৫৮৭৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৭৮-[১১] আবূ কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। ’আম্মার (রাঃ) যখন খন্দক যুদ্ধের খাল খনন করছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার (ধুলাবালু ঝাড়ার উদ্দেশে) মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, হায়! সুমাইয়্যাহ্’র পুত্রের ওপর কত কঠিন সময় আগত, তোমাকে বিদ্রোহী দলটি হত্যা করবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِعَمَّارٍ حِينَ يَحْفِرُ الْخَنْدَقَ فَجَعَلَ يَمْسَحُ رَأسه وَيَقُول: «بؤس بن سميَّة تقتلك الفئة الباغية» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (71 ، 70 / 2915)، (7320 و 7321) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي قتادة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعمار حين يحفر الخندق فجعل يمسح راسه ويقول بوس بن سمية تقتلك الفىة الباغية رواه مسلمرواہ مسلم 71 70 2915 7320 و 7321 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে মুহাম্মাদ (সা.) বলে দিয়েছেন যে, ‘আম্মার (রাঃ)-কে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। মিরক্বাত প্রণেতা বিদ্রোহী দলের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, “বিদ্রোহী দল হলো সে সময়ের খলীফার আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া দল।”
তৃীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আম্মার (রাঃ) যে বিদ্রোহী দল কর্তৃক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে মারা গেছেন সেই বিদ্রোহী দল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মু'আবিয়াহ্ (রাঃ) এবং তার দল। কারণ ‘আম্মার (রাঃ)-কে সিফফীনের যুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে। আর সিফফীনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে ‘আলী (রাঃ) ও মু'আবিয়াহ্ (রাঃ) -এর দলের মাঝে। উক্ত যুদ্ধে ‘আম্মার (রাঃ) ‘আলী (রাঃ)-এর দলে ছিলেন।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা জেনে রাখতে হবে যে, ‘আম্মার (রাঃ)-কে হত্যা করেছেন মু'আবিয়াহ (রাঃ)-ও তার দল। অতএব এ হাদীস অনুযায়ী তারাই হলেন বিদ্রোহী হল। কারণ আম্মার (রাঃ), ‘আলী (রাঃ)-এর দলে ছিলেন। আর প্রকৃতপক্ষে খলীফাহ হওয়ার হকদার ‘আলী (রাঃ)-ই ছিলেন। কিন্তু তারা ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে বায়'আত করেনি।
তবে এছাড়াও মু'আবিয়াহ (রাঃ) সম্পর্কে আরো কিছু উভ্রান্তিমূলক বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন- তিনি নাকি উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে, উসমান (রাঃ) -এর রক্তপণ আদায়ের দাবীকে কেন্দ্র করেই আমরা বিদ্রোহী হলাম।

এ ব্যাখ্যাটি একেবারেই বিভ্রান্তিকর এবং উসমান (রাঃ)-এর রক্তপণ আদায়ের দাবীটাও অমূলক। কারণ এ হাদীসে রাসূল (সা.) ‘আম্মার (রাঃ)-এর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। আর তার হত্যাকারীকে নিন্দা করেছেন। এখানে আর অন্য কোন বিষয়ের কথা তিনি উল্লেখ করেননি।
মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর সম্পর্কে আরো মারাত্মক বিভ্রান্তিকর কথা ছড়ানো হয়ে থাকে। যেমন তিনি নাকি বলেছেন, “আলী (রাঃ)-ই হলেন ‘আম্মার (রাঃ)-এর হত্যাকারী। কারণ তিনি ও তার দলই ‘আম্মার-কে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করেছেন। অতএব, তারাই হলেন তার নিহত হওয়ার কারণ।
আর এ ব্যাখ্যাকে যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে মারাত্মক একটি ভুল কাজ হবে। তখন হামযাহ্ (রাঃ) -এর হত্যাকারী হবেন রাসূল (সা.)। যেহেতু তিনি তাকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করেছেন। আর মুমিনদের হত্যাকারী হবেন আল্লাহ। নাউযুবিল্লা-হ কত জঘন্য কথা।
সারকথা হলো উক্ত হাদীস থেকে রাসূল (সা.) -এর তিনটি মু'জিযার বিষয় জানা যায়।
১) ‘আম্মার (রাঃ)-কে অবশ্যই হত্যা করা হবে- এ কথাটি তিনি আগেই জানিয়ে দিলেন।
২) তিনি মাযলুম হয়ে মারা যাবেন, তাও জানিয়ে দিলেন।
৩) তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে, সেটিও জানিয়ে দিলেন। এসব কিছুই সত্য হয়েছে এবং যথার্থ সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে।
শায়খ আকমালুদ্দীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আসল কথা হলো, মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও বর্ণনা সবই তার প্রতি মিথ্যারোপ।
যেমন- এ ব্যাখ্যাটি। ‘আম্মার মা-কে তারাই হত্যা করেছে যারা তাকে লড়াইয়ের জন্য বের করেছে এবং লড়াইয়ের প্রতি উৎসাহিত করেছে।
উক্ত ব্যাখ্যা মিথ্যা হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন- এই জাতীয় ব্যাখ্যা করাটা হলো হাদীসে বিকৃতি সাধন। তাছাড়াও ‘আম্মার (রাঃ)-কে কেউ বের করেননি। বরং তিনি নিজেই তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। এসব কিছুই মুআবিয়াহ্ (রাঃ)-এর সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। কারণ তিনি ছিলেন একজন সচেতন ব্যক্তি এবং সম্মানিত সাহাবী। অতএব ইতিহাস যাচাই-বাছাই করে সঠিক বিষয়টি জানা এবং সাহাবীদের বিশেষ সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখাই আমাদের কর্তব্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)