২ . আল-বাকারা
২:১৫৪ وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰكِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۵۴﴾

যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পার না। আল-বায়ান

আর আল্লাহর পথে নিহতদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা বুঝ না। তাইসিরুল

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলনা, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অবগত নও। মুজিবুর রহমান

And do not say about those who are killed in the way of Allah, "They are dead." Rather, they are alive, but you perceive [it] not. Sahih International

১৫৪. আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত(১); কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।

(১) প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি আলমে-বরযখে বা কবরে বিশেষ ধরণের এক প্রকার হায়াত বা জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কবরের আযাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে। তবে সে জীবনের হাকীকত আমরা জানি না। যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন, তাদেরকে শহীদ বলা হয়। তাদের মৃত্যুকে অন্যান্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, মৃত্যুর পর প্রত্যেকেই বরযখের জীবন লাভ করে থাকে এবং সে জীবনের পুরস্কার অথবা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। কিন্তু শহীদগণকে সে জীবনের অন্যান্য মৃতের তুলনায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শহীদগণের রূহ সবুজ পাখীর প্রতিস্থাপন করা হয়, ফলে তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারে। তারপর তারা আরশের নীচে অবস্থিত কিছু ঝাড়বাতির মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন তাদের রব তাদের প্রতি এক দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি চাও? তারা বলে হে রব! আমরা কি চাইতে পারি? আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তো আপনি আপনার কোন সৃষ্টিকে দেন নি। তারপরও তাদের রব আবার তাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে অনুরূপ প্রশ্ন করেন।

যখন তারা বুঝল যে, তারা কিছু চাইতেই হবে, তখন তারা বলে, আমরা চাই আপনি আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ফেরৎ পাঠান, যাতে আমরা পুনরায় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হতে পারি। শহীদগণের সাওয়াবের আধিক্য দেখেই তারা এ কথা বলবে- তখন তাদের মহান রব তাদের বলবেন, আমি এটা পূর্বে নির্ধারিত করে নিয়েছি যে, এখান থেকে আর ফেরার কোন সুযোগ নেই।” [মুসলিম: ১৮৮৭]

তবে সাধারণ নিয়মে শহীদদেরকে মৃতই ধরা হয় এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ওয়ারিসগণের মধ্যে বন্টিত হয়, তাদের বিধবাগণ অন্যের সাথে পুনর্বিবাহ করতে পারে। যেহেতু বরযখের অবস্থা মানুষের সাধারণ পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করা যায় না, সেহেতু কুরআনে শহীদের সে জীবন সম্পর্কে (لَا تَشْعُرُونَ) (তোমরা বুঝতে পার না) বলা হয়েছে। এর মর্মার্থ হলো এই যে, সে জীবন সম্পর্কে অনুভব করার মত অনুভূতি তোমাদের দেয়া হয়নি। এ আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট হলো যে, শহীদেরা পার্থিব জীবনের মত জীবিত নন। তাদেরকে জীবিত বলা হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে বিশেষ এক জীবন বরযখে দিয়েছেন, যার হাকীকত বা বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৪) যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে, তাদেরকে মৃত বলো না,[1] বরং তারা জীবিত; কিন্তু তা তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।

[1] শহীদদেরকে মৃত না বলা তাঁদের শ্রদ্ধা ও সম্মানের জন্য। পক্ষান্তরে তাঁদের সে জীবন বারযাখের জীবন যা আমাদের অনুভূতি ও উপলব্ধির অনেক ঊর্ধ্বে। এই বারযাখী জীবন মর্যাদার স্তর অনুযায়ী আম্বিয়া, মুমিনগণ এমন কি কাফেররাও লাভ করবে। শহীদদের আত্মা এবং কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, মুমিনদের আত্মাও একটি পাখীর মধ্যে বা বুকে অবস্থান করে জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করবে। (ইবনে কাসীর, দ্রষ্টব্যঃ আলে-ইমরান ১৬৯ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৫৫ وَ لَنَبۡلُوَنَّكُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ

আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। আল-বায়ান

তোমাদেরকে ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি (এসবের) কোনকিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব, ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর। তাইসিরুল

এবং নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ এবং ফল-ফসলের দ্বারা পরীক্ষা করব; এবং ঐ সব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান কর। মুজিবুর রহমান

And We will surely test you with something of fear and hunger and a loss of wealth and lives and fruits, but give good tidings to the patient, Sahih International

১৫৫. আর আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরিক্ষা করব(১) কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদেরকে।

(১) কোন বিপদে পতিত হওয়ার আগেই যদি সে সম্পর্কে সংবাদ দিয়ে দেয়া হয়, তবে সে বিপদে ধৈর্যধারণ সহজতর হয়ে যায়। কেননা, হঠাৎ করে বিপদ এসে পড়লে পেরেশানী অনেক বেশী হয়। যেহেতু আল্লাহ্ তা'আলা সমগ্র উম্মতকে লক্ষ্য করেই পরীক্ষার কথা বলেছেন, সেহেতু সবার পক্ষেই অনুধাবন করা উচিত যে, এ দুনিয়া দুঃখ-কষ্ট সহ্য করারই স্থান। সুতরাং এখানে যেসব সম্ভাব্য বিপদ-আপদের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোকে অপ্রত্যাশিত কিছু মনে না করলেই ধৈর্যধারণ করা সহজ হতে পারে। পরীক্ষায় সমগ্র উম্মত সমষ্টিগতভাবে উত্তীর্ণ হলে পরে সমষ্টিগতভাবেই পুরস্কার দেয়া হবে; এছাড়াও সবর-এর পরীক্ষায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে যারা যতটুকু উত্তীর্ণ হবেন, তাদের ততটুকু বিশেষ মর্যাদাও প্রদান করা হবে।

মূলত: মানুষের ঈমান অনুসারেই আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা, বিপদাপদ-বালা মুসিবত নবীদেরকে প্রদান করেন। তারপর যারা তাদের পরের লোক, তারপর যারা এর পরের লোক, তারপর যারা এর পরের লোক।” [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৩৬৯] অর্থাৎ প্রত্যেকের ঈমান অনুসারেই তাদের পরীক্ষা হয়ে থাকে। তবে পরীক্ষা যেন কেউ আল্লাহর কাছে কামনা না করে। বরং সর্বদা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করাই মুমিনের কাজ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক লোককে বলতে শুনেছেন যে, “হে আল্লাহ! আমাকে সবরের শক্তি দান কর। তখন তিনি বললেন, তুমি বিপদ কামনা করেছ, সুতরাং তুমি নিরাপত্তা চাও।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৩১,২৩৫] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, মুমিনের উচিত নয় নিজেকে অপমানিত করা। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, কিভাবে নিজেকে অপমানিত করে? রাসূল বললেন, এমন কোন বালা-মুসিবতের সম্মুখীন হয় যা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই”। [তিরমিযী: ২২৫৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৫) নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ এবং ফলের (ফসলের) নোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৫৬ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ؕ

যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। আল-বায়ান

নিশ্চয়ই যারা বিপদকালে বলে থাকে, ‘আমরা আল্লাহরই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’। তাইসিরুল

যাদের উপর কোন বিপদ নিপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। মুজিবুর রহমান

Who, when disaster strikes them, say, "Indeed we belong to Allah, and indeed to Him we will return." Sahih International

১৫৬. যারা তাদের উপর বিপদ আসলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী(১)।

(১) সবরকারীগণের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা বিপদের সম্মুখীন হলে – ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করে। এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যে, কেউ বিপদে পড়লে যেন এ দোআটি পাঠ করে। কেননা, এরূপ বলাতে একাধারে যেমন অসীম সওয়াব পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি যদি এ বাক্যের অর্থের প্রতি যথার্থ লক্ষ্য রেখে তা পাঠ করা হয়, তবে বিপদে আন্তরিক শান্তি লাভ এবং তা থেকে উত্তরণও সহজতর হয়ে যায়। দোআটির অর্থ হচ্ছে, “নিশ্চয় আমরা তো আল্লাহরই। আর আমরা তার দিকেই প্রতীবর্তন করব।” সুতরাং আল্লাহ্ তা'আলা যদি আমাদের কোন কষ্ট দেন তবে তাতে কোন না কোন মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তার উদ্দেশ্যকে সম্মান করতে পারা একটি মহৎ কাজ। আর এটাই হচ্ছে, সবর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুমিনের কর্মকাণ্ড আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই ভাল।

মুমিন ছাড়া আর কারও জন্য এমনটি হয় না। যদি তার কোন খুশীর বিষয় সংঘটিত হয় তবে সে শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণের হয়। আর যদি তার কোন ক্ষতিকর কিছু ঘটে যায় তবে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্য কলাণকর হয়।” [মুসলিম: ২৯৯৯] অপর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ বিপদ-মুসিবতে পড়ে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন’ বলবে, এবং বলবে, হে আল্লাহ আমাকে এ মুসিবত থেকে উদ্ধার করুন এবং এর থেকে উত্তম বস্তু ফিরিয়ে দিন” অবশ্যই আল্লাহ তাকে উত্তম কিছু ফিরিয়ে দিবেন।” [মুসলিম ৯১৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৬) যারা তাদের উপর কোন বিপদ এলে বলে, ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাব।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৫৭ اُولٰٓئِكَ عَلَیۡهِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ۟ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُهۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۷﴾

তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। আল-বায়ান

এদের প্রতি রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অনুগ্রহ ও করুণা আর এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। তাইসিরুল

এদের উপর তাদের রবের পক্ষ হতে শান্তি ও করুনা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী। মুজিবুর রহমান

Those are the ones upon whom are blessings from their Lord and mercy. And it is those who are the [rightly] guided. Sahih International

১৫৭. এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রব-এর কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৭) এই সকল লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা ও করুণা বর্ষিত হয়, আর এরাই হল সুপথগামী। [1]

[1] এই আয়াতগুলোতে রয়েছে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য সুসংবাদ। হাদীসে বিপদের সময়

{إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ} এর সাথে (اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا) পড়ার ফযীলত ও তাকীদ এসেছে। (মুসলিম ৯১৮নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৫৮ اِنَّ الصَّفَا وَ الۡمَرۡوَۃَ مِنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ ۚ فَمَنۡ حَجَّ الۡبَیۡتَ اَوِ اعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِ اَنۡ یَّطَّوَّفَ بِهِمَا ؕ وَ مَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ شَاكِرٌ عَلِیۡمٌ ﴿۱۵۸﴾

নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে কিংবা উমরা করবে তার কোন অপরাধ হবে না যে, সে এগুলোর তাওয়াফ করবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কল্যাণ করবে, তবে নিশ্চয় শোকরকারী, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান

নিশ্চয়ই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। কাজেই যে ব্যক্তি কাবাগৃহের হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ করবে, এ দু’টোর সাঈ করাতে তাদের কোনই গুনাহ নেই এবং যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন সৎ কাজ করবে তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ (তার ব্যাপারে) গুণগ্রাহী এবং সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত। অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহে ‘হাজ্জ’ অথবা ‘উমরাহ’ পালন’ করে তার জন্য এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ করা দোষণীয় নয়, এবং কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎ কাজ করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞাত। মুজিবুর রহমান

Indeed, as-Safa and al-Marwah are among the symbols of Allah. So whoever makes Hajj to the House or performs 'umrah - there is no blame upon him for walking between them. And whoever volunteers good - then indeed, Allah is appreciative and Knowing. Sahih International

১৫৮. নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের(১) অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ (কা’বা) ঘরের হজ(২) বা উমরা(৩) সম্পন্ন করে, এ দু'টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোন পাপ নেই(৪)। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন সৎকাজ করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ উত্তম পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।

(১) (شَعَائِرِ اللَّهِ) এখানে شعائر শব্দটি شعيرة শব্দের বহুবচন। এর অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন। (شَعَائِرِ اللَّهِ) বলতে সেসব আমলকে বুঝায়, যেগুলোকে আল্লাহ্ তা'আলা দ্বীনের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

(২) حج এর শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা পোষণ করা, সংকল্প করা। কুরআন-সুন্নাহর পরিভাষায় বিশেষ সময়ে বিশেষ অবস্থায় বায়তুল্লাহ শরীফে আল্লাহ্‌র ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করে বিশেষ ধরনের কিছু কর্ম সম্পাদন করাকে হজ্ব বলা হয়ে থাকে।

(৩) عمرة শব্দের আভিধানিক অর্থ দর্শন করা। শরীআতের পরিভাষায়, ইহরামসহ আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ্ শরীফে হাযির হয়ে তাওয়াফ-সায়ী প্রভৃতি বিশেষ কয়েকটি ইবাদাত সম্পাদনের নামই উমরাহ।

(৪) সাফা এবং মারওয়া বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী দুটি পাহাড়ের নাম। হজ কিংবা উমরার সময় কাবাঘরের তওয়াফ করার পর এ দু'টি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হয় শরীআতের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘সায়ী’। জাহেলী যুগেও যেহেতু এ সায়ীর রীতি প্রচলিত ছিল এবং তখন এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যে কয়েকটি মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, এ জন্য মুসলিমদের কারো কারো মনে একটা দ্বিধার ভাব জাগ্রত হয়েছিল যে, বোধহয় এ সায়ী জাহেলী যুগের কোন অনুষ্ঠান এবং ইসলাম যুগে এর অনুসরণ করা হয়ত গোনাহর কাজ। কোন কোন লোক যেহেতু জাহেলী যুগে একে একটা অর্থহীন কুসংস্কার বলে মনে করতেন, সেজন্য ইসলাম গ্রহণের পরও তারা একে জাহেলিয়াত যুগের কুসংস্কার হিসেবেই গণ্য করতে থাকেন। এরূপ সন্দেহের নিরসনকল্পে আল্লাহ্ তা'আলা যেভাবে বায়তুল্লাহ্ শরীফের কেবলা হওয়া সম্পর্কিত সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছেন, তেমনিভাবে এ আয়াতে বায়তুল্লাহ সংশ্লিষ্ট আরও একটি সংশয়ের অপনোদন করে দিয়েছেন। তাছাড়া রাসূলের বিভিন্ন হাদীস দ্বারাও সাফা-মারওয়ার মাঝখানের সায়ী প্রমাণিত। [দেখুন, মুসনাদে আহমাদ: ৬/৪২১, ৪২২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৮) নিশ্চয় স্বাফা ও মারওয়া (পাহাড় দুটি) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।[1] সুতরাং যে কা’বাগৃহের হজ্ব কিংবা উমরাহ সম্পন্ন করে, তার জন্য এই (পাহাড়) দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করলে কোন পাপ নেই। [2] আর কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন পুণ্য কাজ করলে, আল্লাহ গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞাতা।

[1] شَعَائِرُ হল شَعِيْرَةٌ এর বহুবচন। যার অর্থ, নিদর্শন বা প্রতীক। এখানে নিদর্শনসমূহ বলতে হজ্জ আদায়ের সময় ইবাদতের বিভিন্ন স্থান (যেমন, মিনা, আরাফাত, মুযদালিফা, সাঈ ও কুরবানীর স্থান) কে বুঝানো হয়েছে, যা আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট।

[2] স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করা হজ্জের একটি রুকন (প্রধান অঙ্গ)। কিন্তু কুরআনের শব্দ ‘কোন পাপ নেই’ থেকে কোন কোন সাহাবীর সন্দেহ হয়েছিল যে, স্বাফা-মারওয়ার সাঈ জরুরী নয়। আয়েশা (রাযিআল্লাহু আনহা) যখন এ ব্যাপারে অবগত হলেন, তখন বললেন, যদি এর অর্থ এই হত, (যা তোমরা মনে কর) তাহলে মহান আল্লাহ এইভাবে বলতেন,

{فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ لاَ يَطَّوَّفَ بِهِمَا} (প্রদক্ষিণ বা সাঈ না করলে কোন পাপ নেই।) তারপর এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ বললেন যে, আনসার সাহাবীগণ ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে ‘মানাত’ মূর্তির নামে ‘তালবিয়া’ পড়ত এবং মুশাল্লাল পাহাড়ে তার পূজা করত। মক্কায় পৌঁছে এই ধরনের লোক স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করাকে পাপ মনে করত। ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁরা রসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে এই আয়াত নাযিল হয়। যাতে বলা হয়েছে, স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করা গুনাহ নয়। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল হজ্জঃ পরিচ্ছেদঃ স্বাফা-মারওয়ার সাঈ ওয়াজিব) কেউ কেউ এর কারণ এইভাবে বর্ণনা করেছেন যে, জাহেলিয়াতে মুশরিকরা স্বাফা পাহাড়ে ‘ইসাফ’ এবং মারওয়ায় ‘নায়েলা’ নামক মূর্তি স্থাপন করেছিল। সাঈ করার সময় তারা এদেরকে চুম্বন বা স্পর্শ করত। যখন তারা ইসলাম কবুল করে, তখন তাদের মাথায় এই খেয়াল এল যে, মনে হয় স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করলে গুনাহ হতে পারে। কারণ, ইসলামের পূর্বে তারা উক্ত দু’টি মূর্তির জন্য সাঈ করত। মহান আল্লাহ এই আয়াতে তাদের সন্দেহ ও মনের কিন্তুকে দূর করে দিয়েছেন। এখন (উমরাহ ও হজ্জে ৭ বার যাওয়া-আসার মাধ্যমে) এই সাঈ করা জরুরী। যার শুরু স্বাফা থেকে হবে এবং শেষ হবে মারওয়ায়। (আইসারুত্ তাফাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৫৯ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَكۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡهُدٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا بَیَّنّٰهُ لِلنَّاسِ فِی الۡكِتٰبِ ۙ اُولٰٓئِكَ یَلۡعَنُهُمُ اللّٰهُ وَ یَلۡعَنُهُمُ اللّٰعِنُوۡنَ ﴿۱۵۹﴾ۙ

নিশ্চয় যারা গোপন করে সু-স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়াত যা আমি নাযিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেন এবং লা‘নতকারীগণও তাদেরকে লা‘নত করে। আল-বায়ান

নিশ্চয়ই যারা আমার অবতীর্ণ কোন দলীল এবং হিদায়াতকে লোকেদের জন্য আমি কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করার পরেও গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন আর অভিসম্পাতকারীরাও তাদের প্রতি অভিসম্পাত করে থাকে। তাইসিরুল

আমি যে সব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি ঐগুলিকে সর্ব সাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who conceal what We sent down of clear proofs and guidance after We made it clear for the people in the Scripture - those are cursed by Allah and cursed by those who curse, Sahih International

১৫৯. নিশ্চয় যারা(১) গোপন করে আমরা যেসব সুস্পষ্ট নিদর্শন ও হেদায়াত নাযিল করেছি, মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পর(২), তাদেরকে আল্লাহ লা'নত করেন এবং লা'নতকারীগণও(৩) তাদেরকে লা'নত করেন(৪)।

(১) যারা আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান গোপন করত, তারা ছিল ইয়াহুদী আলেম সম্প্রদায়। তারা সর্বসাধারণ্যে প্রচার করার পরিবর্তে ইলমে দ্বীনকে একটি সীমিত ধর্মীয় পেশাদার গোষ্ঠীর মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছিল। সাধারণ জনগণকে এ জ্ঞান থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। এমনকি এ গোষ্ঠীর লোকগুলো নিজেদের জনপ্রিয়তা অব্যাহত রাখার জন্য ভ্রষ্টতা ও শরীআত বিরোধী কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়তে নিজেদের কথা ও কাজের সাহায্যে অথবা নীরব সমর্থনের মাধ্যমে বৈধতার ছাড়পত্র দান করত। এ আয়াতে এ ধরণের প্রবণতা থেকে মুসলিমদেরকে দূরে থাকার তাকীদ দেয়া হয়েছে।

(২) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর যে সমস্ত প্রকৃষ্ট হিদায়াত নাযিল হয়েছে, সেগুলো মানুষের কাছে গোপন করা এত কঠিন হারাম ও মহাপাপ, যার জন্য আল্লাহ্ তাআলা নিজেও লা'নত বা অভিসম্পাত করে থাকেন এবং সমগ্র সৃষ্টিও অভিসম্পাত করে। এতে কয়েকটি বিষয় জানা যায়ঃ এক. যে জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার বিশেষ জরুরী, তা গোপন করা হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে লোক দ্বীনের কোন বিধানের বিষয় জানা সত্ত্বেও তা জিজ্ঞেস করলে গোপন করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'আলা তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেবেন’। [আবু দাউদঃ ৩৬৫৮, ইবনে মাজাহঃ ২৬৬, আহমাদঃ ২/২৬৩] দুই. জ্ঞানকে গোপন করার অভিসম্পাত সে সমস্ত জ্ঞান ও মাসআলা গোপন করার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যা কুরআন ও সুন্নাহতে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে এবং যার প্রকাশ ও প্রচার করা কর্তব্য।

পক্ষান্তরে এমন সূক্ষ্ম ও জটিল মাসআলা সাধারণ্যে প্রকাশ না করাই উত্তম, যদ্বারা সাধারণ লোকদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। তখন তা জ্ঞানকে গোপন করার হুকুমের আওতায় পড়বে না। উল্লেখিত আয়াতে (مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ) বাক্যের দ্বারাও তেমনি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘তোমরা যদি সাধারণ মানুষকেএমন সবহাদীস শোনাও, যা তারা পরিপূর্ণভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না, তবে তাদেরকে ফেতনা ফাসাদেরই সম্মুখীন করবে’। [বুখারী, কিতাবুল ইলম, ইমাম মুসলিম, মুকাদ্দিমা] আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উদ্ধৃত রয়েছে, তিনি বলেছেন, সাধারণ মানুষের সামনে ইলমের শুধু ততটুকু প্রকাশ করবে, যতটুকু তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি ধারণ করতে পারে। মানুষ আল্লাহ ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করুক; তোমরা কি এমন কামনা কর? কারণ, যে কথা তাদের বোধগম্য নয়, তাতে তাদের মনে নানা রকম সন্দেহসংশয় সৃষ্টি হবে এবং তাতে করে তারা আল্লাহ ও রাসূলকে অস্বীকারও করে বসতে পারে। [বুখারী, কিতাবুল ইলমঃ ৪৯ নং অধ্যায়]

(৩) যে কাফের কুফর অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে বলে নিশ্চিত নয়, তার প্রতি লা'নত করা বৈধ নয়। আর আমাদের পক্ষে যেহেতু কারো শেষ পরিণতির (মৃত্যুর) নিশ্চিত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়ার কোন উপায় নেই, সেহেতু কোন কাফেরের নাম নিয়ে তার প্রতি লা'নত বা অভিসম্পাত করাও জায়েয নয়। বস্তুতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত কাফেরের নাম উল্লেখ করে লা'নত করেছেন, কুফর অবস্থায় তাদের মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে তিনি অবহিত হয়েছিলেন। অবশ্য সাধারণ কাফের ও যালেমদের প্রতি অনির্দিষ্টভাবে লা'নত করা জায়েয। এতে এ কথাও সাব্যস্ত হয়ে যায় যে, লা'নতের ব্যাপারটি যখন এতই কঠিন ও নাযুক যে, কুফর অবস্থায় মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোন কাফেরের প্রতিও লা'নত করা বৈধ নয়, তখন কোন মুসলিম কিংবা কোন জীব-জন্তুর উপর কেমন করে লা'নত করা যেতে পারে?

সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে আমাদের নারী সম্প্রদায় একান্ত গাফলতিতে পড়ে আছে। তারা কথায় কথায় নিজেদের আপনজনদের প্রতিও অভিসম্পাত বা লা'নত বাক্য ব্যবহার করতে থাকে এবং শুধু লা'নত বাক্য ব্যবহার করেই সন্তুষ্ট হয় না; বরং তার সমার্থক যে সমস্ত শব্দ জানা থাকে সেগুলোও ব্যবহার করতে কসুর করে না। লা'নতের প্রকৃত অর্থ হল, আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। কাজেই কাউকে ‘মরদূদ’, ‘আল্লাহর অভিশপ্ত প্রভৃতি শব্দে গালি দেয়াও লা'নতেরই সমপর্যায়ভুক্ত। [মা'আরিফুল কুরআন]

(৪) এ আয়াতে কুরআনুল কারীম লা'নত বা অভিসম্পাতকারীদের নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেনি। মুফাসসিরগণ বলেন, এভাবে বিষয়টি অনির্ধারিত রাখাতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, দুনিয়ার প্রতিটি বস্তু ও প্রতিটি সৃষ্টিই তাদের উপর অভিসম্পাত করে থাকে। মুজাহিদ ও আতা রাহিমাহুমাল্লাহ বলেন, এমনকি জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গও তাদের প্রতি অভিসম্পাত করে। [সুনান সাঈদ ইবনে মানসূর: ২/৬৩৮, ৬৩৯, বাইহাকী, শু'আবুল ঈমান: ৫/২৪] কারণ, তাদের অপকর্মের দরুন সেসব সৃষ্টিরও ক্ষতি সাধিত হয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৯) আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে আমি কিতাবে ব্যক্ত করার পরও যারা ঐ সকল গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ দেয়। [1]

[1] মহান আল্লাহ যে সকল কথা কুরআন মাজীদে অবতীর্ণ করেছেন তা গোপন করা এত বড় অন্যায় যে, আল্লাহ ছাড়াও অন্যান্য অভিশাপকারীরা অভিশাপ দিতে থাকে। তাছাড়া হাদীসে আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন ইলম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হওয়ার পর তা গোপন করে সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন আগুনের একটি লাগাম পরানো হবে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী, হাকেম অনুরূপ।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৬০ اِلَّا الَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اَصۡلَحُوۡا وَ بَیَّنُوۡا فَاُولٰٓئِكَ اَتُوۡبُ عَلَیۡهِمۡ ۚ وَ اَنَا التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶۰﴾

তারা ছাড়া, যারা তাওবা করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব, আমি তাদের তাওবা কবূল করব। আর আমি তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

কিন্তু যারা তাওবাহ করে এবং সংশোধন করে নেয় এবং (সত্যকে) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে, তাদের তাওবাহ আমি কবুল করি, বস্তুতঃ আমি অত্যধিক তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু। তাইসিরুল

কিন্তু যারা তাওবাহ করে ও সংশোধিত হয় এবং সত্য প্রকাশ করে, বস্ত্ততঃ আমি তাদের প্রতি ক্ষমা প্রদানকারী, করুণাময়। মুজিবুর রহমান

Except for those who repent and correct themselves and make evident [what they concealed]. Those - I will accept their repentance, and I am the Accepting of repentance, the Merciful. Sahih International

১৬০. তবে যারা তাওবা করেছে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করেছে এবং সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছে। অতএব, এদের তাওবা আমি কবুল করব। আর আমি অধিক তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬০) কিন্তু যারা তওবা করে (ক্ষমা প্রার্থনা করে) আর নিজেদেরকে সংশোধন করে এবং (আল্লাহর আয়াতকে) স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, এরাই তো তারা, যাদের তওবা আমি গ্রহণ করি। আর আমি তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৬১ اِنَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ مَاتُوۡا وَ هُمۡ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ عَلَیۡهِمۡ لَعۡنَۃُ اللّٰهِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃِ وَ النَّاسِ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۶۱﴾ۙ

নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সকল মানুষের লা’নত। আল-বায়ান

নিশ্চয় যারা কাফির এবং কাফের অবস্থাতেই মারা যায়, এমন লোকেদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং সকল মানুষের অভিসম্পাত। তাইসিরুল

যারা অবিশ্বাস করেছে ও অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে, নিশ্চয়ই তাদের উপর আল্লাহর মালাক/ফেরেশতা এবং মানবকূলের সবারই অভিসম্পাত। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who disbelieve and die while they are disbelievers - upon them will be the curse of Allah and of the angels and the people, all together, Sahih International

১৬১. নিশ্চয়ই যারা কুফর করেছে এবং কাফের অবস্থায় মারা গেছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সকল মানুষের লা'নত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬১) নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করে (কাফের) এবং অবিশ্বাসী (কাফের) থাকা অবস্থায় মারা যায়, তাদের উপর আল্লাহ, ফিরিশতাগণ এবং সকল মানুষের অভিসম্পাত।[1]

[1] এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যার ব্যাপারে নিশ্চিত জানা যাবে যে, সে কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তার উপর অভিসম্পাত করা জায়েয। এ ছাড়া কোন পাপী মুসলিমের উপর অভিসম্পাত করা জায়েয নয়, তাতে সে যতই বড় পাপী হোক না কেন। কারণ, হতে পারে যে, মৃত্যুর পূর্বে সে নিষ্ঠার সাথে তাওবা করে নিয়েছে অথবা মহান আল্লাহ তার অন্যান্য নেক আমলসমূহের কারণে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন, যা আমরা জানতে পারি না। অবশ্য কোন কোন পাপ কাজের দরুন লানত বা অভিশাপ করার কথা (শরীয়তে) এসেছে, এ পাপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাপারে বলা যেতে পারে যে, অভিসম্পাত বয়ে আনে এমন কাজ তারা করছে। এ রকম কাজ থেকে যদি তারা তওবা না করে, তাহলে আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত গণ্য হতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৬২ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ۚ لَا یُخَفَّفُ عَنۡهُمُ الۡعَذَابُ وَ لَا هُمۡ یُنۡظَرُوۡنَ ﴿۱۶۲﴾

তারা সেখানে স্থায়ী হবে। তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না। আল-বায়ান

তাতে তারা চিরকাল থাকবে, তাদের উপর ‘আযাব হালকা করা হবে না আর তাদেরকে বিরামও দেয়া হবে না। তাইসিরুল

তন্মধ্যে তারা সর্বদা অবস্থান করবে, তাদের শাস্তি প্রশমিত হবেনা এবং তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবেনা। মুজিবুর রহমান

Abiding eternally therein. The punishment will not be lightened for them, nor will they be reprieved. Sahih International

১৬২. সেখানে তারা স্থায়ী হবে। তাদের শাস্তি শিথিল করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬২) তারা চিরকাল তাতে (অভিসম্পাত ও দোযখে) অবস্থান করবে, তাদের শাস্তিকে লঘু করা হবে না এবং তারা কোন অবকাশও পাবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:১৬৩ وَ اِلٰـهُكُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶۳﴾

আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন এক আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই। তিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

এবং তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ; সেই সর্বদাতা করুণাময় ব্যতীত অন্য কেহ উপাস্য নেই। মুজিবুর রহমান

And your god is one God. There is no deity [worthy of worship] except Him, the Entirely Merciful, the Especially Merciful. Sahih International

১৬৩. আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, দয়াময়, অতি দয়ালু তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই।(১)

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহর ইসমে আযাম' এ দুটি আয়াতের মধ্যে রয়েছে।” তারপর তিনি এ আয়াত ও সূরা আলে ইমরানের প্রথম আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। [তিরমিযী: ৩৪৭৮, আবু দাউদ: ১৪৯৬, ইবনে মাজাহ: ৩৮৫৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬৩) আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য (আল্লাহ)। তিনি ব্যতীত আর কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই, [1] তিনি চরম করুণাময়, পরম দয়ালু।

[1] এই আয়াতে আবারও তাওহীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাওহীদের এই দাওয়াত মক্কার মুশরিকদের জন্য বোধগম্য ছিল না। তারা বলল, {أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ} সে কি এতগুলো উপাস্যের পরিবর্তে একটি মাত্র উপাস্য সাব্যস্ত করেছে। নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। (সূরা স্বা-দঃ ৫ আয়াত) এই জন্যই পরের আয়াতে এই তাওহীদের প্রমাণাদি পেশ করা হচ্ছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১৬১ থেকে ১৭০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 14 15 16 17 18 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »