১৯৫৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

الصومالصيام-এর আভিধানিক অর্থ হলো সাধারণভাবে বিরত থাকা। অর্থাৎ- সহবাস, কথা বলা, খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকা। আরো বলা হয়ে থাকে, সূর্য গতিহীন হয়ে পড়লে দিনও গতিহীন হয়ে পড়ে। আর বাতাস বন্ধ হয়ে যায় তখন তার গতিশীলতা থাকে না। আল্লাহ তা’আলা মারইয়াম সম্পর্কে বলেনঃ ’’মারইয়াম-এর কথা হলো, আমি মানুষের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য মানৎ করেছি রহমানের নিকটে।’’ (সূরা মারইয়াম ১৯ঃ ২৬)

صيام ’’সিয়াম’’-এর পরিভাষায় ইমাম নাবাবী ও হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ

إمساك مخصوص في زمن مخصوص عن شيء مخصوص بشرائط مخصوصة.

অর্থাৎ- নির্দিষ্ট শর্তের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকাকে সিয়াম বলে।

ইমাম ত্বীবী বলেনঃ এমন কিছু গুণ যা ইতিবাচক এবং যা ’আমল করা জায়িয তা ব্যতিরেকে সকল নিষিদ্ধ কাজ হারাম।

আমীর ইয়ামানী বলেনঃ নির্দিষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকা। আর তা হলো খাওয়া, পান করা ও সহবাস।


১৯৫৬-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাহে রমাযান (রমজান) শুরু হলে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শিকলবন্দী করা হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়’। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا دخل شهر رَمَضَانُ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فُتِحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دخل شهر رمضان فتحت ابواب السماء وفي رواية فتحت ابواب الجنة وغلقت ابواب جهنم وسلسلت الشياطين وفي رواية فتحت ابواب الرحمة

ব্যাখ্যা: (فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ) ‘‘আকাশের দরজাসমূহ খুলো দেয়া হয়। এখানে আকাশের দরজাসমূহ দ্বারা জান্নাতের দরজা উদ্দেশ্য। কেননা এর বিপরীতে বলা হয়েছে যে, (غُلّقَتْ أبواب النار) জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। অতএব বুঝা গেল যে, আকাশের দরজা দ্বারা উদ্দেশ্য জান্নাতের দরজা। ইবনু বাত্ত্বাল-এর বক্তব্যও তাই।

(غُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ) ‘‘জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়।’’ সিন্দী (রহঃ) বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য বান্দা থেকে শাস্তি দূর করা। হাদীসের এ অংশ থেকে এটাও জানা যায় যে, জাহান্নামের দরজা খোলা থাকে। হাদীসের এ বক্তব্য সূরা আয্ যুমারে আল্লাহর বাণী ‘‘তারা (জাহান্নামীরা) যখন সেখানে আসবে তখন তা খুলে দেয়া হবে’’- সূরা আয্ যুমার আয়াত নং ৭১-এর বিরোধী নয়। কেননা এটা সম্ভব যে, জাহান্নামীদের তাতে নিক্ষেপ করার পূর্বে তা বন্ধ করা হবে। পরে তা আবার খুলে দেয়া হবে। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়ার কারণে কোন কাফির রমাযানে মৃত্যুবরণ করলে তাকে শাস্তি দেয়ায় কোন প্রতিবন্ধক হবে না। কারণ শাস্তি প্রদানের জন্য কবরের সাথে জাহান্নামের কোন একটি ছোট দরজার সংযোগ স্থাপনই যথেষ্ট, যদিও জাহান্নামের বড় ফটক বন্ধ থাকে।

(سُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ) ‘‘শয়তানদের শিকলবন্দী করা হয়’’ অর্থাৎ- তাদেরকে প্রকৃত শিকল দ্বারাই আটকে ফেলা হয়। আর এখানে ঐ সমস্ত শয়তান উদ্দেশ্য যারা আকাশ থেকে সংবাদ চুরি করার কাজে লিপ্ত থাকে। অথবা এর দ্বারা সকল শয়তান উদ্দেশ্য, তবে এর অর্থ রূপক অর্থাৎ- শয়তান কর্তৃক মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রবণতা কমে যায়।

যদি প্রশ্ন করা হয় যে, শয়তানকে যদি রমাযান (রমজান) মাসে বন্দী করেই ফেলা হয় তা হলে রমাযানে অপরাধ সংগঠিত হয় কিভাবে? এর জওয়ার এই যে, অপরাধের প্রবণতা ঐ সমস্ত মুসলিমদের থেকে কমে যায় যারা সিয়ামের শর্তাবলী পালনের মাধ্যমে সিয়ামকে সংরক্ষণ করে। অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য রমাযানে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে দেয়া আর তা প্রকাশ্যভাবেই দৃশ্যমান। এটা সর্বজনবিদিত যে, রমাযান (রমজান) মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় অপরাধ অনেক কর্ম সংঘটিত হয়, আর শয়তান বন্দী করে ফেলার কারণে অপরাধ একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া জরুরী নয়। কেননা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার অনেক কারণ বিদ্যমান, তন্মধ্যে খারাপ অন্তর ও মানবরূপী শয়তান এর অন্তর্ভুক্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم)