৩৯৬৮

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৬৮-[৯] মারওয়ান (ইবনু হাকাম) ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করার পর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তাদের প্রতিনিধি দল এসে সম্পদ এবং বন্দীদের ফেরত চাইল, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বন্দী অথবা ধন-সম্পদণ্ড এ দু’টির যে কোনো একটি গ্রহণ করতে পার। এমতাবস্থায় তারা বলল, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে ফিরে পেতে চাই। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লাহ তা’আলার হামদ ও যথাযথ প্রশংসা করে বললেন, শোন! তোমাদের যে সমস্ত ভাইয়েরা (হাওয়াযিনবাসীরা) কুফরী হতে প্রত্যাবর্তন করে তাওবার মাধ্যমে আমাদের নিকট এসেছে, আর আমি তাদের বন্দীদেরকে ফেরত দেয়া উত্তম মনে করি। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় সন্তুষ্টিচিত্তে তাদের বন্দীদেরকে ফেরত দিতে চায়, তারা যেন ফেরত দিয়ে দেয়।

আর তোমাদের মধ্যে যারা স্বীয় অংশ সংরক্ষণ করতে চায় (স্বেচ্ছায় ফেরত দিতে সম্মত নয়) তারা যেন এ অঙ্গীকারের উপর ফেরত দেয় যে, পরবর্তীতে আল্লাহ তা’আলা আমাকে যে ’ফাই’ (যুদ্ধলব্ধ মাল) সর্বপ্রথম দান করবেন, তা হতে আমি তাদেরকে তা পরিশোধ করব। এ কথা শুনে উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা স্বেচ্ছায় সন্তুষ্টচিত্তে (শর্তহীনভাবে) তাদেরকে মুক্তি দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিরাট জনসমুদ্রের মধ্যে তোমাদের কে অনুমতি দিল আর কে দিল না, তা আমি সঠিকভাবে জানতে পারছি না। অতএব তোমরা স্বীয় অবস্থানে ফিরে যাও এবং তোমাদের দলের নেতারা এসে যেন তোমাদের মতামত আমার নিকট পৌঁছে দেয়। অতঃপর এ নির্দেশে সকলে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে গেল এবং স্বীয় দলপতির সাথে আলোচনাসাপেক্ষে নিজেদের মতামত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জানাল যে, তারা স্বেচ্ছায় সন্তুষ্টচিত্তে (নিঃশর্তভাবে) মুক্তি দিতে অনুমতি দিয়েছে। (বুখারী)[1]

بَابُ حُكْمِ الْاُسَرَاءِ

وَعَنْ مَرْوَانَ وَالْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ حِينَ جَاءَهُ وَفد من هَوَازِنَ مُسْلِمِينَ فَسَأَلُوهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ وَسَبْيَهُمْ فَقَالَ: فَاخْتَارُوا إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ: إِمَّا السَّبْيَ وَإِمَّا الْمَالَ . قَالُوا: فَإِنَّا نَخْتَارُ سَبْيَنَا. فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ: «أمَّا بعدُ فإِنَّ إِخْوانَكم قدْ جاؤوا تَائِبِينَ وَإِنِّي قَدْ رَأَيْتُ أَنْ أَرُدَّ إِلَيْهِمْ سَبْيَهُمْ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يُطَيِّبَ ذَلِكَ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَكُونَ عَلَى حظِّه حَتَّى نُعطِيَه إِيَّاهُ منْ أوَّلِ مَا يَفِيءُ اللَّهُ عَلَيْنَا فَلْيَفْعَلْ» فَقَالَ النَّاسُ: قَدْ طَيَّبْنَا ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّا لَا نَدْرِي مَنْ أَذِنَ مِنْكُمْ مِمَّنْ لَمْ يَأْذَنْ فَارْجِعُوا حَتَّى يَرْفَعَ إِلَيْنَا عُرَفَاؤُكُمْ أَمْرَكُمْ» . فَرَجَعَ النَّاسُ فَكَلَّمَهُمْ عُرَفَاؤُهُمْ ثُمَّ رَجَعُوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرُوهُ أَنَّهُمْ قد طيَّبوا وأَذنوا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن مروان والمسور بن مخرمة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قام حين جاءه وفد من هوازن مسلمين فسالوه ان يرد اليهم اموالهم وسبيهم فقال فاختاروا احدى الطاىفتين اما السبي واما المال قالوا فانا نختار سبينا فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم فاثنى على الله بما هو اهله ثم قال اما بعد فان اخوانكم قد جاووا تاىبين واني قد رايت ان ارد اليهم سبيهم فمن احب منكم ان يطيب ذلك فليفعل ومن احب منكم ان يكون على حظه حتى نعطيه اياه من اول ما يفيء الله علينا فليفعل فقال الناس قد طيبنا ذلك يا رسول الله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا لا ندري من اذن منكم ممن لم ياذن فارجعوا حتى يرفع الينا عرفاوكم امركم فرجع الناس فكلمهم عرفاوهم ثم رجعوا الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فاخبروه انهم قد طيبوا واذنوا رواه البخاري

ব্যাখ্যা: মুযহির বলেনঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্দীদেরকে প্রতিনিধি দলের হাতে ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে সাহাবীদের কাছে অনুমতি চেয়েছেন, কেননা তাদের সম্পদ ও বন্দী যোদ্ধাদের মালিকানায় পরিণত হয়েছে, আর তারা যার মালিক হয়েছে তা তাদের অনুমতি ছাড়া দেয়া বৈধ হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

ইবনু বাত্ত্বল বলেনঃ প্রতিনিধি ছিল হাওয়াযিন গোত্রের দূত। তারা তাদের বন্দীদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিধি দলকে মধ্যস্থাতাকারী বানিয়ে ছিল, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী এবং প্রতিনিধি দলের মাঝে মধ্যস্থতাকারী।

খত্ত্বাবী বলেনঃ অত্র হাদীসে প্রতিনিধি নিয়োগকারীর পক্ষে প্রতিনিধির স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ আছে। কেননা অত্র হাদীসে নেতাগণ প্রতিনিধিদের স্তরে। আবূ ইউসুফও এ মত পোষণ করেছেন; আবূ হানীফাহ্ এবং মুহাম্মাদ একে শাসকের সাথে শর্তারোপ করেছেন। মালিক, শাফি‘ঈ এবং ইবনু আবূ লায়লা বলেনঃ প্রতিনিধি নিয়োগদাতার পক্ষে প্রতিনিধির স্বীকারোক্তি বিশুদ্ধ হবে না। হাদীসে বৈধতার কোনো প্রমাণ নেই, কেননা হাদীসে বর্ণিত নেতাগণ প্রতিনিধি নন, বরং তারা আমীরদের মতো। [আল্লাহ সর্বজ্ঞাত]

অত্র হাদীসে ‘‘পরিশেষে আল্লাহ সর্বপ্রথম আমাদেরকে যা দান করবেন তা থেকে তা পরিশোধ করব।’’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ উক্তির কারণে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধার নেয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে এ মাসআলাতে প্রসিদ্ধ মতানৈক্য আছে। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২৩০৭)

সারাংশ হলো- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিজের মালিকানাতে যা বরাদ্ধ ছিল তা ফেরত দেয়ার মাধ্যমে তিনি তাদের আবেদনে সাড়া দিলেন। আর «أَحَبَّ الكلام أصدقه» বলতে সত্য কথা, সত্য প্রতিশ্রুতি সর্বাধিক প্রিয়। সুতরাং যা তিনি মানুষকে বলেন তা সত্য এবং তিনি যা মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেন তা পূর্ণ করা তার ওপর আবশ্যক। দাস মুক্তি পর্বে বুখারীর শব্দ- অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,إن معى من ترون وأحب الحديث إلى أصدقه، فاختاروا إحدى الطائفتين إما  المال وإما السبى وقد كنت إستأنيت بهم অর্থাৎ- ‘‘নিঃসন্দেহে আমার সাথে ঐ সকল বন্দীই আছে যাদেরকে তোমরা দেখছ, আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় কথা হলো সত্য কথা। অতঃপর তোমরা দু’টি অংশের একটি নির্বাচন কর, হয় সম্পদ না হয় বন্দী। আর তাদের ব্যাপারে আমি বিলম্ব করেছি।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ত্বায়িফ থেকে এসেছেন তখন দশ রাত্রির অধিক তাদের জন্য অপেক্ষা করেছেন..... আল হাদীস।

আর তাঁর «إستأنيت بهم» এ উক্তির অর্থ- আমি বন্দীর বণ্টনের বিষয় পিছিয়ে দিয়েছি যাতে হাওয়াযিন প্রতিনিধি উপস্থিত হয়। কিন্তু তারা উপস্থিত হতে বিলম্ব করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্দীদেরকে বণ্টন করা বাদ রেখে ত্বায়িফের অভিমুখী হয়ে ত্বায়িফ নগরীকে ঘেরাও করলেন। অতঃপর সেখান থেকে জিয়িরানাহ্-এর দিকে ফিরে আসলেন, অতঃপর সেখানে গনীমাতসমূহ বণ্টন করলেন। আর তাঁর কাছে হাওয়াযিন প্রতিনিধি আসলো, পরে তিনি তাদের নিকটে বর্ণনা করলেন তিনি তাদের জন্য দশ রাত্রির অধিক অপেক্ষা করেছেন, এভাবে গায়াতুল মাকসূদে সংক্ষিপ্তভাবে আছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৯০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)