৯১ সূরাঃ আশ-শামস | Ash-Shams | سورة الشمس - আয়াতঃ ৮
৯১:৮ فَاَلۡهَمَهَا فُجُوۡرَهَا وَ تَقۡوٰىهَا ۪ۙ﴿۸﴾
فالهمها فجورها و تقوىها ۙ۸

অতঃপর তিনি তাকে অবহিত করেছেন তার পাপসমূহ ও তার তাকওয়া সম্পর্কে। আল-বায়ান

অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। তাইসিরুল

অতঃপর তাকে তার অসৎ কাজ ও তার সৎ কার্জের জ্ঞান দান করেছেন, মুজিবুর রহমান

And inspired it [with discernment of] its wickedness and its righteousness, Sahih International

৮. তারপর তাকে তার সৎকাজের এবং তার অসৎ-কাজের জ্ঞান দান করেছেন(১)—

(১) এর অর্থ, আল্লাহ তার নফসের মধ্যে নেকি ও গুনাহ উভয়টি স্পষ্ট করেছেন এবং চিনিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রত্যেক নফসেরই ভালো ও মন্দ কাজ করার কথা রেখে দিয়েছেন; এবং যা তাকদীরে লেখা রয়েছে তা সহজ করে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] একথাটিই অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছে, “আর আমরা ভালো ও মন্দ উভয় পথ তার জন্য সুস্পষ্ট করে রেখে দিয়েছি।” [সূরা আল-বালাদ: ১০] আবার কোথাও বলা হয়েছে, “আমরা তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, চাইলে তারা কৃতজ্ঞ হতে পারে আবার চাইলে হতে পারে অস্বীকারকারী।” [সূরা আল-ইনসান: ৩] একথাটিই অন্যত্র বলা হয়েছে এভাবে, “অবশ্যই আমি শপথ করছি নাফস আল-লাওয়ামার” [সূরা আল-কিয়ামাহ: ২] সুতরাং মানুষের মধ্যে একটি নাফিসে লাওয়ামাহ্ (বিবেক) আছে। সে অসৎকাজ করলে তাকে তিরস্কার করে। আরও এসেছে, “আর প্রত্যেক ব্যক্তি সে যতই ওজর পেশ করুক না কেন সে কি তা সে খুব ভালো করেই জানে।” [সূরা আল-কিয়ামাহ: ১৪–১৫]

এই তাফসীর অনুযায়ী এরূপ প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই যে, মানুষের সৃষ্টির মধ্যেই যখন পাপ ও ইবাদত নিহিত আছে, তখন সে তা করতে বাধ্য। এর জন্যে সে কোন সওয়াব অথবা আযাবের যোগ্য হবে না। একটি হাদীস থেকে এই তাফসীর গৃহীত হয়েছে। তাকদীর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জওয়াবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করেন। [মুসলিম: ২৬৫০, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৪৩৮] এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা মানুষের মধ্যে গোনাহ ও ইবাদতের যোগ্যতা গচ্ছিত রেখেছেন, কিন্তু তাকে কোন একটি করতে বাধ্য করেননি; বরং তাকে উভয়ের মধ্য থেকে যে কোন একটি করার ক্ষমতা দান করেছেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো’আ করতেন, (اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا) অর্থাৎ “হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক।” [মুসলিম: ২৭২২]

তাকওয়া যেভাবে ইলহাম হয়, তেমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা কোন কোন মানুষের পাপের কারণে তাদের অন্তরে পাপেরও ইলহাম করেন। [উসাইমীন: তাফসীর জুয আম্মা] যদি আল্লাহ কারও প্রতি সদয় হন তবে তাকে ভাল কাজের প্রতি ইলহাম করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজ করতে সমর্থ হয় সে যেন আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে। আর যদি সে খারাপ কাজ করে তবে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা উচিত। আল্লাহ কেন তাকে দিয়ে এটা করালেন, বা এ গোনাহ তার দ্বারা কেন হতে দিলেন, এ ধরনের যুক্তি দাঁড় করানোর মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়েই রাখা যায়, কোন সমাধানে পৌছা যাবে না। কারণ; রহমতের তিনিই মালিক; তিনি যদি তার রহমত কারও প্রতি উজাড় করে দেন। তবে সেটা তার মালিকানা থেকে তিনি খরচ করলেন পক্ষান্তরে যদি তিনি তার রহমত কাউকে না দেন তবে কারও এ ব্যাপারে কোন আপত্তি তোলার অধিকার নেই।

যদি আপত্তি না তোলে তাওবাহ করে নিজের কোন ক্রটির প্রতি দিক নির্দেশ করে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসে তবে হয়ত আল্লাহ্‌ তাকে পরবর্তীতে সঠিক পথের দিশা দিবেন এবং তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে দিবেন এবং তাকওয়ার অধিকারী করবেন। ঐ ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্য যে আল্লাহর কর্মকাণ্ডে আপত্তি তোলতে আমল পরিত্যাগ করে তাকদীরের দোষ দিয়ে বসে থাকে। হ্যাঁ, যদি কোন বিপদাপদ এসে যায় তখন শুধুমাত্র আল্লাহর তাকদীরে সস্তুষ্টি প্রকাশের খাতিরে তাকদীরের কথা বলে শোকরিয়া আদায় করতে হবে। পক্ষান্তরে গোনাহের সময় কোনভাবেই তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে না। বরং নিজের দোষ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে ভবিষ্যতের জন্য তাওফীক কামনা করতে হবে। এজন্যই বলা হয় যে, “গোনাহের সময় তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে না, তবে বিপদাপদের সময় তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে।” [দেখুন: উসাইমীন, আল-কাওলুল মুফীদ শারহু কিতাবুত তাওহীদঃ ২/৩৯৬–৪০২]

তাফসীরে জাকারিয়া

৮। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্মও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। [1]

[1] ‘জ্ঞানদান করা’র এক অর্থ এই যে, তিনি তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে আম্বিয়াগণ ও আসমানী কিতাব দ্বারা ভাল-মন্দ চিনিয়ে দিয়েছেন। অথবা এর অর্থ যে, তার মস্তিষ্ক ও প্রকৃতিতে ভাল-মন্দ, নেকী-বদীর অনুভূতি প্রদান করেছেন। যাতে সে নেকীর পথ অবলম্বন করে এবং বদীর পথ হতে দূরে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান