৩২ সূরাঃ আস-সাজদাহ | As-Sajda | سورة السجدة - আয়াতঃ ১৬
৩২:১৬ تَتَجَافٰی جُنُوۡبُهُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا ۫ وَّ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿۱۶﴾
تتجافی جنوبهم عن المضاجع یدعون ربهم خوفا و طمعا ۫ و مما رزقنهم ینفقون ۱۶

তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। আল-বায়ান

তারা তাদের (দেহের) পার্শ্বগুলো বিছানা থেকে আলাদা ক’রে (জাহান্নামের) ভীতি ও (জান্নাতের) আশা নিয়ে তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তাত্থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। তাইসিরুল

তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের রাববকে ডাকে আশায় ও আশংকায়, এবং তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি তা হতে তারা ব্যয় করে। মুজিবুর রহমান

They arise from [their] beds; they supplicate their Lord in fear and aspiration, and from what We have provided them, they spend. Sahih International

১৬. তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা হতে দূরে থাকে(১) তারা তাদের রবকে ডাকে আশংকা ও আশায়(২) এবং আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

(১) অর্থাৎ আয়েশ-আরাম করে রাত কাটাবার পরিবর্তে তারা নিজেদের রবের ইবাদাত করে। তাদের অবস্থা এমনসব দুনিয়াপূজারীদের মতো নয় যাদের দিনের পরিশ্রমের কষ্ট দূর করার জন্য রাতে নাচ-গান, শরাব পান ও খেলা তামাশার মতো আমোদ প্রমোদের প্রয়োজন হয়। এর পরিবর্তে তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, সারা দিন নিজেদের দায়িত্ব পালন করে কাজ শেষে এসে দাঁড়ায় তারা নিজেদের রবের সামনে। তাঁকে স্মরণ করে রাত কাটিয়ে দেয়। তাঁর ভয়ে কাঁপতে থাকে এবং তাঁর কাছেই নিজেদের সমস্ত আশা-আকাংখা সমৰ্পণ করে। [দেখুন: মুয়াস্‌সার, কুরতুবী, বাগভী]

(২) আয়াতে মুমিনগণের এক গুণ এই বলে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদের শরীরের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে এবং শয্যা পরিত্যাগ করে আল্লাহর যিকর ও দো'আয় আত্মনিয়োগ করে। কেননা, এরা মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তিকে ভয় করে এবং তাঁর করুণা ও পূণ্যের আশা করে থাকে। আশা-নিরাশাপূর্ণ এ অবস্থা তাদেরকে যিকর ও দো'আর জন্য ব্যাকুল করে রাখে। অধিকাংশ মুফাসসিরগণের মতে শয্যা পরিত্যাগ করে যিকর ও দো আয় আত্মনিয়োগ করার অর্থ তাহাজ্জুদ ও নফল সালাত যা ঘুম থেকে উঠার পর গভীর রাতে পড়া হয়। হাদীসের অপরাপর বর্ণনা থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়।

মা'আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা নবীজীর সঙ্গে সফরে ছিলাম, সফরকালে একদিন আমি আরজ করলাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে এমন কোন আমল বলে দিন যার মাধ্যমে আমি জান্নাত লাভ করতে পারি এবং জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি পেতে পারি। তিনি বললেন, তুমি তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বস্তু প্রার্থনা করেছ। কিন্তু আল্লাহ পাক যার জন্যে তা সহজ করে দেন তার পক্ষে তা লাভ করা অতি সহজ। অতঃপর বললেন, সে আমল এই যে, আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোন অংশীদার স্থাপন করবে না। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্ৰদান করবে, সাওম রাখবে এবং বায়তুল্লাহ শরীফের হাজ সম্পন্ন করবে। অতঃপর তিনি বললেন, এসো, তোমাকে পুণ্য দ্বারের সন্ধান দিয়ে দেই, (তা এই যে,) সাওম হচ্ছে ঢাল স্বরূপ (যা শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়)। আর সদকা মানুষের পাপানল নির্বাপিত করে দেয়। অনুরূপভাবে মানুষের গভীর রাতের সালাত; এই বলে কোরআন মজীদের উল্লেখিত আয়াত তেলাওয়াত করেন। [তিরমিযী: ২৬১৬, ইবনে মাজাহ: ৩৯৭৩, মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৩১]

সাহাবী আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু, প্রখ্যাত তাবেয়ী কাতাদাহ ও যাহহাক রাহেমাহুমাল্লাহ বলেন যে, সেসব লোকও শয্যা থেকে শরীরের পার্শ্বদেশ পৃথক হয়ে থাকা গুণের অধিকারী, যারা এশা ও ফজর উভয় সালাত জামা'আতের সাথে আদায় করেন। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, উল্লেখিত আয়াত যারা এশার সালাতের পূর্বে শয্যা গ্ৰহণ না করে, এশার জামাতের জন্য প্রতীক্ষারত থাকেন, তাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। [আবু দাউদ: ১৩২১, তিরমিযী: ৩১৯৬] ইবনে-কাসীর ও অন্যান্য তাফসীরকারগণ বলছেন যে, এসব বক্তব্যের মধ্যে পরস্পর কোন বিরোধ নেই। প্রকৃতপক্ষে এরা সকলেই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে শেষরাতের সালাতই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) তারা শয্যা ত্যাগ করে[1] আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে[2] এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে। [3]

[1] অর্থাৎ রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে, তওবা ও ইস্তিগফার করে, আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা এবং দু’আ ও রোদন করে।

[2] অর্থাৎ, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের আশাও রাখে এবং তাঁর ক্রোধ ও শাস্তির ব্যাপারে ভীত-শঙ্কিতও হয়। শুধু আশা আর আশা রাখে না যে, আমলই ত্যাগ করে বসে। (যেমন যারা আমল করে না এবং যারা নোংরা আমল করে তাদের অভ্যাস।) আর তাঁর শাস্তিকে এমন ভয় করে না যে, আল্লাহর রহমত থেকে একেবারে নিরাশ হয়ে যায়। কারণ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়াও কুফরী ও ভ্রষ্টতা।

[3] ‘দান করে’ বলতে ওয়াজিব স্বাদকা (যাকাত) এবং সাধারণ দান উভয়ই শামিল। ঈমানদারগণ নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী উভয়কেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান