মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৫৯৩৭ টি

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৩-[৩৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) জুমু’আর খুৎবা দেয়ার সময় মসজিদের খুঁটিসমূহের মধ্যে খেজুর গাছের একটি কাণ্ডের সাথে ঠেক দিয়ে খুৎবা দিতেন। অতঃপর যখন তাঁর জন্য মিম্বার তৈরি হলো, তখন তিনি (সা.) তাতে (খুৎবার জন্য) দাঁড়ালেন। সে সময় উক্ত কাণ্ডটি- যার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে তিনি (সা.) খুৎবা দিচ্ছিলেন, অকস্মাৎ চিৎকার করে উঠল। এমনকি (শোকে ও দুঃখে) তা টুকরা টুকরা হওয়ার উপক্রম হলো। তখন নবী (সা.) মিম্বার হতে নেমে এসে খেজুর গাছটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। গাছটি তখন ঐ শিশুর মতো কাঁদতে লাগল, যে শিশুকে (আদর-সোহাগ করে) চুপ করানো হয়। অবশেষে তা স্থির হলো। অতঃপর নবী (সা.) বললেন, আল্লাহর গুণকীর্তন ও প্রশংসা যা কিছু তা শুনত, এখন শুনতে না পেয়ে তা কান্না জুড়ে দিয়েছিল। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ اسْتَنَدَ إِلَى جِذْعِ نَخْلَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ فَلَمَّا صُنِعَ لَهُ الْمِنْبَرُ فَاسْتَوَى عَلَيْهِ صَاحَتِ النَّخْلَةُ الَّتِي كَانَ يَخْطُبُ عِنْدَهَا حَتَّى كَادَت تَنْشَقَّ فَنَزَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَخَذَهَا فَضَمَّهَا إِلَيْهِ فَجَعَلَتْ تَئِنُّ أَنِينَ الصَّبِيِّ الَّذِي يُسَكَّتُ حَتَّى اسْتَقَرَّتْ قَالَ بَكَتْ عَلَى مَا كَانَتْ تَسْمَعُ مِنَ الذِّكْرِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (2095) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: অর্থাৎ যে কথা ও আলোচনা শুনত তা না শুনতে পারার কারণে সে কেঁদে ফেলল।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, আলোচনা শুনার দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলো আলোচনাকারী তথা নবী (সা.) - এর নৈকট্য। আর নতুন করে মিম্বার তৈরি করার কারণে যেহেতু রাসূল (সা.) সেখান থেকে সরে অন্য জায়গায় দাঁড়ানো শুরু করেছেন। তাই খেজুর বৃক্ষের সেই কাণ্ডটি তার বিচ্ছেদে কাঁদতে শুরু করল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৪-[৩৭] সালামাহ্ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সম্মুখে বাম হাতে খাচ্ছিল। তখন তিনি (সা.) বললেন, তুমি তোমার ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি ডান হাতে খেতে পারি না। তিনি (সা.) বললেন, ডান হাতে খাওয়ার সাধ্য তোমার না থাকে। আসলে সে অহংকারবশত ডান হাতে খাওয়া হতে বিরত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সেই অভিশাপ বাক্যে সে আর কোনদিনই তার ডান হাত আপন মুখের কাছে নিতে পারেনি। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن سَلمَة بن الْأَكْوَع أَنَّ رَجُلًا أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَمَالِهِ فَقَالَ: «كُلْ بِيَمِينِكَ» قَالَ: لاأستطيع. قَالَ «لَا اسْتَطَعْتَ» . مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ قا ل: فَمَا رَفعهَا إِلَى فِيهِ. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (107 / 2021)، (5268) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: আল্লাহর রাসূল (সা.) উক্ত ব্যক্তিকে বললেন, তাহলে তুমি যেন আর না পারো। এটি ছিল ঐ ব্যক্তির জন্য বদদু'আ।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কেউ যদি বলে যে, রাসূল (সা.) কেন তার জন্য বদদু'আ করলেন অথচ তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। তার উত্তর হলো, রাসূল (সা.) তার জন্য এমনিতেই বদদ'আ করেননি। বদদু’আ করেছেন তার অহংকারের জন্য। যেহেতু সে তার ডান হাত ব্যবহার করতে সক্ষম ছিল। তারপরেও সে অহংকারের কারণে বলেছে, আমি পারবো না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৫-[৩৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার মদীনাবাসী (শত্রুর আক্রমণের আশঙ্কায়) ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল, তখন নবী (সা.) আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) -এর একটি অতি ধীরগতি অশ্বে আরোহণ করলেন (এবং মদীনায় পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিদর্শন করে) ফিরে এসে বললেন, তোমাদের এ ঘোড়াটিকে আমি সমুদ্রস্রোতের মতো দ্রুতগামী পেয়েছি।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর হতে কোন ঘোড়াই আর তার সাথে চলতে পারত না। অপর এক বর্ণনায় আছে, সে দিনের পর হতে কোন ঘোড়াই তার আগে যেতে পারত না। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أنسٍ أَنَّ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَزِعُوا مَرَّةً فَرَكِبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَسًا لِأَبِي طَلْحَةَ بَطِيئًا وَكَانَ يَقْطِفُ فَلَمَّا رَجَعَ قَالَ: «وَجَدْنَا فَرَسَكُمْ هَذَا بَحْرًا» . فَكَانَ بَعْدَ ذَلِكَ لَا يُجَارَى وَفِي رِوَايَةٍ: فَمَا سُبِقَ بَعْدَ ذَلِكَ الْيَوْم. رَوَاهُ البُخَارِيّ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (2867 و الروایۃ الثانیۃ : 2969) و مسلم (48 / 2307)، (6006) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (نَّ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَزِعُوا مَرَّةً) অর্থাৎ একবার মদীনাবাসীরা ভয় পেয়ে গেল। মিকাত প্রণেতা বলেন, তাদের ভয় পাওয়ার কারণ ছিল মদীনায় দুইশত শত্রু কর্তৃক আক্রমণ হওয়ার ভয় ছিল। যখন এই আক্রমণের ব্যাপারে শোরগোল তৈরি হলো তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) সবার আগে গিয়ে ঘটনাটি দেখে আসেন। এর মাধ্যমে রাসূল (সা.) -এর ব্যাপক সাহস ও বীরত্বের কথাও বুঝা যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৬-[৩৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা তাঁর ওপর ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। আমি তাঁর পাওনাদারদেরকে ঋণের পরিবর্তে খেজুর নিতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু তারা তা নিতে অস্বীকার করল। তখন আমি নবী (সা.) -এর কাছে এসে বললাম, আপনি ভালোভাবে জানেন যে, আমার পিতা (আবদুল্লাহ) উহুদের দিন শহীদ হয়েছেন এবং বহু ঋণ রেখে গেছেন। অতএব আমার একান্ত বাসনা, সে সমস্ত পাওনাদারগণ আপনাকে উপস্থিত দেখুক। তখন তিনি (সা.) আমাকে বললেন, তুমি যাও এবং প্রত্যেক প্রকারের খেজুরকে পেড়ে পৃথক পৃথকভাবে স্তূপীকৃত কর। অতএব আমি তাই করলাম। অতঃপর তাঁকে ডেকে আনলাম। পাওনাদারগণ যখন নবী (সা.) -কে দেখতে পেল, তখন তারা আমার ওপর আরো অধিক ক্ষেপে গেল এবং সেই মুহূর্তেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করল। তাদের এ আচরণ দেখে নবী (সা.) স্তূপীকৃত খেজুরের চতুর্দিকে তিনবার চক্কর দিলেন। পরে স্তূপের উপর বসে বললেন, তোমার পাওনাদারগণকে ডাক। এরপর রাসূল (সা.) নিজ হাতে তাদেরকে মেপে মেপে দিতে থাকলেন। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা আমার পিতার সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করে দিলেন।
জাবির (রাঃ) বলেন, অথচ আমি এর উপরই সন্তুষ্ট ছিলাম যে, আল্লাহ তা’আলা যেন আমার পিতার দায়িত্ব পরিশোধ করে দেন এবং আমার বোনদের জন্য রাখা আল্লাহ খেজুরের স্তূপ থেকে যেন একটি খেজুরও না নেয়া লাগে। একটি সকল স্তূপকেই পূর্বাবস্থায় রাখলেন। এমনকি তাকিয়ে দেখলাম যে স্তূপের উপর নবী (সা.) বসেছিলেন, তা হতে একটি খেজুরও কমেনি। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن جابرٍ قَالَ: تُوُفِّيَ أَبِي وَعَلَيْهِ دَيْنٌ فَعَرَضْتُ عَلَى غُرَمَائه أَن يأخذو االتمر بِمَا عَلَيْهِ فَأَبَوْا فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: قَدْ عَلِمْتَ أَنَّ وَالِدِي استُشهدَ يَوْم أحد وَترك عَلَيْهِ دَيْنًا كَثِيرًا وَإِنِّي أُحِبُّ أَنْ يَرَاكَ الْغُرَمَاءُ فَقَالَ لِيَ: اذْهَبْ فَبَيْدِرْ كُلَّ تَمْرٍ عَلَى نَاحِيَةٍ فَفَعَلْتُ ثُمَّ دَعَوْتُهُ فَلَمَّا نَظَرُوا إِلَيْهِ كَأَنَّهُمْ أُغْرُوا بِي تِلْكَ السَّاعَةَ فَلَمَّا رَأَى مَا يَصْنَعُونَ طَافَ حَوْلَ أَعْظَمِهَا بَيْدَرًا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ جَلَسَ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «ادْعُ لِي أَصْحَابَكَ» . فَمَا زَالَ يَكِيلُ لَهُمْ حَتَّى أَدَّى اللَّهُ عَنْ وَالِدِي أَمَانَتَهُ وَأَنَا أَرْضَى أَن يُؤدِّي الله أَمَانَة وَالِدي وَلَا أرجع إِلَى أَخَوَاتِي بِتَمْرَةٍ فَسَلَّمَ اللَّهُ الْبَيَادِرَ كُلَّهَا وَحَتَّى إِني أنظر إِلى البيدر الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَأَنَّهَا لم تنقصُ تَمْرَة وَاحِدَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (2781) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে জাবির (রাঃ)-এর আবেদনে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার শস্য মারার জায়গায় গেলেন। গিয়ে দেখছিলেন, ঋণদাতা ব্যক্তিরা যেন জাবিরকে আক্রমণ করে বসবে। আর সেই ঋণদাতারা ছিল ইয়াহুদী। নবী (সা.) তাদেরকে বললেন, তোমরা তার প্রতি একটু সহনশীল হও। কিন্তু তারা তাঁর কথায় অক্ষমতা প্রকাশ করল এবং ঋণ কমিয়ে নিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলো। তারপর রাসূল (সা.) বরকতের দুআ করলেন এবং সেখান থেকে ঋণদাতাদের ঋণ পরিশোধ করে দিলেন। তাদেরকে সেখান থেকে খেজুর দিয়ে দেয়ার পর দেখা গেল যে, প্রথমে যে পরিমাণ খেজুর থেকে দেয়া শুরু করেছিলেন। শেষে ঐ পরিমাণ খেজুরই রয়ে গেল। এটি ছিল রাসূল (সা.)-এর বিশেষ একটি মু'জিযাহ্। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৭-[৪০] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু মালিক (রাঃ) হাদিয়্যাহ হিসেবে নবী (সা.) -এর কাছে তার একটি চামড়ার পাত্রে ঘি পাঠাতেন। পরে তার সন্তানেরা এসে (রুটি খাওয়ার জন্য) তরকারি চাইলে যখন তাদের কাছে কিছুই থাকত না, তখন উম্মু মালিক (রাঃ) ঐ পাত্রটি নিতেন, যেটির দ্বারা তিনি নবী (সা.) -কে হাদিয়্যাহ্ পাঠাতেন এবং তাতে ঘি পেয়ে যেতেন। এমনকি সেই হতে সর্বদা উম্মু মালিক (রাঃ)-এর ঘরে সেই ঘি তরকারি হিসেবে ব্যবহার হত। একদিন উম্মু মালিক (রাঃ) ঘিয়ের এ পাত্রটি নিংড়িয়ে নিলেন। (সেদিন হতে বরকত শেষ হয়ে গেল) অতঃপর উম্মু মালিক কে নবী (সা.) -এর কাছে এসে তা জানালে তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কি উক্ত পাত্রটি নিংড়িয়ে ফেলেছিল? উম্মু মালিক এই বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী (সা.) বললেন, যদি তুমি (না নিংড়িয়ে) পাত্রটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেলে রাখতে তাহলে সর্বদা তাতে ঘি উপস্থিত থাকত। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ أُمَّ مَالِكٍ كَانَتْ تُهْدِي لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عُكَّةٍ لَهَا سَمْنًا فَيَأْتِيهَا بَنُوهَا فَيَسْأَلُونَ الْأُدُمَ وَلَيْسَ عِنْدَهُمْ شَيْءٌ فَتَعْمِدُ إِلَى الَّذِي كَانَتْ تُهْدِي فِيهِ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَجِدُ فِيهِ سَمْنًا فَمَا زَالَ يُقِيمُ لَهَا أُدُمَ بَيْتِهَا حَتَّى عَصَرَتْهُ فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «عَصَرْتِيهَا» قَالَتْ نَعَمْ قَالَ: «لَوْ تَرَكْتِيهَا مَا زَالَ قَائِمًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

رواہ مسلم (8 / 2280)، (5945) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় তীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উম্মু মালিক (রাঃ) যখন উক্ত কৌটা একেবারে নিংড়িয়ে ফেলল তখন সেখান থেকে তরকারির স্থলাভিষিক্ত ঘি একেবারে শেষ হয়ে গেল। তারপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে তার তরকারি শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করল। তখন তাকে রাসূল (সা.) বললেন, যদি তুমি তা একেবারে নিংড়িয়ে না ফেলতে তাহলে তা থেকেই যেত। আর শেষ হত না। কেননা অল্প কোন কিছুর মধ্যে যদি বরকত আসে তাহলে সেই অল্প পরিমাণও বেশি হয়ে যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৮-[৪১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কণ্ঠস্বর খুব দুর্বল শুনতে পেলাম, তাতে আমি অনুভব করলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। তোমরা কাছে (খাওয়ার) কিছু আছে কি? উম্মু সুলায়ম বা বললেন, হ্যাঁ; আছে। এই বলে তিনি কিছু যবের রুটি বের করলেন। অতঃপর ওড়নাটি বের করে তার একাংশ দিয়ে রুটিগুলো বেঁধে গোপনে আমার হাতে দিলেন এবং ওড়নার অপরাংশ আমার দেহে জড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। [আনাস (রাঃ) বলেন] আমি গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে মসজিদে পেলাম। (খন্দকের যুদ্ধের সময় সালাতের জন্য অস্থায়ীভাবে যে জায়গা নির্ধারণ করেছিলেন) তার সাথে আরো কিছু লোক ছিল। আমি সালাম দিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে প্রশ্ন করলেন, তোমাকে কি আবূ তুলহাহ পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি (সা.) আরো প্রশ্ন করলেন, খাদ্য নিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবী যাঁরা সেখানে ছিলেন, সকলকে ডেকে বললেন, তোমরা উঠ এবং চল! (এ বলে সমস্ত লোকজনসহ) তিনি রওয়ানা হলেন আর আমিও তাদের সামনে (আবূ ত্বলহাহ্’র বাড়ির দিকে) চলতে লাগলাম এবং আবূ ত্বলহাহ্’র কাছে এসে তাঁকে [রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আগমন বার্তা] জানালাম। তখন আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকজনসহ এসেছেন। অথচ আমাদের কাছে এ পরিমাণ খাদ্য-সামগ্রী নেই যা আমরা তাদের সকলকে খেতে দিতে পারি। তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল (সবকিছু) ভালো জানেন। অতঃপর আবূ তুলহাহ্ (রাঃ) গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘরের দিকে এগিয়ে আসলেন এবং আবূ ত্বলহাহও তার সাথে ছিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা কিছু আছে আমার কাছে নিয়ে আসে। তখন তিনি ঐ রুটিগুলো এনে উপস্থিত করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নির্দেশে রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হলো; আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ঘি এর পাত্র হতে ঘি বের করে তাকে তরকারি হিসেবে পেশ করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে কিছু পাঠ করলেন। তারপর বললেন, দশজনকে আসতে বল। তাদেরকে আসতে বলা হলো। তাঁরা সকলে খেয়ে তুষ্ট হয়ে বের হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, আরো দশজনকে আসতে বল, তারপর আরো দশজন, এভাবে সকলে তুষ্ট হয়ে খানা খেলেন। তাদের সংখ্যা সত্তর অথবা আশিজন ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)

সহীহ: মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, দশজনকে আসার জন্য অনুমতি দাও। তাঁরা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা বিসমিল্লা-হ পড়ে খাও। তাঁরা খেলেন এবং এভাবে (দশ দশজন করে) আশিজন লোক খাদ্য খেলেন। অতঃপর নবী (সা.) গৃহবাসীরা সকলে খেলেন এবং কিছু খাদ্য অবশিষ্টও রয়ে গেল।
সহীহুল বুখারীর অপর এক বর্ণনাতে আছে- তিনি বললেন, দশজনকে আমার কাছে উপস্থিত কর। এভাবে (দশ দশজন করে) চল্লিশজনকে গণনা করলেন। অতঃপর নবী (সা.) নিজে খেলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে লাগলাম, খাদ্যের মধ্যে কিছু কম হয়েছে কিনা?
সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনাতে আছে- সকলের খাওয়ার শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) অবশিষ্ট খাদ্যগুলো একত্রিত করলেন, তারপর তাতে বরকতের জন্য দু’আ করলেন। তখন তা ঐ পরিমাণ হয়ে গেল যে পরিমাণ আগে ছিল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, নাও, তা তোমাদের জন্য।

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أنسٍ قَالَ: قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لِأُمِّ سُلَيْمٍ لَقَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَعِيفًا أَعْرِفُ فِيهِ الْجُوعَ فَهَلْ عِنْدَكِ من شَيْء؟ فَأَخْرَجَتْ أَقْرَاصًا مِنْ شَعِيرٍ ثُمَّ أَخْرَجَتْ خِمَارًا لَهَا فَلَفَّتِ الْخُبْزَ بِبَعْضِهِ ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ يَدِي وَلَاثَتْنِي بِبَعْضِهِ ثُمَّ أَرْسَلَتْنِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَذَهَبْتُ بِهِ فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ وَمَعَهُ النَّاسُ فَقُمْتُ عَلَيْهِمْ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ؟» قُلْتُ نَعَمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَنْ مَعَهُ قُومُوا فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْت أَبَا طَلْحَة فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ وَلَيْسَ عِنْدَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ فَقَالَتْ اللَّهُ وَرَسُوله أعلم قَالَ فَانْطَلَقَ أَبُو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو طَلْحَةَ مَعَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلُمِّي يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا عِنْدَكِ فَأَتَتْ بذلك الْخبز فَأمر بِهِ ففت وعصرت أم سليم عكة لَهَا فأدمته ثمَّ قَالَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُولَ ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثمَّ خَرجُوا ثمَّ أذن لِعَشَرَةٍ فَأَكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالْقَوْمُ سَبْعُونَ أَوْ ثَمَانُونَ رَجُلًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لمُسلم أَنه قَالَ: «أذن لِعَشَرَةٍ» فَدَخَلُوا فَقَالَ: «كُلُوا وَسَمُّوا اللَّهَ» . فَأَكَلُوا حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلًا ثُمَّ أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَهْلُ الْبَيْتِ وَتَرَكَ سُؤْرًا وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ قَالَ: «أَدْخِلْ عَلَيَّ عَشَرَةً» . حَتَّى عَدَّ أَرْبَعِينَ ثُمَّ أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ هَلْ نَقَصَ مِنْهَا شَيْءٌ؟ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: ثُمَّ أَخَذَ مَا بَقِيَ فَجَمَعَهُ ثُمَّ دَعَا فِيهِ با لبركة فَعَاد كَمَا كَانَ فَقَالَ: «دونكم هَذَا»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3578) و مسلم (142 / 2040) الروایۃ الثانیۃ ، رواھا مسلم (143 / 2040) و الروایۃ الثالثۃ ، رواھا البخاری (5450) و الروایۃ الرابعۃ ، رواھا مسلم (143 / 2040)، (5316) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ) অর্থাৎ তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে মসজিদে পেলাম। ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ স্থান, যাকে আল্লাহর রাসূল (সা.) খন্দক যুদ্ধের সময় কাফির কর্তৃক অবরুদ্ধকালীন সময়ে সালাতের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৫৭৮)

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ফাতহুল বারীতে একাধিক হাদীস নিয়ে আসা হয়েছে যেমন সেগুলোর মধ্য থেকে একটি যা সহীহ মুসলিমে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) -এর কাছে এসে দেখতে পেলাম যে, তিনি সাহাবীদের সাথে বসে কথা বলছেন। আর দেখলাম যে, তিনি তার পেটে পট্টি বেঁধেছেন। তারপর আমি কিছু সাহাবীকে তার পট্টি বাঁধার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললেন, ক্ষুধার কারণে তিনি পট্টি বেঁধেছেন। অতঃপর আমি আবূ ত্বলহা-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি উম্মু সুলায়ম-এর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার কাছে কি খাবারের কিছু আছে। তারপর হাদীসের বাকী অংশ বর্ণিত হয়েছে। পরে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রুটি প্রস্তুত করে আনাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে রাসূল (সা.) -এর কাছে পাঠালেন। রুটির পরিমাণ ছিল একেবারেই অল্প। তাই যখন আনাস (রাঃ) রাসূল (সা.) -এর কাছে আসলেন তখন তার কাছে দেখলেন অনেক সাহাবী রয়েছে। আর রুটি অল্প পরিমাণ রয়েছে। তাই এই অল্প পরিমাণ রুটি রাসূল (সা.) -এর কাছে সরাসরি না দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর তিনি তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন এবং তার সাথে তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। তারা যখন আবূ ত্বলহাহ-এর কাছে গিয়ে পৌছল তখন তাদেরকে দেখে তিনি উম্মু সুলায়ম- কে বললেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) অনেক লোক নিয়ে এসেছেন। আমাদের কাছে তো খাবার একেবারেই অল্প। তখন তার স্ত্রী উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আল্লাহও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার দ্বারা বুঝা যায় যে, উম্মু সুলায়ম-এর মহৎ গুণ রয়েছে। যার কারণে তিনি তার বিবেক বুদ্ধির উপর রাসূল (সা.)-এর কর্মকাণ্ডকেই প্রাধান্য দিলেন।
যেহেতু রাসূল (সা.) জানেন যে, খাবারের পরিমাণ অল্প, তারপরেও তিনি এত লোক নিয়ে এসেছেন। নিশ্চয় তাতে কোন কল্যাণ রয়েছে। যদি কোন কল্যাণ না থাকত তাহলে তিনি তা করতেন না।
(ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ) অর্থাৎ দশজনকে অনুমতি দাও।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দশজনকে অনুমতি দিলেন। মিরকাত প্রণেতা আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দশ দশ জন করে প্রবেশ করে খেয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এক সাথে সবাইকে প্রবেশ করে খাওয়ার অনুমতি দেননি। এর কয়েকটি কারণ হতে পারে। যেমন
(ক) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে পাত্রে খাবার রাখা হয়েছিল তা ছিল ছোট। যেখানে দশজনের বেশি একসাথে খেতে বসলে সবারই কষ্ট হবে। তাই দশ জন করে প্রবেশ করে খেতে বলেছেন।
(খ) কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সবাইকে এক সাথে প্রবেশ করে খাওয়ার অনুমতি দেননি। কারণ খাবার ছিল পরিমাণে কম। তাই যদি তারা সবাই একসাথে প্রবেশ করে তাহলে সেই অল্প খাবারের ব্যাপারে তাদের ধারণা হবে যে, এটি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই সকলেরই সেই অল্প খাবারের প্রতি লোভ তৈরি হবে। আর তাতে খাবারের বরকত কমে যাবে।
(গ) এটিও কারণ হতে পারে যে, তারা সবাই একসাথে প্রবেশ করে যখন অল্প খাবার দেখবে তখন একে অপরকে প্রাধান্য দিবে এবং নিজে অল্প খাবে। আর এতে কেউ পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পারবে না। তখন প্রকৃত উদ্দেশ্য যে ক্ষুধা দূর করা তা অর্জিত হবে না।
(ঘ) কেউ কেউ বলেন, জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে রাসূল (সা.) সবাইকে একসাথে প্রবেশ করার অনুমতি দেননি।
(وَالْقَوْمُ سَبْعُونَ أَوْ ثَمَانُونَ رَجُلًا) অর্থাৎ লোকজন ছিল সত্তর অথবা আশিজন।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসের রাবী সন্দেহ করে বলেছেন যে, লোকের সংখ্যা ছিল সত্তর জন অথবা আশিজন। কিন্তু অন্য হাদীসে দৃঢ়তার সাথে বলা হয়েছে যে, তাদের সংখ্যা ছিল আশিজন। আবার কোন কোন হাদীসে বলা হয়েছে তাদের সংখ্যা ছিল আশিজনের কিছু বেশি।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, বাহ্যিকভাবে হাদীসের সংখ্যা নিয়ে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। তাই আমরা বলব যে, রাবীগণ দশক সংখ্যার আগে-পরের সংখ্যাগুলো বাদ দিয়ে বলেছেন। আর এভাবে সংখ্যা বলার রীতি রয়েছে। অতএব হাদীসগুলোর সংখ্যার মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই।
কিন্তু ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, চল্লিশজন সাহাবী খেলেন। তারপরেও রুটি সেই পরিমাণই রয়ে গেল, যে পরিমাণ পূর্বে ছিল।
এ হাদীসের সাথে পূর্বের হাদীসগুলোর বৈপরীত্য খুব স্পষ্ট। কারণ এখানে বলা হয়েছে, চল্লিশজন আর পূর্বের হাদীসগুলোতে বলা হয়েছে আশি বা তার অধিক।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এখানে ঘটনাটি হয়েছে এমন যে, প্রথমে চল্লিশজন এসে খেয়ে গেছেন। তারপর বাকী চল্লিশজন এসেছেন। যারা প্রথম দলের পিছনে ছিলেন। অথবা নবী (সা.) আরো বাকী চল্লিশজনকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছেন।
(ثُمَّ دَعَا فِيهِ با لبركة فَعَاد كَمَا كَانَ) অর্থাৎ তারপর তিনি খাবারের বরকতের জন্য দু'আ করলেন। তখন খাবার সেই পূর্বের পরিমাণে চলে আসলো। তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এক হাদীসে রয়েছে আল্লাহর রাসূল (সা.) খাবারের শেষে অবশিষ্ট ঝুটা রেখে দিলেন। অন্য হাদীসে আছে যে, সাহাবী লক্ষ্য করে দেখলেন, সেই খাবার থেকে কিছু কমেছে কিনা?
এ বিষয়টি তিনভাবে হাদীসগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বৈপরীত্যপূর্ণ হাদীসগুলোর মাঝে মিরকাত প্রণেতা সমন্বয় সাধন করেছে এভাবে যে, যে হাদীসে বলা হয়েছে তিনি খাবারের শেষে উচ্ছিষ্ট ঝুটা রাখলেন, এর মানে তিনি খাওয়া শেষে ঝুটা রাখলেন। তারপর বরকতের দুআ করলেন। এর কারণে ঐ ঝুটাই পূর্বের পরিমাণ খাবারে পরিণত হলো। আর তখন সাহাবী দেখলেন যে, তার পরিমাণ আগের থেকে কমেছে কিনা? (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৫৭৮)।


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৯-[৪২] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.)-এর নিকট একটি (পানির) পাত্র আনা হলো। তখন তিনি (সা.) (মদীনার) যাওরা” নামক স্থানে ছিলেন। অনন্তর তিনি (সা.) ঐ পাত্রের মাঝে হাত রাখলেন, তখন তার আঙ্গুলগুলোর ফাঁক দিয়ে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হতে লাগল। তখন লোকেরা ঐ পানি দ্বারা উযূ করল। কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আপনারা সংখ্যায় কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, তিনশত জন অথবা তিনশত জনের কাছাকাছি। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعنهُ قا ل: أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِنَاءٍ وَهُوَ بِالزَّوْرَاءِ فَوَضَعَ يَدَهُ فِي الْإِنَاءِ فَجَعَلَ الْمَاءُ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ فَتَوَضَّأَ الْقَوْمُ قَالَ قَتَادَةُ: قُلْتُ لِأَنَسٍ: كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ: ثلاثمائةٍ أَو زهاءَ ثلاثمائةٍ. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3572) و مسلم (7 ، 6 / 2279)، (5943 و 5944) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِنَاءٍ وَهُوَ بِالزَّوْرَاءِ) অর্থাৎ নবী (সা.) -এর কাছে একটি পাত্র নিয়ে আসা হলো। আর তখন তিনি যাওরা নামক স্থানে ছিলেন। (الزَّوْرَاءِ) যাওরা’-এর পরিচয় দিতে গিয়ে মিরকাত প্রণেতা বলেন, এটি হলো দূরবর্তী গভীর একটি কূপের নাম। কেউ কেউ বলেন, এটি হলো মক্কার নিকটবর্তী একটি জায়গা।
ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি হলো মদীনার বাজারের কাছে একটি জায়গা। অভিধানে বলা হয়েছে এটি হলো মদীনায় মসজিদের নিকটবর্তী একটি জায়গা।
(فَجَعَلَ الْمَاءُ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ) অর্থাৎ তখন তাঁর আঙ্গুলগুলো দিয়ে পানি বের হতে শুরু করল। রাসূল (সা.) -এর আঙ্গুল দিয়ে পানি বের হওয়ার বিষয়ে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) দুটি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।
১. সরাসরি তার আঙ্গুল থেকে বের হয়েছে- এটি হলো মুযানী ও অধিকাংশ ‘আলিমদের কথা।
২. আল্লাহ অল্প পানিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাই তা তার আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে দ্বিতীয় মতটিই অধিক শক্তিশালী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ফাতহুল বারীতে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আরো একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। যা এ হাদীসের ঘটনাটিকে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছে। আর সেই হাদীসটি জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সা.) -এর সাথে সফরে বের হলাম। পথে এক সালাতের সময় হলো। তখন তিনি (সা.) বললেন, লোকেদের কাছে কি পবিত্রতা অর্জন করার পানি নেই।
তারপর একজন লোক পাত্রে অল্প পরিমাণ পানি এনে একটি পেয়ালায় ঢেলে দিলো।
অতঃপর রাসূল (সা.) সেই পানি দিয়ে উযূ করলেন। তারপর লোকেরা অবশিষ্ট পানির কাছে এসে বলতে লাগল, তোমরা মাসেহ করো, তাদের এ কথা শুনে রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা থামো! তারপর তিনি তার হাত পাত্রে পানির ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে উযূ করো।
জাবির (রাঃ) বলেন, ঐ সত্ত্বার কসম। যিনি আমার দৃষ্টিশক্তি উঠিয়ে নিয়েছেন। অবশ্যই আমি নবী (সা.) -এর আঙ্গুল দিয়ে এমনভাবে পানি বের হতে দেখেছি যে, উপস্থিত সকল সাহাবী তা দিয়ে উযূ করেছেন। সেই পানি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছিল। আর আমরা সংখ্যায় ছিলাম দুইশত এরও বেশি। (ফাতহুল বারী হা. ৩৫৮২)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১০-[৪৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (সাহাবীগণ) অলৌকিক ঘটনাবলীকে বরকতের ব্যাপার বলে মনে করতাম। কিন্তু তোমরা (অর্থাৎ সাহাবীদের পরবর্তী লোকেরা) ঐগুলোকে কেবলমাত্র (কাফিরদের জন্য) ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপার বলে ধারণা করে থাক। একদিন আমরা রাসূলল্লাহ (সা.) -এর সাথে এক ভ্রমণে ছিলাম। হঠাৎ পানির অভাব দেখা দিল। তখন তিনি (সা.) বললেন, তোমরা কোথাও হতে কিছু উদ্বৃত্ত পানির সন্ধান কর। তখন তারা সামান্য পানি সমেত একটি পাত্র নিয়ে আসলো। তখন তিনি (সা.) স্বীয় হাতখানা পাত্রটির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বললেন, বরকতপূর্ণ পবিত্র পানি নিতে এগিয়ে আসো। আর এ বরকত আল্লাহর পক্ষ হতে। বর্ণনাকারী (ইবনু মাস্’উদ) বলেন, নিশ্চয় আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আঙ্গুলগুলোর ফাঁক দিয়ে ফোয়ারার মতো পানি বের হচ্ছে, আর অবশ্য আমরা খাবার গ্রহণ করার সময় (কখনো কখনো) খাদ্যের তাসবীহ পাঠ শুনতে পেতাম। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الْآيَاتِ بَرَكَةً وَأَنْتُمْ تَعُدُّونَهَا تَخْوِيفًا كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَقَلَّ الْمَاءُ فَقَالَ: «اطْلُبُوا فَضْلَةً مِنْ مَاءٍ» فَجَاءُوا بِإِنَاءٍ فِيهِ مَاءٌ قَلِيلٌ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِي الْإِنَاءِ ثُمَّ قَالَ: «حَيَّ على الطَّهورِ الْمُبَارك وَالْبركَة من الله» فَلَقَد رَأَيْتُ الْمَاءَ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَقَد كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَامِ وَهُوَ يُؤْكَلُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3579) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (كُنَّا نَعُدُّ الْآيَاتِ بَرَكَةً وَأَنْتُمْ تَعُدُّونَهَا تَخْوِيفًا) অর্থাৎ আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর মু'জিযাগুলোকে বরকত মনে করতাম আর তোমরা সেগুলোকে ভীতির কারণ মনে করো।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো আমরা রাসূল (সা.) -এর থেকে প্রকাশিত নিদর্শন ও মুজিযাগুলোকে বরকত মনে করতাম আর এগুলোকে সাধারণ প্রস্তাবিত দাবীর প্রেক্ষাপটে আগত ভয়ের ক্ষেত্র মনে করে থাকো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে, এখানে বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু মাস্'উদ (রাঃ), বুঝাতে চেয়েছেন যে, সকল মু'জিযাহ্ বা নিদর্শন ভয়ের কারণ নয়, আবার সকল নিদর্শনও মু'জিযাহ্ বরকত নয়। বরং চিন্তাভাবনা করলে দেখা যায়, কিছু হলো বরকতের জন্য। যেমন- অল্প খাবারে বেশি মানুষের তৃপ্ত হওয়া। আবার কিছু নিদর্শন আছে ভয়ের কারণ। যেমন- চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ।
(كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ) অর্থাৎ আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সফরে ছিলাম।
এখানে সফর বলে কোন সফরকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতানৈক্য আছে। যেমন- কেউ কেউ বলেন, এটি ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধির সফর। আবার কেউ বলেন, এটি তাবুক যুদ্ধের সফরে ঘটেছিল।
‘দালায়িল' গ্রন্থে আবূ নু'আয়ম বলেন, এই সফর ছিল খায়বার যুদ্ধের। তবে ইমাম বায়হাক্বীর দালায়িল' গ্রন্থে হুদায়বিয়ার সফরকেই বেশি শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদের কাছে পানি চেয়েছেন। অথচ পানি ছাড়াও তো তাঁর মুজিযাহ প্রকাশ পাওয়ার মাধ্যমে সবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পানি সৃষ্টি হতে পারত। এর উত্তর দু’ভাবে দেয়া হয়ে থাকে
১. তিনি অতিরিক্ত পানি চেয়েছেন যেন তারা বুঝতে পারে যে, পানি থেকেই পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি (সা.) নিজে পানি সৃষ্টি করেননি।
২. এটিও হতে পারে যে, আল্লাহ সাধারণত প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন কিছুকে বৃদ্ধি করেন। তাই দেখা যায় যে, একটি থেকে আরেকটি হয়। কিন্তু পানি এমনই যে, তা থেকে প্রজননের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় না। অথচ রাসূল (সা.) -এর হাতে তাই ঘটল, যা সাধারণত ঘটে না। আর এটিই স্পষ্ট মু'জিযাহ্।


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১১-[৪৪] আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, তোমরা আজ সন্ধ্যা এবং রাত্রিতে (লাগাতার) চলতে থাকবে। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানির কাছে আগামীকাল পৌছে যাবে। অতঃপর লোকেরা এমনভাবে (দ্রুত পথ) চলতে থাকল যে, কেউ কারো দিকে ফিরে চাইত না। আবূ কতাদাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সন্ধ্যারাত হতে চলতে চলতে রাত্রি যখন মধ্যাহ্নে পৌছল, তখন তিনি রাস্তা হতে একদিকে সরে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা (ফজর) সালাতের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে। (এরপর সকলে ঘুমিয়ে পড়লেন এবং) সকলের আগে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সা.) -ই জাগ্রত হলেন, অথচ তখন সূর্যের তাপ এসে তার পিঠে পড়ছিল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা নিজ নিজ বাহনে আরোহণ কর। অতএব আমরা আরোহণ করলাম এবং সূর্য খুব উপরে উঠা পর্যন্ত ভ্রমণ করে তিনি এক জায়গায় অবতরণ করলেন। অতঃপর  তিনি (সা.) উযূর জন্য পানির পাত্র চাইলেন, যা আমার সাথে ছিল। তাতে পানিও ছিল খুব সামান্য পরিমাণ। তিনি (সা.) তা হতে একান্ত হালকাভাবে উযু করলেন। আবূ কতাদাহ (রাঃ), বলেন, তার উযুর পরও পাত্রে সামান্য পরিমাণ পানি অবশিষ্ট রয়ে গেল। এরপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা পাত্রের পানিগুলো আমাদের জন্য ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখ। কেননা অচিরেই তা হতে একটি বড় ধরনের ঘটনা প্রকাশ পাবে।
অতঃপর বিলাল (রাঃ) সালাতের জন্য আযান দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই রাক’আত (সুন্নাত) আদায় করলেন, তারপর ফজরের (ফরয) সালাত আদায় করলেন এবং নিজেও সওয়ারীতে আরোহণ করলেন, আর আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হলাম।
অবশেষে সূর্য যখন অনেক উপরে উঠল এবং প্রতিটি জিনিস সূর্যের প্রচণ্ড তাপে খুবই গরম হয়ে গেল, তখন আমরা ঐ কাফেলার লোকেদের কাছে এসে পৌছলাম, (যারা আমাদের পূর্বেই রওয়ানা হয়ে এসেছে) তারা বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! খুবই গরমে এবং পিপাসার তাড়নায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। তিনি (সা.) বললেন, তোমাদের ওপর ধ্বংস আসবে না। এই বলে তিনি (সা.) পানির পাত্রটি আনালেন এবং পানি ঢালতে থাকলেন, আর আবূ কতাদাহ্ লোকেদেরকে পানি পান করাচ্ছিলেন। লোকেরা যখন পাত্রে পানি দেখতে পেল, তখন তারা আর বিলম্ব না করে একসাথে সকলে পানির জন্য ভিড় জমিয়ে ফেলল। তাদের অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা উত্তম আচরণ কর। তোমরা সকলেই এ পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত হবে। আবূ কতাদাহ (রাঃ) বলেন, তারা অনুরূপ করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) পানি ঢালতে থাকলেন, আর আমি পানি পান করাতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ও রাসূলুল্লাহ (সা.) ছাড়া কেউ ছিল না। এরপর পানি ঢালা হলো, তখন তিনি (সা.) আমাকে বললেন, এবার তুমি পান কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি পান না করা অবধি আমি পান করব না। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, লোকেদেরকে যে পানীয় পান করায়, সে হয় সর্বশেষে। আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, অতএব আমি পান করলাম। পরে তিনি (সা.) পান করলেন। আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, অতঃপর লোকেরা তৃপ্তি সহকারে আরামের সাথে পানির স্থানে এসে পৌছল। (মুসলিম)

সহীহ মুসলিমে অনুরূপই রয়েছে এবং হুমায়দীর গ্রন্থে ও জামিউল উসূলেও এরূপই রয়েছে। মাসাবীহ গ্রন্থে ও জামিউল উসূলেও এরূপই রয়েছে। মাসাবীহ গ্রন্থে (آخِرهم) শব্দের পর (شربا) শব্দটি বর্ণিত রয়েছে। (অর্থাৎ সর্বশেষ পানকারী)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أبي قتادةَ قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّكُمْ تَسِيرُونَ عَشِّيَتَكُمْ وَلَيْلَتَكُمْ وَتَأْتُونَ الْمَاءَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غَدًا فَانْطَلَقَ النَّاسُ لَا يَلْوِي أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ قَالَ أَبُو قَتَادَةَ فَبَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسِيرُ حَتَّى ابْهَارَّ اللَّيْلُ فَمَالَ عَنِ الطَّرِيقِ فَوَضَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ قَالَ احْفَظُوا عَلَيْنَا صَلَاتَنَا فَكَانَ أَوَّلَ مَنِ اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالشَّمْسُ فِي ظَهْرِهِ ثُمَّ قَالَ ارْكَبُوا فَرَكِبْنَا فَسِرْنَا حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَتِ الشَّمْسُ نَزَلَ ثُمَّ دَعَا بِمِيضَأَةٍ كَانَتْ معي فِيهَا شيءٌ من مَاء قَالَ فَتَوَضَّأَ مِنْهَا وُضُوءًا دُونَ وُضُوءٍ قَالَ وَبَقِيَ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ مَاءٍ ثُمَّ قَالَ احْفَظْ عَلَيْنَا مِيضَأَتَكَ فَسَيَكُونُ لَهَا نَبَأٌ ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى الْغَدَاةَ وَرَكِبَ وَرَكِبْنَا مَعَهُ فَانْتَهَيْنَا إِلَى النَّاسِ حِينَ امْتَدَّ النَّهَارُ وَحَمِيَ كُلُّ شَيْءٌ وَهُمْ يَقُولُونَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْنَا وَعَطِشْنَا فَقَالَ لَا هُلْكَ عَلَيْكُمْ وَدَعَا بِالْمِيضَأَةِ فَجَعَلَ يَصُبُّ وَأَبُو قَتَادَةَ يَسْقِيهِمْ فَلَمْ يَعْدُ أَنْ رَأَى النَّاسُ مَاءً فِي الْمِيضَأَةِ تَكَابُّوا عَلَيْهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسِنُوا الْمَلَأَ كُلُّكُمْ سَيُرْوَى قَالَ فَفَعَلُوا فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُبُّ وَأَسْقِيهِمْ حَتَّى مَا بَقِيَ غَيْرِي وَغَيْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ صَبَّ فَقَالَ لِيَ اشْرَبْ فَقُلْتُ لَا أَشْرَبُ حَتَّى تَشْرَبَ يَا رَسُولَ الله قَالَ إِن ساقي الْقَوْم آخِرهم شربا قَالَ فَشَرِبْتُ وَشَرِبَ قَالَ فَأَتَى النَّاسُ الْمَاءَ جَامِّينَ رِوَاءً. رَوَاهُ مُسْلِمٌ هَكَذَا فِي صَحِيحِهِ وَكَذَا فِي كتاب الْحميدِي وجامع الْأُصُولِ وَزَادَ فِي الْمَصَابِيحِ بَعْدَ قَوْلِهِ آخِرُهُمْ لَفْظَة شربا

رواہ مسلم (311 / 681)، (1562) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস বলা হয়েছে, (حَتَّى ابْهَارَّ اللَّيْلُ) অর্থাৎ রাত গভীর হওয়া পর্যন্ত।
তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (ابْهَارَّ اللَّيْلُ)-এর অর্থ হলো রাত অর্ধেক হলো। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হলো রাতের অধিকাংশ চলে গেল। আবার কেউ বলেন, এটি বলা হয় যখন রাতের তারকারাজি উদ্ভাসিত হয় এবং পৃথিবী হয় আলোকিত।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) - কাযা সালাত আদায় করতে বিলম্ব করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কেউ যদি ঘুমের কারণে অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত আদায় করতে না পারে তাহলে জাগ্রত হওয়া মাত্রই অথবা স্মরণ হওয়া মাত্রই কাযা সালাত আদায় করা আবশ্যক নয়।

(شُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ بَالصَّلَاةِ) অর্থাৎ তারপর বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। মিরকাত প্রণেতা বলেন, এখান থেকে বুঝা যায় যে, কাযা সালাতের জন্য আযান দেয়া মুস্তাহাব। যেমন- সালাত আদায়ের জন্য আযান দেয়া সুন্নাত।
(أَحْسِنُوا الْمَلَأَ كُلُّكُمْ سَيُرْوَى) অর্থাৎ তোমরা সুন্দর আচরণ করে। প্রত্যেকেই পান করতে পারবে। এর অর্থ হলো তোমরা সকলেই পান করে তৃপ্ত হতে পারবে। অতএব তোমরা ভিড় করো না এবং ঠেলাঠেলি করার মাধ্যমে মন্দ আচরণ প্রকাশ করো না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১২-[৪৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবুকের যুদ্ধের সময় যখন লোকজন ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল, তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এখন লোকজনের কাছে যে পরিমাণ অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য অবশিষ্ট আছে, সেগুলো আনিয়ে নিন এবং তার উপর আল্লাহর কাছে বরকতের জন্য দুআ করুন। তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তাই করা হবে। তখন তিনি (সা.) একখানা চামড়ার দস্তরখান আনালেন। তা বিছানো হলো, অতঃপর তিনি তাদের অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্যগুলো আনতে বললেন। তাতে কোন লোক আনল এক মুষ্টি বুট, আর কেউ আনল এক মুষ্টি খেজুর, আর কেউ আনল কিছু রুটির টুকরা। অবশেষে সবকিছু মিলিয়ে দস্তরখানের উপর সামান্য পরিমাণ বস্তুই একত্রিত করা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার মধ্যে বরকতের জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের (যার যা খুশি) নিজ নিজ পাত্রগুলোতে নিয়ে নাও। অতএব তারা নিজ নিজ পাত্রগুলোতে নিতে লাগল। এমনকি সেনাদলের মধ্যে এমন কোন পাত্র রইল না যা তারা ভর্তি করে নিল না।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, লোকেরা সকলে তৃপ্তি করে খেল এবং কিছু খাদ্য অতিরিক্তও রয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আর নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল। আর যে ব্যক্তি এ দু’টি কথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে (অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করবে), কোন কিছু তাকে জান্নাতে প্রবেশ হতে বাধা দিতে পারবে না। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ غزوةِ تَبُوك أصابَ النَّاس مجاعةٌ فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ ثُمَّ ادْعُ اللَّهَ لَهُمْ عَلَيْهًا بِالْبَرَكَةِ فَقَالَ: نعم قَالَ فَدَعَا بِنِطَعٍ فَبُسِطَ ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بِكَفِّ ذُرَةٍ وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَفِّ تَمْرٍ وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكِسْرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النِّطَعِ شَيْءٌ يَسِيرٌ فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرَكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِي أوعيتكم فَأَخَذُوا فِي أَوْعِيَتِهِمْ حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَر وعَاء إِلا ملؤوه قَالَ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا وَفَضَلَتْ فَضْلَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لَا يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرُ شاكٍّ فيحجبَ عَن الْجنَّة» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (45 / 27)، (139) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত তাবূক যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাবূক একটি জায়গার নাম। যার দূরত্ব মদীনাহ থেকে এক মাসের পথ।
‘আল্লামাহ্ সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি সংঘটিত হয়েছিল নবম হিজরীর রজব মাসে। আর তা ছিল রাসূল (সা.)-এর স্বশরীরে অংশগ্রহণমূলক সর্বশেষ যুদ্ধ।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এ হাদীসে ঘটনা কিছু সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
যেহেতু বর্ণিত হয়েছে যে, তাবুক যুদ্ধের সময় সাহাবীরা প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত হলো তখন তারা রাসূল (সা.)-কে বলল, যদি আপনি আমাদেরকে উট যাবাহ করার অনুমতি দিতেন তাহলে আমরা যাবাহ করে পাকিয়ে খেতাম। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা তাই করো। কিন্তু ‘উমার (রাঃ) এসে বললেন, যদি আপনি তা অনুমতি দেন তাহলে আমরা বাহন কোথায় পাবো? তার চেয়ে বরং আপনি তাদেরকে অবশিষ্ট খাদ্য পাথেয় জমা করতে বলুন এবং বরকতের দু'আ করুন। তারপর আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি (সা.) বরকতের জন্য দু'আ করলেন।
(قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ) অর্থাৎ তারপর রাসূল (সা.) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। এটি বলে এদিকে ইশারা করা হয়েছে যে, মু'জিযা দেখা বিশ্বাসীদের মাঝে আরো বিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।
(لَا يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ...) অর্থাৎ, যে কোন বান্দা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এই দুই সাক্ষ্য দিয়ে...।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, যে ব্যক্তি কোন সন্দেহ ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া এই দুই সাক্ষ্য প্রদান করে মারা যাবে সে কখনোই জান্নাত থেকে দূরে থাকবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৩-[৪৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী (সা.) যায়নাব-এর বিবাহে বর ছিলেন, তখন আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) কিছু খেজুর, মাখন এবং পনীরের সংমিশ্রণে ’হায়সা’ তৈরি করলেন। তারপর তাকে তিনি একটি পাত্রে রেখে বললেন, হে আনাস। এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে নিয়ে যাও এবং বল, এগুলো আমার মা আপনার কাছে পাঠিয়েছেন এবং তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। আর তিনি এটাও বলেছেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আমাদের পক্ষ হতে আপনার জন্য খুবই সামান্য হাদিয়্যাহ্! আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তা নিয়ে গেলাম এবং আমার মা যা কিছু বলার জন্য আমাকে আদেশ করেছিলেন, আমি তাও বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, এগুলো রাখ। অতঃপর আমাকে কিছু লোকের নাম উল্লেখ করে বললেন, যাও এবং অমুক অমুক ও অমুককে আর তা ছাড়াও যার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে তাদেরকে দাওয়াত দেবে।
অতএব তিনি যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদেরকে এবং আমার সাথে যাদের দেখা হয়েছে তাদেরকে দাওয়াত দিলাম। অতঃপর আমি ফিরে এসে দেখলাম পূর্ণ লোকজন। আনাস (রাঃ) প্রশ্ন করা হলো, সেখানে আপনাদের সংখ্যা কতজন ছিল? তিনি বললেন, প্রায় তিনশত। আমি দেখতে পেলাম, নবী (সা.) ’হায়সার পাত্রের মধ্যে স্বীয় হাত রাখলেন এবং আল্লাহর যা ইচ্ছা তা পাঠ করলেন। তারপর দশ দশজনের দলকে তা হতে খাবার জন্য ডাকতে থাকলেন। আর তাদেরকে বললেন, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ সম্মুখ হতে খাওয়া শুরু কর। আনাস (রাঃ) বলেন, তারা সকলে তুষ্ট হয়ে খেলেন। একদল খেয়ে বের হতেন এবং আরেক দল প্রবেশ করতেন, এভাবে সমস্ত লোকই খাদ্য খেলেন। অতঃপর নবী (সা.) আমাকে বললেন, হে আনাস! পাত্রটি উঠাও। তখন আমি পাত্রটি উঠালাম, কিন্তু সঠিকভাবে বলতে পারছি না, যখন আমি পাত্রটি রেখেছিলাম, তখন পাত্রটিতে ’হায়সা’ বেশি ছিল নাকি এখন যখন আমি তাকে উঠালাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أَنَسٍ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَرُوسًا بِزَيْنَبَ فَعَمَدَتْ أُمِّي أُمُّ سُلَيْمٍ إِلَى تَمْرٍ وَسَمْنٍ وَأَقِطٍ فَصَنَعَتْ حَيْسًا فَجَعَلَتْهُ فِي تَوْرٍ فَقَالَتْ يَا أَنَسُ اذْهَبْ بِهَذَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْ بَعَثَتْ بِهَذَا إِلَيْكَ أُمِّي وَهِيَ تُقْرِئُكَ السَّلَامَ وَتَقُولُ إِنَّ هَذَا لَكَ مِنَّا قَلِيلٌ يَا رَسُولَ الله قَالَ فَذَهَبْتُ فَقُلْتُ فَقَالَ ضَعْهُ ثُمَّ قَالَ اذْهَبْ فَادْعُ لِي فُلَانًا وَفُلَانًا وَفُلَانًا رِجَالًا سَمَّاهُمْ وَادْعُ مَنْ لَقِيتَ فَدَعَوْتُ مَنْ سَمَّى وَمَنْ لَقِيتُ فَرَجَعْتُ فَإِذَا الْبَيْتُ غَاصٌّ بِأَهْلِهِ قِيلَ لأنس عدد كم كَانُوا؟ قَالَ زهاء ثَلَاث مائَة. فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى تِلْكَ الْحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ بِمَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ جَعَلَ يَدْعُو عَشَرَةً عَشَرَةً يَأْكُلُونَ مِنْهُ وَيَقُول لَهُم: «اذْكروا اسْم الله وليأكلْ كُلُّ رَجُلٍ مِمَّا يَلِيهِ» قَالَ: فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا. فَخَرَجَتْ طَائِفَةٌ وَدَخَلَتْ طَائِفَةٌ حَتَّى أَكَلُوا كُلُّهُمْ قَالَ لِي يَا أَنَسُ ارْفَعْ. فَرَفَعْتُ فَمَا أَدْرِي حِينَ وَضَعْتُ كَانَ أَكْثَرَ أَمْ حِين رفعت. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (5163) و مسلم (94 / 1428)، (3507) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (فَصَنَعَتْ حَيْسًا) অর্থাৎ তারপর তিনি হায়স' (এক জাতীয় খাবার) তৈরি করলেন।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) সামায়িল’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় (حَيْسًا) এর পরিচয় দিয়ে বলেন, (حَيْسًا) হলো ঘি অথবা পনির মিশ্রিত খেজুর দিয়ে তৈরি খাবার।
উক্ত হাদীসের শেষের দিকে আনাস (রাঃ) বলেন, যখন আমি সেই পাত্রটি শেষে আবার উঠিয়ে আনলাম তখন আমি এটি বুঝতে পারছিলাম না যে, পাত্রটি রাখার সময় ‘হায়স’ পরিমাণে বেশি ছিল নাকি শেষে উঠিয়ে নেয়ার সময় বেশি ছিল?
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, পাত্রটি উঠানোর সময় তাতে ‘হায়স’ বেশি ছিল। কারণ তখন তার সাথে স্পর্শ হয়েছিল রাসূল (সা.) -এর হাত এবং তাতে ছিল সম্মানিত সাহাবীদের বরকত।
কেউ কেউ বলেন, বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল ‘হায়স দিয়ে, যেই ‘হায়স' উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রাসূল (সা.) -কে হাদিয়্যাহ্ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল রুটি ও গোশত দিয়ে। এখানে দুটি বর্ণনার মাঝে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে।
মিরকাত প্রণেতা উক্ত হাদীস দুটির ব্যাপারে বলেন, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল মূলত রুটি ও গোশত দিয়েই। কিন্তু ঘটনাক্রমে সেই সময়ে হয়তো ‘হায়সও এসে যায়।
এছাড়াও এমন কোন প্রমাণ নেই যে, যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ করা হয়েছিল ‘হায়স' দিয়ে। অথবা এমনও হতে পারে যে, হায়স সেদিনই ওয়ালীমার পরে রাসূল (সা.) -কে দেয়া হয়েছে। কিংবা তার পরের দিন দেয়া হয়েছে।
অতএব, হাদীস দুটির মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। যায়নাব (রাঃ)-এর বিবাহের সময় রুটি ও গোশত দিয়ে ওয়ালীমাহ করার সময় খাবারের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বৃদ্ধি পাওয়াকে কেউ কেউ অস্বীকার করে বলেছেন যে, সেদিন খাবার বৃদ্ধি পায়নি।
কিন্তু এ কথাটি অবান্তর এবং আশ্চর্যজনক। কারণ তার ওয়ালীমা করা হয়েছিল মাত্র একটি ছাগল ও রুটি দিয়ে। অথচ তা হাজার মানুষ খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়েছিল। এটি কিভাবে সম্ভব এই অল্প খাবার দিয়ে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, অবশ্যই সেই খাবারে বরকত হয়েছিল এবং স্বাভাবিক অবস্থার থেকে তা বৃদ্ধি পেয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৪-[৪৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে শরীক ছিলাম। আর আমি এমন একটি উটের উপর আরোহণ করে ছিলাম যা সেচের পানি বহন করতে করতে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। চলবার শক্তি ছিল না। পিছন হতে নবী (সা.) এসে আমার সাথে মিলিত হয়ে বললেন, তোমার উটের কি হয়েছে? আমি বললাম, তা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) উটটির পিছনে গেলেন এবং তাকে ধমক দিয়ে তার জন্য দু’আ করলেন। তারপর তা সর্বদা অন্যান্য উটের আগে আগেই চলতে লাগল। পরে আবার তিনি (সা.) আমাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার উটের খবর কি? আমি বললাম, আপনার দুআর বরকতে এখন খুব ভালো। তিনি বললেন, তুমি কি এক উকিয়্যার বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রয় করবে? তখন আমি এই শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদীনাহ্ পৌছা পর্যন্ত আমি তার পিঠে আরোহী হব। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন আমি প্রাতঃকালে উটটি নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে উটের মূল্য প্রদান করলেন এবং উটটিও আমাকে ফেরত দিয়ে দিলেন। (বুখারী মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنا على نَاضِح لنا قَدْ أَعْيَا فَلَا يَكَادُ يَسِيرُ فَتَلَاحَقَ بِيَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لي مَا لبعيرك قلت: قدعيي فَتَخَلَّفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فزجره ودعا لَهُ فَمَا زَالَ بَيْنَ يَدَيِ الْإِبِلِ قُدَّامَهَا يسير فَقَالَ لي كَيفَ ترى بعيرك قَالَ قُلْتُ بِخَيْرٍ قَدْ أَصَابَتْهُ بَرَكَتُكَ قَالَ أَفَتَبِيعُنِيهِ بِوُقِيَّةٍ. فَبِعْتُهُ عَلَى أَنَّ لِي فَقَارَ ظَهْرِهِ حَتَّى الْمَدِينَةِ فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ غَدَوْتُ عَلَيْهِ بِالْبَعِيرِ فَأَعْطَانِي ثمنَهُ وردَّهُ عَليّ. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (2967) و مسلم (110 / 715)، (4100) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: হাদীসে বলা হয়েছে, (أَفَتَبِيعُنِيهِ بِوُقِيَّةٍ) অর্থাৎ তুমি কি তা আমার কাছে এক উক্বিয়্যাহ্ বিক্রি করবে?
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এক উক্বিয়্যাহ্ মানে হলো চল্লিশ দিরহাম। উক্ত হাদীসে সাহাবী তার ঘোড়ার ব্যাপারে কিছুটা প্রশংসা করে বলেছেন, তা এখন ভালো চলছে।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এখান থেকে বুঝা যায় যে, বিক্রয় করার লক্ষ্যে কোন বস্তুর মাঝে থাকা গুণ বর্ণনা করা বৈধ।
(فَأَعْطَانِي ثمنَهُ وردَّهُ) অর্থাৎ তারপর তিনি আমাকে তার মূল্য পরিশোধ করে দিলেন। সাথে সেই উটটিও ফিরিয়ে দিলেন।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সাহাবী এ কথাটি রূপকভাবে বলেছেন। কেননা লেনদেন মূলত হয়েছে বিলাল (রাঃ)-এর মাধ্যমে। যেহেতু রাসূল (সা.) তাকে এই লেনদেন করার জন্য আদেশ করেছিলেন। তাই প্রকৃত লেনদেনকারী মূলত রাসূল (সা.)। আর সাহাবী এখানে সেটিই উল্লেখ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৫-[৪৮] আবূ হুমায়দ আস্ সাইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে তাবুকের যুদ্ধের জন্য রওয়ানা হলাম। অতঃপর আমরা ’ওয়াদিউল কুরা’ নামক স্থানে এক মহিলার বাগানে উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা (বাগানের খেজুরের) পরিমাণ আন্দায কর। অতএব আমরা ধারণা করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) বাগানের ফল দশ ওয়াসাক হবে বলে অনুমান করলেন। এরপর তিনি (সা.) উক্ত মহিলাকে বললেন, এ বাগানে কি পরিমাণ খেজুর উৎপন্ন হয়, ভালোভাবে তার হিসাব রেখো, যাবৎ না আমরা তোমার কাছে ফিরে আসি ইনশা-আল্লা-হ। অবশেষে আমরা রওয়ানা হয়ে তাবুকে এসে উপস্থিত হলাম।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সাবধান! আজ রাতে ব্যাপক ঝড় হবে। অতএব তোমাদের কেউই যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। আর যার সাথে উট রয়েছে, সে যেন তাকে শক্ত করে বেঁধে রাখে। রাতে প্রচণ্ড ঝড় হলো। এক লোক দাড়িয়ে গেলে ঝড় তাকে উড়িয়ে ’তাঈ’ পাহাড়ে নিয়ে নিক্ষেপ করল। অতঃপর আমরা ফেরার পথে ওয়াদিউল কুরায় এসে পৌছলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত মহিলাকে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের বাগানে কি পরিমাণ ফল উৎপন্ন হয়েছে? সে বলল, “দশ ওয়াসাক’। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أبي حميد السَّاعِدِيّ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ تَبُوكَ فَأَتَيْنَا وَادِيَ الْقُرَى عَلَى حَدِيقَةٍ لِامْرَأَةٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اخْرُصُوهَا» فَخَرَصْنَاهَا وَخَرَصَهَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشَرَةَ أَوْسُقٍ وَقَالَ: «أَحْصِيهَا حَتَّى نَرْجِعَ إِلَيْكِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» وَانْطَلَقْنَا حَتَّى قَدِمْنَا تَبُوكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَهُبُّ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَةَ رِيحٌ شَدِيدَةٌ فَلَا يَقُمْ فِيهَا أَحَدٌ مِنْكُم فَمَنْ كَانَ لَهُ بَعِيرٌ فَلْيَشُدَّ عِقَالَهُ» فَهَبَّتْ رِيحٌ شَدِيدَةٌ فَقَامَ رَجُلٌ فَحَمَلَتْهُ الرِّيحُ حَتَّى أَلْقَتْهُ بِجَبَلَيْ طَيِّئٍ ثُمَّ أَقْبَلْنَا حَتَّى قَدِمْنَا وَادِيَ الْقُرَى فَسَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَرْأَةُ عَنْ حَدِيقَتِهَا كَمْ بَلَغَ ثَمَرهَا فَقَالَت عشرَة أوسق. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (1481) و مسلم (11 / 1392)، (3371) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের শেষের দিকে বলা হয়েছে, (فَحَمَلَتْهُ الرِّيحُ حَتَّى أَلْقَتْهُ بِجَبَلَيْ طَيِّئٍ) অর্থাৎ বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে তাঈয়ের দুই পাহাড়ে নিক্ষেপ করল। পাহাড় দুটি সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন, দুটি পাহাড়ের একটির নাম ছিল ‘আযা' এবং আরেকটির নাম ছিল ‘সালমা'। আর এ দুটির নামকরণ করা হয়েছে আমালিকা গোত্রের একজন নারী ও পুরুষের নামে।
উক্ত হাদীসে রাসূল (সা.) থেকে প্রকাশিত তিনটি মু'জিযার কথা জানা যায়। সেগুলো হলো,

১) রাসূল (সা.) আগেই বলে দিয়েছেন যে, আজ রাতে প্রচণ্ড বাতাস হবে। আর রাতে তাই ঘটেছে।

২) তিনি (সা.) আগেই বলেছিলেন যে, কেউ যেন বাতাসের সময় না দাঁড়ায়। যদি কেউ দাঁড়ায় তাহলে বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। আর রাতে তাই ঘটেছে। একজন দাঁড়িয়ে ছিল আর বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। যাকে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে গেছে তার নাম ছিল আবূ কবিলাহ। সে ছিল ইয়ামানের অধিবাসী।

৩) গাছটিতে যে পরিমাণ খেজুর থাকার ব্যাপারে রাসূল (সা.) অনুমান করেছিলেন হুবহু সেই পরিমাণই হয়েছিল। তবে কেউ কেউ বলেন, এই পরিমাপের কথাটি ঘটনাক্রমে মিলে গেছে। এটি কোন মু'জিযাহ্ নয়। মিরকাত প্রণেতা বলেন, হ্যাঁ। হতে পারে যে, এটি ঘটনাক্রমে মিলে গেছে। কিন্তু এর মাধ্যমেই রাসূল (সা.) তাঁর নুবুওয়্যাত প্রকাশ করতে চেয়েছেন ঐ সকল মুনাফিকদের জন্য যারা মুহাম্মাদ (সা.) -এর নুবুওয়্যাত মনে প্রাণে মেনে নিতে পারেনি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৬-[৪৯] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: অদূর ভবিষ্যতে  তোমরা নিশ্চয় মিসর জয় করবে। তা এমন একটি দেশ যেখানে কীরাত (আঞ্চলিক মুদ্রার নাম) ব্যবহার হয়ে। থাকে। তোমরা যখন তা জয় করবে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা তাদের সাথে সৌহার্দ ও আত্মীয়তার অথবা বলেছেন, সৌহার্দ ও শ্বশুরাত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আর যখন দেখবে, দুই লোক একটি ইটের জায়গা নিয়ে পরস্পর বিবাদ করছে তখন তুমি সে স্থান হতে সরে পড়বে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি আবদুর রহমান ইবনু শুরাহবিল ইবনু হাসানাহ্ ও তার ভাই (রবীআহ-কে) একটি ইটের স্থান নিয়ে পরস্পর ঝগড়া করতে দেখতে পাই, তখন আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসি। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ مِصْرَ وَهِيَ أَرْضٌ يُسَمَّى فِيهَا الْقِيرَاطُ فَإِذَا فَتَحْتُمُوهَا فَأَحْسِنُوا إِلَى أَهْلِهَا فَإِنَّ لَهَا ذِمَّةً وَرَحِمًا أَوْ قَالَ: ذِمَّةً وَصِهْرًا فَإِذَا رَأَيْتُمْ رَجُلَيْنِ يَخْتَصِمَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ فَاخْرُجْ مِنْهَا . قَالَ: فَرَأَيْتُ عَبْدَ الرَّحْمَن بن شُرَحْبِيل بن حَسَنَة وأخاه يَخْتَصِمَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ فَخَرَجْتُ مِنْهَا. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (227 ، 226 / 2543)، (6493 و 6494) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (فَتَحْتُمُوهَا فَأَحْسِنُوا إِلَى أَهْلِهَا) অর্থাৎ তোমরা তার অধিবাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, তাদের পক্ষ থেকে অপছন্দনীয় কাজ প্রকাশ পেলেও তোমরা তাদেরকে ক্ষমা করবে, মার্জনা করবে। তাদের কোন মন্দকর্মের কারণে তাদের সাথে কোনরূপ দুর্ব্যবহার করবে না।
(يَخْتَصِمَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ فَاخْرُجْ مِنْهَا) অর্থাৎ তারা দুজন এক ইট পরিমাণ জায়গা নিয়ে ঝগড়া করছিল। তখন আমি সেখান থেকে বের হলাম। হাদীসে বর্ণিত এ ঘটনাটি ঘটেছিল উসমান (রাঃ)-এর শাসন আমলের শেষের দিকে। যখন তারা তাকে তার দুধ ভাই আবদুল্লাহ ইবনু সা'দ ইবনু আবূ সারাহ-এর নেতৃত্বের ব্যাপারে দোষারোপ করে। উক্ত ঘটনাটি ঘটার আগেই নবী (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন যে, অবশ্যই তা মিসরে ঘটবে। তার পরেই শুরু সংঘটিত হবে বিভিন্ন ফিতনাহ্। যেমন- ‘উসমান (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে মিসরীদের বিদ্রোহ করা ইত্যাদি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৭-[৫০] হুযায়ফাহ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। একদিন তিনি (সা.) বলেছেন: আমার সাহাবীদের মাঝে অপর এক বর্ণনাতে আছে, আমার উম্মতের মাঝে এমন বারোজন মুনাফিক রয়েছে, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও তারা পাবে না, যে পর্যন্ত না সুঁচের ছিদ্রের ভিতর উট প্রবেশ করে। তাদের আটজনকে পেটের ফোঁড়া ধ্বংস করবে। তা আগুনের একটি শিখা, যা তাদের ঘাড়ের মধ্যে সৃষ্টি হবে। এমনকি তা তাদের বুক বিদ্ধ করে বের হবে। (মুসলিম)

(গ্রন্থকার বলেন,) সাহল ইবনু সা’দ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا) “অবশ্যই আগামীকাল এই যুদ্ধের নিশানা বা পতাকা এমন এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিব” মানাকিবে ’আলী এবং জাবির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (مَنْ يَصْعَدُ الثَّنِيَّةَ) “কে সানিয়্যাহ্ উপত্যকায় আরোহণ করবে?” “জামিউল মানাকিব অধ্যায়ে” বর্ণনা করব ইনশা-আল্ল-হ।

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ حُذَيْفَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فِي أَصْحَابِي وَفِي رِوَايَة قا ل: فِي أُمَّتِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدُونَ رِيحَهَا حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سم الْخياط ثَمَانِيَة مِنْهُم تَكُ (فيهم الدُّبَيْلَةُ: سِرَاجٌ مِنْ نَارٍ يَظْهَرُ فِي أَكْتَافِهِمْ حَتَّى تَنْجُمَ فِي صُدُورِهِمْ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ: «لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا» فِي «بَابِ مَنَاقِبِ عَلِيٍّ» رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَحَدِيثَ جَابِرٍ «مَنْ يَصْعَدُ الثَّنِيَّةَ» فِي «بَابِ جَامِعِ الْمَنَاقِبِ» إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى

رواہ مسلم (10 ، 9 / 2779)، (7035 و 7036) 0 حدیث سھل بن سعد سیاتی (6080) و حدیث جابر یاتی (6220) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (وَلَا يَجِدُونَ رِيحَهَا) অর্থাৎ তারা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার সুঘ্রাণ পাঁচশত বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়। হাদীসের পরের অংশে আরো বলা হয়েছে যে, তারা জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না যতক্ষণ না উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে। এ কথাটি বলা হয়েছে অসম্ভবতা বুঝানোর জন্য। যেমন- উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা অসম্ভব, ঠিক তেমন তাদের জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া অসম্ভব।
শায়খ তূরীবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আলোচনা করে বলেন, (فِىْ أَصْحَابِىْ اوأُمَّتِى) অর্থাৎ আমার সাহাবীদের মধ্যে অথবা তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে বারোজন মুনাফিক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) -এর সাহাবী হিসেবে শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তিদেরকেই গণ্য করা হবে যারা ঈমানসহ রাসূল (সা.)-কে দেখেছেন এবং তার ঈমান ছিল সত্য। পাশাপাশি তার ঈমানের সত্যতার আলামতও প্রকাশ পেয়েছে।
অতএব, ঐ সকল ব্যক্তিদেরকে প্রকৃত সাহাবী বলা যাবে না যারা ঈমান আনার ক্ষেত্রে সত্যবাদী নয় এবং তাদের ঈমানের সত্যতার আলামত প্রকাশও পায়নি। পাশাপাশি তারা তাদের ভিতর নিফাক্বী গোপন রেখেছে। তারপরেও ঐ শ্রেণির লোকেদেরকেও রাসূল (সা.) সাহাবী বলে উল্লেখ করেছেন বাহ্যিকভাবে প্রকৃত সাহাবীদের সাথে তাদের সাদৃশ্য থাকার কারণে।
এজন্যই রাসূল (সা.) সাহাবী বলে উল্লেখ করেছেন আমার সাহাবীদের মধ্যে। তিনি বলেননি আমার সাহাবীদের মধ্য থেকে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, (کَانَ مِنَ الۡجِنِّ) অর্থাৎ, “সে জিনদের মধ্য থেকে একজন ছিল”- (সূরাহ আল কাহফ ১৮: ৫০)।
অতএব শায়খ তূরীবিশতী (রহিমাহুল্লাহ)-এর সারকথা হলো যদি ‘আরবী (مِن) অব্যয় ব্যবহার করে বলা হয় তাহলে তাকে তাদের মধ্য থেকে কাউকে বুঝাবে। কিন্তু যদি ‘আরবী (فِىْ) অব্যয় ব্যবহার করা হয় তাহলে বুঝাবে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল মুনাফিকের ব্যাপারে জানতেন। কিন্তু তিনি সবার কথা সবাইকে বলেননি। তবে  কিছু মুনাফিকের কথা তিনি বলে দিয়েছেন যেন অন্য লোকেরা তাদের থেকে ঈমান গ্রহণ না করে এবং সাহাবীরা যেন তাদের থেকে ধোকাও না খায়।
তারপরেও অনেক সাহাবীদের কাছে মুনাফিকদের বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। আর সাহাবীদের মাঝে মুনাফিকদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জানতেন হুযায়ফাহ্ (রাঃ)। এর অন্যতম কারণ হলো, তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় যখন মুনাফিকরা রাসূল (সা.)-কে রাতে হত্যা করতে ইচ্ছা করল তখন সেখানে তার সাথে ছিলেন শুধুমাত্র দু’জন সাহাবী।
একজন হলেন ‘আম্মার (রাঃ) এবং আর অপরজন হলেন হুযায়ফাহ (রাঃ)। চলার পথে রাসূল (সা.) -এর একজন ঘোষক ঘোষণা দিলো যে, তোমরা উপত্যকার মাঝখান দিয়ে চলো। এটি তোমাদের জন্য প্রশস্ত পথ। আর রাসূল (সা.) সরুপথ দিয়ে চলছেন।
এদিকে মুনাফিকরা তার এ ঘোষণা শুনতে পেল। সাথে সাথে তারা তাদের মন্দ কাজ সাধন করতে লেগে গেল। তাদের মধ্য থেকে বারোজন লোক মুখোশ পরে রাসূল (সা.) -এর অনিষ্ট সাধন করার জন্য পিছু নিল। কিন্তু পিছন থেকে তিনি তাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-কে আদেশ করলেন। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) একটি লাঠি নিয়ে তাদের দিকে অগ্রসর হলেন এবং তা দিয়ে একটি আঘাত করলেন। এতে তাদের অন্তরে আল্লাহ ভয় সৃষ্টি করে দিলেন। তারপর তারা দ্রুত পিছন দিকে ফিরে গিয়ে লোকেদের সাথে মিশে গেল।
পরে যখন হুযায়ফাহ্ (রাঃ) রাসূল (সা.) -এর কাছে ফিরে আসলো তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাদের কাউকে কি তুমি চিনেছ? হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বললেন, না চিনিনি। কারণ তারা মুখোশ পরিহিত ছিল কিন্তু আমি তাদের বাহনগুলো চিনেছি। তারপর রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে তাদের নাম, তাদের পিতাদের নাম সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ চায় তো সকালে আমি তোমাকে তাদের নাম জানাব।
এজন্যই লোকেরা বলে যে, মুনাফিকদের ব্যাপারে সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জানেন হুযায়ফাহ্ (রাঃ)। পরবর্তীতে হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, সেই মুনাফিকদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দজন। কিন্তু পরে তাদের মধ্য থেকে দু’জন তাওবাহ্ করে সঠিক পথে ফিরে এসেছেন আর বাকী বারোজন নিফাকের উপরই রয়ে গেছে। এ বিষয়টি হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-কে কি রাসূল (সা.) নিজে জানিয়েছিলেন?
মিরকাত প্রণেতা বলেন, ঐ সকল মুনাফিকদের নাম আমি হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা থেকে জানতে পেরেছি। তবে সেই নামগুলো নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। তাই সেই নামগুলো আর আমি এখানে উল্লেখ করছি না।
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) তাকে সেই মুনাফিকদের ব্যাপারে জানিয়েছেন। আর তারা সেভাবেই ধ্বংস হয়েছে যেভাবে ধ্বংস হওয়ার কথা রাসূল (সা.) তাকে বলেছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৮-[৫১] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার [রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চাচা] আবূ ত্বালিব নবী (সা.) ও কুরায়শ নেতৃবর্গের মধ্যে সিরিয়ার উদ্দেশে ভ্রমণে বের হলেন। যখন তারা (বুহায়রাহ্) পাদ্রির কাছে পৌছে সেখানে যাত্রাবিরতি করলেন, তখন নিজেদের বাহন হতে হাওদা ইত্যাদি সামানপত্র খুললেন। এমন সময় পাদ্রি তাদের কাছে আসলো। কুরায়শদের কাফেলা ইতঃপূর্বে বহুবার এ পথে আসা যাওয়া করেছে, অথচ পাদ্রি কখনো তাদের কাছে আসেনি। বর্ণনাকারী বলেন, কাফেলার লোকেরা নিজেদের হাওদা ইত্যাদি খুলছে, এমন সময় পাদ্রি তাদের মাঝে প্রবেশ করল। অবশেষে সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে তার হাত ধরে বলল, ইনিই তো সমগ্র জগতের নেতা, ইনিই রাব্বূল আলামীনের রাসূল, আল্লাহ তা’আলা তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করবেন। তখন কুরায়শ নেতাদের কেউ কেউ প্রশ্ন করল, তুমি তা কিরূপে জান? পাদ্রি বলল, যখন তোমরা পাহাড়ের পশ্চাৎ হতে বের হয়ে সম্মুখে এসেছ, তখন হতে এমন কোন বৃক্ষ ও পাথর বাকি ছিল না যা তাঁকে সিজদাহ্ করেনি। বস্তুত এ দুই জিনিস কেবলমাত্র নবীকেই সিজদাহ্ করে। আর আমি তাকে মোহরে নুবুওয়্যাত দ্বারা চিনতে পেরেছি, যা তার কাঁধের গোড়ায় নিম্নদিকে আপেলের মতো রয়েছে। অতঃপর পাদ্রি ফিরে আসলো এবং কাফেলার লোকেদের জন্য খাবার তৈরি করল। যখন সে খাবার নিয়ে তাদের কাছে আসলো, তখন দেখল যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কাফেলার লোকেদের উটগুলো নিয়ে এমন অবস্থায় আসলেন, দেখা গেল এক খণ্ড মেঘ তার উপর ছায়া দান করে রয়েছে। আর যখন তিনি কাফেলার লোকেদের কাছে আসলেন, তখন দেখলেন, লোকেরা পূর্ব হতেই ছায়াবিশিষ্ট স্থানগুলো দখল করে ফেলেছে। কিন্তু যখন তিনি বসলেন, তখন বৃক্ষের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়ল। (এ অবস্থা দেখে) পাদ্রি কাফেলার লোকেদেরকে বলল, তোমরা তাকিয়ে দেখ গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। (এ সমস্ত অলৌকিক ঘটনা দেখে) পাদ্রি বলে উঠল, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর শপথ দিয়ে প্রশ্ন করছি, বল! তোমাদের মধ্যে তার অভিভাবক কে? লোকেরা বলল, আবূ ত্বালিব। অতঃপর পাদ্রি (তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য) অনেকক্ষণ ধরে আবূ ত্বালিব-কে আল্লাহর শপথ দিয়ে অনুরোধ করতে থাকে। অবশেষে আবূ ত্বালিব তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। আর তার সফরসঙ্গী হিসেবে আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ)-কে সাথে পাঠিয়ে দিলেন। এদিকে পথে খাওয়ার জন্য পাদ্রী তার সাথে কিছু কেক ও যায়তূনের তেল দিল। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)

عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: خَرَجَ أَبُو طَالِبٍ إِلَى الشَّام وَخرج مَعَه النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَشْيَاخٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَلَمَّا أَشْرَفُوا عَلَى الرَّاهِبِ هَبَطُوا فَحَلُّوا رِحَالَهُمْ فَخَرَجَ إِلَيْهِمُ الرَّاهِبُ وَكَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ يَمُرُّونَ بِهِ فَلَا يَخْرُجُ إِلَيْهِمْ قَالَ فَهُمْ يَحُلُّونَ رِحَالَهُمْ فَجَعَلَ يَتَخَلَّلُهُمُ الرَّاهِبُ حَتَّى جَاءَ فَأَخَذَ بِيَدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ هَذَا سَيِّدُ الْعَالَمِينَ هَذَا رسولُ ربِّ الْعَالِمِينَ يَبْعَثُهُ اللَّهُ رَحْمَةً لِلْعَالِمِينَ فَقَالَ لَهُ أَشْيَاخٌ مِنْ قُرَيْشٍ مَا عِلْمُكَ فَقَالَ إِنَّكُمْ حِينَ أَشْرَفْتُمْ مِنَ الْعَقَبَةِ لَمْ يَبْقَ شَجَرٌ وَلَا حَجَرٌ إِلَّا خَرَّ سَاجِدًا وَلَا يَسْجُدَانِ إِلَّا لِنَبِيٍّ وَإِنِّي أَعْرِفُهُ بِخَاتَمِ النُّبُوَّةِ أَسْفَلَ مِنْ غُضْرُوفِ كَتِفِهِ مِثْلَ التُّفَّاحَةِ ثُمَّ رَجَعَ فَصَنَعَ لَهُمْ طَعَامًا فَلَمَّا أَتَاهُمْ بِهِ وَكَانَ هُوَ فِي رِعْيَةِ الْإِبِلِ فَقَالَ أَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأَقْبَلَ وَعَلَيْهِ غَمَامَةٌ تُظِلُّهُ فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْقَوْم وجدهم قد سَبَقُوهُ إِلَى فَيْء الشَّجَرَة فَلَمَّا جَلَسَ مَالَ فَيْءُ الشَّجَرَةِ عَلَيْهِ فَقَالَ انْظُرُوا إِلَى فَيْءِ الشَّجَرَةِ مَالَ عَلَيْهِ فَقَالَ أنْشدكُمْ بِاللَّه أَيُّكُمْ وَلِيُّهُ قَالُوا أَبُو طَالِبٍ فَلَمْ يَزَلْ يُنَاشِدُهُ حَتَّى رَدَّهُ أَبُو طَالِبٍ وَبَعَثَ مَعَهُ أَبُو بَكْرٍ بِلَالًا وَزَوَّدَهُ الرَّاهِبُ مِنَ الْكَعْكِ وَالزَّيْت. (علق الشَّيْخ أَن ذكر بِلَال فِي الحَدِيث خطأ إِذْ لم يكن خلق بعد)

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3620 وقال : غریب) * یونس بن ابی اسحاق مدلس و عنعن

ব্যাখ্যা: (عَلَى الرَّاهِبِ) তাঁর নাম ছিল বুহায়রাহ্। সে ছিল একজন নাসার বা খ্রিষ্টানদের দুনিয়াবিমুখ ব্যক্তি- এ কথা বলেছেন ব্যাখ্যাকার। আর মুহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি খ্রিষ্টান ধর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। অনুরূপভাবে ইমাম জাযারী (রহিমাহুল্লাহ)-সহ অনেক ‘আলিম বলেছেন।
আলোচ্য হাদীসটিতে নবী (সা.) যে একজন সত্য নবী তার বেশ কিছু নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে। খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় পণ্ডিত সে বিষয়গুলো আলোচ্য হাদীসটিতে ব্যাখ্যা করেছেন। কুরায়শ বংশের লোক নবী (সা.) ছোট থাকাবস্থায়ই খবর পেয়েছিলেন যে, মুহাম্মাদ একদিন নবী হবে। কিন্তু জিদ ও হঠকারিতার জন্য তাকে অনেকেই মানেনি। তারাও এ হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নবী (সা.) -এর মু'জিযাহ্ স্বচক্ষে দেখেছিল। যেমনটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- যখন নবী (সা.) বসলেন তখন গাছগুলো ঝুঁকে তাকে ছায়া দেয়ার জন্য ব্যস্ত ছিল। এটা মেঘমালার ছায়ার চেয়ে বেশি ছায়া দেয়ার জন্য তাড়া করছিল। অথবা মেঘমালা সরে যাওয়ার পরে গাছপালা ঝুঁকে পড়ে একটি অলৌকিক ঘটনার জন্ম দেয়। তীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাকে ছায়া দেয় অর্থাৎ তার ওপর ঝুকে পড়ে তাকে ছায়া প্রদান করেছিল। (সম্পাদীয়)

তাই পাদ্রী তাদেরকে বলেছিল, (انْظُرُوا إِلَى فَيْءِ الشَّجَرَةِ مَالَ عَلَيْهِ) অর্থাৎ যদি তোমরা আসমানের ছায়া লক্ষ্য করে থাক তবে তোমরা জমিনের ছায়া লক্ষ্য কর। তবে আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্তরের চক্ষুকে অন্ধ করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, (وَ تَرٰىهُمۡ یَنۡظُرُوۡنَ اِلَیۡکَ وَ هُمۡ لَا یُبۡصِرُوۡنَ) “আর তুমি তাদেরকে দেখবে তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে অথচ তারা তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না।” (সূরা আল আ'রাফ ৭ : ১৯৮)।  আর এ অর্থ প্রকাশ পেয়েছে মহান আল্লাহর বাণীতে – (فَاِنَّهَا لَا تَعۡمَی الۡاَبۡصَارُ وَ لٰکِنۡ تَعۡمَی الۡقُلُوۡبُ الَّتِیۡ فِی الصُّدُوۡرِ) “তাদের চক্ষুই কেবল অন্ধ নয়; তবে অন্ধ হলো তাদের হৃদয় যা তাদের বুকের মধ্যে থাকে”- (সূরাহ আল হাজ্জ ২২ : ৪৬)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৯-[৫২] ’আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় নবী (সা.) -এর সাথেই ছিলাম। একদিন আমরা মক্কার পার্শ্ববর্তী কোন অঞ্চলের দিকে বের হই, তখন যে কোন পাহাড় ও গাছ-গাছালি তাঁর মুখোমুখি হয়, তখন তা (তাঁকে) ’আস্সালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্ল-হ (হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলে। (তিরমিযী ও দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ فَخَرَجْنَا فِي بَعْضِ نَوَاحِيهَا فَمَا اسْتَقْبَلَهُ جَبَلٌ وَلَا شَجَرٌ إِلَّا وَهُوَ يَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3626 وقال : حسن غریب) و الدارمی (1 / 12 ح 21) * ولید بن ابی ثور : ضعیف و عباد : مجھول ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: ‘আলী (রাঃ) বলেন, নবী (সা.) -এর সাথে আমি মক্কাতে ছিলাম। আমরা যখন চারদিকে বের হতাম তখন রাস্তার পাথর, গাছ-গাছালি সবকিছু তাকে “আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্ল-হ” বলে সালাম করত। এ হাদীসটি নবী (সা.) -এর মু'জিযাহ্ ও ওয়ালীদের কারামাত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯২০-[৫৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। মি’রাজের রাত্রে নবী (সা.) -এর কাছে জিনপোষ ও লাগামে সাজানো বুরাক আনা হলো। তিনি (সা.) তাতে আরোহণ করতে চাইলে তা লাফালাফি করতে লাগল। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বুরাকটিকে বললেন, তুমি কি মুহাম্মাদ (সা.) -এর সাথে এরূপ করছ? আরে! আল্লাহর কাছে ইনি অপেক্ষা অধিক সম্মানিত কোন লোক এ যাবৎ তোমার ওপর আরোহণ করেনি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে বুরাক (লজ্জায়) ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব।]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِالْبُرَاقِ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ مُلْجَمًا مُسْرجاً فاستصعب عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ جِبْرِيل: أَبِمُحَمَّدٍ تَفْعَلُ هَذَا؟ قَالَ: فَمَا رَكِبَكَ أَحَدٌ أَكْرَمُ عَلَى اللَّهِ مِنْهُ قَالَ: فَارْفَضَّ عَرَقًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3131) * قتادۃ مدلس و عنعن

ব্যাখ্যা: (مُلْجَمًا مُسْرجاً) অর্থাৎ তার উপর লাগাম ও বেণী বাঁধা ছিল। আর বুরাকটি অবাধ্য হওয়ার কারণে তার ওপর আরোহণ করা নবী (সা.) -এর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থা দেখে জিবরীল আলায়হিস সালাম বুরাকটিকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, তুমি মুহাম্মাদ-এর সাথে এ আচরণ করছ? অর্থাৎ তুমি তো অন্য কারো সাথে এটা করনি। অথবা তুমি সকল নবীদের সাথে যেমন করেছ তেমনটি কি মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথেও করছ?
(فَمَا رَكِبَكَ أَحَدٌ أَكْرَمُ عَلَى اللَّهِ مِنْهُ) অর্থাৎ তূরীবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তোমার পিঠে কোন এমন কেউ চড়েনি যে, মুহাম্মাদ (সা.)-এর চেয়ে বেশি সম্মানিত। এ কথা শুনে বুরাকের থেকে ঘাম ঝরতে থাকল লজ্জার কারণে কেননা সে ইতোপূর্বে অবাধ্য হয়েছিল নবী (সা.) -এর। সে সঠিক তথ্য জানার পরে যারপর নাই খুশি হয়েছিল। আর সে এ কথা বুঝতে পেরেছিল যে, সে অবাধ্যতা করে ফেলেছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯২১-[৫৪] বুরয়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (মি’রাজের রাত্রে) যখন আমরা বায়তুল মাক্বদিস পৌছলাম, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করলেন, তাতে পাথরটির মধ্যে ছিদ্র হয়ে গেল, তখন বুরাকটিকে তার মধ্যে বেঁধে রাখলেন। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ قَالَ جِبْرِيل بِأُصْبُعِهِ فَخَرَقَ بِهَا الْحَجَرَ فَشَدَّ بِهِ الْبُرَاقَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3132 وقال : غریب)

ব্যাখ্যা: (قَالَ جِبْرِيل بِأُصْبُعِهِ) অর্থাৎ জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করলেন। আর সেই ইশারা দ্বারা গর্ত তৈরি হয়ে গেল। এখানে নবী (সা.) অথবা জিবরীল দু’জনের একজন সেই গর্তে বুরাককে বাঁধেন।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি তুমি বলো, এ হাদীসও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) -এর হাদীস- “আমি তাকে সেই আংটায় বাঁধলাম যেখানে নবীগণও বাঁধতেন”-এর মাঝে কিভাবে সমন্বয় করবে? তাহলে জবাবে আমি বলব, সম্ভবত আংটা দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য সেই জায়গা যেখানে আংটাটি ছিল। আর সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ফলে জিবরীল আলায়হিস সালাম তা ছিদ্র করে দেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯২২-[৫৫] ইয়া’লা ইবনু মুররাহ্ আস্ সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে তিনটি (অলৌকিক) জিনিস দেখেছি।
১. একবার আমরা তার সাথে ভ্রমণে বের হলাম। চলার পথে আমরা এমন একটি উটের কাছে দিয়ে গমন করছিলাম, যার দ্বারা পানি বহন করার কাজ করানো হয়। উটটি যখন নবী (সা.) -কে দেখল, তখন সে জিরজির আওয়াজ করে নিজের ঘাড়টি মাটিতে রাখল। নবী (সা.) সেখানে থেমে গেলেন এবং বললেন, এ উটটির মালিক কোথায়? সে তার কাছে আসলো। তিনি (সা.) তাকে বললেন, তোমার এ উটটি আমার কাছে বিক্রয় করে দাও। সে বলল, বরং হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা আপনাকে দান করলাম! মূলত তা এমন এক পরিবারের লোকেদের উট, যাদের কাছে তা ছাড়া রুযীরোজগারের আর কিছুই নেই। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, অবস্থা যখন এরূপই যা তুমি বলেছ। তবে শুন! তা আমার কাছে এ অভিযোগ করেছে যে, তার দ্বারা অধিক কাজ নেয়া হয় এবং তাকে খাবার অল্প দেয়া হয়। অতএব তোমরা তার সাথে সদাচরণ করবে।
২. অতঃপর আমরা সামনের দিকে রওয়ানা হলাম। অবশেষে এক জায়গায় এসে আমরা অবস্থান করলাম এবং নবী (সা.) সেখানে ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন একটি গাছ জমিন ফেড়ে এসে তার উপর ঝুঁকে পড়ল। অতঃপর গাছটি তার পূর্বের স্থানে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুম হতে জেগে উঠলে আমি তাঁকে এ ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন তিনি (সা.) বললেন, এ গাছটি আল্লাহর রাসূল (সা.)
-কে সালাম করার জন্য নিজের প্রভুর কাছে অনুমতি চেয়েছিল। অতএব তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।
৩. বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা সেখান থেকে সম্মুখের দিকে যাত্রা করলাম এবং একটি জলাশয়ের নিকট পৌছলাম। তখন একজন মহিলা নবী (সা.) -এর কাছে তার এমন একটি ছেলেকে নিয়ে আসলো, যার মাঝে জিনের আসর ছিল। তখন নবী (সা.) এই ছেলেটির নাকে ধরে বললেন, “তুমি বের হও, আমি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ।” বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা আরো সামনের দিকে সফর করলাম। ফেরার পথে যখন আমরা উক্ত জলাশয়ের কাছে আসলাম, তখন নবী (সা.) ঐ ছেলেটির মাকে তার ছেলেটির অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। সে বলল, ঐ সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আপনার চলে যাওয়ার পর হতে ছেলেটির মধ্যে আমরা অপ্রীতিকর আর কিছু দেখতে পাইনি। (শারহুস সুন্নাহ্)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن يعلى بن مرَّةَ الثَّقفي قَالَ ثَلَاثَةُ أَشْيَاءَ رَأَيْتُهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَا نَحْنُ نَسِيرُ مَعَه إِذ مَرَرْنَا بِبَعِير يُسْنَى عَلَيْهِ فَلَمَّا رَآهُ الْبَعِيرُ جَرْجَرَ فَوَضَعَ جِرَانَهُ فَوَقَفَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَيْنَ صَاحِبُ هَذَا الْبَعِيرِ فَجَاءَهُ فَقَالَ بِعْنِيهِ فَقَالَ بَلْ نَهَبُهُ لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنَّهُ لِأَهْلِ بَيْتٍ مَا لَهُمْ مَعِيشَةٌ غَيْرُهُ قَالَ أَمَا إِذْ ذَكَرْتَ هَذَا مِنْ أَمْرِهِ فَإِنَّهُ شَكَا كَثْرَةَ الْعَمَلِ وَقِلَّةَ العلفِ فَأحْسنُوا إِلَيْهِ قَالَ ثمَّ سرنا فنزلنا مَنْزِلًا فَنَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَتْ شَجَرَةٌ تَشُقُّ الْأَرْضَ حَتَّى غَشِيَتْهُ ثُمَّ رَجَعَتْ إِلَى مَكَانِهَا فَلَمَّا اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذُكِرَتْ لَهُ فَقَالَ هِيَ شجرةٌ استأذَنَتْ ربّها عز وَجل أَنْ تُسَلِّمَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَذِنَ لَهَا قَالَ ثُمَّ سِرْنَا فَمَرَرْنَا بِمَاءٍ فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ بِابْنٍ لَهَا بِهِ جِنَّةٌ فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بمنخره فَقَالَ اخْرُج إِنِّي مُحَمَّد رَسُول الله قَالَ ثمَّ سرنا فَلَمَّا رَجعْنَا من سفرنا مَرَرْنَا بِذَلِكَ الْمَاءِ فَسَأَلَهَا عَنِ الصَّبِيِّ فَقَالَتْ وَالَّذِي بَعثك بِالْحَقِّ مَا رأَينا مِنْهُ رَيباً بعْدك. رَوَاهُ فِي شرح السّنة

اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 295 ۔ 296 ح 3718) [و احمد (4 / 173 ح 17708) * فیہ عبداللہ بن حفص : مجھول و عطاء بن السائب : اختلط ، رواہ عنہ معمر ولہ شواھد ضعیفۃ عند الحاکم (2 / 617 ۔ 618) و احمد (4 / 170) وغیرھما

ব্যাখ্যা: (ثَلَاثَةُ أَشْيَاءَ) অর্থাৎ তিনটি মু'জিযাহ্।
(رَأَيْتُهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) অর্থাৎ একই সফরে আমি রাসূল (সা.) থেকে তিনটি মু'জিযাহ্ লক্ষ্য করেছি।
(فَلَمَّا رَآهُ الْبَعِيرُ جَرْجَرَ) অর্থাৎ উটটি এমনভাবে আওয়াজ করল যে, তার গলা থেকে আওয়াজ বের হতে থাকল। যেমনটি উল্লেখ করেছেন কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)।
গাছ তার জায়গা থেকে সরে নবী (সা.) -এর নিকটে এসে তাকে সালাম জানিয়ে তার নিজের জায়গায় ফেরত গেল। এটা নবী (সা.)-এর বিরাট একটি মু'জিযাহ্ ছিল। যা দ্বারা আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছিলেন।
তারপর নবী (সা.) - মহিলার পাগল ছেলেটির নাকের ছিদ্র ধরে বললেন, তিনি হয়তো ঐ পাগল ছেলেকে অথবা তার ওপর যে জিন্ ভর করেছিল তাকে বললেন, আমি মুহাম্মাদ, অতএব তুমি বের হয়ে আসো। এরপর থেকে ছেলেটি সুস্থ হয়ে উঠেছিল। এটাও নবী (সা.) -এর একটি বিরাট মু'জিযাহ্ ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


দেখানো হচ্ছেঃ ৫৯০১ থেকে ৫৯২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৯৩৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 294 295 296 297 পরের পাতা »