৩৬ : ১
یٰسٓ ۚ﴿۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. ইয়াসীন(১),
(১) ইয়াসীন শব্দের বিভিন্ন অর্থ করা হয়ে থাকে। তবে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, এটা দ্বারা আল্লাহ্ শপথ করেছেন। আর তা আল্লাহর একটি নাম। অবশ্য ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, এর অর্থ: হে মানুষ। [তাবারী, বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) ইয়া-সীন,[1]
[1] অনেকে এর অর্থ, ‘হে ব্যক্তি! বা হে মানুষ!’ বলেছেন। আবার অনেকে এটিকে নবী (সাঃ)-এর নাম এবং অনেকে আল্লাহ তাআলার সুন্দরতম নামাবলীর একটি নাম রূপে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই সকল মত কোন প্রমাণ ছাড়াই পেশ করা হয়েছে। কারণ এটিও সেই ‘হরূফে মুক্বাত্ত্বাআত’ (বিচ্ছিন্ন অক্ষরমালা), যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ অবগত নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ২
وَ الۡقُرۡاٰنِ الۡحَكِیۡمِ ۙ﴿۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. শপথ প্রজ্ঞাময় কুরআনের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) জ্ঞানগর্ভ কুরআনের শপথ, [1]
[1] অথবা এর অর্থ, সুবিন্যস্ত কুরআনের, যা শব্দছন্দ ও অর্থের দিক থেকে সুবিন্যস্ত ও মজবুত। وَ শপথের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে শপথের জওয়াব পরবর্তী আয়াতে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ৩
اِنَّكَ لَمِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ۙ﴿۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. নিশ্চয় আপনি রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) তুমি অবশ্যই প্রেরিত (রসূল)দের অন্তর্ভুক্ত; [1]
[1] মুশরিকরা নবী (সাঃ)-এর রসূল হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করত। ফলে তারা তাঁর রিসালাতকে অস্বীকার করত ও বলত, (لَسْتَ مُرْسَلًا) ‘‘তুমি তো পয়গম্বরই নও।’’ (সূরা রা’দ ৪৩ আয়াত) আল্লাহ তাআলা তাদের উত্তরে জ্ঞানগর্ভ কুরআনের কসম করে বললেন, তিনি অবশ্যই তাঁর পয়গম্বর। এতে রয়েছে নবী (সাঃ)-এর সম্মান ও মাহাত্ম্যের বিকাশ। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা অন্য কোন রসূলের জন্য তাঁর রিসালাতের কসম করেননি। রিসালাত প্রমাণ করতে আল্লাহ তা'আলার কসম রসূল (সাঃ)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ৪
عَلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ؕ﴿۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) তুমি সরলপথে প্রতিষ্ঠিত, [1]
[1] এটা ‘إِنَّكَ -র দ্বিতীয় খবর। অর্থাৎ নবী (সাঃ) সেই পথে আছেন, যে পথে তাঁর পূর্ববর্তী পয়গম্বর ছিলেন। অথবা তিনি এমন সরল ও সঠিক পথে আছেন, যা তাঁকে অভীষ্ট গন্তব্যস্থল (জান্নাতে) পৌঁছাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ৫
تَنۡزِیۡلَ الۡعَزِیۡزِ الرَّحِیۡمِ ۙ﴿۵﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. এ কুরআন প্রবল পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু আল্লাহর কাছ থেকে নাযিলকৃত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) কুরআন পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। [1]
