৪৪২৫

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৫-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে সমস্ত ব্যাপারে কোন নির্দেশ (বা ওয়াহী) নাযিল হয়নি, সেসব বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে কিতাবদের সাথে সামঞ্জস্য স্থাপন করাকে পছন্দ করতেন। তৎকালের আহলে কিতাবগণ তাদের মাথার চুলকে সোজা ছেড়ে রাখত। আর মুশরিকরা সিঁথি কেটে চুলগুলোকে দু’ভাগ করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিই সোজাসুজি পিছনের দিকে ঝুলিয়ে রাখতেন (সিঁথি কাটত না)। অবশ্য পরে তিনি সিঁথি কেটেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيهِ وَكَانَ أَهْلُ الْكِتَابِ يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ وَكَانَ الْمُشْرِكُونَ يَفْرِقُونَ رؤوسهم فَسَدَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاصِيَتَهُ ثمَّ فرق بعدُ

وعن ابن عباس قال كان النبي صلى الله عليه وسلم يحب موافقة اهل الكتاب فيما لم يومر فيه وكان اهل الكتاب يسدلون اشعارهم وكان المشركون يفرقون رووسهم فسدل النبي صلى الله عليه وسلم ناصيته ثم فرق بعد

ব্যাখ্যাঃ (يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيهِ) অর্থাৎ যেসব বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী নাযিল হয়নি সেসব বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণ ভালোবাসতেন।

বিভিন্ন বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে বিরোধিতা করার কথা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। ইতোপূর্বে খিযাবের হাদীসে আমরা দেখেছি যে, আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করতেই খিযাব করতে বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাই ওয়াহী না আসা বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী, কাযী ‘ইয়ায-এর বরাতে বলেনঃ যেসব বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী আসেনি সেসব বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্যের ব্যাখ্যায় ‘উলামারা ইখতিলাফ করেন। কেউ কেউ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কাজটি ইসলামের সূচনালগ্নে আহলে কিতাবদের মনকে আকৃষ্ট করা এবং মূর্তি পূজার বিরোধিতায় তাদের সাথে তাঁর ঐকমত্য দেখানোর জন্য ছিল। পরবর্তীতে যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আকৃষ্ট করা থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং ইসলামকে সব দীনের উপর জয় দান করেন, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে বিরোধিতার ঘোষণা দেন। যেমন চুলে খিযাবের বিষয়। আবার কেউ কেউ বলেন, এমনও হতে পারে যে, যেসব বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হয়নি, সেসব বিষয়ে তাঁকে আহলে কিতাবদের শারী‘আতের অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল। আর এটা নিশ্চয় তাদের শারী‘আতের ঐসব বিষয়ে যেগুলোকে তারা পরিবর্তন করেনি। (শারহুন নাবাবী হাঃ ২৩৩৬, অধ্যায় : রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুলের সিফাত)

(يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ) তারা তাদের চুলকে ছেড়ে দিত। চুলকে ছেড়ে দেয়া বলতে, চুলকে দুই ভাগে ভাগ করে ডান দিকে এক ভাগ এবং বাম দিকে এক ভাগ না করেই তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় মাথার আশপাশে ছেড়ে দেয়া।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর শারহু মুসলিমে রয়েছে, ‘উলামায়ে কিরাম বলেনঃ চুলের ক্ষেত্রে ‘সাদল’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, চুলকে কপালের উপর ছেড়ে দেয়া এবং তাকে বাটির মতো বানিয়ে ফেলা। আর ‘ফারক’ তথা সিঁথি হলো চুলকে একে অপর থেকে পৃথক করা। কেউ কেউ বলেন, ‘সাদল’ হচ্ছে, চুলকে দ্বিখন্ড- বণ্টন না করে পিছন দিকে ছেড়ে দেয়া। আর ‘ফারক’ বা সিঁথি হলো তাকে দ্বিখন্ড- ভাগ করা।

(فَسَدَلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاصِيَتَهٗ) তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে ‘সাদল’ করতেন। অর্থাৎ মদীনায় এসে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণ করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদ্ল করেন।

(ثُمَّ فَرَّقَ بَعْدُ) এরপর সিঁথি করেন। অর্থাৎ মদীনার আসার পর কিছুকাল যাওয়ার পর সিঁথি করেন। ইবনুল মালিক বলেনঃ জিবরীল এসে তাকে সিঁথি করার নির্দেশ দেন। তাই তিনি সিঁথি করেন এবং মুসলিমরাও তাদের মাথা সিঁথি করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখ্য যে, চুলে ‘সাদ্ল’ তথা সিঁথি না করে ছেড়ে দেয়া অথবা ‘ফার্ক’ তথা সিঁথি করা কোনটি শার‘ঈ দিক নির্দেশনা হিসেবে ছিল না। তাই রসূলের সিঁথির ‘আমলের মাধ্যমে ‘সাদল’-এর হুকুম রহিত হয়ে গেছে এমন নয়।

ফাতহুল বারীতে রয়েছে, ‘সাদল’ মানসূখ বা রহিত হলে সব সহাবা বা অধিকাংশরা তা ছেড়ে সিঁথি করতেন। আর সাহাবীদের থেকে বর্ণিত যে, তাদের কেউ কেউ সিঁথি করতেন, কেউ কেউ সিঁথি করতেন না। অথচ কেউ কাউকে দোষারোপ করতেন না। আর সহীহ বর্ণনায় রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুল বাবরী ছিল, তাতে সিঁথি হলে তিনি তা সিঁথি করতেন, না হলে ছেড়ে দিতেন। অতএব বিশুদ্ধ মত হলো, সিঁথি মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯১৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس )