১২৯৬

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

১২৯৬-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে ক্বিয়ামুল লায়লের উৎসাহ দিতেন (তারাবীহ সালাত), কিন্তু তাকিদ করে কোন নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে লোক ঈমানের সঙ্গে ও পুণ্যের জন্যে রমাযান মাসে রাত জেগে ’ইবাদাত করে তার পূর্বের সব সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে গেল। (অর্থাৎ তারাবীহের জন্যে জামা’আত নির্দিষ্ট ছিল না, বরং যে চাইতো সাওয়াব অর্জনের জন্যে আদায় করে নিত)। আবূ বকরের খিলাফাতকালেও এ অবস্থা ছিল। ’উমারের খিলাফাতের প্রথম দিকেও এ অবস্থা ছিল। শেষের দিকে ’উমার (রাঃ) তারাবীহের সালাতের জন্যে জামা’আতের ব্যবস্থা করেন এবং তখন থেকে লাগাতার তারাবীহের জামা’আত চলতে থাকল। (মুসলিম)[1]

بَابُ قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: (كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْغَبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَهُمْ فِيهِ بِعَزِيمَةٍ فَيَقُولُ: «مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ والمر عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ كَانَ الْأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلَافَةِ أَبِي بَكْرٍ وَصَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ عمر على ذَلِك» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرغب في قيام رمضان من غير ان يامرهم فيه بعزيمة فيقول من قام رمضان ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه فتوفي رسول الله صلى الله عليه وسلم والمر على ذلك ثم كان الامر على ذلك في خلافة ابي بكر وصدرا من خلافة عمر على ذلك رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه) অর্থাৎ তার পূর্বে সগীরাহ্ গুনাহ যেগুলো আল্লাহ তা‘আলার হক সেগুলো ক্ষমা করা হবে। এ ব্যাপারে ইবনুল মুনযির (রহঃ) নীরব থেকেছেন। ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন, ফিকহবিদদের নিকট প্রসিদ্ধ মত হলো নিশ্চয় সেটা সগীরাহ্ গুনাহর সাথে নির্দিষ্ট। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ আগে ও পরে সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করার ব্যাপারে একাধিক হাদীস রয়েছে যা আমি কিতাবুল মুফরাদে উল্লেখ করেছি।

(فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ والمر عَلى ذلِكَ) অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করলেন তখনও তারাবীহের সালাত একক জামা‘আতে চালু ছিল না। কেউ কেউ একাই আবার কেউ এক ব্যক্তির সাথে, আবার কেউ তিন কিংবা ততাধিক ব্যক্তির সাথে সালাত আদায় করতেন এবং তাদের কেউ কেউ রাতের প্রথমভাগে আবার কেউ কেউ রাতের শেষাংশে, কেউ বাড়ীতে আবার কেউ মসজিদে সালাত আদায় করতেন।

(ثُمَّ كَانَ الْأَمْرُ عَلى ذلِكَ) অর্থাৎ তারাবীহের সালাতের বিষয়টি আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফাতকালে অপরিবর্তিত থাকল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় যেমন চলছিল তেমনই থাকল। কিন্তু ‘উমার (রাঃ)-এর খিলাফাতের প্রাথমিক অবস্থায় একজন ক্বারীর অধীনে এক জামা‘আতে তারাবীহ প্রচলন হলো।

তবে কেউ কেউ বলেন যে, ‘উমার (রাঃ) খিলাফাতের প্রাথমিক তথা (صَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ) বলতে খিলাফাতের ১ম বছর উদ্দেশ্য কারণ তিনি খিলাফাত লাভ করেছেন ১৩ হিজরীর জুমাদিউল উলার মাসে এবং তিনি তারাবীহ চালু করেছেন ১৪ হিজরী মোতাবেক তার খিলাফাতের দ্বিতীয় বছরে। যেমনটি উল্লেখ করেছেন, আল্লামা সুয়ূতী, ইবনুল আসির ও ইবনু সা‘দ (রহঃ)-সহ প্রমুখগণ।

আলোচ্য হাদীস ক্বিয়ামে রমাযানের ফাযীলাত ও তা মুস্তাহাব হওয়ার গুরুত্বের উপরই প্রমাণ করে এবং এ হাদীস দ্বারা এ দলীলও গৃহীত হচ্ছে যে, তারাবীহের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মুস্তাহাব, কারণ হাদীসে উল্লেখিত ক্বিয়াম (কিয়াম) দ্বারা তারাবীহের সালাত উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে নাবাবী ও কিরমানী (রহঃ)-এর কথা অতিবাহিত হয়েছে। নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ সকল ‘উলামাগণ ঐকমত্য যে, তারাবীহের সালাত মুস্তাহাব। তবে তা মসজিদে জামা‘আতের সাথে পড়া উত্তম নাকি বাড়ীতে পড়া উত্তম এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। জমহূর সাহাবীগণ, ইমাম শাফি‘ঈ, আবূ হানীফাহ্, আহমাদ (রহঃ) ও মালিকীদের একাংশ এবং অন্যান্যগণ বলেছেন যে, তারাবীহের সালাত মসজিদে জামা‘আতের সাথে পড়া উত্তম। যেমন- তা ‘উমার (রাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামগণ পালন করেছেন এবং মুসলিম মিল্লাতের ‘আমল রয়েছে। তবে ত্বহাবী (রহঃ) বলেনঃ তারাবীহের সালাত মসজিদে জামা‘আতের সাথে পড়া ওয়াজিব কিফায়াহ্।

হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ এ মাস্আলার ব্যাপারে শাফি‘ঈদের নিকট তিনটি ব্যাখ্যা রয়েছে তার মধ্য তৃতীয়টি হলো, যে ব্যক্তি কুরআন হিফয করবে এবং তারাবীহ থেকে উদাসিন হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং সে জামা‘আত থেকে পিছে থাকলে জামা‘আতের কোন বিঘ্নতা ঘটাবে না এ ব্যক্তির জন্য বাড়ী বা মাসজিদ উভয়েই সমান। এর ব্যতিক্রম হলে তার জন্য মসজিদে জামা‘আতের সাথে তারাবীহ পড়াই উত্তম। মির‘আত প্রণেতা বলেনঃ এটাই আমার নিকট সঠিক ও গ্রহণযোগ্য মত। (আল্লাহ ভাল জানেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)