৩৭৩৭

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা

৩৭৩৭-[৭] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাকে (শাসক নিযুক্ত করে) ইয়ামানে পাঠালেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নিকট যদি কোনো মুকদ্দামা পেশ করা হয়, তখন তুমি কিভাবে বিচার-ফায়সালা পরিচালনা করবে? তিনি (মু’আয) বললেনঃ আমি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহর কিতাবের মধ্যে যদি (তার সুষ্ঠু সমাধান বুঝতে) না পাও, তখন কিভাবে করবে? তিনি (মু’আয) বলেনঃ তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত (হাদীস) অনুযায়ী সমাধান করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের মাঝেও যদি (তার সুষ্ঠু সমাধান বুঝতে) না পাও, তখন কি করবে? এর জবাবে তিনি (মু’আয) বললেনঃ তখন আমি আমার ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে ইজতিহাদ করব এবং সামান্য পরিমাণও ত্রুটি করব না। তিনি (মু’আয ) বলেন : আমার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হাত মেরে বললেন, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র সে আল্লাহর জন্য যিনি আল্লাহর রসূল-এর প্রতিনিধিরূপে সে কাজটি করার তাওফীক দিয়েছেন, যে সকল কাজে আল্লাহর রসূল সন্তুষ্ট আছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا بَعَثَهُ إِلَى الْيَمين قَالَ: «كَيْفَ تَقْضِي إِذَا عَرَضَ لَكَ قَضَاءٌ؟» قَالَ: أَقْضِي بِكِتَابِ اللَّهِ قَالَ: «فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِي كِتَابِ اللَّهِ؟» قَالَ: فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ؟» قَالَ: أَجْتَهِدُ رَأْيِي وَلَا آلُو قَالَ: فَضَرَبَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى صَدْرِهِ وَقَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ لِمَا يَرْضَى بِهِ رَسُولُ اللَّهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد والدارمي

وعن معاذ بن جبل ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لما بعثه الى اليمين قال كيف تقضي اذا عرض لك قضاء قال اقضي بكتاب الله قال فان لم تجد في كتاب الله قال فبسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فان لم تجد في سنة رسول الله قال اجتهد رايي ولا الو قال فضرب رسول الله صلى الله عليه وسلم على صدره وقال الحمد لله الذي وفق رسول رسول الله لما يرضى به رسول الله رواه الترمذي وابو داود والدارمي

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয বিন জাবাল -কে ইয়ামানে বিচারপতি হিসেবে পাঠানোর সময় প্রশ্ন করলেন, কি দ্বারা ফায়সালা করবে? মু‘আয বললেন, আল্লাহর কিতাব দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কিতাবে স্পষ্ট না পেলে কি দ্বারা করবে? মু‘আয বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত দ্বারা। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত যদি না পাও তাহলে কিভাবে? মু‘আয বললেন, ‘আমি ইজতিহাদ করবো’ এর অর্থ হলো আমি ঐ মাসআলার উত্তর অনুসন্ধান করবো। ইজতিহাদের মাধ্যমে এবং অনুরূপ মাসআলাহ্ অনুসন্ধান করবো যাতে শারী‘আতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান এবং একটি মাসআলাকে আরেকটির সাথে তুলনা করবো।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মু‘আয (রাঃ)-এর কথা (أَجْتَهِدُ رَائِىْ) এর মধ্যে দৃঢ়তা বিরাজমান। إجْتهاد (ইজতিহাদ) শব্দটির অর্থ হলো প্রচেষ্টা চালানো, আবার তাকে رَائِىْ এর দিক সম্পৃক্ত করার কারণে অর্থের মধ্যে আরো দৃঢ়তা এসেছে। ইমাম রাগিব আস্ ইস্পাহানী বলেনঃ الْجُهْدُ ‘‘আল জুহ্দ’’ শব্দের অর্থ হলো শক্তি সামর্থ্য আর ইজতিহাদ অর্থ কষ্ট করা, পরিশ্রম করা। ইমাম খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ এখানে রায় বলতে নিজের মনগড়া কথা যার কুরআন-হাদীসের সাথে নূন্যতম সম্পর্ক নেই এমন নয় বরং কুরআন ও হাদীসের সাথে মিল রেখে গবেষণার মাধ্যমে বিচার করতে হবে এটা উদ্দেশ্য।

অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায়, ক্বিয়াস তথা ইজতিহাদের মাধ্যেমে ফতোয়া প্রদান করা যায়। আল-মাযহাব বলেন, যদি এমন মাসাআলাহ্ আসে যার কুরআন ও হাদীসের সরাসরি কোনো দলীল পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে অনুরূপ আরেকটি মাসআলাহ্ দেখতে হবে যার দলীল সরাসরি কুরআন-হাদীসে রয়েছে এবং একটির সাথে আরেকটির সমতা বিধান করে ফতোয়া দিতে হবে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে, যেমন : গমে সুদ হয়, এটা সরাসরি হাদীসে উল্লেখ আছে কিন্তু তরমুজে সুদ হয় এটা হাদীসে উল্লেখ নেই। তাই তরমুজে সুদ হয় কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হলো, হ্যাঁ, তরমুজেও সুদ হয় কারণ গম যেমন খাবার বস্তু, তেমনি তরমুজও খাওয়ার বস্তু তাই গমে সুদ হলে তরমুজেও সুদ হবে এটাই স্বাভাবিক। এমনটাই বলেছেন ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)। (‘আওনূল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৮৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء)