২১ সূরাঃ আল-আম্বিয়া | Al-Anbiya | سورة الأنبياء - আয়াতঃ ১০৭
২১:১০৭ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۰۷﴾
و ما ارسلنک الا رحمۃ للعلمین ۱۰۷

আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। আল-বায়ান

আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য পাঠিয়েছি কেবল রহমত হিসেবে। তাইসিরুল

আমিতো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি শুধু রাহমাত রূপেই প্রেরণ করেছি। মুজিবুর রহমান

And We have not sent you, [O Muhammad], except as a mercy to the worlds. Sahih International

১০৭. আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই পাঠিয়েছি।(১)

(১) العالمين শব্দটি عالم শব্দের বহুবচন। মানব, জিন, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, জড় পদার্থসমূহ সবই এর অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার জন্যেই রহমতস্বরূপ ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন মানব জাতির জন্য আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আমি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রহমত”। [ত্বাবরানী, মুজামুল আওসাতঃ ৩০০৫, আস-সাগীরঃ ১/১৬৮, নং ২৬৪, মুস্তাদরাক হাকিমঃ ১/৯১ নং ১০০, মুসনাদে শিহাবঃ ১১৬০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৫/৬৯, ৩০৫, মারফু' সনদে আর সুন্নান দারমী, হাদীস নং ১৫ মুরসাল সহীহ সনদে]

তাছাড়া যদি আখেরাতই সঠিক জীবন হয় তাহলে আখেরাতের আহবানকে প্রতিষ্ঠিত করতে কুফর ও শির্ককে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে কাফেরদেরকে হীনবল করা এবং তাদের মোকাবেলায় জেহাদ করাও সাক্ষাত রহমত। এর ফলে আশা করা যায় যে, অবাধ্যদের জ্ঞান ফিরে আসবে এবং তারা ঈমান ও সৎকর্মের অনুসারী হয়ে যাবে। যারা রাসূলের উপর ঈমান আনবে ও তার কথায় বিশ্বাস করবে তারা অবশ্যই সৌভাগ্যবান হবে, আর যারা ঈমান আনবে না তারা দুনিয়াতে পূর্ববর্তী উন্মতদের মত ভূমিধ্বস বা ডুবে মরা থেকে অন্তত নিরাপদ থাকবে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় রহমত। [কুরতুবী]

অথবা আয়াতের অর্থ, আমরা আপনাকে সবার জন্যই রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু এটা তাদের জন্যই যারা ঈমান আনবে এবং আপনাকে মেনে নিবে। কিন্তু যারা আপনার কথা মানবে না, তারা দুনিয়া ও আখেরাত সর্বত্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, “আপনি কি তাদেরকে লক্ষ্য করেন না। যারা আল্লাহর অনুগ্রহকে কুফারী দ্বারা পরিবর্তন করে নিয়েছে এবং তারা তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে আনে ধ্বংসের ঘরে — জাহান্নামে, যার মধ্যে তারা দগ্ধ হবে, আর কত নিকৃষ্ট এ আবাসস্থল!”। [সূরা ইবরাহীম: ২৮–২৯]

অন্য আয়াতে কুরআন সম্পর্কে বলা হয়েছে, “বলুন, এটি মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও আরোগ্য।” আর যারা ঈমান আনে না তাদের কানে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন এদের (অন্তরের) উপর অন্ধত্ব তৈরী করবে। তাদেরকেই ডাকা হবে দূরবর্তী স্থান হতে।” [সূরা ফুসসিলাত: ৪৪] তাছাড়া হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে অভিশাপকারী করে পাঠানো হয় নি, আমাকে রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে।” [মুসলিম: ২৫৯৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৭) আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু করুণা রূপেই প্রেরণ করেছি। [1]

[1] এর অর্থ হল, যে ব্যক্তি রসূল (সাঃ)-এর রিসালতের উপর ঈমান আনবে সে আসলে উক্ত করুণা ও রহমতকে গ্রহণ করবে। পরিণামে দুনিয়া ও আখিরাতে সে সুখ ও শান্তি লাভ করবে। আর যেহেতু রসূল (সাঃ)-এর রিসালাত বিশ্বজগতের জন্য, সেহেতু তিনি বিশ্বজগতের রহমত রূপে; অর্থাৎ নিজের শিক্ষা দ্বারা বিশ্ববাসীকে ইহ-পরকালের সুখের সন্ধান দিতে প্রেরিত হয়েছিলেন। কিছু উলামা তাঁকে এই অর্থেও বিশ্বজগতের জন্য করুণা বলেছেন যে, তাঁর কারণেই এই উম্মত (তাঁর দাওয়াত গ্রহণ অথবা বর্জনকারী মুসলিম অথবা কাফের সকলেই) নির্মূলকারী ব্যাপক ধ্বংসের হাত হতে রেহাই পেয়েছে। যেভাবে পূর্ববর্তী বহু জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াকে ঐ রকম আযাব দিয়ে ধ্বংস করে নির্মূল করা হয়নি। বহু হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, মুশরিকদের উপর বদ্দুআ ও অভিশাপ না করাও ছিল তাঁর করুণারই একটি বিশেষ অংশ। তাঁকে তাদের উপর বদ্দুআ করতে আবেদন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি অভিশাপকারীরূপে প্রেরিত হইনি; আমি কেবল করুণারূপে প্রেরিত হয়েছি।’’ (মুসলিম ২০০৬নং) অনুরূপ রাগান্বিত অবস্থায় কোন মুসলিমকে তাঁর অভিশাপ বা গালিমন্দ করাকে কিয়ামতের দিন তার জন্য রহমতের কারণ হওয়ার দু’আ করাও তাঁর দয়ারই একটি অংশ। (আহমাদ ২/৪৩৭, আবুদাউদ ৪৬৫৯নং, সিলসিলাহ সহীহাহ আলবানী ১৭৫৮নং) এই কারণেই একটি হাদীসে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি রহমতের মূর্তপ্রতীক হয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্বজগতের জন্য একটি উপহার।’’ (সহীহুল জামে’ ২৩৪৫নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান