৩৬ সূরাঃ ইয়াসীন | Ya-Sin | سورة يس - আয়াতঃ ৩৮
৩৬:৩৮ وَ الشَّمۡسُ تَجۡرِیۡ لِمُسۡتَقَرٍّ لَّهَا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ ﴿ؕ۳۸﴾
و الشمس تجری لمستقر لها ذلک تقدیر العزیز العلیم ۳۸

আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট পথে, এটা মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ (আল্লাহ)-র নির্ধারণ। আল-বায়ান

আর সূর্য তার জন্যে নির্দিষ্ট ক’রে দেয়া জায়গায় গতিশীল, এটা মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের সুনিরূপিত নির্ধারণ। তাইসিরুল

এবং সূর্য ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। মুজিবুর রহমান

And the sun runs [on course] toward its stopping point. That is the determination of the Exalted in Might, the Knowing. Sahih International

৩৮. আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে(১), এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নির্ধারণ।

(১) এ আয়াতের দুটি তাফসীর হতে পারে।

এক. কোন কোন তাফসীরবিদ এখানে কালগত অবস্থানস্থল অর্থ নিয়েছেন, অর্থাৎ সেই সময়, যখন সূর্য তার নির্দিষ্ট গতি সমাপ্ত করবে। সে সময়টি কেয়ামতের দিন। এ তাফসীর অনুযায়ী আয়াতের অর্থ এই যে, সূর্য তার কক্ষ পথে মজবুত ও অটল ব্যবস্থাধীনে পরিভ্রমণ করছে। এতে কখনও এক মিনিট ও এক সেকেণ্ডের পার্থক্য হয় না। সূর্যের এই গতি চিরস্থায়ী নয়। তার একটি বিশেষ অবস্থানস্থল আছে; যেখানে পৌছে তার গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে। সেটা হচ্ছে কেয়ামতের দিন। এ তাফসীর প্রখ্যাত তাবেয়ী কাতাদাহ থেকে বর্ণিত আছে।

দুই. কতক তাফসীরবিদ আয়াতে স্থানগত অবস্থানস্থল অর্থ নিয়েছেন। [ইবন কাসীর] তাদের মতের সমর্থনে এক হাদীসে এসেছে, আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সুর্যাস্তের সময় মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আবু যর, সূর্য কোথায় অস্ত যায় জান? আবু যর বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সূর্য চলতে চলতে আরশের নীচে পৌঁছে সিজদা করে। অতঃপর বললেন, (وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا) আয়াতে مستقر বলে তাই বোঝানো হয়েছে। [বুখারী: ৪৮০২, ৪৮০৩, মুসলিম: ১৫৯]

আব্দুল্লাহ ইবন উমর থেকে এ সম্পর্কে অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক দিন সূর্য আরশের নীচে পৌঁছে সিজদা করে এবং নতুন পরিভ্রমণের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। অনুমতি লাভ করে নতুন পরিভ্রমণ শুরু করে। অবশেষে এমন একদিন আসবে, যখন তাকে নতুন পরিভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে না, বরং যেখান থেকে অস্ত গিয়েছে সেখানেই উদিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। এটা হবে কেয়ামত সন্নিকটবর্তী হওয়ার একটি আলামত। তখন তাওবাহ ও ঈমানের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কোন গোনাহগার, কাফের ও মুশরিকের তাওবাহ কবুল করা হবে না। [বুখারী: ৩১৯৯, মুসলিম: ১৫৯]

এখানে আরও একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা জরুরী, তা হচ্ছে, বৈজ্ঞানিকগণ কিছু দিন আগেও বলতেন যে, সূর্য স্থায়ী, পৃথিবী এর চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু বর্তমানে তারা তাদের মত পাল্টিয়ে বলতে শুরু করেছে যে, সূৰ্যও তার কক্ষপথে ঘুরে। এটি কুরআনের এ বাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা যা এখন আবিষ্কার করে বলেছে, আল্লাহ তা'আলা তা বহু শতক পূর্বে কুরআনে বলে দিয়েছেন। যা কুরআনের সত্যতার উপর প্রমাণবাহ।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) আর সূর্য তার নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে আবর্তন করে;[1] এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ (আল্লাহর) নিয়ন্ত্রণ।

[1] অর্থাৎ, নিজের সেই কক্ষ পথে ঘোরে, যা আল্লাহ তাআলা তার জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। নির্দিষ্ট সেই স্থান থেকে তারা পরিক্রমা আরম্ভ করে এবং সেই স্থানেই ভ্রমণ শেষ করে। তা থেকে সামান্য পরিমাণও এমন এদিক ওদিক হয় না যে, তার ফলে কোন অন্য চলমান গ্রহের সাথে ধাক্কা লেগে যাবে। দ্বিতীয় অর্থ হল, ‘‘নিজ অবস্থান ক্ষেত্রের জন্য।’’ আর তার ঐ ক্ষেত্র হল আরশে ইলাহীর নিম্নদেশ। যেমন হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, ‘‘সূর্য প্রত্যহ অস্তমিত হওয়ার পর আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। অতঃপর সেখান থেকে পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়।’’ (বুখারীঃ সূরা ইয়াসীনের তফসীর) দুই অর্থেই لِمُسْتَقَرٍّ শব্দটিতে লাম ইল্লাত (কারণ বর্ণনা) এর জন্য ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ لِأَجَلِ مُسْتَقَرِّ لَّهَا অনেকে বলেন যে, এখানে لام হরফটি إلى এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। আর তখন তার مُستَقَرّ (স্থিরতার সময়) হবে কিয়ামত। অর্থাৎ, সূর্যের এই চলাফেরা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কিয়ামতের দিন তার চলা বন্ধ হয়ে যাবে। এই তিন প্রকার অর্থই নিজ নিজ স্থানে সঠিক।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান