২২২০

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে

২২২০-[১০] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধের পর পর খলীফাতুর রসূল আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি গেলাম। দেখলাম ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তাঁর কাছে উপবিষ্ট। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ’উমার আমার কাছে এসে খবর দিলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক কুরআনের হাফেয শহীদ হয়ে গেছেন। আমার আশংকা হয়, বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে এভাবে হাফেয শহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ লোপ পেয়ে যাবে। তাই আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কুরআনকে মাসহাফ বা কিতাব আকারে একত্রিত করতে হুকুম দেবেন। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমি ’উমারকে বললাম, এমন কাজ কিভাবে আপনি করবেন, যে কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি? ’উমার(রাঃ) উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ। এটা হবে একটা উত্তম কাজ। ’উমার(রাঃ) এভাবে আমাকে বার বার বলতে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহ এ কাজের গুরুত্ব বুঝার জন্য আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং আমিও এ কাজ করা সঙ্গত মনে করলাম।

যায়দ (রাঃ) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক যার ব্যাপারে আমাদের কোন সন্দেহ সংশয় নেই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওহীও তুমি লিখতে। তাই তুমিই কুরআনের আয়াতগুলো খোঁজ করো এবং এগুলো গ্রন্থাকারে (মাসহাফ) একত্র করো। যায়দ (রাঃ) বলেন, তারা যদি আমাকে পাহাড়সমূহের কোন একটিকে স্থানান্তরের দায়িত্ব অর্পণ করতেন তা-ও আমার জন্য কুরআন একত্র করার দায়িত্ব অপেক্ষা অধিক দুঃসাধ্য হত না। যায়দ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি, এমন কাজ আপনারা কী করে করবেন? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এটা বড়ই উত্তম কাজ। মোটকথা, এভাবে আবূ বকর (রাঃ) আমাকে বার বার বলতে লাগলেন।

সর্বশেষ আল্লাহ তা’আলা আমার হৃদয়কেও এ গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য খুলে দিলেন, যে কাজের জন্য আবূ বকর ও ’উমারের হৃদয়কে খুলে দিয়েছিলেন। অতএব খেজুরের ডালা, সাদা পাথর, পশুর হাড়, মানুষের (হাফেযদের) অন্তর ও স্মৃতি হতে আমি কুরআনের আয়াত সংগ্রহ করতে লাগলাম। সর্বশেষ আমি সূরা আত্ তাওবার শেষাংশ, ’লাকদ জা-আকুম রসূলুম মিন আনফুসিকুম’ হতে সূরার শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করলাম আবূ খুযায়মাহ্ আনসারীর কাছ থেকে। এ অংশ আমি তার ছাড়া আর কারো কাছে পাইনি। যায়দ (রাঃ) বলেন, এ লিখিত সহীফাহগুলো আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে ছিল যে পর্যন্ত আল্লাহ তাকে মৃত্যু দেননি। তারপর ছিল ’উমার (রাঃ)-এর কাছে তাঁর জীবনকাল পর্যন্ত। তারপর তাঁর কন্যা হাফসা (রাঃ)-এর কাছে ছিল। (বুখারী)[1]

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ: أَرْسَلَ إِلَيَّ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَقْتَلَ أَهْلِ الْيَمَامَةِ. فَإِذَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عِنْدَهُ. قَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّ عُمَرَ أَتَانِي فَقَالَ إِنَّ الْقَتْلَ قَدِ اسْتَحَرَّ يَوْمَ الْيَمَامَةِ بِقُرَّاءِ الْقُرْآنِ وَإِنِّي أَخْشَى أَنِ اسْتَحَرَّ الْقَتْلُ بِالْقُرَّاءِ بِالْمَوَاطِنِ فَيَذْهَبُ كَثِيرٌ مِنَ الْقُرْآنِ وَإِنِّي أَرَى أَنْ تَأْمُرَ بِجَمْعِ الْقُرْآنِ قُلْتُ لِعُمَرَ كَيْفَ تَفْعَلُ شَيْئًا لَمْ يَفْعَلْهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ عُمَرُ هَذَا وَاللَّهِ خَيْرٌ فَلم يزل عمر يراجعني فِيهِ حَتَّى شرح الله صَدْرِي لذَلِك وَرَأَيْت الَّذِي رَأَى عُمَرُ قَالَ زَيْدٌ قَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّكَ رَجُلٌ شَابٌّ عَاقِلٌ لَا نَتَّهِمُكَ وَقَدْ كُنْتَ تَكْتُبُ الْوَحْيَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَتَبَّعِ الْقُرْآنَ فَاجْمَعْهُ فَوَاللَّهِ لَوْ كَلَّفُونِي نَقْلَ جَبَلٍ مِنَ الْجِبَالِ مَا كَانَ أَثْقَلَ عَلَيَّ مِمَّا أَمَرَنِي بِهِ مِنْ جمع الْقُرْآن قَالَ: قلت كَيفَ تَفْعَلُونَ شَيْئا لم يَفْعَله النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ هُوَ وَاللَّهِ خير فَلم أزل أراجعه حَتَّى شرح الله صَدْرِي للَّذي شرح الله لَهُ صدر أبي بكر وَعمر. فَقُمْت فَتَتَبَّعْتُ الْقُرْآنَ أَجْمَعُهُ مِنَ الْعُسُبِ وَاللِّخَافِ وَصُدُورِ الرِّجَال حَتَّى وجدت من سُورَة التَّوْبَة آيَتَيْنِ مَعَ أَبِي خُزَيْمَةَ الْأَنْصَارِيِّ لَمْ أَجِدْهَا مَعَ أَحَدٍ غَيْرِهِ (لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ)
حَتَّى خَاتِمَةِ بَرَاءَةَ. فَكَانَتِ الصُّحُفُ عِنْدَ أَبِي بَكْرٍ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ عِنْدَ عُمَرَ حَيَاته ثمَّ عِنْد حَفْصَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن زيد بن ثابت قال: أرسل إلي أبو بكر رضي الله عنه مقتل أهل اليمامة. فإذا عمر بن الخطاب عنده. قال أبو بكر إن عمر أتاني فقال إن القتل قد استحر يوم اليمامة بقراء القرآن وإني أخشى أن استحر القتل بالقراء بالمواطن فيذهب كثير من القرآن وإني أرى أن تأمر بجمع القرآن قلت لعمر كيف تفعل شيئا لم يفعله رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقال عمر هذا والله خير فلم يزل عمر يراجعني فيه حتى شرح الله صدري لذلك ورأيت الذي رأى عمر قال زيد قال أبو بكر إنك رجل شاب عاقل لا نتهمك وقد كنت تكتب الوحي لرسول الله صلى الله عليه وسلم فتتبع القرآن فاجمعه فوالله لو كلفوني نقل جبل من الجبال ما كان أثقل علي مما أمرني به من جمع القرآن قال: قلت كيف تفعلون شيئا لم يفعله النبي صلى الله عليه وسلم. قال هو والله خير فلم أزل أراجعه حتى شرح الله صدري للذي شرح الله له صدر أبي بكر وعمر. فقمت فتتبعت القرآن أجمعه من العسب واللخاف وصدور الرجال حتى وجدت من سورة التوبة آيتين مع أبي خزيمة الأنصاري لم أجدها مع أحد غيره (لقد جاءكم رسول من أنفسكم) حتى خاتمة براءة. فكانت الصحف عند أبي بكر حتى توفاه الله ثم عند عمر حياته ثم عند حفصة. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ইয়ামামাহ্ ইয়ামানের একটি প্রসিদ্ধ শহরের নাম। ‘‘বিদায়াহ্ ওয়ান্ নিহায়াহ্’’-তে বলা হয়েছে, এটা পূর্ব হিজাযের প্রসিদ্ধ অঞ্চল।

(أهل اليمامة) বলতে মুসায়লামাতুল কাযযাব বাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত সাহাবীগণ উদ্দেশ্য। যখন মুসায়লামাতুল কাযযাব নবূওয়াত দাবী করল এবং ‘আরবের অনেকের মুরতাদ হওয়ার কারণে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলল তখন আবূ বাকর (রাঃ) খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) এর নেতৃত্বে একদল সাহাবীকে মুসায়লামাতুল কাযযাব-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পাঠালেন। তারা ইয়ামামাহ্ অঞ্চলে গিয়ে তার সাথে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা মুসায়লামাহ্-কে পরাজিত করেন এবং হত্যা করেন। এ যুদ্ধে অনেক সাহাবী শহীদ হন। কেউ বলেন, এর সংখ্যা ছিল সাতশত। আবার কেউ বলেন, এর চাইতেও বেশি।

কুরআন সংকলনের ইতিহাস: ইমাম হাকিম (রহঃ) তার মুস্তাদরাক গ্রন্থে বলেন, কুরআন তিনটি পর্যাযে সংকলন করা হয়। একটি হল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায়। তবে যে সংকলন বর্তমান সময়ে আমাদের নিকট আছে এটা নয়। তখন বিভিন্ন সূরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে লিখিত ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে, অর্থাৎ- এক জায়গায় লিখা হয়নি এবং সূরার ধারাবাহিকতাও ঠিক ছিল না।

হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কুরআন একটি মাসহাফে সংকলন না করার কারণ হলো তখন কোন আয়াতের হুকুম অথবা কোন আয়াতের তিলাওয়াত মানসূখের সম্ভাবনা ছিল। তাই যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করলেন তখন এরূপ নাসিখ নাযিল হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল এবং আল্লাহ খুলাফায়ে রাশিদীনদের ইলহাম করে কুরআন সংরক্ষণ করার জন্য নির্দেশ দেন। তাই সংকলনের সূচনা হয়েছিল ‘উমার (রাঃ)-এর পরামর্শক্রমে আবূ বাকর সিদ্দীক্বের হাত ধরে। আবূ বাকর (রাঃ) প্রথমত কুরআন সংকলন করতে চাননি। কিন্তু ‘উমার (রাঃ)-এর বারবার বলার কারণে তিনি এই মহান দায়িত্বের প্রতি মনোযোগ দেন। আর তিনি উপলব্ধি করেন যে, এটাই হচ্ছে আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাধারণ মানুষের খায়েরখাহী করা।

আবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশও রয়েছে। যেমন তিনি বলেন, (لا تكتبوا عني شيئاً غير القرآن)। আর আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কুরআন একটি صفة-এ সংকলিত রয়েছে। যেমন আল্লাহর বাণীঃ يَتْلُو صُحُفًا مُطَهَّرَةً ‘‘যে পাঠ করে পবিত্র গ্রন্থ’’- (সূরা আল বাইয়্যিনাহ্ ৯৮ : ২)। কিন্তু এখন বিক্ষিপ্তভাবে পাথরে, খেজুরের ডালে, অনুরূপ বস্ত্ততে লিখা রয়েছে। অতঃপর তিনি একটি মুসহাফে সংকলন করলেন। এটাকে রাফিযী সম্প্রদায় সম্পূর্ণ বিদআত (বিদাত) বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হারিস মুহাসিব তার ‘‘ফাহামুস্ সুনান’’ গ্রন্থে বলেছেন, কুরআন লিখন বিদআত (বিদাত) নয়। কারণ, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন লিখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বিভিন্ন কাগজের টুকরায়, খেজুরের ডালে, হাড্ডিতে। আবূ বাকর (রাঃ) এগুলোকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় একত্রিত করলেন। যেন তিনি বিক্ষিপ্ত কুরআনকে বিভিন্ন পাতায় স্থান দিলেন। যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। অতঃপর সেগুলোকে একটি সুতায় বেঁধে দিলেন যাতে কোন অংশ নষ্ট না হয়ে যায়। (ইত্ক্বান- ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫৮)

আবূ বাকর (রাঃ) ওহীর লেখক যায়দ বিন সাবিত-কে কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দেন। হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী যায়দ-এর চারটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন যা এই কাজের জন্য প্রয়োজন।

১. যুবক হওয়া- যে প্রত্যাশিত কিছু খুঁজতে আগ্রহী হবে।

২. জ্ঞানী হওয়া- যে সেগুলোকে সংরক্ষণ করবে।

৩. মিথ্যায় অভিযুক্ত না হওয়া- যাতে তার প্রতি আস্থা রাখা যায়।

৪. ওহীর লেখক ছিলেন- যিনি সর্বাধিক কুরআনের চর্চা করতেন।

যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কুরআন সংকলনের কাজ সম্পাদন করতে থাকেন। ইয়াহ্ইয়া বিন ‘আবদুর রহমান বলেন, ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে কুরআন শিখেছে সে যেন তা নিয়ে উপস্থিত হয়। তখন মানুষেরা কাগজের টুকরা, হাড্ডিতে মসৃন পাথরে কুরআন লিপিবদ্ধ করত। যায়দ (রাঃ) কারো নিকট থেকে দু’টি সাক্ষী না পাওয়া পর্যন্ত কিছু গ্রহণ করতেন না। এটা প্রমাণ করে যে, তিনি শুধুমাত্র কারো নিকট কিছু লিখিত পেলেই গ্রহণ করতেন না যতক্ষণ না তিনি জানতেন যে, কার নিকট থেকে শিখেছে এবং তিনি জানেন কি না? এক্ষেত্রে আবূ বাকরও সতর্কতা অবলম্বন করতেন। একদা তিনি যায়দ ও ‘উমারকে বললেন, তোমরা দু’জন মসজিদের দরজায় বস এবং যে তোমাদের নিকটে দু’জন সাক্ষীসহ বলবে যে, এটা কুরআনের আয়াত তখন তা লিখে নাও। আর দুই সাক্ষী থেকে উদ্দেশ্য حفظ তথা মুখস্থ এবং كتابة তথা লিখিত।

অথবা এ দু’টি সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে লিখিত।

অথবা এ দু’টি প্রমাণ করবে যে, এটা যেসব পদ্ধতিতে কুরআন নাযিল হয়েছে তারই অন্তর্ভুক্ত। শুধু মুখস্থের ভিত্তিতে নয়। এর সাথে লিখার উপর গুরুত্ব প্রদান করতেন। এজন্যই যায়দ সূরা আত্ তাওবার শেষের আয়াত সম্পর্কে বলেন, আমি আর কারো নিকটে লিখিত পায়নি।

সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, এই দুই সাক্ষী থেকে উদ্দেশ্য হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মারা যাওয়ার বছর কুরআনকে যে দু’বার জিবরীল নাবীর ওপর পড়ে শুনান সেটাই।

কুসতুলানী (রহঃ) বলেন, (صدور الرجال) এর অর্থ হলো যারা কুরআন সংকলন করেছেন এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সম্পূর্ণ কুরআনকে মুখস্থ রেখেছেন। যেমন উবাই বিন কা‘ব, মু‘আয বিন জাবাল প্রভৃতি। আর হাড্ডিতে পাথরে লিখিত পাওয়া যেন স্থির করল আবার অনুমোদন দেয়া হলো। اللمعات-এ বলা হয়েছে (صدور الرجال) হলো নির্ভরযোগ্য উৎস।

আর كتابة হলো تقرير على تقرير। অন্য বর্ণনায় রয়েছে কুরআন সংকলন কারীগণ কারো নিকটে কুরআনের আয়াত পেলে তাকে কসম দিতেন অথবা কোন প্রমাণ তলব করতেন। মোট কথা এসব কঠোরতা অবলম্বন করেছেন সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য।

যায়দ বিন সাবিত, ‘উমার, আবূ খুযায়মাহ্, উবাই বিন কা‘ব তাওবার শেষ আয়াত সংগ্রহ করে গোটা কুরআনকে একটি মাসহাফে সংকলন করেন, আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট রেখে দেন। তার মৃত্যুর পর ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট, অতঃপর তদীয় কন্যা হাফসাহ্’র নিকট কুরআনের মাসহাফটি থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)