পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭১-[১৭] ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক মহিলার সাথে জোরপূর্বক যিনা করা হয়েছিল, যিনার অভিযোগে জনৈকা নারীর ওপর দণ্ড ক্ষমা করে; কিন্তু পুরুষের ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন। তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীটির জন্য মোহর ধার্য করেছিলেন কিনা বর্ণনাকারী তা উল্লেখ করেননি। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: اسْتُكْرِهَتِ امْرَأَةٌ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَرَأَ عَنْهَا الْحَدَّ وَأَقَامَهُ عَلَى الَّذِي أَصَابَهَا وَلَمْ يُذْكَرْ أَنَّهُ جَعَلَ لَهَا مَهْرًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: মুযহির এবং ইবনু মালিক বলেনঃ এ হাদীস মোহর ওয়াজিব না এমনটি প্রমাণিত হয় না, কেননা অন্য হাদীস দ্বারা মোহর ওয়াজিব এটি প্রমাণিত হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৫৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৫৭২-[১৮] উক্ত রাবী [ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈকা মহিলা সালাতের উদ্দেশে বের হলো। এমন সময় এক ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক যিনা করলে মহিলাটির চিৎকারে পুরুষটি পালিয়ে যায়। তখন মুহাজিরদের একটি দল সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এরূপ এরূপ করেছে। তারা তখন ঐ লোকটিকে গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ মহিলাটিকে বললেন, চলে যাও আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর যে লোকটি মহিলাটির সাথে যিনা করেছিল। যিনাকারীর ব্যাপারে হুকুম করলেন, একে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, লোকটি এমনভাবে তওবা্ করেছে যদি মদীনার সকল লোক এরূপ তওবা্ করত, তাহলে তাদের সকলের পক্ষ থেকে তা কবুল করা হতো। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
وَعَنْهُ: أَنَّ امْرَأَةً خَرَجَتْ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُرِيدُ الصَّلَاةَ فَتَلَقَّاهَا رَجُلٌ فَتَجَلَّلَهَا فَقَضَى حَاجَتَهُ مِنْهَا فَصَاحَتْ وَانْطَلَقَ وَمَرَّتْ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ فَقَالَتْ: إِنَّ ذَلِكَ الرَّجُلَ فَعَلَ بِي كَذَا وَكَذَا فَأَخَذُوا الرَّجُلَ فَأَتَوْا بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهَا: «اذْهَبِي فَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكِ» وَقَالَ لِلرَّجُلِ الَّذِي وَقَعَ عَلَيْهَا: «ارْجُمُوهُ» وَقَالَ: «لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا أَهْلُ الْمَدِينَةِ لَقُبِلَ مِنْهُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (فَقَضٰى حَاجَتَه مِنْهَا) ‘‘তার প্রয়োজন পূরণ করেছে’’ শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তাকে ডেকে নিয়েছে এবং তার সাথে যিনা করেছে।
(اذْهَبِىْ فَقَدْ غَفَرَ اللّٰهُ لَكِ) তুমি চলে যাও আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন, কেননা তোমাকে জোর করে তথা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার সাথে এ আচরণ করা হয়েছে।
(لِلرَّجُلِ الَّذِىْ وَقَعَ عَلَيْهَا : ارْجُمُوْهُ) আর লোকটি যিনার কথা স্বীকার করেছে এবং তাকে রজম করার আদেশ দিয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যেহেতু সে বিবাহিত।
(لَقُبِلَ مِنْهُمْ) লোকটির তাওবার পরিমাণ এতো বেশি তা যদি মদীনাবাসীকে বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তা যথেষ্ট হতো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৬৭৩-[১৩] ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন সালামাহ্ ইবনু ইয়াযীদ আল জু’ফী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে কি নির্দেশ দেন, যদি আমাদের ওপর এমন শাসক চেপে বসে যারা আমাদের থেকে স্বীয় হক আদায় করে নেয়। অথচ তারা আমাদের প্রতি হক আদায় করে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাদের আদেশ মান্য করো এবং আনুগত্য করো। কেননা তাদের কর্তব্য তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। আর তোমাদের কর্তব্য তোমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: سَأَلَ سَلَمَةُ بْنُ يَزِيدَ الْجُعْفِيُّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ قَامَتْ عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسْأَلُونَا حَقَّهُمْ وَيَمْنَعُونَا حَقَّنَا فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: «اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রনায়ক বা শাসক ও সাধারণ মানুষ সকলের জন্য কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা বাস্তবায়ন বা পালন করা অপরিহার্য। শাসকের দায়িত্ব সাধারণ জনগণের ওপর ইনসাফ কায়িম করা, গনীমাতের মাল প্রদান করা ইত্যাদি। আর জনগণের দায়িত্ব হলো শাসকের কথা শ্রবণ করা এবং কথার আনুগত্য করা, বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা, শাসকের কাজে সহায়তা করা। সুতরাং উভয়ের জন্য জরুরী হলো তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা ও সীমালঙ্ঘন না করা।
এই মর্মে মহান আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ করেন : বলুন, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর তবে সৎ পথ পাবে। রসূলদের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌঁছে দেয়া।
উপরে উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, শাসকের ওপর আল্লাহ তা‘আলা যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা প্রতিষ্ঠা (বাস্তবায়ন) করা জরুরী। যেমন জনগণের মাঝে সমতা সৃষ্টি করা, আদল প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি যখন তারা এটা কায়িম করবে না তখন তাদের ওপর পাপ হবে। আর তোমাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যেমন কথা শোনা, আনুগত্য করা, অধিকার আদায় করা। যখন তোমরা এটা সম্পাদন করবে তখন তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সাওয়াব প্রদান করবেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৯৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৬২-[১৩] মুসলিম-এর উপর বর্ণনায় ওয়ায়িল ইবনু হুজর হতে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আঙ্গুরকে কার্ম বলো না; বরং عِنَبْ (’ইনাব) ও حَبَلَهْ (হাবালাহ্) বলো।[1]
بَابُ الْأَسَامِىْ
وَفِي
رِوَايَةٍ لَهُ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: لَا تَقُولُوا: الْكَرْمُ وَلَكِنْ قُولُوا: الْعِنَبُ والحبلة
ব্যাখ্যাঃ ‘আলকামাহ্ ইবনু ওয়ায়িল তার পিতা থেকে বর্ণিত হাদীস নিষেধ রয়েছে।
لَا تَقُولُوا الْكَرْمُ وَلَكِنْ قُولُوا الْعِنَبُ وَالْحَبَلَةُ
অর্থাৎ নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ‘কার্ম’ বলো না। বরং তোমরা আঙ্গুর বা আঙ্গুরের গাছ বলো। আর এটাই আসল কথা। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৪৮/১২)
পরিচ্ছেদঃ ১১৬. রাফ‘উল ইয়াদাইন (সালাতে দু’ হাত উত্তোলন)
৭২৬। ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি দেখাব। তিনি বলেন, (তা হচ্ছে এরূপঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে স্বীয় দু’ হাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করেন। তারপর ডান হাত দিয়ে স্বীয় বাম হাত ধরেন এবং রুকু’তে গমনকালে স্বীয় দু’ হাত তদ্রুপ উত্তোলন করেন। অতঃপর তিনি তাঁর উভয় হাতকে হাঁটুদ্বয়ের উপর রাখেন। রুকু’ হতে মাথা উত্তোলনের সময়ও তিনি উভয় হাত ঐভাবে উত্তোলন করেন। এরপর তিনি তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিলেন এবং বাম হাত বাম ঊরুর উপর এবং ডান হাত ডান ঊরুর উপর আলাদাভাবে রাখেন। অতঃপর তিনি তাঁর ডান হাতের কনিষ্ঠ ও অনামিকা অঙ্গুলিদ্বয় আবদ্ধ করে রাখেন এবং মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন। (বর্ণনাকারী বলেন), আমি তাকে এভাবে বলতে দেখেছি। আর বিশর নিজের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন।[1]
সহীহ।
باب رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ قُلْتُ لأَنْظُرَنَّ إِلَى صَلَاةِ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم كَيْفَ يُصَلِّي قَالَ فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَكَبَّرَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا أُذُنَيْهِ ثُمَّ أَخَذَ شِمَالَهُ بِيَمِينِهِ فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ رَفَعَهُمَا مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَهُمَا مِثْلَ ذَلِكَ فَلَمَّا سَجَدَ وَضَعَ رَأْسَهُ بِذَلِكَ الْمَنْزِلِ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ ثُمَّ جَلَسَ فَافْتَرَشَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَحَدَّ مِرْفَقَهُ الأَيْمَنَ عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَقَبَضَ ثِنْتَيْنِ وَحَلَّقَ حَلْقَةً وَرَأَيْتُهُ يَقُولُ هَكَذَا . وَحَلَّقَ بِشْرٌ الإِبْهَامَ وَالْوُسْطَى وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ
- صحيح
Narrated Wa'il ibn Hujr:
I purposely looked at the prayer of the Messenger of Allah (ﷺ), how he offered it. The Messenger of Allah (ﷺ) stood up, faced the direction of the qiblah and uttered the takbir (Allah is most great) and then raised his hands in front of his ears, then placed his right hand on his left (catching each other).
When he was about to bow, he raised them in the same manner. He then placed his hands on his knees. When he raised his head after bowing, he raised them in the like manner. When he prostrated himself he placed his forehead between his hands.
He then sat down and spread his left foot and placed his left hand on his left thigh, and kept his right elbow aloof from his right thigh. He closed his two fingers and made a circle (with the fingers).
I (Asim ibn Kulayb) saw him (Bishr ibn al-Mufaddal) say in this manner. Bishr made the circle with the thumb and the middle finger and pointed with the forefinger.
পরিচ্ছেদঃ ১১৬. রাফ‘উল ইয়াদাইন (সালাতে দু’ হাত উত্তোলন)
৭২৮। ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আরম্ভকালে স্বীয় দু’ হাত নিজের কান পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কয়েক দিন পর সেখানে গিয়ে দেখলাম, সাহাবীগণ সালাত আরম্ভকালে তাদের হাতগুলো বুক পর্যন্ত উঠাচ্ছেন। এ সময় তাঁদের শরীর কোট ও অন্যান্য কাপড়ে আবৃত ছিল।[1]
সহীহ।
باب رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حِيَالَ أُذُنَيْهِ - قَالَ - ثُمَّ أَتَيْتُهُمْ فَرَأَيْتُهُمْ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَى صُدُورِهُمْ فِي افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ وَعَلَيْهِمْ بَرَانِسُ وَأَكْسِيَةٌ
- صحيح
Narrated Wa'il ibn Hujr:
I witnessed the Prophet (ﷺ) raise his hands in front of his ears when he began to pray. I then came back and saw them (the people) raising their hands up to their chest when they began to pray. They wore long caps and blankets.
পরিচ্ছেদঃ ১১৭. সালাত শুরু করা সম্পর্কে
৭২৯। ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শীতের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে দেখলাম যে, তাঁর সাহাবীগণ সালাতরত অবস্থায় তাদের কাপড়ের ভিতর থেকে নিজ নিজ হাত উত্তোলন করছিলেন।[1]
সহীহ।
মাসআলাহঃ সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করা
(ক) রফ‘উল ইয়াদাইন এর অর্থ, নিয়ম ও সময় এবং তৎসম্পর্কিত প্রসিদ্ধ সহীহ হাদীসসমূহঃ
রফ‘উল ইয়াদাইন এর অর্থ হচ্ছে দু’ হাত উঁচু করা। হাদীসে রফ‘উল ইয়াদাইনের দু’টি নিয়ম বর্ণিত আছে। তা হলো, দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা কানের লতি বরাবর উঁচু করা। সালাত আদায়কালে চারটি সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতে হয়। (১) তাকবীরে তাহরীমার সময় (২) রুকু‘তে যাওয়ার সময় (৩) রুকু‘ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় (৪) তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে) প্রথম বৈঠক শেষে তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময়।
এ হিসেবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে তিন বার দু’ রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে পাঁচ বার, তিন রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে আট বার এবং চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতে মোট দশ বার রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, নাসায়ী আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও অন্যান্য) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুকাল পর্যন্ত আজীবন উল্লিখিত সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন এবং উক্ত নিয়মেই সালাত আদায় করেছেন।
এ বিষয়ে বর্ণিত অসংখ্য সহীহ হাদীসাবলী থেকে কয়েকটি প্রসিদ্ধতম হাদীস পেশ করা হলোঃ
(১) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন, এবং যখন তিনি রুকু‘র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন, আবার যখন রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এ রকম করতেন এবং সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। তবে তিনি সিজদার সময় এমন করতেন না। (দেখুন, সহীহুল বুখারী, ৭৩৪, ৭৩৫, অনুচ্ছেদ-তাকবীরে তাহরীমা, রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক, মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, ত্বাহাভী, দারাকুতনী, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, বায়হাক্বী, মুসান্নাফ ‘আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ, নাসবুর রায়াহ, তালখীসুল হাবীব, তিরমিযী, অনুচ্ছেদ- রুকু‘র সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ অনুচ্ছেদে আলী উমার ওয়াইল ইবনু হুজর, আনাস আবূ হুরাইরাহ, মালিক ইবনু হুওয়াইবিস, আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা‘দ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ, আবূ কাতাদাহ, আবূ মূসা আল আশ‘আরী, জাবির, উমাইর লাইসী (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়ি কিরামের সূত্রেও হাদীস বর্ণিত আছে)।
(২) উপরোক্ত হাদীসটি বায়হাক্বীতে বর্ধিতভাবে বর্ণিত আছে যে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদাই উক্ত নিয়মেই সালাত আদায় করতেন (অর্থাৎ তিনি আজীবন উক্ত তিন সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন)। (দেখুন, বায়হাক্বী, হিদায়াহ দিরায়াহ, ১/১১৪, ইমাম বুখারীর উস্তাদ ‘আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস আমার নিকটে সমস্ত উম্মাতের উপর হুজ্জাত বা দলীল স্বরূপ)।
(৩) ইবনু উমার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক‘আত শেষে তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন- (দেখুন, সহীহুল বুখারী)। ‘আলী (রাঃ) ও অন্যদের থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে- (দেখুন, জুযউল ক্বিরাআত)।
(৪) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন। একইভাবে তিনি রুকু‘তে যাওয়ার সময় কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময়ও কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন ও সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। (দেখুন, সহীহ মুসলিম, হা/ ৩৯১, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, ইরওয়া (২/৬৭, হাদীসটি সহীহ)।
(৫) ‘আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাকবীরে তাহরীমাহ সময়, রকু‘র সময় রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাক‘আত শেষে তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/৮০, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি হাসান সহীহ)।
(৬) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর দিয়ে সালাত আরম্ভ করে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু‘ করার সময় এবং রুকু‘র পরেও দু’ হাত উঁচু করলেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, আহমাদ, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি সহীহ)।
(৭) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শুরুর সময় রুকু করার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন। (দেখুন, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, হাদীসটি সহীহ)।
(৮) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর মধ্যে আবূ হুমাইদের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তাদের (আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা‘দ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ- (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণের) মধ্যে একজন আবূ কাতাদাহ ইবনু রব্য়ী (রাঃ)ও ছিলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি অবগত। তাঁরা বললেন, তা কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো আমাদের চেয়ে তাঁর অধিক নিকটবর্তী ও অধিক অনুসরণকারী ছিলেন না। তিনি বললেন, বরং আমি তো তাঁকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। তাঁরা বললেন, এবার তাহলে উল্লেখ করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন দু’ হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু‘ করতেন, রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন, এবং দু’ রাক‘আত শেষে তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়াতেন তখনও দু’ হাত উঁচু করতেন। এ বর্ণনা শুনে তাঁরা সকলেই বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি সহীহ)।
(৯) আবূ মূসা আল আশ‘আরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত দেখাবো? অতঃপর তিনি তাকবীর দিয়ে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু‘র জন্য তাকবীর দিয়ে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে দু’ হাত উঁচু করলেন। অতঃপর বললেন, এভাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন, অতএব তোমরাও করো। আর তিনি দু’ সিজদার মাঝে দু’ হাত উঁচু করেননি। (দেখুন, সহীহ সনদে দারাকুতনী ১/২৯২, বায়হাক্বী, হাদীসটি সহীহ)
(১০) আবূ বাকর সিদ্দিক (রাঃ) বরেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করেছি। তিনি যখন সালাত শুরু করতেন, তখন দু’ হাত উত্তোলন করতেন এবং যখন রুকু‘ করতেন ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও দু’ হাত উত্তোলন করতেন। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/৭৩, ৭৪, এবং ইমাম যাহাবীর শারহু মুহাযযাব ২/৪৯)।
(১১) আবূ যুবায়র সূত্রে বর্ণিত। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন দু’ হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু‘ করতেন ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ দু’ হাত উঁচু করতেন এবং তিনি বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবেই রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখেছি। (দেখুন, সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, হাদীসটি সহীহ)।
(১২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি সালাত শুরুর সময় রুকু‘র সময় এবং (রুকু‘ থেকে উঠে) সিজদাতে যাওয়ার সময় কাঁধ বরাবর দু’ হাত উঁচু করেছেন। (সহীহ সুনানে ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, ও অন্যান্য, হাদীসটি সহীহ)।
(১৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক তাকবীরে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন- (সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাঊদ, হাদীসটি সহীহ) একদা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে মায়মূন আল-মাক্বী বললেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (রাঃ)-কে সালাতের শুরুতে, রুকু‘র সময় সিজদার প্রাক্কালে এবং তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়ানোর সময় দু’ হাতে ইশারা (রফ‘উল ইয়াদাইন) করতে দেখেছি। এ কথা শুনে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত দেখতে পছন্দ করো তাহলে ইবনু জুবায়রের সালাতরে অনুকরণ করো। (হাদীসটি সহীহ, দেখুন, আবূ দাঊদ, ত্বাবারানী কাবীর ১১/১৩৩, ও অন্যান্য)
(খ) রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস ও আসারের সংখ্যা এবং সেসবের মান-
(১) রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত সর্বমোট সহীহ হাদীস ও আসারের সংখ্যা অন্যুন ৪০০। (দেখুন, সিফরুস সাআদাত, পৃঃ ১৫)।
(২) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীসসমূহের সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই। (দেখুন, ফাতহুল বারী ২/২৫৭)।
(৩) ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে বর্ণিত রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস মুতাওয়াতির পর্যায়ের। (দেখুন, তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১০০, ১০৬, দিরায়াতুল লাবীব, ১৬৯)।
(৪) হাদীসের অন্যতম ইমাম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস এতো বেশি যে, রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীসকে মুতাওয়াতির বলা ছাড়া উপায়ই নেই। (দেখুন, সুবকীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)।
(গ) রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের সংখ্যা-
* রুকু‘তে যাওয়া ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে চার খালীফাহ প্রায় ২৫ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ রয়েছে। (সালাতুল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃঃ ৬৫, হাদীস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)।
* আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম জাওযী (রহঃ) বলেন, তাকবীরে তাহরীমাহ রুকু‘র সময় ও রুকু থেকে উঠে এ তিন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন এ সম্পর্কে প্রায় ৩০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, যাদুল মা‘আদ)
* হাফিয ইবনু হাজার আসকালানীর উস্তাদ হাফিয আবূল ফাযল (রহঃ) রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর সংখ্যা তন্ন তন্ন করে খুঁজে মোট ৫০জন পেয়েছেন। (দেখুন, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৭, ফাতহুল বারী ২/২৫৮)।
* মুহাদ্দিস ইরাক্বী (রহঃ) তাঁর ফাতহুল মুগীস গ্রন্থে বলেন, আমি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস প্রায় ৫০জন সাহাবা থেকে একত্রিত করেছি। তিনি তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ গ্রন্থে বলেন, জেনে রাখো! সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস ৫০জন সাহাবায়ি কিরাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন, ফাতহুল মুগীস ৪/৮, কিতাবু তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ, পৃষ্ঠা ১৮)।
* মূলতঃ অসংখ্য সাহাবায়ি কিরাম রফ‘উল ইয়াদাইনে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে হাদীসের অন্যতম ইমাম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) স্বীয় ‘জুযঊ রফ‘উল ইয়াদাইন’ গ্রন্থে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবী সহ এমন ৪৯জন বিশিষ্ট সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন যাঁরা সকলেই রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তাঁদের নামসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
(১) আবূ বাকর সিদ্দিক (রাঃ), (২) উমার (রাঃ), (৩) ‘উসমান (রাঃ), (৪) ‘আলী (রাঃ), (৫) তালহা (রাঃ), (৬) যুবায়র (রাঃ), (৭) সা‘দ (রাঃ), (৮) সাঈদ (রাঃ), (৯) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ), (১০), আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ), (১১) মালিক ইবনু হুওয়াই রিস (রাঃ), (১২) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ), (১৩) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ), (১৪) আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ), (১৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), (১৬) ইমাম হাসান (রাঃ), (১৭) ইমাম হুসাইন (রাঃ), (১৮) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ), (১৯) যিয়াদ ইবনু হারিস (রাঃ), (২০) আবূ কাতাদাহ (রাঃ), (২১) হাসান ইবনু সাআদ (রাঃ), (২২) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ), (২৩) সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রাঃ), (২৪) ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ), (২৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ), (২৬) ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ), (২৭) বারিয়াহ (রাঃ), (২৮) ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ), (২৯) ‘আদী ইবনু ‘আজলান (রাঃ), (৩০) আবূ মাস‘উদ আল-আনসারী (রাঃ), (৩১) ‘উমার লাইসী (রাঃ), (৩২) ‘আয়িশাহ (রাঃ), (৩৩) আবুদ দারদা (রাঃ), (৩৪) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ), (৩৫) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ), (৩৬) আনাস (রাঃ), (৩৭) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ), (৩৮) জাবির (রাঃ), (৩৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (রাঃ), (৪০) আবূ হুমাইদ সাঈদী (রাঃ), (৪১) আবূ সাঈদ (রাঃ), (৪২) মুহাম্মাদ ইবনু সালামাহ (রাঃ), (৪৩) উম্মু দারদা (রাঃ), (৪৪) আরাবী (রাঃ), (৪৫) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ), (৪৬) সালমান ফারিসি (রাঃ), (৪৭) বারিরাহ ইবনু খাদির (রাঃ), (৪৮) হাকিম ইবনু ‘উমাইর (রাঃ), (৪৯) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু জাবিন (রাঃ)। উল্লিখিত সমস্ত সাহাবায়ি কিরামই রফ‘ঊল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, জুযয়ি সুবকী, পৃঃ ৭)।
(ঘ) রফ‘উল ইয়াদাইনের উপর সমস্ত সাহাবায়ি কিরামের ‘আমল ও ফাতাওয়াহ-
সাহাবায়ি কিরাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেই ক্ষ্যান্ত হননি বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে সমস্ত সাহাবীগণও সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। তার প্রমাণঃ
(১) ‘আলী (রাঃ)-এর পুত্র হাসান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের সকলেই রুকু‘তে যাওয়ার সময়, এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, বায়হাক্বী ২/৭৫)।
(২) সা‘দ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমস্ত সাহাবীই সালাত শুরুর সময়, রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/৭৫)।
(৩) ইমাম বুখারী বলেন, ইমাম হাসান (রাঃ) ও হুমাইদ ইবনু হিলাল বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমস্ত সাহাবীগণ রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। তাঁর কোনো সাহাবী রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন না বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত)।
(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার সাহাবী ছিলেন। তাঁদের সম্পর্কে সহীহুল বুখারীর শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, একমাত্র ইবনু মাস‘ঊদ ছাড়া বাকী সমস্ত সাহাবায়ি কিরাম রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী ২/২১৯)।
(৫) ইমাম হাকিম (রহঃ) বলেন, রফ‘উল ইয়াদইন ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন কোনো সুন্নাতের কথা আমরা জানি না যে ব্যাপারে খুলাফায়ি রাশিদীন, আশারায়ি মুবাশশিরীন এবং বিভিন্ন শহরে অবস্থানকারী বচড় বড় সাহাবীগণ একমত হয়েছেন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ ১/৪১৬-৪১৮, তালখীসুল হাবীর, পৃঃ ৮২, নায়লুল ফারকাদাইন, পৃঃ ২৬, ইমাম যায়লায়ী হানাফী, আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) ও অন্যান্যরা একে ইমাম হাকিম সূত্রে বর্ণনা করেছেন)।
(ঙ) সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে ৫৩জন বিশিষ্ট তাবিঈ ও তাবে তাবিঈন ইমামগণ-
ইমাম বুখারী, ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম তাক্বীউদ্দীন সুবকী (রহঃ) ৫৩ জন এমন বিশিষ্ট তাবেঈ এবং তাবে তাবেঈনের নাম উল্লেখ করেছেন- যাঁরা সালাত আদায়কালে সর্বদা তিন জায়গায় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। উক্ত ৫৩ জন হলেনঃ
(১) সা‘দ ইবনু জুবায়র (২) ‘আত্বা ইবনু আবূ রিবাহ (৩) মুজাহিদ (৪) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (৫) সালিম ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (৬) ‘উমার ইবনু ‘আবদুল আযীয (৭) নু‘মান ইবনু আবুল আয়াশ (৮) ইবনু সিরীন (৯) হাসান বাসরী (১০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (১১) নাফি‘ (১২) হাসান ইবনু মুসলিম (১৩) ক্বায়িস ইবনু সা‘দ (১৪) মাকহুল (১৫) তাউস (১৬) আবূ নাজরাহ (১৭) আবূ আহমাদ (১৮) ইবনু আবূ নাজীহ (১৯) ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াহ (২০) ইমাম আওযায়ী (২১) ইসমাঈল (২২) ইসহাক্ব ইবনু ইবরাহীম (২৩) ইবনু মুঈন (২৪) আবূ ‘উবাইদাহ (২৫) আবূ সাত্তার (২৬) হুমাইদী (২৭) ইমাম ইবনু জারীর (২৮) হাসান ইবনু জা‘ফর (২৯) সালিম ইবনু ‘আবদুল আযীয (৩০) ‘আলী ইবনু হুসাইন (৩১) ‘আবদ ইবনু ‘উমার (৩২) ঈসা ইবনু মুসা (৩৩) ‘আলী ইবনু হাসান (৩৪) কাতাদাহ (৩৫) ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (৩৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উসমান (৩৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (৩৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (৩৯) ‘আলী ইবনু মাদীনী (৪০) ‘আবদুর রাহমান (৪১) মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (৪২) মু‘তামির (৪৩) কা‘ব ইবনু সা‘দ (৪৪) কা‘ব ইবনু সাঈদ (৪৫) ইয়াহইয়া (৪৬) ইয়াহইয়া ইবনু মুঈন (৪৭) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (৪৮) ইয়াকূব (৪৯) ইবনু মুবারক (৫০) ইমাম যুহরী (৫১) মালিক ইবনু আনাস (৫২) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (৫৩) এবং ইমাম শাফিঈ (রহঃ)। উল্লিখিত ৫৩ জন বিশিষ্ট তাবেঈ ও তাবে‘ তাবেঈন রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় দু’ হাত উত্তোলন করতেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, বায়হাক্বী ২/৭৫, সুবকীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, পৃঃ ২ এবং আয়নী ৩/১০)।
(চ) রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে জমহুর মুহাদ্দিস, জমহুর ফাক্বীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণের অভিমত-
(১) ইমাম বুখারী ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)- মক্কাহ, মদীনাহ, হিজাজ, ইয়ামান, সিরিয়া, ইরাক, বাসরাহ, খুরাসান প্রভৃতি দেশের লোকেরা সকলেই রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত)।
অসংখ্য সহীহ হাদীস ও আসার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যারা রফ‘উল ইয়াদাইন করেন না তাদের বিরুদ্ধে ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘জুযউল রফ‘উল ইয়াদাইন’ নামে একটি স্বতন্ত্র কিতাবই রচনা করেছেন এবং সেখানে এর পক্ষে ১৯৮টি দলীল বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে হাদীসে অন্যতম হাফিয তাকিউদ্দিন সুবকী (রহঃ)ও রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে ‘জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন’ নামে একখানা স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। সুতরাং মুহাদ্দিসগণের নিকট রফ‘উল ইয়াদাইন যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত তা সহজেই অনুমেয়।
(২) ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) তার সহীহ ইবনু হিব্বান গ্রন্থে রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করে বলেন, উল্লিখিত হাদীস এটাই প্রমাণ করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে সালাতের রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি মালিক ইবনু হুয়াইরিস বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সেভাবে সালাত আদায় করো যেভাবে তোমরা আমাকে আদায় করতে দেখো। (দেখুন, সহীহ ইবনু হিববান, ৫/১৯০)।
(৩) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক বলেছেন, রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কিত হাদীস সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রমাণিত। কিন্তু ইবনু মাসঊদ যে বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবার (তাক্ববীরে তাহরীমা) ছাড়া আর কোথাও রফ‘উল ইয়াদাইন করেননি- এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং প্রতিষ্ঠিতও নয়। (দেখুন, জামি‘আত তিরমিযী, অনুঃ রফ‘উল ইয়াদাইন প্রসঙ্গ)। ইবনু মুবারাক আরো বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস ও ইসনাদ বিদ্যমান থাকার কারণে আমি যেন দেখতে পাচ্ছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন। (দেখুন, বায়হাক্বী মা‘রিফাহ ২/১৪২)
(৪) ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু নাসর (মৃতঃ ২৯৪ হিঃ) বলেনঃ রফ‘উল ইয়াদাইন করার পক্ষে প্রায়ই সকল দেশের আলিমগণের অভিমত আছে। একমাত্র কুফার একটি গ্রুপ ছাড়া বাকী সবাই রফ‘উল ইয়াদাইন করেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী)
(৫) ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহীহ হাদীসসমূহ মূলে মুসলিমদের উপর ইসলামের হাক্ব হচ্ছে সালাতের রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা।
(৬) ইবনু আবদুল বার (রহঃ) বলেনঃ (সমস্ত সাহাবায়ি কিরামের বিপরীতে) একমাত্র ইবনু মাসঊদই রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন না করার কথা বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী)।
(৭) শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ) বলেনঃ রফ‘উল ইয়াদাইন এমনই নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ি কিরাম ও পরবর্তী সমস্ত স্তরের শ্রেষ্ঠতম ইমাম ও মুজতাহিদগণ দ্বারা সর্বোতভাবে সাব্যস্ত ও সমর্থিত হয়েছে যে, একে রহিত বা পরস্পর বিরোধ দোষে দুষ্ট বলা অবান্তর ও অবাস্তব। (দেখুন, রওজাতুন নাদিয়া, ১/৯৬)।
(৮) হাফিয ইবনু কাইয়্যিম আল জাওযী (রহঃ) বলেনঃ সালাতের রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাঠা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন না করা সম্পর্কে যতগুলো হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বলে রয়েছে তার সবই বাতিল। এগুলোর একটি সঠিক নয়। যেমন ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদের হাদীস, যা তিনি শেষ দিকে বলেছেন বরং বায়হাক্বী খিলাফিয়াত গ্রন্থে সনদ সহকারে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে রুকু‘র সময় রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (দেখুন- আল-মানার, পৃষ্ঠা ৪৯)।
তিনি আরো বলেন, তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে প্রায় ত্রিশজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর বিপরীত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মৃত্যু পর্যন্ত সারা জীবন তিনি এ নিয়মেই সালাত আদায় করেছেন। আর বারাআ ইবনু ‘আযিব থেকে বর্ণিত এ সংক্রান্ত হাদীসটি সহীহ নয়। মূলতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এ নিয়ম পরিত্যাগ করেননি এবং এর থেকে প্রত্যাবর্তনও করেননি। আর ইবনু মাস‘ঊদের রফ‘উল ইয়াদাইন ত্যাগ করাটা এজন্য ছিলো না যে, তিনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জানতে পেরেছেন...। অথচ (শেষ বয়সে) ইবনু মাসঊদের রফ‘উল ইয়াদাইন না করার নিয়মের বিপরীতে রয়েছে বিপুল সংখ্যক সহীহ হাদীস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে এতোগুলো সহীহ, অকাট্য ও সুপ্রমাণিত ‘আমলী হাদীস বর্তমান থাকা সত্ত্বেও কী করে তা বর্জন করা যেতে পারে? এমনটি অকল্পনীয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মনীতি অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন- আমীন। (দেখুন, যাদুল মাআদ)।
(৯) আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেনঃ রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা মুতাওয়াতির সূত্রে সাব্যস্ত। এটাই হচ্ছে ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহগণের অভিমত। ইবনু আসাকীরের বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মালিক এর উপরই মারা গেছেন। হানাফীদের অনেকেই এ মত গ্রহণ করেছেন। (দেখুন, সিফাতু সালাতুন নাবী)
(১০) শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেনঃ জেনে নেয়া আবশ্যক যে, সালাতে চারটি স্থানে রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। তা হচ্ছেঃ ১) সালাতের প্রারম্ভে তাকবীর তাহরীমা বলার সময় ২) রুকু‘তে যাওয়ার সময় ৩) রুকু‘ থেকে উঠার সময় ৪) প্রথম তাশাহুদ শেষ করে তৃতীয় রাক‘আতে উঠার সময়। এ চারটি স্থানের বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা এসেছে। আর জানাযা ও দু’ ঈদের সালাতে প্রত্যেক তাকবীরে রফ‘উল ইয়াদাইনবা হাত উত্তোলন করা শারী‘আত সম্মত। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম)।
(১১) স‘উদী আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শায়খ আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেনঃ মুসল্লীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, সে তাকবীরে তাহরীমাহ সময়, রুকু‘কালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং প্রথম তাশাহহুদ শেষে তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়ানোর সময় উভয় কাঁধ বা কান বরাবর ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে দু’ হাত উত্তোলন করবে। এটাই সুন্নাত, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে প্রমাণিত। (দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায)।
(চ) রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ আলিমগণের অভিমত-
(১) মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ সালাতে রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত না তোলা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়। (দেখুন, মাওযু‘আতে কাবীর, পৃঃ ১১০)।
(২) হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) রুকু‘তে যাওয়ার পূর্বে রফ‘উল ইয়াদাইন করার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইমাম আবূ হানিফা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (দেখুন, ‘উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭২)।
(৩) শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যে মুসল্লী রফ‘উল ইয়াদাইন করে ঐ মুসল্লী আমার কাছে অধিক প্রিয় সেই মুসল্লীর চেয়ে যে রফ‘উল ইয়াদাইন করে না। কারণ রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীসগুলো সংখ্যায় বেশি এবং অধিকতর মজবুত। (দেখুন, হুজ্জাতুল্লাহলিল বালিগাহ ২/১০)।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) আরো বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন হচ্ছে সম্মান সূচক কর্ম। যা মুসল্লীকে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার ব্যাপারে এবং সালাতে হওয়ার ব্যাপারে হুশিয়ার করে দেয়। (দেখুন, হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগাহ ২/১০)।
(৪) আল্লামা আবুল হাসান সিন্ধী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যারা এ কথা বলে যে, তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবঙ রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত তোলার হাদীস মানসুখ ও রহিত তাদের ঐ দাবী দলীলবিহীন এবং ভিত্তিহীন। (দেখুন, শারহু সুনানে ইবনু মাজাহ, মিসরের ছাপা ১খন্ড ১৪৬ পৃঃ টিকা)।
(৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ এ কথা জানা উচিত যে, সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস সূত্র ও আমলের দিক দিয়ে মুতাওয়াতির, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এটা মানসুখও নয় এবং এর একটি হরফও নাকচ নয়। (দেখুন, নাইলুল ফারকাদাইন, পৃষ্ঠা ২২, রসূলে আকরাম কী নামায, পৃঃ ৬৯)।
(৬) আল্লামা আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে রফ‘উল ইয়াদাইন করার প্রমাণ বেশি এবং প্রাধান্যযোগ্য। আর এটা মানসূখ বা নাকচ হবার দাবী যা ত্বাহাভী, ইবনুল হারাম ও আইনী প্রমুখ আমাদের দলের মনীষীদের পক্ষ থেকে প্রচারিত হয়েছে, তা এমনই প্রমাণহীন যে তদ্বারা রোগী নিরোগ হয় না এবং পিপাসার্তও তৃপ্ত হয় না। (দেখুন, আত-তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ, পৃষ্ঠা ৯১)।
তিনি আরো বলেন, রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনেক সাহাবী (রাঃ) থেকে দৃঢ় সূত্রে ও সহীহ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত ও সাব্যস্ত হয়েছে। (দেখুন, সিফরুস সাআদাত, মালাবুদ্দাহ মিনহু, রওযাতুন নাদিয়্যাহ ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ)।
(৭) ইমাম মুহাম্মাদের সাথী ও ইমাম আবূ ইউসুফের শিষ্য ইসাম ইবনু ইউসুফ আল বালাখী (রহঃ)-এর রফ‘উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে আল্লামা আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ইসাম ইবনু ইউসুফ ছিলেন ইমাম আবূ ইউসুফের সাগরীত এবং হানাফী। তিনি রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রকু‘ থেকে মাথা উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন- (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফীয়া, পৃঃ ১১৬)। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (রহঃ) সুফয়ান সওরী এবং শু‘বাহ (রহঃ) বলেন, ইসাম ইবনু ইউসুফ মুহাদ্দিস ছিলেন। সেজন্য তিনি রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ, পৃঃ ১১৬)।
(৮) শায়খ আবুত ত্বালীব মাক্কী হানাফী (রহঃ) তার ‘কুতুল কুলূব’ গ্রন্থে সালাতের সুন্নাতসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রুকু‘তে যাওয়ার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা ও তাকবীর বলা সুন্নাত। তারপর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ’ বলে রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (দেখুন কুতুল কুলুব ৩/১৩৯)।
(৯) ক্বাজী সানাউল্লাহ পানিপত্তি হানাফী (রহঃ) বলেনঃ বর্তমান সময়ে অধিকাংশ আলিমের দৃষ্টিতে রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। অধিকাংশ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসসিনে কিরাম একে প্রমাণ করেছেন। (দেখুন, মালাবুদ্দাহ মিনহু, পৃঃ ৪২, ৪৪)।
(১০) শায়খ আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী (রহঃ) সালাতের সুন্নাতসমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ সালাত শুরু করার সময়, রুকু‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (দেখুন, গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, পৃঃ ১০)।
(১১) দ্বিতীয় আবূ হানীফা নামে খ্যাত আল্লামা ইবনু নুজাইম (রহঃ) বলেনঃ রুকু‘তে যাওয়ার সময় ও রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করলে সালাত বরবাদ হওয়া কথা যা মাকহুল নাসাফী ইমাম আবূ হানীফা থেকে বর্ণনা করেছেন তা বীরল বর্ণনা, যার রিওয়ায়াত ও দিরায়াত উভয়েরই পরিপন্থি অর্থাৎ বর্ণনা সূত্র তোঃ ও জ্ঞানত্যঃ ঠিক না। (দেখুন, বাহরু রায়িক ১/৩১৫, যাহরাতু রিয়াযুল আবরার, পৃঃ ৮৯)।
(১২) দেওবন্দের শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেনঃ রফ‘উল ইয়াদাইন মানসূখ নয়। আর এর স্থায়িত্ব প্রমাণিত নয়- (দেখুন, ইযাহুল আদিল্লাহ)। ইতোপূর্বে ইমাম যায়লায়ী হানাফীর বরাত দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, এর স্থায়িত প্রমাণিত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত আজীবন রফ‘উল ইয়াদাইন করেছিলেন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ তাখরীজ আহাদিসিল হিদায়াহ ১/৪১০)।
(১৩) মুফতী আমিমুল ইহসান লিখেছেনঃ যারা বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস মানসূখ- আমি বলি তাদের একটি মাত্র দলীল (অর্থাৎ ইবনু মাসঊদের হাদীস), দ্বিতীয় কোনো দলীল নেই। (দেখুন, ফিক্বহুস সুন্নাহ ওয়াল আসার, পৃঃ ৫৫)।
[উল্লেখ্য, ইবনু মাসঊদের উক্ত হাদীসটি বিশুদ্ধতা নিয়ে মুহাদ্দিসগণ মতভেদ করেছেন। কতক মুহাদ্দিস সেটিকে হাসান বা সহীহ আখ্যায়িত করলেও অধিকাংশ মুহাদ্দিসিনে কিরাম ইবনু মাসঊদের বর্ণনাকে দুর্বল, বাতিল এবং দলীলের অযোগ্য বলেছেন। সামনে ৭৪৮৯নং হাদীসের টিকায় এর আলোচনা আসছে]
(১৪) হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ গ্রন্থাবলীতেও রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষে বক্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যকার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
(ক) রুকু‘র পূর্বে ও পরে রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস প্রমাণিত আছে। দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৪, নুরুল হিদায়া)
(খ) রফ‘উল ইয়াদাইন করার হাদীস রফ‘উল ইয়াদাইন না করার হাদীসের চেয়ে শক্তিশালী ও মজবুত। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৯)।
(গ) বায়হাক্বীর হাদীসে আছে, ইবনু উমার বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত সালাতের মধ্যে রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৬)।
(ঘ) রফ‘উল ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। (দেখুন, নুরুল হিদায়া, পৃঃ ১০২)
(ঙ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রফ‘উল ইয়াদাইন প্রমাণিত আছে এবং এটাই হাক্ব। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৬)।
মূলতঃ হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমাম ও মুহাক্কিক আলিমগণসহ ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল ও তাদের সমস্ত অনুগামী ও আলেমগণ এবং প্রায় সমস্ত ফুকাহায়ি মুহাদ্দিসিন সালাতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়াও রুকু‘র আগে, রুকু‘র পরে এবং তৃতীয় রাক‘আতের প্রারম্ভে কাঁধ বা কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠানোর পক্ষে অভিমত পোষণ করেছেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি সালাতে চারটি স্থানে রফ‘উল ইয়াদাইন করার পক্ষে এমন একটা সামগ্রিক ও বলিষ্ঠ সমর্থনকে হেয় বা লঘু করে দেখা অবান্তর ও নিন্দনীয় সংকীর্ণতা নয় কি? অতএব এরূপ সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ সুন্নাত কি করে বর্জন করা যায়?! এমনটি অকল্পনীয়।
(ছ) রফ‘উল ইয়াদাইন এর গুরুত্ব ও ফাযীলাত-
(১) মালিক বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) কোনো ব্যক্তিকে সালাতে রুকু‘র সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন না করতে দেখলে তাকে ছোট পাথর ছুড়ে মারতেন, যতক্ষণ না সে রফ‘উল ইয়াদাইন করে। (দেখুন, বুখারীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, আহমাদ, দারাকুতনী-নাফি‘ থেকে সহীহ সনদে)
(২) উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করে তার জন্য রয়েছে প্রত্যেক ইশারার বিনিময়ে দশটি করে নেকী। (দেখুন, বায়হাক্বীর মা‘রিফাত ১/২২৫, মাসায়িলে আহমাদ কানজুল উম্মাল)
(৩) ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন হচ্ছে সালাতের সৌন্দর্যের একটি শোভা। প্রত্যেক রফ‘উল ইয়াদাইন এর বদলে দশটি করে নেকী রয়েছে, অর্থাৎ প্রত্যেক আঙ্গুলের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে নেকী। (দেখুন, আল্লামা আইনী হানাফীর উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭২)। এতে প্রমাণিত হয়, রফ‘উল ইয়াদাইন করার কারণে দু’ রাক‘আত সালাতে পঞ্চাশ ও আর চার রাক‘আত সালাতে ১০০টি নেকী বেশি পাওয়া যায়। এ হিসেবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের রাক‘আত ফারয সালাতে ৪৩০টি নেকী, একমাসে বারো ১২,৯০০টি আর এক বছরে ১,৫৪৮০০ (এক লক্ষ চুয়ান্ন হাজার) নেকী শুধু রফ‘উল ইয়াদাইন করার জন্য বাড়তি যোগ হচ্ছে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার কারণে ৩০ বছরে ৪৬,৪৪০০০ নেকী আর ৬৫ বছরে ১০০৬২০০০ (এক কোটি বাষট্টি হাজার নেকী বেশি পাচ্ছেন)। এ হিসাব শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফারয সালাতে। এছাড়া সুন্নাত নাফল বিতর তাহাজ্জুত তারাবী প্রভৃতি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করার নেকী তো রয়েছেই, যা এই হিসাব অনুপাতেই পাওয়া যাবে। সুতরাং যারা ফারয, সুন্নাত, নাফল প্রভৃতি সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করেন না তারা কতগুলো নেকী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা কি ভেবে দেখেছেন? অথচ ক্বিয়ামাতের দিন মানুষ হাশরের ময়দানে একটি নেকী কম হওয়ার কারণে জান্নাতে যেতে পারে না!
باب افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الأَنْبَارِيُّ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ شَرِيكٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم فِي الشِّتَاءِ فَرَأَيْتُ أَصْحَابَهُ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ فِي ثِيَابِهِمْ فِي الصَّلَاةِ .
- صحيح
Wa’il b. Hujr said:
I came to the Prophet(ﷺ) during winter; I saw his companions raise their hands in their clothes in prayer.
পরিচ্ছেদঃ ১৪১. সিজদার সময় হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখা প্রসঙ্গে
৮৩৮। ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে সিজদায় গমনকালে (জমিনে) হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখতেন এবং এবং সিজদা্ হতে দাঁড়ানোর সময় হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন।[1]
দুর্বল।
بَابُ كَيْفَ يَضَعُ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، وَحُسَيْنُ بْنُ عِيسَى، قَالَا: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ:رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم إِذَا سَجَدَ وَضَعَ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ، وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ
- ضعيف
Narrated Wa'il ibn Hujr:
I saw that the Prophet (ﷺ) placed his knees (on the ground) before placing his hands when he prostrated himself. And when he stood up, he raised his hands before his knees.
পরিচ্ছেদঃ ১৭২. ইমামের পিছনে আমীন বলা প্রসঙ্গে
৯৩২। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ’’ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’’ পড়তেন তখন তিনি সশব্দে আমীন বলতেন।[1]
সহীহ।
-
হাদীস থেকে শিক্ষা :
জেহরী ক্বিরাআতের সালাতে সূরাহ ফাতিহা শেষে ইমাম সশব্দে আমীন বলবে।
باب التَّأْمِينِ وَرَاءَ الإِمَامِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سَلَمَةَ، عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَرَأَ (وَلَا الضَّالِّينَ) قَالَ " آمِينَ " . وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ .
- صحيح
Narrated Wa'il ibn Hujr:
When the Messenger of Allah (ﷺ) recited the verse "Nor of those who go astray" (Surah al-Fatihah, verse 7), he would say Amin; and raised his voice (while uttering this word).
পরিচ্ছেদঃ ১৭২. ইমামের পিছনে আমীন বলা প্রসঙ্গে
৯৩৩। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। তাতে তিনি সশব্দে ’’আমীন’’ বলেছেন। তিনি ডানে ও বামে এভাবে সালাম ফিরিয়েছেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখেছি।[1]
হাসান সহীহ।
باب التَّأْمِينِ وَرَاءَ الإِمَامِ
حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ خَالِدٍ الشَّعِيرِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، أَنَّهُ صَلَّى خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَجَهَرَ بِآمِينَ وَسَلَّمَ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ خَدِّهِ .
- حسن صحيح
Wail b, hujr said that he prayed behind the Messenger of Allah (ﷺ),and he said Amin loudly and saluted at his right and left sides until I saw the whiteness of his cheek.
পরিচ্ছেদঃ ১৮০. তাশাহহুদের বৈঠকে বসার নিয়ম
৯৫৭। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি (মনে মনে) বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে সালাত আদায় করেন আমি তা অবশ্যই দেখবো। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়িয়ে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হমূখী হয়ে তাকবীর বলে দুই হাত কান বরাবর উত্তোলন করলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাত আঁকড়ে ধরলেন। তারপর যখন রুকূ’তে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন তখনও অনুরূপভাবে দু’ হাত উত্তোলন করলেন। বর্ণনাকারী (ওয়াইল ইবনু হুজর) বলেন, অতঃপর তিনি বাম পা বিছিয়ে বসলেন, বাম হাত বাম ঊরুর উপর রাখলেন এবং ডান কনুই ডান ঊরু হতে পৃথক রাখলেন। তারপর দু’ আঙ্গুল গুটিয়ে বৃত্তাকার করলেন এবং তাঁকে আমি এভাবেই বলতে দেখলাম। বর্ণনাকারী বিশর (রহঃ) বৃদ্ধাংগুলিকে মধ্যমার সাথে মিলিয়ে বৃত্ত করলেন এবং শাহাদাত অংগুলি দ্বারা ইশারা করে দেখালেন।[1]
সহীহ।
باب كَيْفَ الْجُلُوسُ فِي التَّشَهُّدِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ قُلْتُ لأَنْظُرَنَّ إِلَى صَلَاةِ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم كَيْفَ يُصَلِّي فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَكَبَّرَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا بِأُذُنَيْهِ ثُمَّ أَخَذَ شِمَالَهُ بِيَمِينِهِ فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ رَفَعَهُمَا مِثْلَ ذَلِكَ - قَالَ - ثُمَّ جَلَسَ فَافْتَرَشَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَحَدَّ مِرْفَقَهُ الأَيْمَنَ عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَقَبَضَ ثِنْتَيْنِ وَحَلَّقَ حَلَقَةً وَرَأَيْتُهُ يَقُولُ هَكَذَا وَحَلَّقَ بِشْرٌ الإِبْهَامَ وَالْوُسْطَى وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ .
- صحيح مضى ب سنده و متنه (٧٢٦)
Narrated Wa'il ibn Hujr:
I said that I should look at the prayer of the Messenger of Allah (ﷺ) how he prays. The Messenger of Allah (ﷺ) stood up and faced the qiblah (i.e. the direction of Ka'bah) and uttered the takbir (Allah is most great); then he raised his hands till he brought them in front of his ears; then he caught hold of his left hand with his right hand (i.e. folded his hands).
When he was about to bow, he raised them (his hands) in a like manner. Then he sat, stretched out his left foot (to sit on it), placed his left hand on his left thigh, and kept away the tip of his right elbow from his right thigh, joined two fingers, formed a ring, to do so. And the narrator Bishr made a ring with the thumb and the middle finger.
পরিচ্ছেদঃ ৩৬. কাউকে জায়গীর হিসাবে জমি দেয়া
৩০৫৮। ওয়াইল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হাদরামাওত এলাকায় এখ খন্ড জমি জায়গীর হিসাবে দিয়েছেন।[1]
بَابٌ فِي إِقْطَاعِ الْأَرَضِينَ
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مَرْزُوقٍ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقْطَعَهُ أَرْضًا بِحَضْرَمُوتَ
صحيح، الترمذي (١٤١٢)
Narrated Alqamah ibn Wa'il:
The Prophet (ﷺ) bestowed land in Hadramawt as fief.
পরিচ্ছেদঃ ১১. চুল লম্বা করা সম্পর্কে
৪১৯০। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসতাম। আমার মাথায় লম্বা চুল ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে বললেনঃ মাছি, মাছি। তিনি বলেন, আমি ফিরে এসে চুল কেটে ফেললাম। পরদিন সকালে আমি তাঁর নিকট গেলে তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাকে কষ্ট দেইনি। আর এরূপ (চুল) খুবই চমৎকার![1]
সহীহ।
بَابٌ فِي تَطْوِيلِ الْجُمَّةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ، وَسُفْيَانُ بْنُ عُقْبَةَ السُّوَائِيُّ هُوَ أَخُو قَبِيصَةَ - وَحُمَيْدُ بْنُ خُوَارٍ، عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِي شَعْرٌ طَوِيلٌ، فَلَمَّا رَآنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ذُبَابٌ ذُبَابٌ قَالَ: فَرَجَعْتُ فَجَزَزْتُهُ، ثُمَّ أَتَيْتُهُ مِنَ الْغَدِ، فَقَالَ: إِنِّي لَمْ أَعْنِكَ، وَهَذَا أَحْسَنُ
صحيح
Narrated Wa'il ibn Hujr:
I came to the Prophet (ﷺ) and I had long hair. When the Messenger of Allah (ﷺ) saw me, he said: Evil, evil! He said: I then returned and cut them off. I then came to him in the morning. He said (to me): I did not intend to do evil to you. This is much better.
পরিচ্ছেদঃ ৩. শাসক বা বিচারক যদি খুনিকে ক্ষমা করার আদেশ দেন
৪৪৯৯। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম এমতাবস্থায় গলায় চামড়ার রশি বাধানো এক হত্যাকারীকে আনা হলো। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিহত ব্যক্তির অভিভাবককে ডেকে বললেন, তুমি কি ক্ষমা করে দিবে? সে বললো, না। তিনি বললেন, তুমি কি দিয়াত নিবে? সে বললো, না। তিনি পুনরায় বললেন, তুমি হত্যা করবে? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিলেন, একে নিয়ে যাও।
সে যখন যেতে উদ্যত হলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন, তুমি কি ক্ষমা করে দিবে? সে বললো, না। তিনি বললেন, তুমি রক্তপণ গ্রহণ করবে? সে বললো, না। তিনি প্রশ্ন করলেন, তাহলে তুমি কি হত্যা করবে? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, একে নিয়ে যাও। এভাবে চতুর্থবারে তিনি বললেন, জেনে রাখো, তুমি তাকে ক্ষমা করে দিলে সে নিজের ও তার সাথীর গুনাহ নিয়ে ফিরতো। বর্ণনাকারী বলেন, অতএব সে তাকে ক্ষমা করে দিলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে (হত্যাকারীকে চামড়ার রশি টেনে টেনে চলে যেতে দেখেছি)।[1]
সহীহ।
بَابُ الْإِمَامِ يَأْمُرُ بِالْعَفْوِ فِي الدَّمِ
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ مَيْسَرَةَ الْجُشَمِيُّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عَوْفٍ، حَدَّثَنَا حَمْزَةُ أَبُو عُمَرَ الْعَائِذِيُّ، حَدَّثَنِي عَلْقَمَةُ بْنُ وَائِلٍ، حَدَّثَنِي وَائِلُ بْنُ حُجْرٍ، قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جِيءَ بِرَجُلٍ قَاتِلٍ فِي عُنُقِهِ النِّسْعَةُ، قَالَ: فَدَعَا وَلِيَّ الْمَقْتُولِ، فَقَالَ: أَتَعْفُو؟ قَالَ: لَا، قَالَ: أَفَتَأْخُذُ الدِّيَةَ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: أَفَتَقْتُلُ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: اذْهَبْ بِهِ، فَلَمَّا وَلَّى قَالَ: أَتَعْفُو؟ قَالَ: لَا، قَالَ: أَفَتَأْخُذُ الدِّيَةَ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: أَفَتَقْتُلُ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: اذْهَبْ بِهِ، فَلَمَّا كَانَ فِي الرَّابِعَةِ، قَالَ: أَمَا إِنَّكَ إِنْ عَفَوْتَ عَنْهُ يَبُوءُ بِإِثْمِهِ، وَإِثْمِ صَاحِبِهِ، قَالَ: فَعَفَا عَنْهُ، قَالَ: فَأَنَا رَأَيْتُهُ يَجُرُّ النِّسْعَة
صحيح
Narrated Wa'il ibn Hujr:
I was with the Prophet (ﷺ) when a man who was a murderer and had a strap round his neck was brought to him.
He then called the legal guardian of the victim and asked him: Do you forgive him?
He said: No. He asked: Will you accept the blood-money? He said: No. He asked: Will you kill him? He said: Yes. He said: Take him. When he turned his back, he said: Do you forgive him? He said: No. He said: Will you accept the blood-money? He said: No. He said: Will you kill him? He said: Yes. He said: Take him. After repeating all this a fourth time, he said: If you forgive him, he will bear the burden of his own sin and the sin of the victim. He then forgave him. He (the narrator) said: I saw him pulling the strap.
পরিচ্ছেদঃ বৈধ কাজে শাসকবৃন্দের আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং অবৈধ কাজে তাদের আনুগত্য করা হারাম
(১৮৩৫) আবূ হুনাইদা ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন, সালামাহ ইবনে য়্যাযীদ জু’ফী আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন, ’হে আল্লাহর নবী! আপনি বলুন, যদি আমাদের উপর (অসৎ) শাসক নিযুক্ত হয় এবং আমাদের কাছে তাদের অধিকার চায় ও আমাদেরকে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। অতএব এ ব্যাপারে আপনি কী নির্দেশ দেন?’ তিনি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পুনরায় তিনি জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা (তাদের) কথা শুনো এবং (তাদের) আনুগত্য করো। কারণ তাদের দায়িত্বে তা রয়েছে, যা তাদের উপর চাপানো হয়েছে (অর্থাৎ সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা) এবং তোমাদের দায়িত্বে তা রয়েছে, যা তোমাদের উপর অর্পণ করা হয়েছে (অর্থাৎ নেতা ও শাসকের আনুগত্য)।
وَعَن أَبي هُنَيْدَةَ وَائِلِ بنِ حُجْرٍ قَالَ : سَألَ سَلَمَةُ بن يَزيدَ الجُعفِيُّ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَقَالَ : يَا نَبِيَّ الله أَرَأَيتَ إنْ قامَت عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسألُونَا حَقَّهُم وَيمْنَعُونَا حَقَّنَا فَمَا تَأْمُرُنَا ؟ فَأعْرَضَ عَنهُ، ثُمَّ سَألَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ اسْمَعْوا وَأَطِيعُوا فإنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ নিষিদ্ধ কিছু কথা
(২৯৯৭) ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আঙ্গুরকে ’করম’ বলো না। বরং ’ইনাব’ ও ’হাবালাহ’ বল। (মুসলিম ৬০১০)
বলাই বাহুল্য যে, যে শব্দ প্রয়োগে শরয়ী বাধা আছে, তা বর্জন করা বাঞ্ছনীয়। যেমন, রামধনু, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, দৈবাৎক্রমে, দেবর, লক্ষমী মেয়ে, হরিলুট ইত্যাদি।
وَعَنْ وَائِلِ بنِ حُجْرٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لاَ تَقُولُوا : الكَرْمُ وَلَكِنْ قُولُوا : العِنَبُ وَالحَبَلَةُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ ৭. সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি - সালাতে দণ্ডায়মান অবস্থায় দু’হাত রাখার স্থান
২৭৮. ওয়ায়িল বিন হুজর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছিলাম, তিনি স্বীয় ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে তার সিনার[1] উপর স্থাপন করলেন। ইবনু খুযাইমাহ।[2]
[1] সালাতে নাভির নীচে হাত বাঁধার কথা সহীহ হাদীসে নাই। নাভির নীচে হাত বাঁধার কথা প্রমাণহীন। বরং হাত বুকের উপর বাঁধার কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ - رضي الله عنه - قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ. أَخْرَجَهُ ابْنُ خُزَيْمَةَ فى صحيحة
ওয়ায়িল বিন হুজর (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি। তিনি তার বুকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন। এ সম্পর্কিত বুখারীর হাদীসের আরবী ইবারতে ذراعه শব্দের অর্থ করতে গিয়ে কোন কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অর্থ করেছেন হাতের কজি। কিন্তু এমন কোন অভিধান নেই যেখানে ذراع অর্থ কাজ করা হয়েছে। আরবী অভিধানগুলোতে ذراع শব্দের অর্থ পূর্ণ একগজ বিশিষ্ট হাত।-অনুবাদক। শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে মাযহাবী মতকে অগ্রাধিকার দেয়ার উদ্দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুবাদে পূর্ণ হাতের পরিবর্তে কব্জি উল্লেখ করেছেন। সংশয় নিরসনের লক্ষে এ সম্পর্কে খানিকটা বিশদ আলোচনা উদ্ধৃত করা হলো:
ওয়াইল বিন হুজর (রাযি.) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি দেখেছি) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন। (বুখারী ১০২ পৃষ্ঠা সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ২০ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৭৩ পৃষ্ঠা। আবূ দাউদ ১ম খণ্ড ১১০, ১২১, ১২৮ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ ৫৮, ৫৯ পৃষ্ঠা, মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১৭৪ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৬০ পৃষ্ঠা। যাদুল মায়াদ ১২৯ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১০১ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সা’আদাত ১ম। খণ্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩৫। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৬। বুখারী ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭০২; মুসলিম ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৮৫১। আবূ দাউদ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭৫৯, তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৫২, মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদরাসা পাঠ্য। ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪১, ৭৪২। বুলুগুল মারাম বাংলা ৮২ পৃষ্ঠা)
বুকের উপর হাত বাঁধা সম্বন্ধে একটি হাদীস বর্ণিত হল : সীনা বা বুকের উপর এরূপভাবে হাত বাঁধতে হবে যেন ডান হাত উপরে এবং বাম হাত নীচে থাকে। (মুসলিম, আহমাদ ও ইবনু খুযাইমাহ)
হাত বাঁধার দুটি নিয়ম :
প্রথম নিয়ম : ডান হাতের কজি বাম হাতের কজির জোড়ের উপর থাকবে। (ইবনু খুযাইমাহ)
দ্বিতীয় নিয়ম : ডান হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাতের কনুই-এর উপর থাকবে, অর্থাৎ সমস্ত ডান হাত বাম হাতের উপর থাকবে। (বুখারী)
এটাই যিারা’আহর উপর ফিরাআহ রাখার পদ্ধতি।
বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে আলোচনা : বুকে হাত বাঁধা সম্বন্ধে আল্লামা হায়াত সিন্ধী একখানা আরবী রিসালা লিখে তাতে তিনি প্রমাণিত করেছেন যে, সালাতে সীনার উপর হাত বাঁধতে হবে। তাঁর পুস্তিকার নাম “ফাতহুল গফূর ফী তাহকীকে ওযয়িল ইয়াদায়নে আলাস সদূর”। পুস্তিকা খানা ৮ পৃষ্ঠায় সমাপ্ত। তা হতে কয়েকটি দলীল উদ্ধৃত করছি।
১। ইমাম আহমাদ স্বীয় মুসনাদে কবীসহা বিন হোলব- তিনি স্বীয় পিতা (হোলব) হতে রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি (হোলব) বলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (সালাত হতে ফারেগ হতে মুসল্লীদের দিকে) ডান ও বাম দিকে ফিরতে দেখেছি, আর দেখেছি তাকে স্বীয় সীনার উপর হাত বাঁধতে। উক্ত হাদীসে ‘ইয়াহইয়া’ নামক রাবী স্বীয় দক্ষিণ হস্ত বাম হস্তের কব্জির উপর রেখে দেখালেন। আল্লামা হায়াত সিন্ধী বলেন যে, আমি ‘তাহকীক’ কিতাবে يضع يده على صدره তিনি স্বীয় সীনার উপর হাত রাখলেন, এ কথা দেখেছি। আর আমরা বলছি যে, হাফিযী আবূ উমর ইবনু আবদুল বার্র স্বীয় “আল ইসতিআব ফী মাআরিফাতিল আসহাব” কিতাবে উক্ত হাদীস ‘হোলব’ সাহাবী হতে তাঁর পুত্ৰ কবীসা রিওয়ায়াত করেছেন এ কথা উল্লেখ করে উক্ত হাদীস সহীহ বলেছেন। (২য় খন্ড, ৬০০ পৃঃ)
২। ইমাম আবূ দাউদ তাউস (তাবিঈ) হতে সীনার উপর হাত বাঁধার হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৩। ইমাম ইবনু ‘আবদুল বার্র “আত্ তামহীদ লিমা ফীল মুয়াত্তা মিনাল মাআনী ওয়াল আসানীদ” কিতাবে উক্ত ‘তাউস’ তাবি’ঈর হাদীস উল্লেখ করে সীনার উপর হাত বাঁধার কথা বলেছেন। এতদ্ব্যতীত ওয়ায়েল বিন হুজর হতেও সীনার উপর হাত বাঁধার হাদীস উল্লেখ করেছেন।
৪। ইমাম বাইহাকী ‘আলী “ফাসল্লি লি রব্বিকা ওয়ানহার”, এর অর্থ এরূপ বর্ণনা করেছেন : তুমি নামায পড়ার সময় ডান হাত বাম হাতের উপর রাখ। (জওহারুন নকীসহ সুনানে কুবরা ২৪-৩২ পৃঃ)
৫। ইমাম বুখারী স্বীয় ‘তারীখে’ ‘উকবাহ বিন সহবান, তিনি (‘উকবাহ) ‘আলী (রাযি.) হতে রিওয়ায়াত করেছেন যে, ‘আলী (রাযি.) বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে (হস্তদ্বয়) সীনার উপর বেঁধে “ফাসল্লি লি রব্বিকা ওয়ানহার” (আয়াতের) অর্থ বুঝালেন। অর্থাৎ উক্ত আয়াতের অর্থ ‘তুমি সীনার উপর হাত বেঁধে সালাতে যাও’। এর বাস্তব রূপ তিনি [‘আলী (রাযি.)] সীনার উপর হাত বেঁধে দেখালেন। উক্ত আয়াতের অর্থ ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাযি.) হতেও অনুরূপ বৰ্ণিত হয়েছে। এখন নাভির নীচে হাত বাঁধার কোন হাদীস আছে কিনা তা-ই দেখা যাক।
নাভির নীচে হাত বাঁধা:
ইমাম বাইহাকী ‘আলী হতে নাভির নীচে হাত বাধার একটি হাদীস উল্লেখ করে তাকে যঈফ বলেছেন।
নাভির নীচে হাত বাঁধার কোন সহীহ হাদীস নাই :
আল্লামা সিন্ধী হানাফী বিদ্বানগণের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, যদি তুমি বল যে, ইবনু আবী শায়বার ‘মুসান্নাফ’ (হাদীসের কিতাবের নাম) হতে শায়খ কাসিম বিন কাতলুবাগা ‘তাখরীজু আহাদিসিল এখতিয়ার’ কিতাবে ‘ওকী’ মুসা বিন ওমায়রাহ হতে, মূসা আলকামা বিন ওয়ায়িল বিন হুজর হতে যে রিওয়ায়াত করেছেন তাতে ‘নাভির নীচে’ হাত বাঁধার কথা উল্লেখ আছে। তবে আমি (আল্লামা সিন্ধী) বলি যে, ‘নাভির নীচে’ হাত বাঁধার হাদীস ভুল। ‘মুসান্নাফ’ এর সহীহ গ্রন্থে উক্ত সনদের উল্লেখ আছে। কিন্তু ‘নাভির নীচে’ এই শব্দের উল্লেখ নাই। উক্ত হাদীসের পরে (ইবরাহীম) ‘নখয়ী’ এর আসার (সহাবা ও তাবিঈদের উক্তি ও আচরণকে ‘আসার’ বলে) উল্লেখ আছে। উক্ত ‘আসার’ ও হাদীসের শব্দ প্রায় নিকটবর্তী। উক্ত ‘আসার’-এর শেষ ভাগে ‘ফিসসালাতে তাহতাস সুররাহ অর্থাৎ নামাযের মধ্যে নাভির নীচে (হাত বঁধার উল্লেখ আছে)। মনে হয় লেখকের লক্ষ্য এক লাইন হতে অন্য লাইনে চলে যাওয়ায় “মওকুফ’ (হাদীসকে) “মরফু’ লিখে দিয়েছেন। (যে হাদীসের সম্বন্ধ-সহাবার সাথে হয় তাকে ‘মওকুফ' আর যার সম্বন্ধ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হয় তাকে ‘মরফু’ হাদীস বলে)। আর আমি যা কিছু বললাম আমার কথা হতে এটাই প্রকাশ পায় যে, ‘মুসান্নাফ’ এর সব খণ্ড মিলিতভাবে নাভির নীচে হাত বাঁধা বিষয়ে এক নয় অর্থাৎ সবগুলোতে নাভির নীচে হাত বাঁধার কথাটি উল্লেখ নাই। তাছাড়া বহু আহলে হাদীস (মুহাদ্দিস) উক্ত হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। অথচ ‘নাভির নীচে’ এর কথা কেউই উল্লেখ করেননি। আর আমি তাদের মধ্যেকার কোন ব্যক্তি হতে শুনিওনি। কেবল ‘কাসেম বিন কাতলুবাগা ঐ কথার (নাভির নীচে) উল্লেখ করেছেন। তিনি ‘তামহীদ” কিতাবের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন যে, (আহলে হাদীসদের মধ্যে প্রথম) ইবনু আদিল বার্র উক্ত কিতাবে বলেছেন যে, সওরী ও আবূ হানীফা নাভির নীচের কথা বলেন। আর সেটা ‘আলী ও ইবরাহীম নখঈ হতে বর্ণিত হয়ে থাকে বটে, কিন্তু ঐ দু’জন (‘আলী ও নখঈ) হতে সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। যদি সেটা হাদীস হতো তাহলে ইবনু ‘আবদুল বার্র ‘মুসান্নাফ’ হতে ওটা অবশ্য উল্লেখ করতেন। কেননা হাত বাধা সম্বন্ধে ইবনু আবী শায়বা হতে তিনি বহু রিওয়ায়াত এনেছেন। ২য় ইবনু হাজার আসকালানী (আহলে হাদীস) ৩য় মুজদুদদীন ফিরোজাবাদী (আহলে হাদীস) ৪র্থ আল্লামা সৈয়ুতী (আহলে হাদীস) ৫ম আল্লামা যয়লয়ী, (মুহাককিক) ৬ষ্ঠ আল্লামা আয়নী (আহলে তাহকীক) ও ৭ম ইবনু আমীরিল হাজ (আহলে হাদীস) প্রভৃতির উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন যে, যদি “নাভির নীচে”-এর কথা থাকত তাহলে সকলেই তা উল্লেখ করতেন। কেননা তাঁদের সকলের কিতাব ইবনু আবী শায়বার বর্ণিত হাদীস দ্বারা পূর্ণ। তিনি এ সম্পর্কিত হাদীসদ্বয়ের আলোচনা করে বুকে হাত বাঁধাকে ওয়াজিব বলেছেন।
সিন্ধী সাহেব উপসংহারে লিখেছেন, “জেনে রাখা যে, ‘নাভির নীচে’-এ কথা প্রমাণের দিক দিয়ে না। ‘কতয়ী’ (অকাট্য), না ‘যন্নী’ (বলিষ্ঠ ধারণামূলক)। বরং প্রমাণের দিক দিয়ে ‘মওহূম’ (কল্পনা প্রসূত) আর যা মওহূম তদদ্বারা শরীয়তের হুকুম প্রমাণিত হয় না।....... কাজেই শুধু শুধু কল্পনা করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে কোন বস্তুর সম্বন্ধ করা জায়েয নয়। অর্থাৎ শুধু কল্পনার উপর নির্ভর করে নাভির নীচে হাত রাখার নিয়মকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সম্পর্কিত করা জায়েয নয়। যখন উপরিউক্ত আলোচনা হতে স্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়ে গেল যে, নামাযের মধ্যে সীনার উপর হাত বাঁধা নয় যে, ওটা হতে মুখ ফিরিয়ে নেন। আর ঐ বস্তু হতে কিরূপ মুখ ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত হয়েছে। কেননা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আমি যা এনেছি (অর্থাৎ আল্লাহর ব্যবস্থা), যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে কেউ তার প্রবৃত্তিকে তার অনুগামী না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। অতএব, প্রত্যেক মুসলিম (স্ত্রী-পুরুষের) উচিত তার উপর আমল করা, আর কখনো কখনো এই দু’আ করা-
প্ৰভু হে, যে বিষয়ে মতভেদ করা হয়েছে তাতে আমাদেরকে সত্য পথের সন্ধান দাও। কেননা তুমিই তো যাকে ইচ্ছা! ‘সিরাতে মুস্তকীমের পথ দেখিয়ে থাক”। (উক্ত কিতাব ২-৮ পূঃ ও ইবকারুল মিনান ৯৭-১১৫ পৃঃ)
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী তাঁর সিফাত গ্রন্থে হাত বাঁধা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে শিরোনাম এনেছেন: وضعهما على الصدر বুকের উপর দু’হাত রাখা। অতঃপর তিনি হাদীস উল্লেখ করে নিচে টীকা লিখেছেন। যা বন্ধনীর মধ্যে দেখানো হলো।
“নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতের পিঠ, কজি ও বাহুর উপর ডান হাত রাখতেন”। [(আবূ দাউদ, নাসাঈ, ১/৪/২ ছহীহ সনদে, আর ইবনু হিব্বানও ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন। ৪৮৫]
“এ বিষয়ে স্বীয় ছাহাবাগণকেও আদেশ প্রদান করেছেন।”(মালিক, বুখারী ও আবূ আওয়ানাহ)
তিনি কখনো ডান হাত দ্বারা বাম হাত আঁকড়ে ধরতেন।” (নাসাঈ, দারাকুতুনী, ছহীহ সনদ সহকারে। এ হাদীছ প্রমাণ করছে যে, হাত বাঁধা সুন্নাত। আর প্রথম হাদীছ প্রমাণ করছে যে, হাত রাখা সুন্নাত। অতএব উভয়টাই সুন্নাত। কিন্তু হাত বাঁধা ও হাত রাখার মধ্যে সমন্বয় বিধান করতে গিয়ে পরবর্তী হানাফী ‘আলিমগণ যে পদ্ধতি পছন্দ করেছেন তা হচ্ছে বিদআত; যার রূপ তারা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ডান হাতকে বাম হাতের উপর কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা আঁকড়ে ধরবে এবং অপর তিন অঙ্গুলি বিছিয়ে রাখবে (ইবনু আবিদীন কর্তৃক দুররে মুখতারের টীকা (১/৪৫৪)। অতএব হে পাঠক! পরবর্তীদের (মনগড়া)।এ কথা যেন আপনাকে ধোঁকায় না ফেলে।
“তিনি হস্তদ্বয়কে বুকের উপর রাখতেন”। [আবূ দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ স্বীয় ছহীহ গ্রন্থে (১/৫৪/২) আহমাদ, আবূশ শাইখ স্বীয় “তারীখু আছবাহান” গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ১২৫) ইমাম তিরমিযীর একটি সানাদকে হাসান বলেছেন। গভীরভাবে চিন্তা করলে এর বক্তব্য মুওয়াত্তা ইমাম মালিক এবং বুখারীতে পাওয়া যাবে। এ হাদীছের বিভিন্ন বর্ণনাসূত্র নিয়ে আমি আহকামুল জানায়িজ কিতাবের (১১৮) পৃষ্ঠায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
জ্ঞাতব্য: বুকের উপর হাত রাখাটাই ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত। এছাড়া অন্য কোথাও রাখার হাদীছ হয় দুর্বল আর না হয় ভিত্তিহীন। এই সুন্নাতের উপর ইমাম ইসহাক বিন রাহাভিয়া ‘আমল করেছেন। মারওয়ায়ী আল-মাসায়িল গ্রন্থে ২২২ পৃষ্ঠাতে বলেন, ইসহাক আমাদেরকে নিয়ে বিতরের ছলাত পড়তেন এবং তিনি কুনূতে হাত উঠাতেন আর রুকু’র পূর্বে কুনূত পড়তেন। তিনি বক্ষদেশের উপরে বা নীচে হাত রাখতেন। কাযী ইয়াযও الإعلام কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় (রিবাত্ তৃতীয় সংস্করণ) এ مستحبات الصلاة ছালাতের মুস্তাহাব কাজ বর্ণনার ক্ষেত্রে অনুরূপ কথা বলেছেন, ডান হাতকে বাম হাতের পৃষ্ঠের উপর বুকে রাখা। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদের বক্তব্যও এর কাছাকাছি, তিনি তার আল-মাসায়িল এর ৬২ পৃষ্ঠায় বলেনঃ আমার পিতাকে দেখেছি। যখন তিনি ছালাত পড়তেন তখন তার এক হাতকে অপর হাতের উপর নাভির উপরস্থলে রাখতেন দেখুন ইরওয়াউল গালীল (৩৫৩)।] (দেখুন নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী কৃত সিফাতু সালাতুন্নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
[2] ইবনু খুযাইমাহ ৪৭৯
وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ - رضي الله عنه - قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ. أَخْرَجَهُ ابْنُ خُزَيْمَةَ
-
صحيح. رواه ابن خزيمة (479)، وهو وإن كان بسند ضعيف، إلا أن له شواهد تشهد له، وهي مذكورة بالأصل، وانظر مقدمة «صفة الصلاة» لشيخنا -حفظه الله تعالى. طبعة مكتبة المعارف بالرياض
পরিচ্ছেদঃ ৭. সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি - ইমামের আমীন উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা শরীয়তসম্মত
২৮৪. আবূ দাউদ ও তিরমিযীতে ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।[1]
وَلِأَبِي دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيِّ مِنْ حَدِيثِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ نَحْوُهُ
-
صحيح. رواه أبو داود (932)، والترمذي (248) عن وائل بن حجر -رضي الله عنه- قال: «كان رسول الله -صلى الله عليه وسلم- إذا قرأ (ولا الضالين) قال: «آمين» ورفع بها صوته». واللفظ لأبي داود. وقال الترمذي: «حديث حسن». قلت: بل صحيح، ثم هو له شواهد أخرى مذكورة «بالأصل». وقال الحافظ في «التلخيص «(1/ 236): سنده صحيح
পরিচ্ছেদঃ ৭. সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি - রুকূ’ ও সাজদায় দু’হাতের আঙ্গুলসমূহের অবস্থা
৩০০. ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ করার সময় আঙ্গুলগুলো (হাঁটুর উপর) ফাঁক-ফাঁক করে রাখতেন, আর যখন সিজদাতে যেতেন তখন তাঁর আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে রাখতেন।[1]
وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ - رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ إِذَا رَكَعَ فَرَّجَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ, وَإِذَا سَجَدَ ضَمَّ أَصَابِعَهُ. رَوَاهُ الْحَاكِمُ
-
صحيح. رواه الحاكم (1/ 224) مقتصرا على شطره الأول، وروى الشطر الثاني (1/ 227) وقال في الموضوعين: صحيح على شرط مسلم
পরিচ্ছেদঃ ৭. সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি - সালাত শেষে সলাম ফিরানোর পদ্ধতি
৩২০. ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছিলাম। তিনি (সালাত সমাপ্তকালে) ডান দিকে আসসালামু ’আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু (আল্লাহর শান্তি, করুণা ও আশিষ আপনাদের উপর বর্ষিত হোক) এবং বাম দিকে আসসালামু আলাইকুম, ওয়া রহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু বলে সালাম ফেরালেন। আবূ দাউদ সহীহ সানাদে।[1]
وَعَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ - رضي الله عنه - قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَكَانَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ: «السَّلَام عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ»، وَعَنْ شِمَالِهِ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ [وَبَرَكَاتُهُ]». رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ بِسَنَدٍ صَحِيحٍ
-
صحيح. رواه أبو داود (997) تنبيه: وقع في المطبوع من «البلوغ»: زيادة «وبركاته» في تسليمه عن الشمال، وهو خطأ فاحش، وإن زعم بعضهم أنها زيادة صحيحة