৩৩৮৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৩৩৮৪-[৩] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক গ্রাম্য লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন একটি ’আমল বলে দিন যে ’আমলের দরুন আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদিও তুমি অল্প কথায় বলে ফেললে, কিন্তু তুমি ব্যাপক বিষয় জানতে চাচ্ছ। তুমি একটি প্রাণী মুক্ত কর এবং গোলাম মুক্ত কর। সে বলল, এ কাজ দু’টি কি একই নয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (অবশ্যই) না। কেননা প্রাণী মুক্ত করার অর্থ হলো তুমি একাকী একটি প্রাণ মুক্ত করা, আর গোলাম মুক্ত করার অর্থ হলো তার মুক্তিপণের মাধ্যমে সাহায্য করা। অধিক দুগ্ধদানকারী প্রাণী দান করা এবং অত্যাচারী আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দয়াপ্রবণ হওয়া। যদি তুমি এসব কাজ করতে সক্ষম না হও, তাহলে ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াও এবং তৃষ্ণার্তকে পান করাও। সৎকর্মের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজে বাধা দাও। আর যদি তুমি এ কাজ করতেও অক্ষম হও, তাহলে উত্তম কথোপকথন ছাড়া তোমার জিহবাকে সংযত রাখ। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]

عَن الْبَراء بن عَازِب قَالَ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: عَلِّمْنِي عَمَلًا يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ قَالَ: «لَئِنْ كُنْتَ أَقْصَرْتَ الْخُطْبَةَ لَقَدْ أَعْرَضْتَ الْمَسْأَلَةَ أَعْتِقِ النَّسَمَةَ وَفك الرَّقَبَة» . قَالَ: أَو ليسَا وَاحِدًا؟ قَالَ: لَا عِتْقُ النَّسَمَةِ: أَنْ تَفَرَّدَ بِعِتْقِهَا وَفَكُّ الرَّقَبَةِ: أَنْ تُعِينَ فِي ثَمَنِهَا وَالْمِنْحَةَ: الْوَكُوفَ وَالْفَيْءَ عَلَى ذِي الرَّحِمِ الظَّالِمِ فَإِنْ لَمْ تُطِقْ ذَلِكَ فَأَطْعِمِ الْجَائِعَ وَاسْقِ الظَّمْآنَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ فَإِنْ لم تطق فَكُفَّ لِسَانَكَ إِلَّا مِنْ خَيْرٍ . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان

عن البراء بن عازب قال جاء اعرابي الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال علمني عملا يدخلني الجنة قال لىن كنت اقصرت الخطبة لقد اعرضت المسالة اعتق النسمة وفك الرقبة قال او ليسا واحدا قال لا عتق النسمة ان تفرد بعتقها وفك الرقبة ان تعين في ثمنها والمنحة الوكوف والفيء على ذي الرحم الظالم فان لم تطق ذلك فاطعم الجاىع واسق الظمان وامر بالمعروف وانه عن المنكر فان لم تطق فكف لسانك الا من خير رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: মিরকাতুল মাফাতীহে বর্ণিত, (عِتْقُ النَّسَمَةَ) এবং (فُكَّ الرَّقَبَةَ) হাদীসের এ দু’টি শব্দের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ (عِتْقُ) অর্থ হলো তার ওপর দাসত্বের শৃঙ্খল হতে তুলে নেয়া। ফলে এ কাজ কোনো এক ব্যক্তির একক মালিকানাধীন হওয়া ছাড়া সম্ভব নয়।

আর (فُكَّ) অর্থ হলো দাস মুক্তিতে চেষ্টা বা সহযোগিতা করা এবং এতে অন্য লোকও শরীক থাকতে পারে, যেমন কোনো এক গোলাম তার প্রভুর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে পারলে সে দাসত্ব হতে মুক্তি পাবে এবং তা কমের কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবে। হাদীসের পরিভাষায় এ জাতীয় গোলামকে বলা হয় ‘‘মুকাতাব’’। সুতরাং এ ধরনের গোলামকে কিছু আর্থিক সাহায্য করাকেও (فُكَّ الرَّقَبَةَ) বলা হয়।

(وَالْمِنْحَةَ) দ্বারা এমন উটনী ও ছাগলকে বুঝানো হয় যা তার মালিককে দুধ দেয় যা দ্বারা তার মালিক উপকৃত হয়। (وَكُوْفَ) দ্বারা উদ্দেশ্য প্রচুর দুধ প্রদানকারী জানোয়ার।

(فَإِنْ لَمْ تَطِقْ فَكُفَّ لِسَانَكَ إِلَّا مِنْ خَيْرٍ) আর যদি তোমার দ্বারা এ কাজ করাও সম্ভব না হয় তবে কল্যাণমূলক কথা ব্যতীত তোমার জিহবাকে বন্ধ রাখ। এটা অন্য হাদীসেরই প্রতিধ্বনি যা বুখারীতে এসেছে «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ» যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের উপর ঈমান আনে যে যেন ভালো বলে অথবা চুপ থাকে। কারও মতে خَيْرً দ্বারা উদ্দেশ্য যার উপর প্রতিদান চালু হয়। সুতরাং মুবাহ তথা বৈধ বা অনুমোদিত خَيْرً নয়। তবে خَيْرً দ্বারা এখানে সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য খারাপ বা অন্যায়ের সরাসরি বিপরীত। আর ইচ্ছা ঈঙ্গিত করে যে, এটা ঈমানের সর্বনিম্ন বস্তুর আর তার অবস্থার বাস্তব চিত্র হলো আমাদের যুগ। এজন্য বলা হয়, আমাদের এখানে সময় চুপ থাকার সময় এবং বাড়ীকে আঁকড়িয়ে ধরা ও খাদ্য নিয়ে তুষ্ট থাকা মৃত্যু আসা পর্যন্ত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৪: গোলাম মুক্তিকরণ (كتاب العتق)