا وَ قِیۡلَ لَهُمۡ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ النَّارِ الَّذِیۡ كُنۡتُمۡ بِهٖ تُكَذِّبُوۡنَ ﴿۲۰﴾
و اما الذین فسقوا فماوىهم النار كلما ارادوا ان یخرجوا منها اعیدوا فیها و قیل لهم ذوقوا عذاب النار الذی كنتم بهٖ تكذبون ﴿۲۰﴾
• আর যারা পাপকাজ করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।

-আল-বায়ান

• আর যারা পাপাচার করে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা তাত্থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে বলা হবে- তোমরা অগ্নির শাস্তি আস্বাদন কর যা তোমরা মিথ্যে ব’লে অস্বীকার করতে।

-তাইসিরুল

• আর যারা পাপাচার করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম; যখনই তারা জাহান্নাম হতে বের হতে চাবে তখনই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে তাতে এবং তাদেরকে বলা হবেঃ যে আগুনের শাস্তিকে তোমরা মিথ্যা বলতে তা আস্বাদন কর।

-মুজিবুর রহমান

• But as for those who defiantly disobeyed, their refuge is the Fire. Every time they wish to emerge from it, they will be returned to it while it is said to them, "Taste the punishment of the Fire which you used to deny."

-Sahih International

২০. আর যারা নাফরমানী করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে আগুনের শাস্তিকে তোমরা মিথ্যারোপ করতে, তা আস্বাদন কর।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) আর যারা সত্যত্যাগ করেছে, তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম; যখনই ওরা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই ওদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে[1] এবং ওদেরকে বলা হবে,[2] ‘যে অগ্নি-শাস্তিকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে তোমরা তা আস্বাদন কর।’

[1] অর্থাৎ, দোযখের শাস্তির কঠিনতা ও ভয়াবহতা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বাইরে বের হয়ে আসতে চাইবে। তখন দোযখের ফিরিশতাগণ তাদেরকে পুনরায় দোযখের গভীরতায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবেন।

[2] এটা ফিরিশতাগণ বলবেন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে আওয়াজ আসবে। সে যাই হোক, সেখানে মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার যে ব্যবস্থা আছে, তা অস্পষ্ট নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »