৪০৫০

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরব ভূখণ্ড হতে ইয়াহূদীদের বিতাড়ন

৪০৫০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা মসজিদে নববীতে বসে ছিলাম। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে বললেনঃ ইয়াহূদী জনপদে চলো। সুতরাং আমরা তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলাম এবং তাদের শিক্ষালয়ে উপস্থিত হলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে ইয়াহূদী জাতি! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো, তবেই নিরাপত্তা বা আশ্রয় লাভ করবে। জেনে রাখো, সারা বিশ্বের ভূখণ্ড আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর একচ্ছত্র অধিকারে। আমি তোমাদেরকে এ ভূখণ্ড (’আরব উপদ্বীপ) হতে বহিষ্কার করার সংকল্প করেছি। অতএব তোমরা কোনো জিনিস বিক্রি করতে চাইলে তা বিক্রি করতে পারো (সুযোগ দেয়া হলো)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ إِخْرَاجِ الْيَهُوْدِ مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ

عَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ فِي الْمَسْجِدِ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «انْطَلِقُوا إِلَى يهود» فخرجنا مَعَه حَتَّى جِئْنَا بَيت الْمدَارِس فَقَامَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ يَهُودَ أَسْلِمُوا تَسْلَمُوا اعْلَمُوا أَنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ وَأَنِّي أُرِيدُ أَنْ أُجْلِيَكُمْ مِنْ هَذِهِ الْأَرْضِ. فَمَنْ وَجَدَ مِنْكُمْ بِمَالِهِ شَيْئا فليبعه»

عن ابي هريرة قال بينا نحن في المسجد خرج النبي صلى الله عليه وسلم فقال انطلقوا الى يهود فخرجنا معه حتى جىنا بيت المدارس فقام النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا معشر يهود اسلموا تسلموا اعلموا ان الارض لله ولرسوله واني اريد ان اجليكم من هذه الارض فمن وجد منكم بماله شيىا فليبعه

ব্যাখ্যা: (جِئْنَا بَيْتَ الْمِدْرَاسِ) অতঃপর আমরা যখন বায়তুল মিদরাসে আসলাম। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ الْمِدْرَاسِ এর দু’টি অর্থ হতে পারে-

১. শিক্ষক যিনি পাঠ দান করেন অর্থাৎ আমরা যখন আহলে কিতাবদের পাঠদানকারী শিক্ষকের বাড়ীতে আসলাম। ২. পাঠশালা, অর্থাৎ এমন জায়গা যেখানে আহলে কিতাবগণ তাদের কিতাবসমূহ পাঠ করে থাকে এবং তা শিক্ষা করে।

(فَقَامَ النَّبِىِّ ﷺ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়ালেন। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেমে গেলেন এবং বসে না পড়ে দাঁড়িয়েই থাকলেন।

(فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ يَهُوْدَ أَسْلِمُوْا تَسْلَمُوا) অতঃপর তিনি বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণে করো তাহলে নিরাপত্তা লাভ করবে। অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করলে দুনিয়ার অপমান এবং পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ تَسْلَمُوا শব্দটি যদিও সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করা বুঝায় তথাপি এখানে নির্দিষ্ট অর্থ উদ্দেশ্য যা অবস্থার প্রেক্ষাপট দ্বারা বুঝা যায়। অর্থাৎ তোমরা ইসলাম গ্রহণ করলে নির্বাসনের কষ্ট থেকে রেহাই পাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০০১)

(اِعْلَمُوْا أَنَّ الْأَرْضَ لِلّٰهِ وَلِرَسُوْلِه) জেনে রাখবে, এ জমিন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের। অর্থাৎ এ জমিন প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর তিনি তার মালিক। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘জমিন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে তার উত্তরাধিকার প্রদান করেন’’- (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১২৮)। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে জমিনের মালিক।

(وَأَنِّىْ أُرِيْدُ أَنْ أُجْلِيَكُمْ مِنْ هٰذِهِ الْأَرْضِ) আমি তোমাদের অত্র এলাকা থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ইচ্ছা করেছি অর্থাৎ আমি ‘আরব উপদ্বীপ থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এখানে ইয়াহূদী থেকে উদ্দেশ্য বানী নাযীর-কে বহিষ্কার এবং বানী নাযীর-কে হত্যা করার পর মদীনাহ্ ও তার আশেপাশের অবস্থিত ইয়াহূদীগণ উদ্দেশ্য। কেননা অত্র হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ৬ষ্ঠ হিজরীর শেষ দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর বানী নাযীর-কে বহিষ্কার করা হয় ৪র্থ হিজরীতে এবং বানূ কুরায়যাহ্-কে হত্যা করা হয় ৫ম হিজরীতে। অতএব আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত ইয়াহূদী দ্বারা উদ্দেশ্য তারাই যারা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের সময় মদীনাহ্ ও তার আশেপাশে অবস্থিত ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০০১)

(فَمَنْ وَجَدَ مِنْكُمْ بِمَالِه شَيْئًا فَلْيَبِعْهُ) অতএব তোমাদের মধ্যে যাদের মাল আছে তারা যেন তা বিক্রয় করে ফেলে। অর্থাৎ যে সমস্ত মাল বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় যেমন ঘর-বাড়ী ও বৃক্ষসমূহ ইত্যাদি। সেগুলো যেন তারা বিক্রয় করে ফেলে। ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ অত্র হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী দলীল পেশ করেছেন যে, কোনো ব্যক্তিকে কিছু বিক্রয় করতে বাধ্য করা হলে সে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। তবে অত্র হাদীসে ইয়াহূদীদের বিক্রয়টি নিরুপায় ব্যক্তির বিক্রয়ের সাথে অধিক সাদৃশ্য রাখে। কেননা বাধ্য তো তাকে বলা যায় যে বিক্রয় করতে না চাইলেও তা বিক্রয়ে বাধ্য করা হয়। আর এখানে ইয়াহূদীরা যদি বিক্রয় না করে তা ফেলে যেতো তাহলে তাদেরকে তা বিক্রয় করতে বাধ্য করা হতো না। অতএব নিরুপায় বিক্রয় বৈধ আর বাধ্য করা হলে সে বিক্রয় বৈধ নয়।

ইমাম নববী বলেনঃ ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈ এবং অন্যান্য ইমামগণের মতে ‘আরব উপদ্বীপ থেকে কাফিরদের বহিষ্কার করা ওয়াজিব। অতএব তাদেরকে ‘আরব উপদ্বীপে বসবাস করতে দেয়া নাজায়িয। তবে ইমাম শাফি‘ঈ এ হুকুমকে শুধুমাত্র হিজাযের জন্য খাস মনে করেন। কিন্তু তারা এ অঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে মক্কা ছাড়া। মক্কাতে কোনো কাফিরকে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া যাবে না কোনো অবস্থাতেই না। গোপনে তারা মক্কায় প্রবেশ করলে বহিষ্কার করা ওয়াজিব। এমনকি কেউ গোপনে প্রবেশ করে সেখানে মারা যাওয়ার পর দাফন করা হলে তার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে মক্কার বাহিরে নিয়ে দাফন করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত লাশের মধ্যে কোনো পরিবর্তন বা পঁচন না ধরে। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ হারাম অঞ্চলে কাফিরদের প্রবেশ বৈধ মনে করেন। জুমহূর ‘আলিমদের দলীল হলো আল্লাহর বাণী : ‘‘মুশরিকগণ তো নাপাক, অতএব তারা মসজিদে হারামের নিকটবর্তী হতে পারবে না’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৮)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)