৫৯১৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯১৭-[৫০] হুযায়ফাহ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। একদিন তিনি (সা.) বলেছেন: আমার সাহাবীদের মাঝে অপর এক বর্ণনাতে আছে, আমার উম্মতের মাঝে এমন বারোজন মুনাফিক রয়েছে, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও তারা পাবে না, যে পর্যন্ত না সুঁচের ছিদ্রের ভিতর উট প্রবেশ করে। তাদের আটজনকে পেটের ফোঁড়া ধ্বংস করবে। তা আগুনের একটি শিখা, যা তাদের ঘাড়ের মধ্যে সৃষ্টি হবে। এমনকি তা তাদের বুক বিদ্ধ করে বের হবে। (মুসলিম)

(গ্রন্থকার বলেন,) সাহল ইবনু সা’দ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا) “অবশ্যই আগামীকাল এই যুদ্ধের নিশানা বা পতাকা এমন এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিব” মানাকিবে ’আলী এবং জাবির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (مَنْ يَصْعَدُ الثَّنِيَّةَ) “কে সানিয়্যাহ্ উপত্যকায় আরোহণ করবে?” “জামিউল মানাকিব অধ্যায়ে” বর্ণনা করব ইনশা-আল্ল-হ।

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ حُذَيْفَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فِي أَصْحَابِي وَفِي رِوَايَة قا ل: فِي أُمَّتِي اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدُونَ رِيحَهَا حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سم الْخياط ثَمَانِيَة مِنْهُم تَكُ (فيهم الدُّبَيْلَةُ: سِرَاجٌ مِنْ نَارٍ يَظْهَرُ فِي أَكْتَافِهِمْ حَتَّى تَنْجُمَ فِي صُدُورِهِمْ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ: «لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا» فِي «بَابِ مَنَاقِبِ عَلِيٍّ» رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَحَدِيثَ جَابِرٍ «مَنْ يَصْعَدُ الثَّنِيَّةَ» فِي «بَابِ جَامِعِ الْمَنَاقِبِ» إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى

رواہ مسلم (10 ، 9 / 2779)، (7035 و 7036) 0 حدیث سھل بن سعد سیاتی (6080) و حدیث جابر یاتی (6220) ۔
(صَحِيح)

وعن حذيفة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال في اصحابي وفي رواية قا ل في امتي اثنا عشر منافقا لا يدخلون الجنة ولا يجدون ريحها حتى يلج الجمل في سم الخياط ثمانية منهم تك فيهم الدبيلة سراج من نار يظهر في اكتافهم حتى تنجم في صدورهم رواه مسلم وسنذكر حديث سهل بن سعد لاعطين هذه الراية غدا في باب مناقب علي رضي الله عنه وحديث جابر من يصعد الثنية في باب جامع المناقب ان شاء الله تعالىرواہ مسلم 10 9 2779 7035 و 7036 0 حدیث سھل بن سعد سیاتی 6080 و حدیث جابر یاتی 6220 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, (وَلَا يَجِدُونَ رِيحَهَا) অর্থাৎ তারা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার সুঘ্রাণ পাঁচশত বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়। হাদীসের পরের অংশে আরো বলা হয়েছে যে, তারা জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না যতক্ষণ না উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে। এ কথাটি বলা হয়েছে অসম্ভবতা বুঝানোর জন্য। যেমন- উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা অসম্ভব, ঠিক তেমন তাদের জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া অসম্ভব।
শায়খ তূরীবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আলোচনা করে বলেন, (فِىْ أَصْحَابِىْ اوأُمَّتِى) অর্থাৎ আমার সাহাবীদের মধ্যে অথবা তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে বারোজন মুনাফিক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) -এর সাহাবী হিসেবে শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তিদেরকেই গণ্য করা হবে যারা ঈমানসহ রাসূল (সা.)-কে দেখেছেন এবং তার ঈমান ছিল সত্য। পাশাপাশি তার ঈমানের সত্যতার আলামতও প্রকাশ পেয়েছে।
অতএব, ঐ সকল ব্যক্তিদেরকে প্রকৃত সাহাবী বলা যাবে না যারা ঈমান আনার ক্ষেত্রে সত্যবাদী নয় এবং তাদের ঈমানের সত্যতার আলামত প্রকাশও পায়নি। পাশাপাশি তারা তাদের ভিতর নিফাক্বী গোপন রেখেছে। তারপরেও ঐ শ্রেণির লোকেদেরকেও রাসূল (সা.) সাহাবী বলে উল্লেখ করেছেন বাহ্যিকভাবে প্রকৃত সাহাবীদের সাথে তাদের সাদৃশ্য থাকার কারণে।
এজন্যই রাসূল (সা.) সাহাবী বলে উল্লেখ করেছেন আমার সাহাবীদের মধ্যে। তিনি বলেননি আমার সাহাবীদের মধ্য থেকে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, (کَانَ مِنَ الۡجِنِّ) অর্থাৎ, “সে জিনদের মধ্য থেকে একজন ছিল”- (সূরাহ আল কাহফ ১৮: ৫০)।
অতএব শায়খ তূরীবিশতী (রহিমাহুল্লাহ)-এর সারকথা হলো যদি ‘আরবী (مِن) অব্যয় ব্যবহার করে বলা হয় তাহলে তাকে তাদের মধ্য থেকে কাউকে বুঝাবে। কিন্তু যদি ‘আরবী (فِىْ) অব্যয় ব্যবহার করা হয় তাহলে বুঝাবে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল মুনাফিকের ব্যাপারে জানতেন। কিন্তু তিনি সবার কথা সবাইকে বলেননি। তবে  কিছু মুনাফিকের কথা তিনি বলে দিয়েছেন যেন অন্য লোকেরা তাদের থেকে ঈমান গ্রহণ না করে এবং সাহাবীরা যেন তাদের থেকে ধোকাও না খায়।
তারপরেও অনেক সাহাবীদের কাছে মুনাফিকদের বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। আর সাহাবীদের মাঝে মুনাফিকদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জানতেন হুযায়ফাহ্ (রাঃ)। এর অন্যতম কারণ হলো, তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় যখন মুনাফিকরা রাসূল (সা.)-কে রাতে হত্যা করতে ইচ্ছা করল তখন সেখানে তার সাথে ছিলেন শুধুমাত্র দু’জন সাহাবী।
একজন হলেন ‘আম্মার (রাঃ) এবং আর অপরজন হলেন হুযায়ফাহ (রাঃ)। চলার পথে রাসূল (সা.) -এর একজন ঘোষক ঘোষণা দিলো যে, তোমরা উপত্যকার মাঝখান দিয়ে চলো। এটি তোমাদের জন্য প্রশস্ত পথ। আর রাসূল (সা.) সরুপথ দিয়ে চলছেন।
এদিকে মুনাফিকরা তার এ ঘোষণা শুনতে পেল। সাথে সাথে তারা তাদের মন্দ কাজ সাধন করতে লেগে গেল। তাদের মধ্য থেকে বারোজন লোক মুখোশ পরে রাসূল (সা.) -এর অনিষ্ট সাধন করার জন্য পিছু নিল। কিন্তু পিছন থেকে তিনি তাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-কে আদেশ করলেন। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) একটি লাঠি নিয়ে তাদের দিকে অগ্রসর হলেন এবং তা দিয়ে একটি আঘাত করলেন। এতে তাদের অন্তরে আল্লাহ ভয় সৃষ্টি করে দিলেন। তারপর তারা দ্রুত পিছন দিকে ফিরে গিয়ে লোকেদের সাথে মিশে গেল।
পরে যখন হুযায়ফাহ্ (রাঃ) রাসূল (সা.) -এর কাছে ফিরে আসলো তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাদের কাউকে কি তুমি চিনেছ? হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বললেন, না চিনিনি। কারণ তারা মুখোশ পরিহিত ছিল কিন্তু আমি তাদের বাহনগুলো চিনেছি। তারপর রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে তাদের নাম, তাদের পিতাদের নাম সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ চায় তো সকালে আমি তোমাকে তাদের নাম জানাব।
এজন্যই লোকেরা বলে যে, মুনাফিকদের ব্যাপারে সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জানেন হুযায়ফাহ্ (রাঃ)। পরবর্তীতে হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, সেই মুনাফিকদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দজন। কিন্তু পরে তাদের মধ্য থেকে দু’জন তাওবাহ্ করে সঠিক পথে ফিরে এসেছেন আর বাকী বারোজন নিফাকের উপরই রয়ে গেছে। এ বিষয়টি হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-কে কি রাসূল (সা.) নিজে জানিয়েছিলেন?
মিরকাত প্রণেতা বলেন, ঐ সকল মুনাফিকদের নাম আমি হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা থেকে জানতে পেরেছি। তবে সেই নামগুলো নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। তাই সেই নামগুলো আর আমি এখানে উল্লেখ করছি না।
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) তাকে সেই মুনাফিকদের ব্যাপারে জানিয়েছেন। আর তারা সেভাবেই ধ্বংস হয়েছে যেভাবে ধ্বংস হওয়ার কথা রাসূল (সা.) তাকে বলেছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)