পরিচ্ছেদঃ
১৩০৬। হে জিবরীল! আমার কী হয়েছে যে, আপনাকে আমি পরিবর্তিত রঙে দেখছি? তিনি বললেনঃ আমি আপনার নিকট আল্লাহর নির্দেশেই জাহান্নামের চাবিসমূহ নিয়ে আগমন করেছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে জিবরীল! আমার জন্য আপনি (জাহান্নামের) আগুনের রূপ বর্ণনা করুন। জাহান্নামের বিবরণ দিন। জিবরীল বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে নির্দেশ দিলেন ফলে আগুনের উপর এক হাজার বছর সাদা না হওয়া পর্যন্ত জ্বলতে থাকলো। আবার তাকে নির্দেশ দিলেন ফলে সে তার উপর এক হাজার বছর লাল না হওয়া পর্যন্ত জ্বলতে থাকলো। আবার তাকে নির্দেশ দিলেন ফলে সে তার উপর এক হাজার বছর কালো না হওয়া পর্যন্ত জ্বলতে থাকলো। সেটি কালো অন্ধকার। তার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কখনও আলোকিত হবে না এবং তার প্রজ্জ্বলিত হওয়া কখনও নিভে যাবে না।
সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন যদি জাহান্নামের কাপড়সমূহের একটি কাপড় আসমান এবং যমীনের মাঝে ঝুলিয়ে দেয়া হতো তাহলে তার প্রতাপের কারণে পৃথিবীতে অবস্থানকারী সবাই মারা যেত। সেই সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, যদি জাহান্নামের পাহারাদারদের একজন পাহারাদারকে দুনিয়াবাসীদের নিকট প্রকাশ করা হতো আর তারা তার দিকে দৃষ্টি দিত তাহলে তার চেহারার বীভৎসতা ও তার দুর্গন্ধের ভয়াবহতার কারণে দুনিয়ার সকল বসবাসকারীই মারা যেত। সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন যদি জাহান্নামীদের বালাগুলোর একটি বালা দুনিয়ার পাহাড়গুলোর উপর রেখে দেয়া হতো যেগুলো সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা তার গ্রন্থে আলোচনা করেছেন, তাহলে সেগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত আর যমীনের সর্বনিম্ন স্তরে না পোঁছা পর্যন্ত স্থির হতো না।
অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যথেষ্ট হয়েছে হে জিবরীল! আমার হৃদয় যেন না ফেটে যায়, ফলে আমি মৃত্যু বরণ করি। বর্ণনাকারী বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলকে কাঁদতে দেখে বললেনঃ হে জিবরীল! আপনি কাঁদছেন? অথচ আপনার অবস্থান আল্লাহর কাছে যেখানে আপনি আছেন সেখানেই। তখন তিনি উত্তরে বললেনঃ আমার কী হয়েছে আমি কাদবো না? আমিই তো কাঁদার বেশী উপযোগী। কারণ, হতে পারে আমি যে অবস্থায় আছি আল্লাহর জ্ঞানে আমি সে অবস্থায় না থাকতেও পারি। আমি জানি না, হতে পারে আমাকে পরীক্ষায় পড়তে হবে যেভাবে ইবলীসকে পরীক্ষায় পড়তে হয়েছিল। সে ছিল ফেরেশতাদের একজন। জানি না আমাকে হয়তো সেরূপ পরীক্ষায় পড়তে হতে পারে যেরূপ হারূত মারত পরীক্ষায় পড়েছিল।
বর্ণনাকারী বললেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে শুরু করলেন আর জিবরীলও কাঁদতে শুরু করলেন। তারা দু’জনে কাঁদা অব্যাহত রাখলো এমতাবস্থায় উভয়কেই ডাক দেয়া হলোঃ হে জিবরীল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের দু’জনকে তাঁর নাফারমানী করা হতে নিরাপদে রেখেছেন। অতঃপর জিবরীল উঠে চলে গেলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বেরিয়ে আসলেন। তারপর তিনি আনসারদের একটি সম্প্রদায়কে অতিক্রম করছিলেন যারা হাসছিল এবং খেলাধূলা করছিল। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা হাসছ আর তোমাদের পিছনে জাহান্নাম! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে অবশ্যই তোমরা হাসতে কম আর কাঁদতে বেশী। আর খাদ্য ও পানীয়কে কখনও সুস্বাদু পেতে না। তোমরা উঁচু স্থানের সন্ধানে বেরিয়ে যেতে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে। ডাক দেয়া হলোঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি আমার বান্দাদেরকে নিরাশ করবেন না। আমি আপনাকে সরল করে প্রেরণ করেছি, কঠোরতা প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করিনি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সঠিক পথ এবং মধ্যমপন্থা (পূর্ণাঙ্গতার নিকট পৌছার জন্যে) অবলম্বন কর।
হাদীসটি বানোয়াট।
হাদীসটিকে ইবনু আবিদ দুনিয়া “সিফাতুন নার” গ্রন্থে (কাফ ১/৯), ত্ববারানী “আল-মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (২৭৫০) সালাম আতত্ববীল হতে, তিনি আজলাজ ইবনু আব্দিল্লাহ কিন্দী হতে, তিনি আদী ইবনু আদী কিন্দী হতে, তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
ত্ববারানী বলেনঃ এ হাদীসটি উমার (রাঃ) হতে একমাত্র এ সনদেই বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এটিকে বর্ণনাকারী সালাম এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হায়সামী (১০/৩৮৬, ৩৮৭) বলেনঃ তিনি (সালাম) দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মিথ্যা বর্ণনা করা এবং (হাদীস) জাল করার দোষে একাধিক ব্যক্তি তাকে দোষী করেছেন। যেমনটি পূর্বে এ সম্পর্কে বার বার আলোচনা করা হয়েছে। আর ইবনু হিব্বান "আয-যুয়াফা অলমাতুরূকীন" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের উদ্ধৃতিতে বানোয়াট হাদীস এভাবে বর্ণনা করেন যে, তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসের ব্যাপারে তারা যে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন একে আরো শক্তিশালী করছে ইবলীস সম্পর্কে তার বাণীঃ ’সে ছিল ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত’। কারণ, এটি কুরআন বিরোধী কথা। কারণ আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মধ্যে বলেছেনঃكَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ "সে (ইবলীস) ছিলো জিনদের একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশের নাফারমানী করেছিলো" (সূরা কাহাফ : ৫০)।
এর পরে "সহীহ মুসলিম" গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে নূর থেকে। এ হাদীসটি "সিলসিলাহ্ সহীহাহ" গ্রন্থে (৪৫৮) আমি উল্লেখ করেছি। আর ইবলীসকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে যেমনটি কুরআন এবং হাদীসের মধ্যে এসেছে।
অনুরূপভাবে আলোচ্য হাদীসটির এক স্থানে বলা হয়েছেঃ “যেরূপ হারূত মারতকে পরীক্ষায় পড়তে হয়েছিল”। এর দ্বারা সেই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ঘটনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা দু’জন যুহরা নামক রমণীকে যৌবিক চাহিদা মিটাতে পেতে চেয়েছিল, তারা মদ পান করেছিল এবং শিশুকে হত্যা করেছিল ...। এ ঘটনাটি বাতিল, কুরআন বিরোধীও বটে যেমনটি আমি প্রথম খণ্ডের ১৭০ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
হাদীসটির শেষাংশেঃ
لو تعلمون ما أعلم لضحكتم قليلا ولبكيتم كثيرا إلى قوله: تجأرون إلى الله عز وجل
এ অংশটুকুর নীচে দাগ দেয়া প্রথম অংশ সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর বাকী অংশটুকুকে ইমাম হাকিম বর্ণনা করেছেন।
يا جبريل مالي أراك متغير اللون؟ فقال: ما جئتك حتى أمر الله عز وجل بمفاتيح النار، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا جبريل صف لي النار، وانعت لي جهنم، فقال جبريل: إن الله تبارك وتعالى أمر بجهنم فأوقد عليها ألف عام حتى ابيضت، ثم أمر فأوقد عليها ألف عام حتى احمرت، ثم أمر فأوقد عليها ألف عام حتى اسودت، فهي سوداء مظلمة، لا يضيء شررها، ولا يطفأ لهبها، والذي بعثك بالحق لوأن ثوبا من ثياب النار علق بين السماء والأرض لمات من في الأرض جميعا من حره، والذي بعثك بالحق لوأن خازنا من خزنة جهنم برز إلى أهل الدنيا فنظروا إليه لمات من في الأرض كلهم من قبح وجهه ومن نتن ريحه، والذي بعثك بالحق لوأن حلقة من حلق سلسلة أهل النار التي نعت الله في كتابه وضعت على جبال الدنيا لا رفضت وما تقارت حتى تنتهي إلى الأرض السفلى، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: حسبي يا جبريل لا يتصدع قلبي فأموت قال: فنظر رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى جبريل وهو يبكي، فقال: تبكي يا جبريل؟ وأنت من الله بالمكان الذي أنت به! قال: ومالي لا أبكي؟ أنا أحق بالبكاء لعلي أن أكون في علم الله على غير الحال التي أنا عليها، وما أدري لعلي أبتلى بمثل ما ابتلي به إبليس، فقد كان من الملائكة، وما يدريني لعلي أبتلى بمثل ما ابتلي به هاروت وماروت، قال: فبكى رسول الله صلى الله عليه وسلم وبكى جبريل عليه السلام، فما زالا يبكيان حتى نوديا: أن يا جبريل ويا محمد: إن الله عز وجل قد أمنكما أن تعصيا. فارتفع جبريل عليه السلام، وخرج رسول الله صلى الله عليه وسلم فمر بقوم من الأنصار يضحكون ويلعبون، فقال: أتضحكون ووراءكم جهنم؟ ! لوتعلمون ما أعلم لضحكتم قليلا، ولبكيتم كثيرا، ولما أسغتم الطعام والشراب، ولخرجتم إلى الصعدات تجأرون إلى الله عز وجل. فنودي: يا محمد: لا تقنط عبادي، إنما بعثتك ميسرا، ولم أبعثك معسرا، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: سددوا، وقاربوا
موضوع بهذا السياق والتمام
-
أخرجه ابن أبي الدنيا في " صفة النار " (ق 9/1) والطبراني في المعجم الأوسط (2750 - بترقيمي لمصورة الجامعة الإسلامية) عن سلام الطويل عن الأجلح بن عبد الله الكندي عن عدي بن عدي الكندي قال: قال: عمر بن الخطاب: جاء جبريل إلى النبي صلى الله عليه وسلم في حين غير حينه الذي كان يأتيه فيه، فقام إليه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: فذكره. وقال الطبراني: " لا يروى هذا الحديث عن عمر إلا بهذا الإسناد تفرد به سلام
قلت: وقال الهيثمي (10/386 - 387) بعد ما عزاه للطبراني: " وهو مجمع على ضعفه
قلت: وقد اتهمه غير واحد بالكذب والوضع كما تقدم غير ما مرة، وقال ابن حبان في " الضعفاء والمتروكين ": " يروي عن الثقات الموضوعات كأنه كان المتعمد لها
قلت: وفي هذا الحديث ما يؤكد ما اتهموه به أعظمها قوله في إبليس: " كان من الملائكة " وهذا خلاف القرآن: " وكان من الجن ففسق عن أمر ربه ". ثم إن الملائكة خلقت من نور كما في " صحيح مسلم "، وهو مخرج في " الصحيحة " (458)، وأما إبليس فخلق من نار كما في القرآن والحديث
ونحوه قوله: " ما ابتلي به هاروت وماروت، فإنه يشير إلى ما يروى من قصتهما مع الزهرة ومراودتهما إياها وشربهما الخمر وقتلهما الصبي، وهي قصة باطلة مخالفة للقرآن أيضا كما سبق بيانه في المجلد الأول برقم (170)
ولا يفوتني التنبيه أن قوله: " لوتعلمون ... " إلى قوله: " تجأرون إلى الله عز وجل " قد جاء طرفه الأول في " الصحيحين "، والباقي عند الحاكم وغيره، فانظر الحديث الآتي إن شاء الله برقم (4354) . وتخريج " فقه السيرة " (ص479 )