৪৯২৫

পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯২৫-[১৫] সাওবান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আ ব্যতীত আর কিছুই ভাগ্যকে পরিবর্তন করে না, পুণ্য ব্যতীত আর কিছুই আয়ু বাড়ায় না এবং কৃত পাপ ব্যতীত আর কিছুই মানুষকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করে না। (ইবনু মাজাহ)[1]

عَنْ ثَوْبَانَ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبِرُّ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ

عن ثوبانقال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يرد القدر الا الدعاء ولا يزيد في العمر الا البر وان الرجل ليحرم الرزق بالذنب يصيبه رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যাঃ সাওবান (রাঃ) তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আযাদকৃত গোলাম। তার বর্ণিত এ হাদীসটি একটি বহুল আলোচিত হাদীস। হাদীসটিতে বলা হয়েছে তাকদীর পরিবর্তনের কথা। তাকদীর দুই প্রকার- (১) তাকদীরে মু‘আল্লাক যা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। (২) তাকদীরে মুবরাম যা কখনো পরিবর্তন হয় না। অত্র হাদীসে দু‘আর মাধ্যমে যে তাকদীর পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, সেটি হলো তাক্বীদীরে মু‘আল্লাক এবং দু‘আও এমন দু‘আ যা নিশ্চিতভাবে কবুল করা হয়।

‘আল্লামা তূরিবিশ্তী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে তাকদীর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর আদেশ। হাদীসের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, ভালো কাজ মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে, তাই যদি দু‘আ না করে তাহলে তাকদীরে মু‘আল্লাক যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবে অপরিবর্তিত থেকে যায়। যদি কল্যাণকর কাজ না করা হয় তাহলে হায়াত খাটো হয়ে যায়। তাকদীরে মু‘আল্লাক যেটা লাওহে মাহফূযে সংরক্ষেত কতিপয় মালাক (ফেরেশতা) এবং নবীগণ ও আল্লাহর কিছু বান্দার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে তাকদীরে মুবরাম যা আল্লাহর ‘ইল্মের সাথে সংশ্লিষ্ট, যা রয়েছে উম্মুল কিতাবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘আল্লাহ যা ইচ্ছা মুছে ফেলেন, আর যা ইচ্ছা দৃঢ় রাখেন। তার কাছে রয়েছে উম্মুল কিতাব।’’ (সূরাহ্ আর্ রা‘দ ১৩ : ৩৯)

অতএব দু‘আ এবং সৎকর্ম খুবই জরুরী দু’টি বিষয়। যেগুলো তাকদীরের পরিবর্তন সাধন করতে পারে আর হায়াত বৃদ্ধি করতে পারে।

তবে এ দু’টি বিষয়ও তাকদীরে লিপিবদ্ধ থাকে, যেমন সৎকর্ম করা অসৎকর্ম করা যা সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য হওয়ার কারণ, এ দু’টিই তাকদীরে লিপিবদ্ধ থাকে। অত্র হাদীসের তাকদীর পরিবর্তনের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাকদীরে নির্ধারিত বিষয় সম্পাদন করতে সহজ করে দেয়া, এমন সহজ মনে হবে যেন তাকদীর পরিবর্তন হয়ে গেছে। হায়াত বৃদ্ধি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হায়াতে বারাকাত দান করা।

শারহুস্ সুন্নাহতে আবূ হাতিম সিজিস্তানী (রহিমাহুল্লাহ) অত্র হাদীসের অর্থ বিশ্লেষণে বলেনঃ মানুষ সর্বদা দু‘আ করতে থাকবে, এটা তাকে তাকদীরের সঠিক পথে পরিচালনা করবে। যেন মনে হবে তার তাকদীরের খারাপ বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয়ে ভালো হয়ে গেছে। কল্যাণকর কাজ তার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে, মনে হবে যেন তার হায়াত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে পাপ সুন্দর, উত্তম রিয্ক্বের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আর তার শেষ পরিণাম খুবই জঘন্য হয়। মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের শব্দ রিজিক দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আখিরাতের কল্যাণ। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ ও সুস্থতাও উদ্দেশ্য হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)