১১৩২

পরিচ্ছেদঃ ২৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমামের দায়িত্ব

১১৩২-[৪] ক্বায়স ইবনু আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মাস্’ঊদ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, একদিন এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে আবেদন করল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর শপথ, অমুক লোক খুব দীর্ঘ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়াবার জন্যে আমি ফজরের (ফজরের) সালাতে দেরী করে আসি। আবূ মাস্’ঊদ বলেন, সেদিন অপেক্ষা উপদেশ করার সময় আর কোন দিন তাঁকে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) আজকের মতো এত রাগ করতে দেখিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ কেউ (দীর্ঘ করে সালাত আদায় করে) মানুষকে বিরক্ত করে তোলে। (সাবধান!) তোমাদের যে লোক মানুষকে (জামা’আতে) সালাতে ইমামতি করবে। সে যেন সংক্ষেপে সালাত আদায় করায়। কারণ মুক্তাদীদের মাঝে দুর্বল, বুড়ো, প্রয়োজনের তাড়ার লোকজন থাকে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الإِمَامِ

وَعَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو مَسْعُودٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي لَأَتَأَخَّرُ عَنْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ مِنْ أَجْلِ فُلَانٍ مِمَّا يُطِيلُ بِنَا فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَوْعِظَةٍ أَشَدَّ غَضَبًا مِنْهُ يَوْمَئِذٍ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ فَأَيُّكُمْ مَا صَلَّى بِالنَّاسِ فَلْيَتَجَوَّزْ: فَإِنَّ فِيهِمُ الضَّعِيفَ وَالْكَبِير وَذَا الْحَاجة

وعن قيس بن ابي حازم قال اخبرني ابو مسعود ان رجلا قال والله يا رسول الله اني لاتاخر عن صلاة الغداة من اجل فلان مما يطيل بنا فما رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم في موعظة اشد غضبا منه يومىذ ثم قال ان منكم منفرين فايكم ما صلى بالناس فليتجوز فان فيهم الضعيف والكبير وذا الحاجة

ব্যাখ্যা: (إِنَّ رَجُلًا) হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেনঃ লোকটির নাম সম্পর্কে আমি অবহিত হতে পরিনি। যে দাবি করেছেন নিশ্চয়ই লোকটি হাযম বিন উবাই বিন কা‘ব সে ধারণা করেছেন মাত্র, কেননা তার ঘটনা মু‘আয-এর সাথে ছিল (যেমন আবূ দাঊদ সালাত  হালকাকরণ অধ্যায়ে একে বর্ণনা করেছেন) উবাই বিন কা‘ব-এর সাথে না।

(إِنِّي لَأَتَأَخَّرُ عَنْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ) অর্থাৎ আমি জামা‘আতের সাথে ভোরের (ফজরের) সালাতে উপস্থিত হতে অবশ্যই বিলম্ব করে থাকি।

বুখারীর অন্য বর্ণনাতে আছে, (صَلَاةَ الْفَجْرِ) ফাজরের (ফজরের) সালাত। সালাতকে আলোচনার সাথে নির্দিষ্ট করার কারণ কেননা ফাজরের (ফজরের) সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) অধিকাংশ সময় দীর্ঘ হয়ে থাকে। কেননা এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) থেকে সালাম ফিরানো ঐ ব্যক্তির জন্য সালাতের প্রতি অভিমুখী হওয়ার সময় এ সালাতের প্রতি যার অভ্যাস রয়েছে (مِنْ أَجْلِ فُلَانٍ) অর্থাৎ তার এলাকা বা গোত্রের মসজিদের ইমাম। ত্বীবী বলেনঃ সালাত দীর্ঘ করা থেকে উদ্দেশ্য হল ক্বিরাআতে দীর্ঘ করা। আর এটি সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ অধ্যায়ে পূর্বোক্ত মু‘আয-এর ঘটনা ছাড়া অন্য একটি ঘটনা।

হাফিয বলেন, মু‘আয-এর ঘটনা আবূ মাস্‘ঊদ-এর এ হাদীসের বিপরীত। কেননা মু‘আয-এর ঘটনা ছিল ‘ইশার সালাতে এবং তাতে ইমাম ছিল মু‘আয, তা ছিল মসজিদে বানী সালামাতে। পক্ষান্তরে এ ঘটনা ফজরের সালাতে মসজিদে কুবাতে ছিল। এখানে অস্পষ্ট ইমামকে যে মু‘আয-এর মাধ্যমে তাফসীর করেছেন সে তা সন্দেহবশতঃ করেছে। বরং ফাজরের (ফজরের) ইমাম দ্বারা উবাই বিন কা‘ব উদ্দেশ্য। যেমন আবূ ইয়া‘লা একে জাবির (রাঃ) হতে ‘ঈসা বিন জারিয়ার বর্ণনার মাধ্যমে হাসান সানাদে সংকলন করেছেন। জাবির (রাঃ) বলেন, উবাই বিন কা‘ব কুবাবাসীদের নিয়ে সালাত আদায় করতে গিয়ে দীর্ঘ সূরাহ্ পাঠ করতে শুরু করেন। এমতাবস্থায় এক আনসারী গোলাম সালাতে প্রবেশ করে দীর্ঘ সূরাহ্ শুনতে পেয়ে সালাত থেকে বের হয়ে যান তখন উবাই রাগান্বিত হয়ে গোলামের নামে অভিযোগ নিয়ে রসূলের কাছে আসেন অপরদিকে গোলাম উবাই এর নামে অভিযোগ নিয়ে রসূলের কাছে আসেন। অভিযোগ শুনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হন যে, তাঁর চেহারাতে রাগ প্রকাশ পায়। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ এমন আছে যারা মানুষকে জামা‘আতের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা থেকে পিছ পা করে দেয়। সুতরাং তোমরা যখন জামা‘আতে সালাত  আদায় করবে তখন তোমরা সালাত হালকা করবে। কেননা তোমাদের পেছনে দুর্বল, বয়স্ক, অসুস্থ ও প্রয়োজনমুখী মানুষ থাকে।

(أَشَدَّ غَضَبًا مِنْهُ يَوْمَئِذٍ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাগান্বিত হওয়ার কারণ উপদেশের বিরোধিতা করার কারণে হয়ত এ ব্যাপারে মু‘আয-এর ঘটনা দ্বারা পূর্বে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল অথবা যা জানা উচিত হবে তা শিক্ষার ক্ষেত্রে কমতি করেছিল অথবা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  তাঁর সাহাবীদের সামনে যা উপস্থাপন করছেন সে ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদানের লক্ষ্যে। যাতে রসূলের কথা শুনে তারা পূর্বোক্ত আচরণ পরবর্তীতে না করে।

(إِنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِيْنَ) বিরক্তি সৃষ্টি করে সালাতকে এ পরিমাণ দীর্ঘ করার মাধ্যমে মানুষকে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা থেকে দূরে রাখে। হাদীসে সালাত দীর্ঘকারীকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  নির্দিষ্টভাবে সম্বোধন করেননি; বরং ব্যক্তিটি অপমানিত হওয়ার আশংকায় তার প্রতি অনুগ্রহপূর্বক ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে উত্তম চরিত্রের পরিচয়দান পূর্বক ব্যাপক সম্বোধন করেছেন।

(فَلْيَتَجَوَّزْ) এক বর্ণনাতে এসেছে ‘‘যে মানুষকে নিয়ে সালাত আদায় করবে সে যেন হালকা করে’’। অন্য বর্ণনাতে এসেছে ‘‘যে মানুষের ইমামতি করবে সে যেন সংক্ষিপ্ত করে’’।

(فَإِنَّ فِيهِمُ الضَّعِيفَ وَالْكَبِير) বুখারীর এক বর্ণনাতে এসেছে কেননা তাদের মাঝে অসুস্থ এবং দুর্বল আছে। এখানে দুর্বল দ্বারা অসুস্থ ব্যক্তিই উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে কিতাবে উল্লেখিত দুর্বল দ্বারা ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে গঠনগত দুর্বল যেমন পাতলা বা বৃদ্ধ। হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে, যখন কোন ইমামের মাঝে সালাত অধিক দীর্ঘ করার অভ্যাস পাওয়া যাবে তখন জামা‘আতে সালাত আদায় থেকে পেছানো বৈধ হবে। আরও প্রমাণ বহন করে যে, দীনের ব্যাপারে অসমীচীন কাজ দেখলে রাগান্বিত হওয়া বৈধ। আরও বুঝা যাচ্ছে মুক্তাদীদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে সালাত হালকা করতে হবে। পরিশেষে হাদীস থেকে যে নিষেধাজ্ঞাটি প্রমাণিত হচ্ছে জামা‘আত থেকে পিছ পা করার জন্য কোন কিছু করা যাবে না, করলে তার ব্যাপারে হুমকি রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)