১১০৬

পরিচ্ছেদঃ ২৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান

১১০৬-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রে ছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের পেছন দিয়ে তাঁর হাত দ্বারা আমার হাত ধরে পেছন দিক দিয়ে নিয়ে আমাকে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْمَوْقِفِ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: بِتُّ فِي بَيت خَالَتِي مَيْمُونَةَ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِيَدِي مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ فَعَدَلَنِي كَذَلِكَ مِنْ وَرَاءِ ظَهره إِلَى الشق الْأَيْمن

عن عبد الله بن عباس قال بت في بيت خالتي ميمونة فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي فقمت عن يساره فاخذ بيدي من وراء ظهره فعدلني كذلك من وراء ظهره الى الشق الايمن

ব্যাখ্যা: হাদীসটির বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা যায়, মুক্তাদী একজন হলে সে ইমামের ডানদিকে বরাবর হয়ে দাঁড়াবে, আগে-পিছে হবে না। মুহাম্মাদ বিন হাসান থেকে বর্ণিত; মুক্তাদী সে তার দু’পায়ের আঙ্গুলগুলো ইমামের পায়ের গোড়ালির নিকট রাখবে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, ইমামের বরাবর হয়ে দাঁড়ানো অপেক্ষা কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। ইমাম শাওকানী বলেন, এ ব্যাপারে আমি যা জানি তা হচ্ছে এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই। উল্লেখিত হাদীস থেকে যা শিক্ষা নেয়া যায়ঃ

১। দু’ ব্যক্তিতে জামা‘আত হয়; ইমাম ইবনু মাজাহ এর উপরে (باب الاثنان جماعة) অর্থাৎ ‘‘দু’ ব্যক্তিতে জামা‘আত’’ এ শিরোনামে একটি অধ্যায় বেঁধেছেন।

২। একজন শিশু ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক এমন দু’জনের মাধ্যমেও জায়াত সংঘটিত হতে পারে কেননা এক শব্দে ইবনু ‘আব্বাস-এর বয়স সম্পর্কে এসেছে তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলাম তখন আমি দশ বছরের বালক..... শেষ পর্যন্ত। আহমাদ একে সংকলন করেছেন। ইবনু তায়মিয়্যাহ্ ‘মুনতাক্বা’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে অধ্যায় বেঁধেছেন, দু’জনের মাধ্যমে জামা‘আত সংঘটিত হওয়ার অধ্যায় যাদের একজন শিশু। ‘আয়নী বলেন, হাদীসে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্কের পক্ষে প্রাপ্তবয়স্কের অনুসরণ করা জায়িয হওয়ার ব্যাপারে দলীল রয়েছে। এ ব্যাপারে ইমাম বায়হাক্বী তার সুনান গ্রন্থে অধ্যায় বেঁধেছেন। ইমাম শাওকানী বলেন, যারা একজন অপ্রাপ্তবয়স্কের সাথে প্রাপ্তবয়স্কের জামা‘আত সংঘটিত হওয়াকে অস্বীকার করে তাদের কথার উপর কোন দলীল নেই। তাদের (رفع القلم) হাদীসাংশ ছাড়া কোন দলীল হস্তগত হয়নি। আর (رفع القلم) হাদীস অপ্রাপ্তবয়স্কের সালাত বিশুদ্ধ না হওয়ার উপর প্রমাণ করে না এবং তার দ্বারা জামা‘আত সংঘটিত হওয়ার উপরও প্রমাণ করে না। আর প্রমাণ আছে বলে যদি ধরেই নেয়া হয় তাহলে অবশ্যই তা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)ও অনুরূপ হাদীস (আর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসে অপ্রাপ্তবয়স্ক কর্তৃক জামা‘আত সংঘটিত হওয়ার দিকটিই বোঝা যাচ্ছে)

৩। হাদীস থেকে বুঝা যায় যে ব্যক্তি ইমামতি করার নিয়্যাত করেনি মুক্তাদী কর্তৃক এমন ব্যক্তিরও সালাতের অনুসরণ করা যায়। ইমাম বুখারী এ ব্যাপারে একটি অধ্যায় বেঁধেছেন। মাসআলাটির ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে; হানাফীগণ বলেন, পুরুষ মুক্তাদীর ক্ষেত্রে ইমামের নিয়্যাতের শর্ত নেই যেহেতু পুরুষ মুক্তাদীর কারণে ইমামের ওপর অতিরিক্ত হুকুম আরোপ হয় না। তবে মহিলা মুক্তাদীর ক্ষেত্রে শর্ত, কেননা মহিলা পুরুষ ইমামের বরাবর হয়ে দাঁড়ানোতে ইমামের সালাত নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। ইমাম শাফি‘ঈর কাছে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হচ্ছে মুক্তাদী পুরুষ বা মহিলা যেই হোক ইমামের ইমামতির নিয়ত করা শর্ত নয়। ইবনুল মুনযির এর স্বপক্ষে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানে ক্বিয়াম (কিয়াম) করতেন।

আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশে দাঁড়ালাম আরও একজন এসে আমার পাশে দাঁড়াল। পরিশেষে আমরা একটি দলে পরিণত হলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের উপলব্ধি করলেন সালাতে সামনে বাড়ালেন উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ইমামতির নিয়্যাত করেননি পরে যখন সঙ্গে সাহাবীদের উপস্থিতি উপলব্ধি করলেন তখন তাদেরকে স্বীকৃতি দিলেন। হাদীস বিশুদ্ধ।

ইমাম মুসলিম একে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী একে ‘সিয়াম’ পর্বে তা‘লিকভাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ ফরয এবং নফলের মাঝে পাথর্ক্য করেছেন। ফারযের (ফরযের/ফরজের) ক্ষেত্রে তিনি ইমামতির জন্য নিয়্যাতকে শর্ত করেছেন নফলের ক্ষেত্রে নয়। তবে তার মাসআলাটিতে ভাবার অবকাশ আছে কারণ তার মাসআলার বিপরীতে আবূ সা‘ঈদ-এর সুস্পষ্ট হাদীস রয়েছে যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একাকী সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, এমন কোন লোক নেই কি, যে এ লোকটির ওপর সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে অর্থাৎ তার সাথে সালাত আদায় করে তাকে জামা‘আতের সাওয়াব দান করবে। হাদীসটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।

ইমাম তিরমিযী একে হাসান ও ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু হিব্বান, হাকিম একে সহীহ বলেছেন, আহলুল হাদীসের কাছে প্রাধান্যতর মাসআলাহ্ হচ্ছে ফরয ও নফলের মাঝে পার্থক্য না করা এবং পুরুষ মহিলার ক্ষেত্রে শর্ত না করা। আর তা মূলত পার্থক্যের ব্যাপারে হাদীস না থাকার কারণে।

৪। নফল সালাতে ইমামতি জায়িয এবং তাতে জামা‘আত করা বিশুদ্ধ মত।

৫। সালাতরত অবস্থায় সালাতের ভিতরের বিষয় শিক্ষা দেয়া জায়িয।

৬। নফল সালাতেও ফরয সালাতের মতো কথা বলা হারাম। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে ইবনু ‘আব্বাসকে সালাতের বিষয়ে ভুল ঠিক করে দিয়েছেন তবে কথা বলেননি।

৭। প্রয়োজনসাপেক্ষে সালাতরত অবস্থায় অল্প কাজ করলে সালাত  নষ্ট হবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)