৬০১০

পরিচ্ছেদঃ

৬০১০-[৪] “ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক (সাহাবীদের যুগ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক, তাদের পর এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দিবে অথচ তাদের কাছ হতে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানত করবে, তাদের আমানাতদারীর উপর বিশ্বাস করা যাবে না। তারা মানৎ করবে; কিন্তু তা পূর্ণ করবে না, তাদের মধ্যে স্থূলতা প্রকাশ পাবে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, তারা (নিষ্প্রয়োজনে) শপথ করবে, অথচ তাদের কাছ হতে শপথ চাওয়া হবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ إِنَّ بَعْدَهُمْ قَوْمًا يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ وَيَخُونُونَ وَلَا يُؤْتَمَنُونَ وَيَنْذُرُونَ وَلَا يفون وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السِّمَنُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «وَيَحْلِفُونَ وَلَا يستحلفون» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3650) و مسلم (214 / 2535 و الروایۃ الثانیۃ 215 / 2535)، (6475) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن عمران بن حصين قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خير امتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم ثم ان بعدهم قوما يشهدون ولا يستشهدون ويخونون ولا يوتمنون وينذرون ولا يفون ويظهر فيهم السمن وفي رواية ويحلفون ولا يستحلفون متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3650 و مسلم 214 2535 و الروایۃ الثانیۃ 215 2535 6475 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي) হাদীসে বর্ণিত (قَرْنِي) শব্দটির অর্থ হলো যুগ, দীর্ঘকাল, শতাব্দী ইত্যাদি। এই (قَرْنِي) শব্দের ব্যাখ্যায় ‘আলিমদের মতানৈক্য রয়েছে। সহীহ মুসলিমে ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর-এর হাদীসে এসেছে কারণ হলো একশত বছর। (এটিই প্রসিদ্ধ মত)
(الْطَالِعِ) গ্রন্থকার বলেন, (قَرْنِي) হলো এমন দীর্ঘ সময় যে সময়ে তখন জীবিত কোন জাতির সবাই মারা যায়। হাদীসে বর্ণিত (قَرْنِي) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সাহাবীদের যুগ।
অর্থাৎ, সাহাবীরা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন ছিল সর্বোত্তম (قَرْنِي) বা শতাব্দী।
(ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ) এখানে (الَّذِينَ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাবিঈ। যারা সাহাবীদের অনুসারী ছিলেন তাদেরকে তাবি'ঈ বলে এবং ঈমানী হালতে মৃত্যুবরণ করেছে।
(ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ) এখানে (لَّذِينَ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাবি তাবিঈ। অর্থাৎ যারা তাবিঈদের অনুসারী ছিলেন এবং ঈমানী হালতে মৃত্যুবরণ করেছে।
(يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ) উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এক শ্রেণির লোকেদেরকে নিন্দাবাদ ব্যক্ত করেছেন যারা আগ বাড়িয়ে সাক্ষ্য দিবে অথচ তাদের কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হয়নি। অন্য এক সহীহ হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নিজ থেকে সাক্ষ্য দিবে তার প্রশংসা করেছেন। বাহ্যত সাংঘর্ষিক মনে হলেও ‘উলামাগণ এর সঠিক সমাধান দিয়েছেন। সমাধান হলো এই, রাসূল (সা.) যেই সাক্ষ্যদাতাকে উৎকৃষ্ট সাক্ষ্যদানকারী বলে প্রশংসা করেছেন, তার কারণ হলো যে, সেই লোক জানে, সে ছাড়া অন্য কেউ বিষয়টি জানে না। কাজেই সে যদি এখানে সাক্ষ্য না দেয় তাহলে একজন ব্যক্তির হক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সে ঐ লোকটির হক ফিরে পাওয়ার জন্য আগ বাড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে। এ অবস্থায় সাক্ষ্য দান করা উৎকৃষ্ট।
আর উক্ত হাদীসে যাদের তিরস্কার করা হয়েছে তাদের বিষয়টি হলো এমন যে, যার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছে সে তার হক সম্পর্কে আগেই জানত, কিন্তু লোকের কারণে এবং খুব দ্রুত হাতে পাওয়ার জন্য অন্য কেউ তার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে দেয় অথচ তার কাছে সাক্ষ্য চাওয়াই হয়নি।
কোন কোন সালাফ বলেছেন, (يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ) দ্বারা তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা সাক্ষ্য দেয়ার যোগ্য নয়। আমানাতদার বা বিশ্বস্ত নয়।
কেউ কেউ বলেছেন, প্রশংসনীয় সাক্ষ্য হলো আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে আর নিন্দনীয় সাক্ষ্য হলো বান্দার হকের ক্ষেত্রে।
(وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السِّمَنُ) السِّمَنُ শব্দের ব্যাখ্যায় ‘আন্ নিহায়াহ্’ গ্রন্থের লেখক বলেছেন, এখানে (السِّمَنُ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শেষ যামানায় এমন একটি সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে যারা এমন কিছু নিয়ে অহংকার করবে যা তাদের ভিতরে নেই এবং এমন কিছুর অধিকারী বলে দাবী করবে যাতে কোন সম্মান নেই। কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বারা সম্পদ জমা করে রাখার কথা বুঝিয়েছেন। আবার কেউ বলেন, অধিক ভোজন প্রিয় হওয়ার কথা বুঝিয়েছেন যা মোটা বা স্বাস্থ্যবান হওয়ার কারণ।
‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলাম সম্পর্কে গুরুত্বহীন ও অবহেলা প্রকাশের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কেননা অধিকাংশ সময়ই স্বাস্থ্যবান লোকেরা দীনের কাজের প্রতি গুরুত্ব দেয় না বরং অলসতা আর ঘুমে আগ্রহী হয়ে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)