সূরাঃ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة - আয়াতঃ ১৫৪
২:১৫৪ وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰکِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۵۴﴾
و لا تقولوا لمن یقتل فی سبیل الله اموات بل احیاء و لکن لا تشعرون ۱۵۴

যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পার না। আল-বায়ান

আর আল্লাহর পথে নিহতদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা বুঝ না। তাইসিরুল

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলনা, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অবগত নও। মুজিবুর রহমান

And do not say about those who are killed in the way of Allah, "They are dead." Rather, they are alive, but you perceive [it] not. Sahih International

১৫৪. আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত(১); কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।

(১) প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি আলমে-বরযখে বা কবরে বিশেষ ধরণের এক প্রকার হায়াত বা জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কবরের আযাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে। তবে সে জীবনের হাকীকত আমরা জানি না। যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন, তাদেরকে শহীদ বলা হয়। তাদের মৃত্যুকে অন্যান্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, মৃত্যুর পর প্রত্যেকেই বরযখের জীবন লাভ করে থাকে এবং সে জীবনের পুরস্কার অথবা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। কিন্তু শহীদগণকে সে জীবনের অন্যান্য মৃতের তুলনায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শহীদগণের রূহ সবুজ পাখীর প্রতিস্থাপন করা হয়, ফলে তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারে। তারপর তারা আরশের নীচে অবস্থিত কিছু ঝাড়বাতির মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন তাদের রব তাদের প্রতি এক দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি চাও? তারা বলে হে রব! আমরা কি চাইতে পারি? আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তো আপনি আপনার কোন সৃষ্টিকে দেন নি। তারপরও তাদের রব আবার তাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে অনুরূপ প্রশ্ন করেন।

যখন তারা বুঝল যে, তারা কিছু চাইতেই হবে, তখন তারা বলে, আমরা চাই আপনি আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ফেরৎ পাঠান, যাতে আমরা পুনরায় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হতে পারি। শহীদগণের সাওয়াবের আধিক্য দেখেই তারা এ কথা বলবে- তখন তাদের মহান রব তাদের বলবেন, আমি এটা পূর্বে নির্ধারিত করে নিয়েছি যে, এখান থেকে আর ফেরার কোন সুযোগ নেই।” [মুসলিম: ১৮৮৭]

তবে সাধারণ নিয়মে শহীদদেরকে মৃতই ধরা হয় এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ওয়ারিসগণের মধ্যে বন্টিত হয়, তাদের বিধবাগণ অন্যের সাথে পুনর্বিবাহ করতে পারে। যেহেতু বরযখের অবস্থা মানুষের সাধারণ পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করা যায় না, সেহেতু কুরআনে শহীদের সে জীবন সম্পর্কে (لَا تَشْعُرُونَ) (তোমরা বুঝতে পার না) বলা হয়েছে। এর মর্মার্থ হলো এই যে, সে জীবন সম্পর্কে অনুভব করার মত অনুভূতি তোমাদের দেয়া হয়নি। এ আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট হলো যে, শহীদেরা পার্থিব জীবনের মত জীবিত নন। তাদেরকে জীবিত বলা হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে বিশেষ এক জীবন বরযখে দিয়েছেন, যার হাকীকত বা বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫৪) যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে, তাদেরকে মৃত বলো না,[1] বরং তারা জীবিত; কিন্তু তা তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।

[1] শহীদদেরকে মৃত না বলা তাঁদের শ্রদ্ধা ও সম্মানের জন্য। পক্ষান্তরে তাঁদের সে জীবন বারযাখের জীবন যা আমাদের অনুভূতি ও উপলব্ধির অনেক ঊর্ধ্বে। এই বারযাখী জীবন মর্যাদার স্তর অনুযায়ী আম্বিয়া, মুমিনগণ এমন কি কাফেররাও লাভ করবে। শহীদদের আত্মা এবং কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, মুমিনদের আত্মাও একটি পাখীর মধ্যে বা বুকে অবস্থান করে জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করবে। (ইবনে কাসীর, দ্রষ্টব্যঃ আলে-ইমরান ১৬৯ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান