৩৫১১

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই

৩৫১১-[২] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (তাবূক যুদ্ধে) কষ্ট-ত্যাগ স্বীকারকারী সৈন্যদলের সাথে ছিলাম। আমার সাথে এক চাকর ছিল, সে জনৈক ব্যক্তির সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার দরুন একজন অপরজনের হাত কামড়ে ধরে। অতঃপর যার হাত কামড়ে ধরেছিল সে তার হাত কামড়ে ধরা মুখ থেকে টেনে বের করতে গিয়ে তার সম্মুখের দু’টি দাঁত ভেঙ্গে যায়। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করেন। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দাঁতের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ ধার্য না করে বললেন, তুমি কি চাও যে, সে তার হাত তোমার মুখে রাখবে আর তুমি ষাঁড় উটের মতো কামড়াতে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ

وَعَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَيْشَ الْعُسْرَةِ وَكَانَ لِي أَجِيرٌ فقاتلَ إِنساناً فعض أَحدهمَا الْآخَرِ فَانْتَزَعَ الْمَعْضُوضُ يَدَهُ مِنْ فِي الْعَاضِّ فَأَنْدَرَ ثَنِيَّتَهُ فَسَقَطَتْ فَانْطَلَقَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَهْدَرَ ثَنِيَّتَهُ وَقَالَ: «أَيَدَعُ يَدَهُ فِي فِيكَ تَقْضِمُهَا كَالْفَحْلِ»

وعن يعلى بن امية قال غزوت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم جيش العسرة وكان لي اجير فقاتل انسانا فعض احدهما الاخر فانتزع المعضوض يده من في العاض فاندر ثنيته فسقطت فانطلق الى النبي صلى الله عليه وسلم فاهدر ثنيته وقال ايدع يده في فيك تقضمها كالفحل

ব্যাখ্যা: (جَيْشَ الْعُسْرَةِ) বলতে তাবূক যুদ্ধকে বুঝানো হয়েছে। العسر শব্দটি اليسر-এর বিপরীত। তাবুকের যুদ্ধকে ‘উসরার যুদ্ধ বলা হয়েছে কারণ এই সময় প্রচণ্ড গরম ছিল এবং এই যুদ্ধে পাথেয় ও বাহন সংখ্যা কম ছিল। প্রচণ্ড তাপে, ফল পাকার সময় ও সুন্দর ছায়া পরিত্যাগ করে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়া যোদ্ধাদের নিকট খুবই কঠিন ছিল। তাই এই যুদ্ধকে (جَيْشَ الْعُسْرَةِ) বলা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৬৯ পৃষ্ঠা)

হাদীসে ইয়া‘লা-এর একজন শ্রমিক অন্য একজন মানুষের সাথে তর্ক-বিতর্কে পড়ে দাঁত পড়ে যাওয়ায় ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেলো। তবে সহীহ মুসলিমের রিওয়ায়াতে আছে যে, খোদ ইয়া‘লা একজন মানুষের সাথে তর্কে পড়ে দাঁত পড়ে যাওয়ায় উক্ত ঘটনা ঘটে। এর সমাধানকল্পে সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার হাদীসের হাফিযদের মতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ বিশুদ্ধ মত হলো কামড়ানো ব্যক্তি হলো ইয়া‘লা, ইয়া‘লা-এর শ্রমিক নয়। অথবা এটাও সম্ভাবনা আছে যে, এরূপ ঘটনা দু’টি যার একটি ঘটেছিল খোদ ইয়া‘লা-এর সাথে। দ্বিতীয়টি হলো ইয়া‘লা-এর মজুরের সাথে। (শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৬৭৩)

হাদীসের গৃহীত বিষয়াদিঃ

১. কেউ কোনো মানুষের হাতে কামড় দিলে মুখের ভিতর থেকে কামড়ে ধরা তার ব্যক্তি হাত টেনে নেয়ায় দাঁত পড়ে যায়, তবে এর কোনো কিসাস নেই বা রক্তমূল্য দিতে হবে না।

২. এই বিধান কোনো প্রাণী বা মানুষ দ্বারা আক্রান্ত সব ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সে তার জীবন, সম্মান, পবিত্রতা ও মাল রক্ষা করবে। এতে যদি সে আক্রমণকারীকে আঘাত করে অথবা নিহত করে তবে তার ওপর এর দায় বর্তাবে না অর্থাৎ তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। কেননা সে নিজেকে রক্ষা করেছে যা তার ওপর ওয়াজিব। আর আক্রমণকারী হচ্ছে সীমালঙ্ঘনকারী, উপরন্তু এর প্রমাণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখনিঃসৃত বাণী রয়েছেঃ

مَنْ قُتِلَ دُوْنَ نَفْسِه فَهُوَ شَهِيْدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ اَهْلِه فَهُوَ شَهِيْد

‘‘যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ আর যে স্বীয় পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।’’

৩. এ হাদীসের বিধানকে একটি নীতি হিসেবে নির্ধারণ করেছেন ‘আলিমগণ আর তা হলো নিজেকে রক্ষা করা সহজতর পন্থাবলম্বনের মাধ্যমে। (যা হাদীসে বিদ্যমান)
বিদ্বানগণ বলেনঃ উপরোক্ত শর্তারোপ শারী‘আতের সামগ্রিক রীতিসমূহ থেকে গৃহীত। (তায়সীরুল ‘আল্লাম শারহে ‘উমদাতুল আহকাম- ২য় খন্ড, ৩০৮ পৃষ্ঠা)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص)