৩১ সূরাঃ লুকমান | Luqman | سورة لقمان - আয়াতঃ ৩২
৩১:৩২ وَ اِذَا غَشِیَهُمۡ مَّوۡجٌ کَالظُّلَلِ دَعَوُا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۚ فَلَمَّا نَجّٰهُمۡ اِلَی الۡبَرِّ فَمِنۡهُمۡ مُّقۡتَصِدٌ ؕ وَ مَا یَجۡحَدُ بِاٰیٰتِنَاۤ اِلَّا کُلُّ خَتَّارٍ کَفُوۡرٍ ﴿۳۲﴾
و اذا غشیهم موج کالظلل دعوا الله مخلصین له الدین ۬ۚ فلما نجهم الی البر فمنهم مقتصد و ما یجحد بایتنا الا کل ختار کفور ۳۲

আর যখন ঢেউ তাদেরকে ছায়ার মত আচ্ছন্ন করে নেয়, তখন তারা একনিষ্ঠ অবস্থায় আনুগত্যভরে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন, তখন তাদের কেউ কেউ (ঈমান ও কুফরীর) মধ্যপথে থাকে। আর বিশ্বাসঘাতক ও কাফির ব্যক্তি ছাড়া কেউ আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে না। আল-বায়ান

ঢেউ যখন তাদেরকে (মেঘের) ছায়ার মত ঢেকে নেয়, তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যে। অতঃপর আমি যখন তাদেরকে উদ্ধার ক’রে স্থলে এনে দেই, তখন তাদের কতক ন্যায়পূর্ণ আচরণ করে। কেবল মিথ্যাচারী অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে। তাইসিরুল

যখন তরঙ্গ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে মেঘচ্ছায়ার মত তখন তারা আল্লাহকে ডাকে বিশুদ্ধ চিত্তে। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছান তখন তাদের কেহ কেহ সরল পথে থাকে। শুধু বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই তাঁর নির্দেশাবলী অস্বীকার করে। মুজিবুর রহমান

And when waves come over them like canopies, they supplicate Allah, sincere to Him in religion. But when He delivers them to the land, there are [some] of them who are moderate [in faith]. And none rejects Our signs except everyone treacherous and ungrateful. Sahih International

৩২. আর যখন তরঙ্গ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ছায়ার মত(১), তখন তারা আল্লাহকে ডাকে তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌছান। তখন তাদের কেউ কেউ মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে(২); আর শুধু বিশ্বাসঘাতক, কাফির ব্যক্তিই আমাদের নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে।(৩)

(১) এখানে মেঘের ছায়া উদ্দেশ্য হতে পারে, আবার পাহাড় বা অনুরূপ বড় কিছুর ছায়াও উদ্দেশ্য হতে পারে। [কুরতুবী, মুয়াস্‌সার]

(২) অর্থাৎ তখন তাদের মধ্যে একদল মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে, আল্লাহর সত্যিকার শোকর আদায় করে না। আর তাদের মধ্যে আরেক দল সম্পূর্ণভাবে শির্ক ও কুফরি করে। তারা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে। [জালালাইন; সা’দী; মুয়াস্‌সার] আয়াতে আল্লাহ তা'আলা প্ৰথম দলের বর্ণনার পর দ্বিতীয় দলের বর্ণনা করেননি। কারণ, পরবর্তী বাক্য থেকে অপর দলটির অবস্থান বোঝা যাচ্ছে।

(৩) বিশ্বাসঘাতক এমন এক ব্যক্তি যে মারাত্মক রকমের বেঈমানী করে এবং নিজের প্রতিশ্রুতি ও অংগীকার পালন করে না। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) পর্বত (বা মেঘ)মালা সম তরঙ্গমালা যখন ওদেরকে ঢেকে নিতে চায়, তখন ওরা আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ-চিত্ত হয়ে তাঁকে ডাকে।[1] কিন্তু তিনি যখন ওদেরকে কূলে ভিড়িয়ে উদ্ধার করেন, তখন ওদের কেউ কেউ সরল পথে থাকে।[2] কেবল বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।[3]

[1] অর্থাৎ, যখন তাদের জলজাহাজকে মেঘ ও পাহাড়ের মত ঢেউ এসে ঘিরে নেয় এবং মৃত্যুর পঞ্জা তাদেরকে গ্রাস করে ফেলছে মনে হয়, তখন পৃথিবীর সকল উপাস্য তাদের মন থেকে মুছে যায় এবং একমাত্র আসমানী উপাস্যকে তারা ডাকতে শুরু করে, যিনি প্রকৃত ও বাস্তব উপাস্য।

[2] কেউ কেউ (مقتصدٌ) এর অর্থ ‘অঙ্গীকার পালনকারী’ বলেছেন। অর্থাৎ অনেকে ঈমান, তাওহীদ ও আনুগত্যের যে অঙ্গীকার সামুদ্রিক তুফানী ঢেউয়ের সময় করেছিল তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাদের নিকট উক্ত বাক্যে কিছু শব্দ ঊহ্য আছে, আর তা হল, (فمنهم مقتصدٌ ومنهم كافرٌ) অর্থাৎ, তখন ওদের মধ্যে কেউ বিশ্বাসী হয় এবং কেউ অবিশ্বাসী হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) অন্য মুফাসসিরদের নিকট এর অর্থ হল ‘মধ্যম পন্থা অবলম্বনকারী’ আর তা আপত্তি স্বরূপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ এমন সঙ্কটময় অবস্থা ও আল্লাহর এমন বৃহৎ নিদর্শন চাক্ষুষ দর্শন করে এবং পরিত্রাণরূপ আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার পরেও মানুষ এখনো আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদত ও আনুগত্য করে না; বরং মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে? অথচ যে পরিস্থিতির সম্মুখীন সে হয়েছিল, তাতে পরিপূর্ণ ইবাদতে রত হওয়ার কথা ছিল; মধ্যবর্তী ইবাদতে রত হওয়ার কথা নয়। (ইবনে কাসীর) তবে প্রথমোক্ত অর্থটিই পূর্বাপর বাগধারার সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল।

[3] ختاَّر এর অর্থ হল বিশ্বাসঘাতক, চুক্তি ভঙ্গকারী, كَفُوْر অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান