পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৮৪-[১৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: কিছু সংখ্যক লোক তাদের কৃত গুনাহের কারণে শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামের আগুনে জ্বলে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর রহমত ও দয়ায় তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে সেখানে তাদেরকে জাহান্নামী বলে ডাকা হবে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَن أنس أَن النَّبِي الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَيُصِيبَنَّ أَقْوَامًا سَفْعٌ مِنَ النَّارِ بِذُنُوبٍ أَصَابُوهَا عُقُوبَةً ثُمَّ يُدْخِلُهُمُ اللَّهُ الْجَنَّةَ بِفَضْلِهِ وَرَحْمَتِهِ فَيُقَالُ لَهُمُ: الجهنميون . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6559) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি ইতোপূর্বে বর্ণিত শাফা'আত সংক্রান্ত যত হাদীস অতিবাহিত হয়েছে তার সারসংক্ষেপ কথা। গুনাহগার মু'মিনেরা যারা তাদের পাপের কারণে জাহান্নামে পতিত হবে, তারা ঈমান থাকার কারণে সকলেই আল্লাহর অনুগ্রহে এবং রহমতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত এবং জান্নাত লাভে ধন্য এদেরকে জান্নাতের মধ্যেও জাহান্নামী হিসেবে অভিহিত করা হবে। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ নাম তাদের খাটো করার জন্য নয়, বরং তাদের (অতীতের কথা) স্মরণ করানোর জন্য যাতে তারা খুশি ও আনন্দের পর আরো বেশি আনন্দিত হয়। আর আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সেটা একটি প্রতীক হয়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, ৪৮৪ পৃ., হা. ৬৫৫৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫১১ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৮৮-[২৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নাম থেকে চার লোককে বের করে আল্লাহ তা’আলার সামনে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তাদেরকে আবার জাহান্নামে পাঠানোর জন্য নির্দেশ করা হবে। তখন তাদের একজন পিছন ফিরে তাকিয়ে বলবে, হে প্রভু! আমি তো এ আশায় ছিলাম যে, যখন তুমি একবার আমাকে তা থেকে বের করে এনেছ, পুনরায় আমাকে সেখানে ফেরত পাঠাবে না। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেবেন। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ أَرْبَعَةٌ فَيُعْرَضُونَ عَلَى اللَّهِ ثُمَّ يُؤْمَرُ بِهِمْ إِلَى النَّارِ فَيَلْتَفِتُ أَحَدُهُمْ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ؟ لَقَدْ كنتُ أَرْجُو إِذا أَخْرَجْتَنِي مِنْهَا أَنْ لَا تُعِيدَنِي فِيهَا قَالَ: «فينجيه الله مِنْهَا» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (321 / 192)، (474) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যাদেরকে সর্বশেষে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহই ভালো জানেন, সম্ভবত এই বের হওয়াটা জাহান্নামে ঢোকা মাত্র কিনা? যাতে তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছিল এটা নাম হয় অথবা জাহান্নামের উপর দিয়ে স্থাপিত পুলসিরাত যা অতিক্রম করতেই হবে। যেমন আল্লাহর বাণী,
(وَ اِنۡ مِّنۡکُمۡ اِلَّا وَارِدُهَا ۚ کَانَ عَلٰی رَبِّکَ حَتۡمًا مَّقۡضِیًّا) “আর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই তা অতিক্রম করবে না আর এটা তোমার রবের অনিবার্য নির্দেশ যা সম্পন্ন হবে।” (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৭১)
কেউ কেউ বলেছেন এখানে (اَلْوُرُوْدُ) এর অর্থ অতিক্রম নয় বরং তাতে প্রবেশ করা অর্থাৎ জাহান্নামে প্রবেশ করা। প্রত্যেককেই জাহান্নামের উপর দিয়ে স্থাপিত পুলসিরাত পাড়ি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে হবে। কাফির মুশরিক ও গুনাহগার ব্যক্তিরা তা পাড়ি দিতে গিয়ে কেটে টুকরা টুকরা হয়ে জাহান্নামে নিপতিত হবে, কিন্তু মুমিনেরা শুধু জাহান্নাম দেখেই অথবা সামান্য তাপ পেয়েই তা পাড়ি দিয়ে চলে যাবে অথবা তাদের জন্য তা নিভে যাবে, ফলে সে ঐ জাহান্নাম পাড়ি দিয়ে চলে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
আল্লাহ তা'আলা তার বিশেষ অনুগ্রহে এ ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৫-[৩০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -এর নিকটে আবেদন করলাম, কিয়ামতের দিন আপনি অনুগ্রহপূর্বক আমার জন্য বিশেষভাবে শাফা’আত করবেন। তিনি (সা.) বললেন, আচ্ছা আমি তা করব। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে কোথায় অনুসন্ধান করব? তিনি (সা.) বললেন, সর্বপ্রথম তুমি আমাকে পুলসিরাতের উপর অনুসন্ধান করবে। বললাম, যদি আমি আপনাকে পুলসিরাতের সাক্ষাৎ না পাই? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি আমাকে মীযানের (’আমলনামা ওযনের) কাছে খোঁজ করে বললাম, যদি আমি আপনাকে মীযানের কাছেও সাক্ষাৎ না পাই? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি আমাকে হাওযে কাওসারের কাছে অনুসন্ধান করব। স্মরণ রাখ, আমি এ তিন জায়গা থেকে অনুপস্থিত থাকব না। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব।]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَن أنس قا ل سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَشْفَعَ لِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ: «أَنَا فَاعِلٌ» . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَيْنَ أَطْلُبُكَ؟ قَالَ اطْلُبْنِي أَوَّلَ مَا تَطْلُبُنِي عَلَى الصِّرَاطِ . قُلْتُ فَإِنْ لَمْ أَلْقَكَ عَلَى الصِّرَاطِ؟ قَالَ: «فَاطْلُبْنِي عِنْدَ الْمِيزَانِ» قُلْتُ فَإِنْ لَمْ أَلْقَكَ عِنْدَ الْمِيزَانِ؟ قَالَ: «فَاطْلُبْنِي عِنْدَ الْحَوْضِ فَإِنِّي لَا أُخطىءُ هَذِه الثلاثَ المواطن» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وقا لهَذَا حَدِيث غَرِيب
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (2433) ۔
(إِسْنَاده جيد)
ব্যাখ্যা: কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শাফা'আত হবে দু’ প্রকার। ১) শাফা'আতে আম্মাহ্ বা সাধারণ শাফা'আত। ২) শাফা'আতে খসসাহ বা বিশেষ শাফা'আত।
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট শাফা'আতে খসসাহ বা বিশেষ শাফা'আতের আবেদন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে শাফা'আতের স্বীকৃতি দিলে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন আমি আপনাকে কোথায় সন্ধান করব?
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো যে সকল স্থানে আপনার শাফা'আতের মুখাপেক্ষী হব আর সেই সকল ঘাঁটি পাড়ি দিতে আপনার শাফা'আত তলব করব, সে সময় আপনাকে কোথায় খুঁজে পাব? রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে তিনটি স্থানে সন্ধান করার কথা বললেন।
হিসাব-নিকাশের পর্বের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ‘আয়িশাহ্ এ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, “(হে আল্লাহর রাসূল!) কিয়ামতের দিন আপনি আপনার পরিবার-পরিজনকে স্মরণ করবেন কি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, জেনে রেখ (হে ‘আয়িশাহ!) তিনটি জায়গা এমন হবে যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবে না...।” উভয় হাদীসের মধ্যে বিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে, এর সমন্বয় কিভাবে হবে?
‘আল্লামাহ্ মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আয়িশার প্রশ্নের জওয়াবে যা বলেছিলেন তা এজন্য যে, সে যেন রসূলের স্ত্রী হওয়ার উপর ভরসা করে বসে না থাকেন। আর আনাস-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে উত্তর দিয়েছিলেন তা এজন্য যে, সে যেন নিরাশ হয়ে না যায়।
প্রশ্ন হতে পারে যে, রসূলের খাদিম হওয়ার কারণে আনাস (রাঃ) -ও তো ভরসা করে বসে থাকতে পারে? অনুরূপভাবে নিরাশ না হওয়ার বিষয়টি আয়িশার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে? উত্তরে বলা যায় যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসটি অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, আর আনাস (রাঃ)-এর হাদীসটি উপস্থিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে কেউ স্মরণ করবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৩৪ পৃ., হা. ২৪৩৩)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৯৮-[৩৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের কবীরা গুনাহকারীগণ বিশেষভাবে আমার শাফা’আত লাভ করবে (অন্য উম্মতেরা শাফা’আত লাভ করতে পারবে না)। (তিরমিযী ও আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل: «شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
صحیح ، رواہ الترمذی (2435 وقال : حسن صحیح غریب) و ابوداؤد (4739) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: কবীরা গুনাহগারদের ক্ষমার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শাফা'আত হলো খাস, এটা অন্য কোন উম্মতের জন্য হবে না। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো কবীরা গুনাহের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য আমার শাফা'আত একমাত্র বিশেষায়িত।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আতের মাযহাব বা মত হলো কুরআনুল কারীমের সরীহ বা স্পষ্ট আয়াত দ্বারা গুনাহগারদের জন্য শাফা'আত প্রমাণিত। যেমন আল্লাহর বাণী: (یَوۡمَئِذٍ لَّا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَهُ الرَّحۡمٰنُ وَ رَضِیَ لَهٗ قَوۡلًا) “সেদিন সুপারিশ কারো কাজে আসবে না, কিন্তু দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি দিবেন এবং তার কথার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।” (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১০৯)
এছাড়া মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা কিয়ামাতের শাফা'আত প্রমাণিত। এটা সালাফে সালিহীন এবং তৎপরবর্তী আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াস জামা'আতের সর্ববাদী সম্মত মত। কিন্তু খারিজী সম্প্রদায় এবং কতিপয় মু'তাযিলা আহলে কাবায়িরদের জন্য শাফা'আত বৈধ হওয়া এবং গ্রহণ হওয়াকে অস্বীকার করে থাকে, ফলে তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে মনে করে।
যেমন মহান আল্লাহর বাণী: (فَمَا تَنۡفَعُهُمۡ شَفَاعَۃُ الشّٰفِعِیۡنَ) অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না।” (সূরাহ্ আল মুদ্দাসসির ৭৪ : ৪৮)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, (.... مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ حَمِیۡمٍ وَّ لَا شَفِیۡعٍ یُّطَاعُ) “...সেদিন যালিমদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং এমন কোন সুপারিশকারীও থাকবে না যার কথা গ্রহণ হয়।” (সূরাহ আল মু'মিন ৪০ : ১৮)
মু'তাযিলা ও খারিজীদের ধারণা ও প্রদত্ত দু’টি দলীলের জওয়াবে আমরা বলব যে, উক্ত আয়াতদ্বয় কাফিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আর যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শিরক। তারা শাফা'আতের তাবীল বা ব্যাখ্যায় বলে থাকে যে, শাফা'আত হবে জান্নাতীদের মর্যাদা বাড়ানোর জন্য (কবীরা গুনাহগারদের মুক্তির জন্য নয়) তাদের এ ব্যাখ্যা বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য। কবীরা গুনাহগার জাহান্নামীদের জন্য শাফা'আত গ্রহণের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ভূরিভূরি হাদীস কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। বক্ষমাণ হাদীসটি এর প্রামাণ্য দলীল।
শাফা'আত পাঁচ প্রকার:
* প্রথম প্রকার শাফাআত যা আমাদের নবীর জন্য খাস বা বিশেষিত; সেটা হলো হাশরের মাঠের দুঃসহ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দ্রুত হিসাবের ব্যবস্থার জন্য শাফা'আত।
