আল্লাহর কিতাব বিষয়ক আয়াতসমূহ ২৬৩ টি
৪৪ আদ-দুখান
৪৪: ৫৮ فَاِنَّمَا یَسَّرۡنٰهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمۡ یَتَذَكَّرُوۡنَ ﴿۵۸﴾

অতঃপর আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। আল-বায়ান

আমি তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। তাইসিরুল

আমি তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। মুজিবুর রহমান

And indeed, We have eased the Qur'an in your tongue that they might be reminded. Sahih International

৫৮. অতঃপর নিশ্চয় আমরা আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্ৰহণ করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) আমি তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৫ আল-জাসিয়া
৪৫: ২ تَنۡزِیۡلُ الۡكِتٰبِ مِنَ اللّٰهِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَكِیۡمِ ﴿۲﴾

মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে এ কিতাব নাযিলকৃত। আল-বায়ান

এ কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে। তাইসিরুল

এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। মুজিবুর রহমান

The revelation of the Book is from Allah, the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

২. এ কিতাব মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকে নাযিলকৃত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) এ গ্রন্থ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৫ আল-জাসিয়া
৪৫: ১১ هٰذَا هُدًی ۚ وَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمۡ لَهُمۡ عَذَابٌ مِّنۡ رِّجۡزٍ اَلِیۡمٌ ﴿۱۱﴾

এই (কুরআন) হিদায়াত দানকারী। আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে তাদের জন্য রয়েছে অতিশয় যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আল-বায়ান

এ (কুরআন) সঠিক পথের দিশারী। যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য আছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তাইসিরুল

কুরআন সৎ পথের দিশারী; যারা তাদের রবের নিদর্শনাবলী প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য রয়েছে অতিশয় যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। মুজিবুর রহমান

This [Qur'an] is guidance. And those who have disbelieved in the verses of their Lord will have a painful punishment of foul nature. Sahih International

১১. এ কুরআন সৎপথের দিশারী; আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) এ (কুরআন)[1] সৎপথের দিশারী। যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য রয়েছে অতিশয় কষ্টদায়ক শাস্তি। [2]

[1] هٰذَا (এ) অর্থাৎ, কুরআন সৎপথের দিশারী। কারণ, এর অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যই হল মানুষকে কুফরী ও শিরকের অন্ধকার থেকে বের করে ঈমানের আলোয় নিয়ে আসা। তাই এটা যে পূর্ণ হিদায়াত ও সৎপথের দিশারী গ্রন্থ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ থেকে হিদায়াত তো সে-ই পাবে, যে এর জন্য স্বীয় বক্ষকে উন্মুক্ত করে দেবে। অন্যথা সে ব্যক্তি কিভাবে পথ পাবে, যে পথের খোঁজই করে না?

[2] أَلِيْمٌ হল عَذَابٌ এর ‘সিফাত’ (বিশেষণ)। কেউ কেউ একে رِجْزٌ এর সিফাত বলেছেন। رِجْزٌ মানে عَذَابٌ شَدِيْدٌ (কঠিন শাস্তি)।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৫ আল-জাসিয়া
৪৫: ১৬ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡكِتٰبَ وَ الۡحُكۡمَ وَ النُّبُوَّۃَ وَ رَزَقۡنٰهُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ وَ فَضَّلۡنٰهُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿ۚ۱۶﴾

আর আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাব, প্রজ্ঞা ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদের রিয্ক প্রদান করেছিলাম উত্তম বস্তু থেকে এবং দিয়েছিলাম তাদেরকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব। আল-বায়ান

আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব, রাজত্ব ও নুবুওয়াত দিয়েছিলাম আর তাদেরকে দিয়েছিলাম উত্তম রিযক, আর তাদেরকে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। তাইসিরুল

আমিতো বানী ইসরাঈলকে কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছিলাম এবং দিয়েছিলাম শ্রেষ্ঠত্ব বিশ্বজগতের উপর। মুজিবুর রহমান

And We did certainly give the Children of Israel the Scripture and judgement and prophethood, and We provided them with good things and preferred them over the worlds. Sahih International

১৬. আর অবশ্যই আমরা বনী ইসরাঈলকে কিতাব, কর্তৃত্ব(১) ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে রিযিক প্রদান করেছিলাম উত্তম বস্তু হতে, আর দিয়েছিলাম তাদেরকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব।

(১) হুকুম শব্দের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক-কিতাবের জ্ঞান ও উপলব্ধি এবং দ্বীনের অনুভূতি। দুই-কিতাবের অভিপ্রায় অনুসারে কাজ করার কৌশল। তিন-বিভিন্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা। চার-ক্ষমতা বা রাজত্ব। [কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) আমি তো বনী-ইস্রাঈলকে গ্রন্থ, কর্তৃত্ব[1] ও নবুঅত দান করেছিলাম এবং ওদেরকে উত্তম জীবিকা দিয়েছিলাম[2] এবং বিশ্বজগতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। [3]

[1] এখানে كتاب (গ্রন্থ) বলতে তাওরাত। আর حُكم (কর্তৃত্ব) থেকে রাজত্ব ও শাসন-ক্ষমতা অথবা বিবেক ও বিচার করার এমন যোগ্যতা, যা বিবাদ মিটানোর এবং মানুষের মাঝে মীমাংসা করার জন্য জরুরী হয়।

[2] সেই সব উত্তম রুযী ও জীবিকা, যা তাদের জন্য হালাল ছিল এবং এগুলোরই মধ্যে ছিল মান্ন্ ও সালওয়ার অবতরণ।

[3] অর্থাৎ, তদানীন্তন বিশ্বে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৫ আল-জাসিয়া
৪৫: ২০ هٰذَا بَصَآئِرُ لِلنَّاسِ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّقَوۡمٍ یُّوۡقِنُوۡنَ ﴿۲۰﴾

এ কুরআন মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত। আল-বায়ান

এ (কুরআন) মানুষের জন্য জ্ঞানের আলো, আর নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য পথের দিশারী এবং রহমত স্বরূপ। তাইসিরুল

এই কুরআন মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও রাহমাত। মুজিবুর রহমান

This [Qur'an] is enlightenment for mankind and guidance and mercy for a people who are certain [in faith]. Sahih International

২০. একুরআন মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা এবং হেদায়াত ও রহমত এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা নিশ্চিত বিশ্বাস করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) এ (কুরআন) মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল[1] এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও করুণা। [2]

[1] অর্থাৎ, সেই দলীল-সমষ্টি যা দ্বীনের বিধি-বিধান সংবলিত এবং যার সাথে মানুষের যাবতীয় চাহিদা ও প্রয়োজনাদি সম্পৃক্ত। (এটি মানুষের জন্য একটি গাইডবুক ও জীবন-সংবিধান।)

[2] অর্থাৎ, ইহকালে সৎপথ দেখায় এবং পরকালে আল্লাহর করুণার অধিকারী বানায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৬ আল-আহকাফ
৪৬: ২ تَنۡزِیۡلُ الۡكِتٰبِ مِنَ اللّٰهِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَكِیۡمِ ﴿۲﴾

এই কিতাব মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট থেকে নাযিলকৃত। আল-বায়ান

কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে। তাইসিরুল

এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। মুজিবুর রহমান

The revelation of the Book is from Allah, the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

২. এ কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছ থেকে নাযিলকৃত;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) এ কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৬ আল-আহকাফ
৪৬: ১০ قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ كَانَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ وَ كَفَرۡتُمۡ بِهٖ وَ شَهِدَ شَاهِدٌ مِّنۡۢ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ عَلٰی مِثۡلِهٖ فَاٰمَنَ وَ اسۡتَكۡبَرۡتُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۰﴾

বল, তোমরা আমাকে জানাও, যদি এ কুরআন আল্লাহর কাছ থেকে এসে থাকে, আর তোমরা এটাকে অস্বীকার করলে, অথচ বনী ইসরাঈলের একজন সাক্ষী এ ব্যাপারে অনুরূপ সাক্ষ্য দিল। অতঃপর সে ঈমান আনল আর তোমরা অহঙ্কার করলে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হেদায়াত করেন না। আল-বায়ান

বল- তোমরা কি ভেবে দেখেছ যদি এ (কুরআন) আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে আর তা তোমরা প্রত্যাখ্যান কর অথচ এ ধরনের কালাম সম্পর্কে বানী ইসরাঈলের একজন [‘আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাযি.)] সাক্ষ্যও দিয়েছে। সে ঈমান আনল আর তোমরা অহঙ্কার করলে? আল্লাহ যালিম লোকদেরকে সঠিক পথ দেখান না। তাইসিরুল

বলঃ তোমরা ভেবে দেখেছ কি যে, এই কুরআন আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ হয়ে থাকে, আর তোমরা এতে অবিশ্বাস কর, উপরন্ত বানী ইসরাঈলের একজন এর অনুরূপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে এতে বিশ্বাস স্থাপন করল অথচ তোমরা কর ঔদ্ধত্য প্রকাশ, তাহলে তোমাদের পরিণাম কি হবে? আল্লাহ যালিমদেরকে সৎ পথে চালিত করেননা। মুজিবুর রহমান

Say, "Have you considered: if the Qur'an was from Allah, and you disbelieved in it while a witness from the Children of Israel has testified to something similar and believed while you were arrogant...?" Indeed, Allah does not guide the wrongdoing people. Sahih International

১০. বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, যদি এ কুরআন আল্লাহর কাছ থেকে নাযিল হয়ে থাকে এবং তোমরা তার সাথে কুফরী কর, আর বনী ইসরাঈলের একজন অনুরূপ কিতাবের আয়াতের উপর সাক্ষ্য দিয়ে তাতে ঈমান আনল; আর তোমরা ঔদ্ধত্য প্ৰকাশ করলে, (তাহলে তোমাদের পরিণাম কি হবে?) নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।(১)

(১) এ আয়াত এবং সূরা আশ-শু'আরার ১৯৬ ও ১৯৭ নং আয়াতের অর্থ একই রকম। সারমর্ম এই যে, যেসব ইহুদী ও নাসারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেসালাত ও কুরআন অমান্য করে, তারা স্বয়ং তাদের কিতাব সম্পর্কেও অজ্ঞ। ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত ও নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। সে আলেমগণের সাক্ষ্য কি এই মূর্খদের জন্যে যথেষ্ট নয়? এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তোমরা আমার নবুওয়াত দাবিকে ভ্রান্ত এবং কুরআনকে আমার রচনা বল। এর এক জওয়াব পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ বাস্তবে নবী না হয়ে নিজেকে নবী বলে মিথ্যা দাবি করলে তার দুনিয়াতে নিপাত হয়ে যাওয়া জরুরি, যাতে জনসাধারণ প্রতারিত না হয়।

এ জওয়াবই যথেষ্ট, কিন্তু তোমরা যদি না মান তবে এ সম্ভাবনার প্রতিও লক্ষ্য কর যে, আমার দাবি যদি সত্য হয় এবং কুরআন আল্লাহর কিতাব হয়। আর তোমরা একে অমান্য করেই যাও, তবে তোমাদের পরিণতি কি হবে, বিশেষত যখন তোমাদের বনী ইসরাঈলেরই কোন মান্যবার ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, এটা আল্লাহর কিতাব, অতঃপর সে নিজেও মুসলিম হয়ে যায়? এ জ্ঞান লাভের পরও যদি তোমরা জেদ ও অহংকারে অটল থাক, তবে তোমরা গুরুতর শাস্তির যোগ্য হয়ে যাবে। আয়াতে বনী ইসরাঈলের কোন বিশেষ আলেমের নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং এটাও নির্দিষ্ট করা হয়নি যে, এ সাক্ষ্য আয়াত অবতরণের পূর্বেই জনসমক্ষে এসে গেছে, না ভবিষ্যতে আসবে। তাই বনী ইসরাঈলের কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করার ওপর আয়াতের অর্থ নির্ভরশীল নয়।

আল্লাহর বাণীর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, কুরআন তোমাদের সামনে যে শিক্ষা পেশ করছে তা কোন অভিনব জিনিস নয়। পৃথিবীতে প্রথমবারের মত শুধুমাত্র তোমাদের সামনেই তা পেশ করা হয়নি যে, তোমরা ওজর পেশ করে বলবেঃ এ ধরনের কথা তো ইতোপূর্বে মানব জাতির কাছে আর আসেনি। তাই আমরা কি করে তা মানতে পারি। ইতোপূর্বেও এসব শিক্ষা এভাবেই অহীর মাধ্যমে বনী ইসরাঈলদের কাছে তাওরাত ও অন্যান্য আসমানী কিতাব রূপে এসেছিলো। বনী ইসরাঈলদের একজন সাধারণ মানুষও তা মেনে নিয়েছিলো এবং একথা স্বীকার করে নিয়োছিলো যে অহীই হচ্ছে এসব শিক্ষা নাযিল হওয়ার মাধ্যম। তাই অহী এবং এই শিক্ষা দুর্বোধ্য জিনিস তোমরা সে দাবী করতে পার না।

আসল কথা হলো, তোমাদের গর্ব, অহংকার এবং ভিত্তিহীন আত্মম্ভরিতা ঈমানের পথে অন্তরায়। খ্যাতনামা ইহুদী আলেম আবদুল্লাহ ইবন সালামসহ যত ইহুদী ও নাসারা ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন, তারা সবাই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, এ আয়াত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, দাহহাক প্রমুখ তাফসীরবিদগণ তাই বলেছেন। যদিও আবদুল্লাহ ইবনে সালাম এই আয়াত নাযিল হওয়ার পরে মদীনায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপরও এ আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ার পরিপন্থি নয়। এমতাবস্থায় আয়াতটি ভবিষ্যদ্বনি হিসেবে গণ্য হবে। [দেখুন: তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি যে, যদি এ (কুরআন) আল্লাহর নিকট হতে (অবতীর্ণ) হয়ে থাকে, আর তোমরা এতে অবিশ্বাস কর, অথচ বানী ইস্রাঈলের একজন এর অনুরূপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে এতে বিশ্বাস স্থাপন করল, আর তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে,[1] (তাহলে তোমাদের পরিণাম কী হবে?) নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’

[1] বানী-ইস্রাঈলের এই সাক্ষী থেকে কাকে বুঝানো হয়েছে? কেউ বলেন যে, এই শব্দটি জাতি বা সম্প্রদায় অর্থে প্রয়োগ হয়েছে। বানী-ইস্রাঈলের সকল ঈমান আনয়নকারী এর অন্তর্ভুক্ত। কারো মতে সূরাটি মক্কী হওয়ার ফলে মক্কায় অবস্থানকারী কোন এক বানী-ইস্রাঈলী উদ্দিষ্ট হবে। আবার কারো কারো নিকট এ থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে সালামকে বুঝানো হয়েছে এবং তাঁরা এই আয়াতকে মাদানী বলে গণ্য করেন। বুখারী-মুসলিমের বর্ণনা থেকেও এ উক্তির সমর্থন মেলে। (দেখুনঃ সহীহ বুখারী, মানাক্বিবুল আনসার, মুসলিম, ফাযাইলুস সাহাবা) এই কারণে ইমাম শাওকানী এই মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। عَلَى مِثْلِهِ (এর অনুরূপ সম্পর্কে সাক্ষ্য) এর অর্থ হল, তাওরাতের সাক্ষ্য দেওয়া যা আল্লাহর পক্ষ হতে কুরআনের অবতীর্ণ হওয়ার কথা একান্ত ভাবে প্রমাণ করে। কেননা, কুরআনও তাওহীদ (একত্ব) ও পরকাল সাব্যস্ত করার ব্যাপারে তাওরাতের মতনই। অর্থাৎ, কিতাবধারীদের সাক্ষ্য দেওয়া ও তাদের ঈমান আনার পর এই কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ তাতে সন্দেহ অবশিষ্ট থাকে না। সুতরাং এরপর আর তোমাদের অস্বীকার ও অহংকার করার কোন বৈধতা থাকে না। তোমাদেরকে তোমাদের এই আচরণের পরিণাম সম্পর্কে ভেবে দেখা উচিত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৬ আল-আহকাফ
৪৬: ১২ وَ مِنۡ قَبۡلِهٖ كِتٰبُ مُوۡسٰۤی اِمَامًا وَّ رَحۡمَۃً ؕ وَ هٰذَا كِتٰبٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِیًّا لِّیُنۡذِرَ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ٭ۖ وَ بُشۡرٰی لِلۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿ۚ۱۲﴾

আর এর পূর্বে এসেছিল মূসার কিতাব পথপ্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ। আর এটি তার সত্যায়নকারী কিতাব, আরবী ভাষায়; যাতে এটা যালিমদেরকে সতর্ক করতে পারে এবং তা ইনসাফকারীদের জন্য এক সুসংবাদ। আল-বায়ান

অথচ ইতোপূর্বে মূসার কিতাব এসেছিল পথপ্রদর্শক ও রহমত স্বরূপ। আর (এখন অবতীর্ণ) এ কিতাব তার সমর্থক, আরবী ভাষায়, যালিমদেরকে সতর্ক করার জন্য আর সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য। তাইসিরুল

এর পূর্বে ছিল মূসার কিতাব - আদর্শ ও অনুগ্রহ স্বরূপ এই কিতাব - এর সমর্থক, আরাবী ভাষায়, যেন এটা যালিমদেরকে সতর্ক করে এবং যারা সৎ কাজ করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয়। মুজিবুর রহমান

And before it was the scripture of Moses to lead and as a mercy. And this is a confirming Book in an Arabic tongue to warn those who have wronged and as good tidings to the doers of good. Sahih International

১২. আর এর আগে ছিল মূসার কিতাব পথ প্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ। আর এ কিতাব (তার) সত্যায়নকারী, আরবী ভাষায়, যেন তা যালিমদেরকে সতর্ক করে, আর তা মুহসিনদের জন্য সুসংবাদ।(১)

(১) এ আয়াত থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন অভিনব রাসূল এবং কুরআন কোন অভিনব কিতাব নয় যে, এতে ঈমান আনতে আপত্তি হবে। বরং এর আগে মূসা আলাইহিস সালাম রাসূলররূপে আগমন করেছেন এবং তার প্রতি তাওরাত নাযিল হয়েছিল। ইহুদী ও নাসারা এমনকি কাফেরদের অনেকেই তা স্বীকার করে। [দেখুন: তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) এর পূর্বে ছিল মূসার গ্রন্থ আদর্শ ও করুণাস্বরূপ। আর এই সমর্থক গ্রন্থ আরবী ভাষায়, যাতে এটা সীমালংঘনকারীদেরকে সতর্ক করে এবং তা সৎকর্মশীলদের জন্য সুসংবাদবাহক।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৬ আল-আহকাফ
৪৬: ২৯ وَ اِذۡ صَرَفۡنَاۤ اِلَیۡكَ نَفَرًا مِّنَ الۡجِنِّ یَسۡتَمِعُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ ۚ فَلَمَّا حَضَرُوۡهُ قَالُوۡۤا اَنۡصِتُوۡا ۚ فَلَمَّا قُضِیَ وَلَّوۡا اِلٰی قَوۡمِهِمۡ مُّنۡذِرِیۡنَ ﴿۲۹﴾

আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, ‘চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। আল-বায়ান

স্মরণ কর, যখন জ্বিনদের একটি দলকে তোমার প্রতি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম যারা কুরআন শুনছিল। তারা যখন সে স্থানে উপস্থিত হল, তখন তারা পরস্পরে বলল- চুপ করে শুন। পড়া যখন শেষ হল তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে। তাইসিরুল

স্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল, যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হল; তারা একে অপরকে বলতে লাগলঃ চুপ করে শ্রবণ কর। যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হল তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে। মুজিবুর রহমান

And [mention, O Muhammad], when We directed to you a few of the jinn, listening to the Qur'an. And when they attended it, they said, "Listen quietly." And when it was concluded, they went back to their people as warners. Sahih International

২৯. আর স্মরণ করুন, যখন আমরা আপনার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম জিনদের একটি দলকে(১), যারা মনোযোগসহকারে কুরআন পাঠ শুনছিল। অতঃপর যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তারা বলল, চুপ করে শুন। অতঃপর যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হল তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে।

(১) মক্কার কাফেরদেরকে শোনানোর জন্যে পূর্বেকার আয়াতসমূহে কুফর ও অহংকারের নিন্দা ও ধ্বংসকারিতা বর্ণিত হয়েছে। আলোচ্য আয়াতসমূহে তাদেরকে লজ্জা দেয়ার উদ্দেশ্যে জিনদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, জিনরা অহংকার ও গর্বে তোমাদের চেয়েও বেশি, কিন্তু কুরআন শুনে তাদের অন্তরও বিগলিত হয়ে গেছে এবং ইসলাম গ্রহণ করেছে। তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলা জিনদের চেয়ে বেশি জ্ঞান-বুদ্ধি ও চেতনা দান করেছেন; কিন্তু তোমরা ইসলাম গ্ৰহণ করছ না।

জিন্নদের কুরআন শ্রবণ ও ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সহীহ হাদীসসমূহে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াত লাভের পর থেকে জিন জাতিকে আকাশের সংবাদ সংগ্রহ থেকে নিবৃত্ত রাখা হয়। সেমতে তাদের কেউ সংবাদ শোনার মানসে উপরে গেলে তাকে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করে বিতাড়িত করা হত।

জিন্নরা এই নতুন পরিস্থিতির কারণ উদঘাটনে সচেষ্ট হল এবং তাদের বিভিন্ন দল কারণ অনুসন্ধানে পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখণ্ডে কয়েকজন সাথীসহ ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবীসহ বাতনে নাখলা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর ওকায বাজারে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। আরবরা আমাদের যুগের প্রদর্শনীর মত বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ বিশেষ দিনে মেলার আয়োজন করত। এসব মেলায় বহুলোক উপস্থিত থাকত, দোকান খোলা হত এবং সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হত। ওকায নামক স্থানে প্রতি বছর এমনি ধরনের এক মেলা বসত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্ভবতঃ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সেখানে গমন করছিলেন। নাখলা নামক স্থানে তিনি যখন ফজরের সালাতে কুরআন পাঠ করছিলেন, তখন জিনদের অনুসন্ধানী দলটি সেখানে দিয়ে পৌঁছল। তারা কুরআন পাঠ শুনে বলতে লাগল, এই সে নতুন ঘটনা, যার কারণে আমাদেরকে আকাশের সংবাদ সংগ্রহে নিবৃত্ত করা হয়েছে। [বুখারী: ৭৭৩, মুসলিম: ৪৪৯, তিরমিযী: ৩৩২৩, নাসায়ী: আল কুবরা ১১৬৪]

অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, জিনরা সেখানে পৌছে পরস্পর বলতে লাগল, চুপ করে কুরআন শুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষ করলে জিনরা ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল এবং তদন্তকার্যের রিপোর্ট পেশ করে একথাও বলল, আমরা মুসলিম হয়ে গেছি। তোমাদেরও ইসলাম গ্ৰহণ করা উচিত। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা জিন অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই জিনদের গমনাগমন এবং তাদের কুরআন পাঠ শুনে ইসলাম গ্রহণের বিষয় কিছুই জানতেন না। সূরা জিনে আল্লাহ তা'আলা তাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। আরও এক বর্ণনায় আছে, নসীবাঈন নামক স্থানের অধিবাসী এই জিনদের সংখ্যা ছিল নয় অথবা সাত। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৫৬]

অন্যান্য হাদীসে জিনদের আগমনের ঘটনা অন্যভাবেও ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে একাধিক ঘটনা বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হওয়ার কারণে এসব বর্ণনায় কোন বৈপরীত্য নেই। ইবনে আব্বাস থেকে বৰ্ণিত আছে যে, জিনরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বার বার আগমন করেছে। খাফিফাযী বলেন, সবগুলো হাদীস একত্রিত করলে দেখা যায় যে, জিনদের আগমনের ঘটনা ছয় বার সংঘটিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) স্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জ্বিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল, যখন তারা তার (নবীর) নিকট উপস্থিত হল, তারা একে অপরকে বলতে লাগল, ‘চুপ করে শ্রবণ কর।’[1] যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হল,[2] তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে।

[1] সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই ঘটনা মক্কার নিকটস্থ ‘নাখলা’ নামক উপত্যকায় সংঘটিত হয়েছিল। যেখানে রসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-দেরকে ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। জ্বিনরা এই অনুসন্ধানে ছিল যে, আসমানে আমাদের উপর অত্যধিক কড়াকড়ি করে দেওয়া হয়েছে এবং এখন সেখানে আমাদের যাওয়া প্রায় অসম্ভব করে দেওয়া হয়েছে। কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে থাকবে যার কারণে এ রকম হয়েছে। তাই পূর্ব ও পশ্চিমের বিভিন্ন দিকে জ্বিনদের দল ঘটনার অনুসন্ধানে ছড়িয়ে পড়ল। তাদেরই একটি অনুসন্ধানী দল এই কুরআন শুনে বুঝে নেয় যে, নবী করীম (সাঃ)-এর প্রেরণের এই ঘটনাই হল আমাদের আসমান প্রবেশের প্রতিবন্ধকতার কারণ। জ্বিনদের এই দলটি নবী করীম (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনে এবং ফিরে গিয়ে তাদের জাতিকেও এ কথা শোনায়। (মুসলিম, সালাত অধ্যায়) সহীহ বুখারীতেও কিছু কথার উল্লেখ আছে। (মানাক্বিবুল আনসার অধ্যায়) কিছু অন্যান্য বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তিনি এই ঘটনার পর জ্বিনদের দাওয়াতে তাদের ওখানে যান এবং তাদেরকে আল্লাহর পায়গাম শুনান। জ্বিনরাও একাধিকবার নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়। (ফাতহুল বারী, তাফসীর ইবনে কাসীর)

[2] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর পক্ষ হতে কুরআন পাঠ শেষ হয়ে গেল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৬ আল-আহকাফ
৪৬: ৩০ قَالُوۡا یٰقَوۡمَنَاۤ اِنَّا سَمِعۡنَا كِتٰبًا اُنۡزِلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مُوۡسٰی مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِ یَهۡدِیۡۤ اِلَی الۡحَقِّ وَ اِلٰی طَرِیۡقٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۳۰﴾

তারা বলল, ‘হে আমাদের কওম, আমরা তো এক কিতাবের বাণী শুনেছি, যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাবকে সত্যায়ন করে আর সত্য ও সরল পথের প্রতি হিদায়াত করে’। আল-বায়ান

(ফিরে গিয়ে) তারা বলল- হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা একটি কিতাব (এর পাঠ) শুনেছি যা মূসার পরে অবতীর্ণ হয়েছে, তা পূর্বেকার কিতাবগুলোর সত্যতা প্রতিপন্ন করে, সত্যের দিকে আর সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে। তাইসিরুল

তারা বলেছিলঃ হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এক কিতাব পাঠ শ্রবণ করেছি যা অবতীর্ণ হয়েছে মূসার পরে, এটা তার পূর্ববর্তী কিতাবকে সমর্থন করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে পরিচালিত করে। মুজিবুর রহমান

They said, "O our people, indeed we have heard a [recited] Book revealed after Moses confirming what was before it which guides to the truth and to a straight path. Sahih International

৩০. তারা বলেছিল, হে আমাদের সম্প্রদায়! নিশ্চয় আমরা এমন এক কিতাবের পাঠ শুনেছি যা নাযিল হয়েছে মূসার পরে, এটা তার সম্মুখস্থ কিতাবকে সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে হেদায়াত করে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাবের পাঠ শ্রবণ করেছি, যা অবতীর্ণ করা হয়েছে মূসার পরে, তা ওর পূর্ববতী কিতাবের সত্যায়নকারীরূপে সত্য ও সরল পথের দিকে পরিচালিত করে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪৭ মুহাম্মাদ
৪৭: ২৪ اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُهَا ﴿۲۴﴾

তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা- ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে? আল-বায়ান

তারা কি কুরআন সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করে না, না তাদের অন্তরে তালা দেয়া আছে? তাইসিরুল

তাহলে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করেনা? তাদের অন্তর তালাবদ্ধ – মুজিবুর রহমান

Then do they not reflect upon the Qur'an, or are there locks upon [their] hearts? Sahih International

২৪. তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? [1]

[1] যার কারণে কুরআনের অর্থ ও তাৎপর্য তাদের অন্তঃকরণে প্রবেশ করে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫০ কাফ
৫০: ১ قٓ ۟ۚ وَ الۡقُرۡاٰنِ الۡمَجِیۡدِ ۚ﴿۱﴾

কাফ; মর্যাদাপূর্ণ কুরআনের কসম। আল-বায়ান

ক্বাফ, শপথ মাহাত্ম্যপূর্ণ কুরআনের (যে তুমি আল্লাহর রসূল।) তাইসিরুল

কাফ, শপথ কুরআনের (তুমি অবশ্যই সতর্ককারী)। মুজিবুর রহমান

Qaf. By the honored Qur'an... Sahih International

১. ক্বাফ, শপথ সম্মানিত কুরআনের,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) ক্বাফ, শপথ গৌরবান্বিত কুরআনের। [1]

[1] এই কসমের জওয়াব ঊহ্য আছে আর তা হল, لَتُبْعَثُنَّ (তোমরা অবশ্যই কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হবে)। কেউ কেউ বলেছেন, এর জওয়াব হল পরবর্তী আলোচ্য বিষয়, যাতে নবুঅত ও পুনরুত্থানের কথাকে সুসাব্যস্ত করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫০ কাফ
৫০: ২ بَلۡ عَجِبُوۡۤا اَنۡ جَآءَهُمۡ مُّنۡذِرٌ مِّنۡهُمۡ فَقَالَ الۡكٰفِرُوۡنَ هٰذَا شَیۡءٌ عَجِیۡبٌ ۚ﴿۲﴾

বরং তারা বিস্মিত হয়েছে যে, তাদের মধ্য থেকে একজন সতর্ককারী তাদের কাছে এসেছে। অতঃপর কাফিররা বলল, ‘এতো এক বিস্ময়কর বস্তু’! আল-বায়ান

বরং এ লোকেরা বিস্মিত হচ্ছে যে, তাদের কাছে তাদেরই মধ্য হতে একজন সর্তককারী এসেছে। যার কারণে কাফিররা বলে- ‘এতো বড়ই আশ্চর্যজনক ব্যাপার! তাইসিরুল

কিন্তু কাফিরেরা তাদের মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হতে দেখে বিস্ময় বোধ করে এবং বলেঃ এটাতো এক আশ্চর্য ব্যাপার। মুজিবুর রহমান

But they wonder that there has come to them a warner from among themselves, and the disbelievers say, "This is an amazing thing. Sahih International

২. বরং তারা বিস্ময় বোধ করে যে, তাদের মধ্য থেকে একজন সতর্ককারী তাদের কাছে এসেছেন। আর কাফিররা বলে, এ তো এক আশ্চর্য জিনিস!

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) কিন্তু অবিশ্বাসীরা তাদের মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হতে দেখে বিস্ময়বোধ করে ও বলে, ‘এটা তো এক আশ্চর্য ব্যাপার। [1]

[1] অথচ এতে আশ্চর্যের কোন কথাই নেই। প্রত্যেক নবী সেই জাতিরই একজন হতেন, যে জাতির কাছে তাঁকে প্রেরণ করা হত। সেই হিসাবেই মক্কার কুরাইশদেরকে সতর্ক করার জন্য তাদেরই মধ্য থেকে এক ব্যক্তি (মুহাম্মাদ (সাঃ))-কে নবুঅতের জন্য নির্বাচন করে নেওয়া হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫০ কাফ
৫০: ৪৫ نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ مَاۤ اَنۡتَ عَلَیۡهِمۡ بِجَبَّارٍ ۟ فَذَكِّرۡ بِالۡقُرۡاٰنِ مَنۡ یَّخَافُ وَعِیۡدِ ﴿۴۵﴾

এরা যা বলে আমি তা সবচেয়ে ভাল জানি। আর তুমি তাদের উপর কোন জোর- জবরদস্তিকারী নও। সুতরাং যে আমার ধমককে ভয় করে তাকে কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দাও। আল-বায়ান

তারা (তোমার বিরুদ্ধে) যা বলে তা আমি ভাল করেই জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও। কাজেই যে আমার শাস্তির ভয়প্রদর্শনকে ভয় করে, তাকে তুমি কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দাও। তাইসিরুল

তারা যা বলে তা আমি জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও। সুতরাং যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান কর কুরআনের সাহায্যে। মুজিবুর রহমান

We are most knowing of what they say, and you are not over them a tyrant. But remind by the Qur'an whoever fears My threat. Sahih International

৪৫. তারা যা বলে তা আমরা ভাল জানি, আর আপনি তাদের উপর জবরদস্তি কারী নন, কাজেই যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান করুন কুরআনের সাহায্যে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) তারা যা বলে, তা আমি খুব জানি, তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও;[1] সুতরাং যে আমার শাস্তির প্রতিশ্রুতিকে ভয় করে, তাকে কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দান কর। [2]

[1] অর্থাৎ, তোমার এ দায়িত্ব নয় যে, তাদেরকে ঈমান আনতে বাধ্য করবে। বরং তোমার কাজ কেবল দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। অতএব, এ কাজ করতে থাক।

[2] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর দাওয়াত ও উপদেশ থেকে কেবল সে-ই নসীহত গ্রহণ করবে, যে আল্লাহকে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে ও তাঁর দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রাখে। এই জন্যই ক্বাতাদা (রঃ) এই দু’আটি পাঠ করতেন, (اَللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِمَّنْ يَخَافُ وَعِيْدَكَ، وَيَرْجُوْ مَوْعُوْدَكَ، يَا بَارُّ يَا رَحِيْمُ) ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর, যারা তোমার শাস্তিকে ভয় করে এবং তোমার প্রতিশ্রুত বস্তুর আশা রাখে। হে অনুগ্রহকারী, হে দয়াময়!’’

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৪ আল-কামার
৫৪: ১৭ وَ لَقَدۡ یَسَّرۡنَا الۡقُرۡاٰنَ لِلذِّكۡرِ فَهَلۡ مِنۡ مُّدَّكِرٍ ﴿۱۷﴾

আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? আল-বায়ান

আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি? তাইসিরুল

কুরআন আমি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি? মুজিবুর রহমান

And We have certainly made the Qur'an easy for remembrance, so is there any who will remember? Sahih International

১৭. আর অবশ্যই আমরা কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহনের জন্য(১); অতএব উপদেশ গ্রহনকারী কেউ আছে কি?

(১) ذكر এর অর্থ দ্বিবিধ (এক) মুখস্থ বা স্মরণ করা এবং (দুই) উপদেশ ও শিক্ষা অর্জন করা। এখানে উভয় অর্থ বোঝানো যেতে পারে। আল্লাহ তা'আলা কুরআনকে মুখস্থ করার জন্যে সহজ করে দিয়েছেন। ইতিপূর্বে অন্য কোন ঐশীগ্রন্থ এরূপ ছিল না। তাওরাত, ইঞ্জীল ও যাবুর মানুষের মুখস্থ ছিল না। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) নিশ্চয় আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি।[1] অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?

[1] অর্থাৎ, এর অর্থ ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা, এ থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা এবং তা মুখস্থ করা আমি সহজ করে দিয়েছি। অতএব, এটা বাস্তব যে, কুরআন কারীম অলৌকিকতা ও ভাষাশৈলীর দিক দিয়ে অতি উচ্চস্তরের কিতাব হওয়া সত্ত্বেও কোন আরবের মানুষ তার প্রতি একটু মনোযোগ ও গুরুত্ব দিলে ব্যাকরণ, অভিধান ও সাহিত্যের কোন বই-পুস্তক না পড়েই তা অনায়াসে বুঝে নেয়। অনুরূপ এটি পৃথিবীর এমন অনন্য গ্রন্থ যার প্রতিটি শব্দ (অর্থ না জেনেও) হুবহু মুখস্থ করে নেওয়া যায়। এ ছাড়া কোন ক্ষুদ্র পুস্তকও এইভাবে মুখস্থ করা ও রাখা অতি কঠিন হয়। মানুষ যদি তার অন্তর ও বিবেকের দুয়ার উন্মুক্ত রেখে কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের দৃষ্টিতে পড়ে, নসীহতের কানে শোনে এবং উপলব্ধিকারী অন্তর দিয়ে এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, তবে দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্যের দরজাসমূহ তার জন্য খুলে যায় এবং কুরআন তার অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে কুফরী ও পাপাচরণের সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করে দেয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৫ আর-রাহমান
৫৫: ২ عَلَّمَ الۡقُرۡاٰنَ ؕ﴿۲﴾

তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, আল-বায়ান

তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তাইসিরুল

তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। মুজিবুর রহমান

Taught the Qur'an, Sahih International

২. তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন(১),

(১) এখান থেকে সমগ্র সূরায় আল্লাহ তা'আলার দুনিয়া ও আখেরাতের অবদানসমূহের অব্যাহত বৰ্ণনা হয়েছে। প্রথমেই عَلَّم বাক্য দিয়ে সূচনা করার উদ্দেশ্য এটা হতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এর রচয়িতা নন, এ শিক্ষা দানকারী স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা। তারপর (عَلَّمَ الْقُرْآنَ) বলে সর্ববৃহৎ অবদান দ্বারা শুরু করা হয়েছে। কুরআন সর্ববৃহৎ অবদান। কেননা, এতে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় প্রকার কল্যাণ রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম কুরআনকে কায়মনোবাক্যে গ্ৰহণ করেছেন এবং এর প্রতি যথার্থ মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আখেরাতের উচ্চ মর্যাদা ও নেয়ামত দ্বারা গৌরবান্বিত করেছেন এবং দুনিয়াতেও এমন উচ্চ আসন দান করেছেন; যা রাজা-বাদশাহরাও হাসিল করতে পারে না।

ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী عَلَّم ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম থাকে - এক যা শিক্ষা দেয়া হয় এবং ‘দুই যাকে শিক্ষা দেয়া হয়। আয়াতে প্রথম কর্ম উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ কুরআন। কিন্তু দ্বিতীয় কর্ম অৰ্থাৎ কাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। কোন কোন তফসীরবিদ বলেনঃ এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। কেননা, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যক্ষভাবে তাকেই শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তার মধ্যস্থতায় সমগ্র সৃষ্টজীব এতে দাখিল রয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান, আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। [1]

[1] বলা হয় যে, এটা মক্কাবাসীদের সেই কথার উত্তর, যাতে তারা বলত যে, এই কুরআন মুহাম্মাদকে কোন মানুষ শিক্ষা দেয়। কেউ কেউ বলেছেন, এটা তাদের ‘রহমান আবার কি?’ কথার উত্তর। কুরআন শিখানোর অর্থঃ তা সহজ করে দিয়েছেন। অথবা আল্লাহ তাঁর নবীকে শিখিয়েছেন এবং নবী তাঁর উম্মতকে শিখিয়েছেন। এই সূরায় মহান আল্লাহ তাঁর বহু নিয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই সমস্ত নিয়ামতের মধ্যে মান-মর্যাদা, গুরুত্ব ও উপকারিতার দিক দিয়ে কুরআনের শিক্ষাদান যেহেতু সর্বাধিক প্রকট, তাই প্রথমে এই নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬: ৭৭ اِنَّهٗ لَقُرۡاٰنٌ كَرِیۡمٌ ﴿ۙ۷۷﴾

নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন, আল-বায়ান

অবশ্যই তা সম্মানিত কুরআন, তাইসিরুল

নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন – মুজিবুর রহমান

Indeed, it is a noble Qur'an Sahih International

৭৭. নিশ্চয় এটা মহিমান্বিত কুরআন(১),

(১) কুরআনের মহা সম্মানিত গ্ৰন্থ হওয়া সম্পর্কে ঐগুলোর শপথ করার অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্ব জগতে সৌরজগতের ব্যবস্থাপনা যত সুসংবদ্ধ ও মজবুত এই বাণীও ততটাই সুসংবদ্ধ ও মজবুত। [দেখুন, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৭) নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন। [1]

[1] এটা কসমের জবাব।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬: ৭৮ فِیۡ كِتٰبٍ مَّكۡنُوۡنٍ ﴿ۙ۷۸﴾

যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, আল-বায়ান

(যা লিখিত আছে) সুরক্ষিত কিতাবে, তাইসিরুল

যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, মুজিবুর রহমান

In a Register well-protected; Sahih International

৭৮. যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে।(১)

(১) অর্থাৎ সুরক্ষিত বা গোপন কিতাব। একথা বলে এখানে লাওহে-মাহফুয বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ এমন লিখিত বস্তু যা গোপন করে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যা কারো ধরা ছোয়ার বাইরে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৮) যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে।[1]

[1] অর্থাৎ, ‘লওহে মাহফূয’এ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬: ৭৯ لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الۡمُطَهَّرُوۡنَ ﴿ؕ۷۹﴾

কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া। আল-বায়ান

পূত-পবিত্র (ফেরেশতা) ছাড়া (শয়ত্বানেরা) তা স্পর্শ করতে পারে না, তাইসিরুল

যারা পুতঃ পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেহ তা স্পর্শ করেনা। মুজিবুর রহমান

None touch it except the purified. Sahih International

৭৯. যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।(১)

(১) ব্যাকরণিক দিক দিয়ে এই বাক্যের দ্বিবিধ অর্থ হতে পারে। প্রথম এই যে, এটা কিতাব অর্থাৎ ‘লওহে-মাহফুযের’ই দ্বিতীয় বিশেষণ এবং لَا يَمَسُّهُ এর সর্বনাম দ্বারা লওহে মাহফুযই বোঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ এই যে, সংরক্ষিত বা গোপন কিতাব অর্থাৎ লওহে-মাহফুযাকে সম্পূর্ণ পাক-পবিত্র লোকগণ ব্যতীত কেউ স্পর্শ করতে পারে না। এমতাবস্থায় مُطَهَّرُونَ অর্থাৎ পাক-পবিত্ৰ লোকগণ-এর অর্থ ফেরেশতাগণই হতে পারে, যারা ‘লওহে-মাহফুয’ পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম। ফেরেশতাদের জন্য পবিত্ৰ কথাটি ব্যবহার করার তাৎপর্য হলো মহান আল্লাহ তাদেরকে সব রকমের অপবিত্ৰ আবেগ অনুভূতি এবং ইচ্ছা আকাংখা থেকে পবিত্র রেখেছেন। [কুরতুবী] আয়াতের এ তাফসীরটি সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য; কারণ এর সমর্থনে আমরা অন্যত্র আয়াত দেখতে পাই, যেখানে বলা হয়েছে, “ওটা আছে মর্যাদা সম্পন্ন লিপিসমূহে, যা উন্নত, পবিত্র, মহান, পবিত্র লেখকদের হাতে।” [সূরা আবাসাঃ ১৩–১৬]