[1] এ কুরআন পরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। অর্থাৎ, তা যারা অস্বীকার করে এবং তাঁর রসূল (সাঃ)-কে যারা মিথ্যা মনে করে তাদের নিকট থেকে তিনি বদলা নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি পরম দয়ালু; অর্থাৎ, যে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁর প্রকৃত দাস হয়ে যাবে, তার প্রতি তিনি পরম দয়ালু।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ৬
لِتُنۡذِرَ قَوۡمًا مَّاۤ اُنۡذِرَ اٰبَآؤُهُمۡ فَهُمۡ غٰفِلُوۡنَ ﴿۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. যাতে আপনি সতর্ক করতে পারেন এমন এক জাতিকে যাদের পিতৃ পুরুষদেরকে সতর্ক করা হয় নি, সুতরাং তারা গাফিল।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক জাতিকে, যাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, যার ফলে ওরা উদাসীন। [1]
[1] অর্থাৎ, নবী (সাঃ)-কে রসূল এই জন্য মনোনীত করা হয়েছে এবং এই কিতাব (কুরআন) এই জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে তিনি (সাঃ) ঐ সম্প্রদায়কে সতর্ক ও ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের মাঝে তাঁর পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। যার ফলে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এরা সত্য ধর্ম থেকে বেখবর ছিল। এ বিষয়ে পূর্বে কয়েক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে যে, আরবদের নিকট ইসমাঈল (আঃ)-এর পরে নবী (সাঃ)-এর পূর্ব পর্যন্ত সরাসরি কোন নবী আসেননি। এখানেও তাই আলোচনা করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ৭
لَقَدۡ حَقَّ الۡقَوۡلُ عَلٰۤی اَكۡثَرِهِمۡ فَهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. অবশ্যই তাদের অধিকাংশের উপর সে বাণী অবধারিত হয়েছে(১); কাজেই তারা ঈমান আনবে না।
(১) আল্লামা শানকীতী রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতে ‘বাণী অবধারিত হয়ে গেছে’ বলে অন্যান্য আয়াতে যেভাবে (وَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ) [সূরা ফুসসিলাত: ২৫], বা (فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَا إِنَّا لَذَائِقُونَ) [সূরা আস-সাফফাত: ৩১] বা (أَفَمَنْ حَقَّ عَلَيْهِ كَلِمَةُ الْعَذَابِ) [সূরা আয যুমার: ১৯] অথবা, (حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ) [সূরা আয-যুমার: ৭১] অথবা (حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ) [সূরা ইউনুস: ৯৬] এসবগুলোর অর্থ একই আয়াতের তাফসীর। আর তা হচ্ছে: (لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ) [সূরা আস-সাজদাহ: ১৩] অর্থাৎ আমি মানুষ ও জিন জাতি থেকে জাহান্নাম পূর্ণ করব। তাই এ আয়াতের قول এবং উপরোক্ত অন্যান্য আয়াতের كلمة শব্দসমূহ একই অর্থবোধক।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) ওদের অধিকাংশের জন্য (শাস্তির) বাণী অবধারিত হয়েছে, সুতরাং ওরা বিশ্বাস করবে না।[1]
[1] যেমন আবু জাহল, উতবা, শায়বা, ইত্যাদি। ‘বাণী অবধারিত হয়েছে’-এর উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তাআলার এই বাণী, ‘‘আমি নিশ্চয়ই মানব ও দানব উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব।’’ (সূরা সাজদাহ ১৩ আয়াত) শয়তানকে তিরস্কার করার সময়ও আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, ‘‘তোমার দ্বারা ও ওদের মধ্যে তোমার সকল অনুসারীদের দ্বারা আমি অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।’’ (সূরা স্বাদ ৮৫ আয়াত) অর্থাৎ, তারা শয়তানের অনুসরণ করে নিজেদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত করে নিয়েছে। কারণ আল্লাহ তাআলা তো তাদেরকে ইচ্ছা, স্বাধীনতা ও এখতিয়ার দানে ধন্য করেছিলেন। কিন্তু তারা তা ভুল ব্যবহার করে নিজের এখতিয়ারেই জাহান্নামের জ্বালানি হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঈমান থেকে বঞ্চিত করেননি। কারণ জোর করে হলে তো তারা শাস্তির উপযুক্তই হত না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ৮
اِنَّا جَعَلۡنَا فِیۡۤ اَعۡنَاقِهِمۡ اَغۡلٰلًا فَهِیَ اِلَی الۡاَذۡقَانِ فَهُمۡ مُّقۡمَحُوۡنَ ﴿۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. নিশ্চয় আমরা তাদের গলায় চিবুক পর্যন্ত বেড়ি পরিয়েছি, ফলে তারা উর্ধ্বমুখী হয়ে গেছে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) আমি ওদের গলদেশে মোটা বেড়ি পরিয়েছি, তা ওদের চিবুক পর্যন্ত বর্তমান, ফলে ওরা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আছে। [1]
[1] যার ফলে তারা না এদিক ওদিক দেখতে পারে, আর না মাথা ঝুঁকাতে পারে। বরং তারা মাথা উপর দিকে উঠিয়ে ও চোখ নিচের দিকে নামিয়ে থাকবে। এটা তাদের সত্য প্রত্যাখ্যান ও কার্পণ্য করার উদাহরণ। এও হতে পারে যে, এটা তাদের জাহান্নামের শাস্তি-পদ্ধতির বর্ণনা। (আইসারুত তাফাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ৯
وَ جَعَلۡنَا مِنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡهِمۡ سَدًّا وَّ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ سَدًّا فَاَغۡشَیۡنٰهُمۡ فَهُمۡ لَا یُبۡصِرُوۡنَ ﴿۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. আর আমরা তাদের সামনে প্রাচীর ও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি। তারপর তাদেরকে আবৃত করেছি; ফলে তারা দেখতে পায় না।(১)
(১) অর্থাৎ তারা হেদায়াত দেখতে পায় না এবং এর দ্বারা উপকৃতও হতে পারে না। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) আমি ওদের সম্মুখে ও পশ্চাতে অন্তরাল স্থাপন করেছি[1] এবং ওদের দৃষ্টির ওপর আবরণ রেখেছি; [2] ফলে ওরা দেখতে পায় না।
[1] অর্থাৎ, তাদের পার্থিব জীবন সৌন্দর্যময় করে দেওয়া হয়েছে। আর এটা যেন তাদের সামনের আড়াল, যার কারণে তারা পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছাড়া কিছুই দেখে না। এটাই তাদের ও তাদের ঈমানের মাঝে অন্তরাল ও পর্দাস্বরূপ। আর তাদের মাথায় আখেরাতের বিষয়ে ভাবনা আসাকে অসম্ভব করে দেওয়া হয়েছে। এটা যেন তাদের পিছনের আড়াল। যার কারণে না তারা তওবা করে, আর না নসীহত গ্রহণ করে। কারণ, আখেরাতের কোন চিন্তা ও ভয়ই তাদের অন্তরে নেই।
[2] অর্থাৎ, তাদের চোখকে ঢেকে দিয়েছেন। অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে শত্রুতা এবং তাঁর সত্যের দাওয়াত থেকে বৈমুখ্য তাদের চোখের উপর পটি বেঁধে দিয়েছে, অথবা তাদেরকে অন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে তারা দেখতে পায় না। এটা তাদের অবস্থার দ্বিতীয় উদাহরণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৩৬ : ১০
وَ سَوَآءٌ عَلَیۡهِمۡ ءَاَنۡذَرۡتَهُمۡ اَمۡ لَمۡ تُنۡذِرۡهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন, তাদের পক্ষে উভয়ই সমান; তারা ঈমান আনবে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) তুমি ওদেরকে সতর্ক কর বা না কর, ওদের পক্ষে উভয়ই সমান; ওরা বিশ্বাস করবে না। [1]
[1] অর্থাৎ, যারা নিজেদের কৃতকর্মের ফলে ভ্রষ্টতার ঐ স্থানে পৌঁছে যায়, তাদেরকে ভীতি-প্রদর্শন ও সতর্ক করা নিরর্থক।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান