৪০৫৫

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ফাই (বিনাযুদ্ধে প্রাপ্ত শত্রুদের সম্পদ)-এর বর্ণনা

আল্ মুগরিব গ্রন্থকার বলেনঃ ফাই বলা হয় ঐ সম্পদকে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কোনো ভূমি যখন মুসলিমদের অধিকারে চলে যায় তখন এ ভূমিতে বসবাসকারী কাফিরদের কাছ থেকে যা গ্রহণ করা হয় তাই হলো ফাই।

মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেনঃ যুদ্ধ না করেই মুসলিমগণ কাফিরদের নিকট থেকে যে সম্পদ অর্জন করে তাকে ফাই বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশাতে তিনি স্বীয় ইচ্ছা মতো ফাই এর মাল ব্যয় করার অধিকারী ছিলেন। তা থেকে নিজ পরিবারের জন্য ব্যয় করতেন। সেনাবাহিনী প্রস্তুত, মেহমানের মেহমানদারী করা এবং প্রতিনিধি দলের লোকেদের সম্মানার্থে ব্যয় নির্বাহ এ মাল থেকেই করতেন। পরবর্তীতে তা ’উমার বায়তুল মালের অন্তর্ভুক্ত করে মুসলিমদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


৪০৫৫-[১] মালিক ইবনু আওস ইবনুল হাদাসান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এ ’ফাই’টি বিশেষভাবে তাঁর রসূল-এর জন্য খাস করে দিয়েছেন, যাতে অন্য কারো অধিকার নেই। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন-(مَا أَفَاءَ اللهُ عَلٰى رَسُوْلِه مِنْهُمْ) অর্থাৎ- ’’আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূলকে ’ফাই’ হিসেবে (বিনাযুদ্ধে) যা কিছু দিয়েছেন তার জন্য ঘোড়া বা সেনাবাহিনী পরিচালনা করতে হয়নি; বরং আল্লাহ তা’আলা তার রসূলগণকে যার বিরুদ্ধে ইচ্ছা করেন বিজয় দান করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবকিছুর উপরই সর্বশক্তিমান।’’ সুতরাং এ মাল-সম্পদ ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্ধারিত। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত মাল-সম্পদ হতে পরিবার-পরিজনের জন্য পূর্ণ এক বৎসরের খোরপোষ আদায় করতেন এবং অবশিষ্ট যা থাকত তা সাদাকার খাতে তথা রাষ্ট্রীয় জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْفَيْءِ

عَن مالكِ بن أوْسِ بنِ الحَدَثانِ قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ خَصَّ رَسُولَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذَا الْفَيْءِ بِشَيْءٍ لَمْ عطه أحدا غيرَه ثُمَّ قَرَأَ (مَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُم)
إِلى قولِه (قديرٌ)
فكانتْ هَذِه خَالِصَة لرَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُنْفِقُ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةَ سَنَتِهِمْ مِنْ هَذَا الْمَالِ. ثُمَّ يَأْخُذُ مَا بَقِيَ فَيَجْعَلُهُ مَجْعَلَ مَالِ اللَّهِ

عن مالك بن اوس بن الحدثان قال قال عمر بن الخطاب رضي الله عنه ان الله قد خص رسوله صلى الله عليه وسلم في هذا الفيء بشيء لم عطه احدا غيره ثم قرا ما افاء الله على رسوله منهمالى قوله قديرفكانت هذه خالصة لرسول الله صلى الله عليه وسلم ينفق على اهله نفقة سنتهم من هذا المال ثم ياخذ ما بقي فيجعله مجعل مال الله

ব্যাখ্যা: (فَكَانَتْ هٰذِه خَالِصَةٌ لِرَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ) (ফাই এর) এ মাল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্ধারিত ছিল। অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে ইমামদের জন্য তা স্বেচ্ছায় ব্যয় করার অধিকার নেই, যেরূপ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ছিল। বরং ইমামদের কর্তব্য তা তারা ব্যয় করবে দরিদ্র মুহাজির, আনসার এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে এবং মুসলিমদের কল্যাণে।

(يُنْفِقُ عَلٰى اَهْلِه) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে তাঁর স্ত্রী, সন্তানাদি এবং তাঁর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সকলের জন্য ব্যয় করতেন।

(نَفَقَةَ سَنَتِهِمْ) তাদের এক বৎসরের প্রয়োজনীয় ব্যয় তা থেকে জমা রাখতেন। ইমাম সুয়ূত্বী বলেনঃ অত্র হাদীস ঐ হাদীসের বিরোধী নয় যাতে বলা হয়েছে যে, «أَنَّه كَانَ لَا يَدَّخِرُ شَيْئًا لِغَدٍ» তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগামীকালের জন্য কিছু জমা রাখতেন না। কেননা ادخار বলা হয় ঐ মালকে যা নিজের জন্য জমানো হয়। আর এখানে বলা হয়েছে তার পরিবারের লোকজনদের জন্য। অর্থাৎ তিনি নিজের জন্য জমা করেননি।

ইমাম নববী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, এক বৎসরের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী জমা রাখা বৈধ। আর তা তাওয়াক্কুল বিরোধী নয়। ‘উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, স্বীয় উপার্জন থেকে এক বৎসরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য-দ্রব্য জমা রাখা বৈধ। আর যদি বাজার থেকে ক্রয় করতে হয় এবং বাজারে খাদ্যের সঙ্কট থাকে তাহলে তা বৈধ নয়। বরং তখন দৈনন্দিন খরচের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করবে।

(فَيَجْعَلُه مَجْعَلَ مَالِ اللّٰهِ) অবশিষ্ট মাল আল্লাহর মাল হিসেবে রেখে দিতেন। অর্থাৎ স্বীয় পরিবারের জন্য ব্যয়ের নিমিত্তে রেখে দেয়া মালের পর অবশিষ্ট মাল তিনি মুসলিমদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)