৩৯৪৩

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা

৩৯৪৩-[৭] সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, যদি কোনো মুশরিক পরিবারের ওপর রাতে অতর্কিত আক্রমণকালে মহিলা ও শিশুগণ সেই আক্রমণের শিকার হয়ে আহত বা নিহত হয়- তাদের ব্যাপারে আপনি কি বলেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। অপর এক বর্ণনায় আছে, তারাও তাদের পিতা-মাতাদের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ

وَعَن الصَّعبِ بنِ جِثَّامةَ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عنْ أهلِ الدَّارِ يَبِيتُونَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَيُصَابَ مِنْ نِسَائِهِمْ وَذَرَارِيِّهِمْ قَالَ: «هُمْ مِنْهُمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «هُمْ مِنْ آبائِهم»

وعن الصعب بن جثامة قال سىل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اهل الدار يبيتون من المشركين فيصاب من نساىهم وذراريهم قال هم منهم وفي رواية هم من اباىهم

ব্যাখ্যা: মুসলিমের শারহ-তে আছে, হাদীসে ذَرَارِيِ বলতে মহিলা এবং শিশু বুঝায়। এখানে উদ্দেশ্য শিশু এবং বাচ্চা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। (قَالَ : «هُمْ مِنْهُمْ») মহিলা এবং বাচ্চারা পুরুষদেরই অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ- মহিলা এবং বাচ্চাদেরকে যখন আলাদা করা সম্ভব হবে না তখন তারা পুরুষদের হুকুমের আওতাভুক্ত। সুতরাং হত্যা না করার বিষয়টি শনাক্ত করার উপর নির্ভরশীল। একমতে বলা হয়েছে, মহিলা ও শিশুদেরকে দাস বানানো উদ্দেশ্য। কাযী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বারা তাদেরকে বন্দি করা ও দাস বানানো বৈধতা উদ্দেশ্য করেছেন। যেমন বলা যায় যদি তারা দিনে যোদ্ধাদের কাছে এসে প্রকাশ্যে তাদের সাথে যুদ্ধ করে অথবা হত্যার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য ছাড়াই রাত্রের অন্ধকারে তাদেরকে হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে ক্ষতিপূরণ নেই এবং হত্যা করাতে কোনো দোষ নেই। কেননা তারাও কাফির, তাদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকা কেবল ঐ সময় আবশ্যক যখন তা সহজসাধ্য হয়, আর এ কারণেই তারা যদি তাদের মহিলা ও সন্তানদের মাধ্যমে আত্মরক্ষার পথ অবলম্বন করে তাহলে তাদের ব্যাপারে কোনো পরোওয়া করা হবে না।

ইবনুল হুমাম বলেনঃ তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করাতে কোনো দোষ নেই, যদিও তাদের মাঝে কোনো মুসলিম বন্দি অথবা ব্যবসায়ী থাকে, বরং যদি তারা মুসলিম বন্দী ও মুসলিম শিশুদের মাধ্যমে আত্মরক্ষা করে, আর তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকলে মুসলিমরা পরাজিত হবে এ কথা বুঝতে পারে অথবা এ কথা বুঝতে না পারে উভয় সমান। তবে মুসলিম বন্দী ও শিশুদেরকে লক্ষ্যবস্তু করা যাবে না। কিন্তু এ অবস্থায় তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকলে মুসলিমদের পরাজয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানানো যাবে। এটা হামান বিন যিয়্যাদণ্ডএর উক্তি। এরপরও যদি তারা তীর নিক্ষেপ করে আর এতে কোনো মুসলিম তীরবিদ্ধ হয় তাহলে এক্ষেত্রে হামান বিন যিয়্যাদণ্ডএর মতে দিয়াত এবং কাফফারাহ্ লাগবে। আর শাফি‘ঈ-এর মতে কাফফারা লাগবে এক্ষেত্রে একমত। আর দিয়াতের ক্ষেত্রে দু’ মত। মুহাম্মাদ বলেনঃ ইমাম যখন কোনো দেশ জয় করবে এবং তার জানা থাকবে যে, তাতে মুসলিম অথবা যিম্মি আছে, তাহলে তাদের কাউকে এ সম্ভাবনার কারণে হত্যা করা বৈধ হবে না যে, ঐ লোকটি মুসলিম অথবা যিম্মি।

আর কাফির বৃদ্ধদের মাঝে যদি রণকৌশল সম্পর্কে অভিমত পেশকারী কোনো ব্যক্তি থাকে তাহলে তাদেরকে হত্যা করা হবে, অন্যথায় তাদের ব্যাপারে এবং পাদরীদের ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। মালিক ও আবূ হানীফাহ্ বলেন, তাদেরকে হত্যা করা হবে না, শাফি‘ঈ-এর মাযহাবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো তাদেরকে হত্যা করা হবে। এ হাদীসে পাওয়া যায় যে, দুনিয়াতে কাফিরদের সন্তানদের হুকুম তাদের পিতৃপুরুষদের হুকুমের মতো। পক্ষান্তরে যখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে মারা যাবে তখন পরকালীন বিষয়ে তাদের ব্যাপারে তিনটি মত। বিশুদ্ধ মত হলো- নিঃসন্দেহে তারা জান্নাতে থাকবে, দ্বিতীয়ঃ জাহান্নামে। তৃতীয়ঃ তাদের বিষয়ে কোনো ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশ করা যাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

ইবনু বাত্ত্বল এবং অন্যান্য ‘আলিমগণ বলেনঃ এ ব্যাপারে সকল বিদ্বানগণ একমত যে, মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা যাবে না। মহিলাদেরকে হত্যা না করা মূলত তাদের দুর্বলতার কারণে, আর শিশুদেরকে হত্যা না করা মূলত কুফরী কর্মের পাপ লিপিবদ্ধের বয়সে উপনীত না হওয়ার কারণে। তাদেরকে অবশিষ্ট রেখে সার্বিক উপকার লাভের কারণে, হয় দাস বানানোর মাধ্যমে অথবা যার ব্যাপারে মুক্তিপণ দেয়া বৈধ তার ব্যাপারে মুক্তিপণ দেয়ার মাধ্যমে। হাযিমী সা‘ব ইবনু জাস্সামাহ্-এর হাদীসের বাহ্যিকতার উপর ভিত্তি করে মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছেন, তিনি দাবী করেছেন সা‘ব-এর হাদীস নিষেধাজ্ঞার হাদীসসমূহের রহিতকারী। তার এ বক্তব্য গরীব। যতক্ষণ পর্যন্ত খাস হাদীস বর্ণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ‘আমে্র প্রতি ‘আমল করা বৈধ হওয়ার দলীল অত্র হাদীস। কেননা সাহাবীগণ মুশরিকদের হত্যা করার উপর প্রমাণ বহনকারী ‘আম্ তথা ব্যাপক দলীলসমূহ অবলম্বন করেছেন, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন তখন তারা এ ব্যাপকতাকে খাস হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট করেছেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০১২)

শারহে মুসলিমে আছে, হাদীসটি রাত্রিতে আক্রমণ করা বৈধ হওয়া এবং যাদের কাছে দা‘ওয়াত পৌঁছেছে তাদেরকে না জানিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করা বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ আছে। (শারহে মুসলিম ১২তম খন্ড, হাঃ ১৭৪৫)

আওনুল মা‘বূদে আছে, কুসতুলানী বলেনঃ তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা উদ্দেশ্য নয়, বরং যখন তাদেরকে হত্যা করা ছাড়া পুরুষদেরকে হত্যা করা সম্ভব হবে না তখন তাদেরকে হত্যা করতে হবে অন্যথায় মহিলা এবং শিশুদেরকে হত্যা করা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞাজনিত স্পষ্ট হাদীসসমূহের মাঝে সমন্বয় সাধনে মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যার পন্থা বর্জন করা সম্ভব হলে তাদেরকে হত্যা করা হতে বিরত থাকতে হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৬৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)