এ আয়াতে ‘পবিত্র’ বলে ফেরেশতাদের বোঝানো হয়েছে বলে সবাই একমত। উপরোক্ত তাফসীর অনুযায়ী কাফেররা কুরআনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আরোপ করতো এটা তার জবাব হিসেবে বিবেচিত হবে। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গণক আখ্যায়িত করে বলতো, জিন ও শয়তানরা তাকে এসব কথা শিখিয়ে দেয়। কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে এর জবাব দেয়া হয়েছে। যেমন এক স্থানে বলা হয়েছে, “শয়তানরা এ বাণী নিয়ে আসেনি। এটা তাদের জন্য সাজেও না। আর তারা এটা করতেও পারে না। এ বাণী শোনার সুযোগ থেকেও তাদেরকে দূরে রাখা হয়েছে।” [সূরা আশ-শু'আরা: ২১০-২১২] এ বিষয়টিই এখানে এ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, “পবিত্ৰ সত্তা ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করতে পারে না।”

দ্বিতীয় সম্ভাব্য অর্থ এই যে, (لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ) এ বাক্যটি (إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ) বাক্যের বিশেষণ। এমতাবস্থায় (لَا يَمَسُّهُ) এর সর্বনাম দ্বারা কুরআন বোঝানো হবে। [কুরতুবী] আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, এটাকে এমন লোক, যারা ‘হাদসে-আসগর’ ও ‘হাদসে আকবর’ থেকে পবিত্র তারা ব্যতীত কেউ যেন স্পর্শ না করে। (বে-ওযু অবস্থাকে হাদসে-আসগর’ বলা হয়। ওযু করলে এই অবস্থা দূর হয়ে যায়। পক্ষান্তরে বীর্যস্খলনের কিংবা স্ত্রীসহবাসের পরবর্তী অবস্থা এবং হায়েয এবং নেফাসের অবস্থাকে ‘হাদসে-আকবর’ বলা হয় ) কিন্তু আয়াত থেকে এর সপক্ষে দলীল নেয়া খুব শক্তিশালী মত নয়। কিন্তু বিভিন্ন হাদীস থেকে এ মতের পক্ষে দলীল পাওয়া যায়। যেমন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন সাথে নিয়ে কাফের দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন; যাতে তা কাফেরদের হাতে না পড়ে।” [বুখারী: ২৯৯০, মুসলিম: ১৮৬৯]

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর ইবনে হাযমের কাছে লিখে পাঠিয়েছিলেন যে, “কুরআনকে যেন পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ স্পর্শ না করে।” [মুয়াত্তা মালেক: ১/২৯৯, মুহাদ্দিসগণ আবু বকর ইবনে হাযমের কাছে লিখা চিঠিটি বিশুদ্ধ বলে মত প্ৰকাশ করেছেন। দেখুন: আলবানী: ইরাওয়াউল গালীল ১২২]

তাছাড়া এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত যে, ‘হাদসে আকবর’ অবস্থায় কোনভাবেই কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে ‘হাদসে আসগর’ অবস্থায় কোন কোন আলেমের মতে স্পর্শ করা জায়েয আছে। তারা এ আয়াতে বর্ণিত مُطَهَّرُونَ দ্বারা ফেরেশতা উদ্দেশ্য নিয়েছেন। আর উপরোক্ত প্রথম হাদীসের নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে বলেছেন যে, কাফেরদের হাতে পড়লে কুরআনের অবমাননার সম্ভাবনা থাকায় নিষেধ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় হাদীসটি তাদের নিকট বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়নি। তাছাড়া কোন কোন আলেম এ আয়াত থেকে তৃতীয় আরেকটি অর্থ নিয়েছেন। তাদের মতে এখানে مس শব্দ দ্বারা উপকৃত হওয়া বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এ কুরআন থেকে কেবল ঐ সমস্ত লোকরাই উপকৃত হতে পারে যাদের অন্তর পবিত্র। [দেখুন: কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৯) পূত-পবিত্রগণ ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। [1]

[1] لاَ يَمَسُّهُ তে هُ সর্বনামের বিশেষ্য হল, ‘লওহে মাহফূয’। আর ‘পবিত্রগণ’ বলতে ফিরিশতাগণকে বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ هُ এর বিশেষ্য বানিয়েছেন কুরআন কারীমকে। অর্থাৎ, এই কুরআনকে ফিরিশতারাই স্পর্শ করেন। অর্থাৎ, আসমানে ফিরিশতাগণ ছাড়া অন্য কেউ এই কুরআন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। আসলে এখানে মুশরিকদের কথার খন্ডন করা হয়েছে। যারা বলত যে, কুরআন শয়তানরা নিয়ে অবতরণ করে। আল্লাহ বলেন, এটা কি করে সম্ভব? এই কুরআন তো শয়তানের প্রভাব থেকে একেবারে সুরক্ষিত। (অন্য মতে আয়াতের অর্থ হল, পবিত্র মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কোন অপবিত্র ব্যক্তি যেন কুরআন স্পর্শ না করে। আর আল্লাহই অধিক জানেন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৬ আল-ওয়াকিয়া
৫৬: ৮০ تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۸۰﴾

তা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত। আল-বায়ান

জগৎ সমূহের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ, তাইসিরুল

ইহা জগতসমূহের রবের নিকট হতে অবতীর্ণ। মুজিবুর রহমান

[It is] a revelation from the Lord of the worlds. Sahih International

৮০. এটা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮০) এটা বিশ্ব-জাহানের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২২১ থেকে ২৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২৬৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 11 12 13 14 পরের পাতা »