* দ্বিতীয় প্রকার হলো এক শ্রেণির মানুষকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের জন্য শাফা'আত। এটাও আমাদের নবীর মাধ্যমে সম্পাদিত হবে।
* তৃতীয় প্রকার হলো ঐ সম্প্রদায়ের জন্য শাফা'আত যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যাবে। তাদের জন্য আমাদের নবী (সা.) শাফা'আত করবেন এবং আল্লাহ তা'আলা অন্য যাদের চান সেও শাফা'আত করবেন।
* চতুর্থ প্রকার তাদের জন্য শাফা'আত যারা গুনাহের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। তাদের জন্য আমাদের নবী শাফা'আত করবেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) শাফা'আত করবেন ঐ সকল গুনাহগারদের মুমিন ভাইয়েরা শাফা'আত করবেন। এরপর যারা “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” পাঠ করেছে আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং নিজে তাদের বের করবেন।
* পঞ্চম প্রকার শাফাআত হলো জান্নাতীদের জান্নাতের মধ্যে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফা'আত, অবশ্য এ শাফা'আতকে খারিজী ও মুতাযিলীগণ অস্বীকার করে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪৩৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০৩-[৩৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মতের চার লক্ষ লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করুন। তখন তিনি বললেন, এই পরিমাণ- এই বলে তিনি উভয় হাত একত্রিত করে অঞ্জলি একসাথে করলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করুন। এবারও রাসূল (সা.) ঐ রকম অঞ্জলি একত্র করে দেখিয়ে বললেন, আরো এই পরিমাণ। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আবূ বকর! আমাদেরকে নিজ নিজ অবস্থায় থাকতে দিন। (অর্থাৎ আমাদেরকে ’আমল করতে দাও) তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে ’উমার! এতে তোমার কি ক্ষতি যদি আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন?
জবাবে ’উমার (রাঃ) বললেন, যদি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তবে তাঁর সকল সৃষ্ট মাখলুকূকে তিনি এক অঞ্জলিতেই জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন। এ কথা শুনে তখন নবী (সা.) বললেন, “উমার সত্যিই বলেছে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وعَدَني أَن يدْخل الجنةَ من أُمتي أربعمائةِ أَلْفٍ بِلَا حِسَابٍ» . فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ زِدْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ وَهَكَذَا فَحَثَا بِكَفَّيْهِ وَجَمَعَهُمَا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: زِدْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: وَهَكَذَا فَقَالَ عُمَرُ دَعْنَا يَا أبكر. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَمَا عَلَيْكَ أَنْ يُدْخِلَنَا اللَّهُ كُلَّنَا الْجَنَّةَ؟ فَقَالَ عُمَرُ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِنْ شَاءَ أَنْ يُدْخِلَ خَلْقَهُ الْجَنَّةَ بِكَفٍّ وَاحِدٍ فَعَلَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ عُمَرُ» رَوَاهُ فِي شرح السّنة
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (15 / 163 ح 4335) [و احمد (3 / 165 ح 12725)] * قتادۃ مدلس و عنعن و للحدیث طرق ضعیفۃ عند البزار (کشف الاستار : 3547 ، 3545) و ابی یعلی (3783) وغیرھما
ব্যাখ্যা: আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছা করলে জিন-ইনসান, নেককার ও বদকার মুমিন সকলকে একবারেই জান্নাতে প্রবশে করাতে পারেন। কিন্তু আমল ব্যতীত আল্লাহর অনুগ্রহের আশা বসে থাকা মুমিনের কাজ নয় ‘উমার (রাঃ)-এর উক্তির উদ্দেশ্য এটাই যে, আমাদের কর্তব্য আমরা পালন করে যাব আর আল্লাহ তাঁর দয়ার মাধ্যমে যে ব্যবহার করবেন তাতে খুশি থাকব। (মিরক্বাতুর মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৬০৪-[৩৯] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামীগণ কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়াবে, তখন জান্নাতী এক ব্যক্তি তাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে। এ সময় জাহান্নামীদের সারি থেকে এক ব্যক্তি বলবে, হে অমুক! তুমি কি আমাকে চিনতে পারনি? আমি সেই লোক যে একদিন তোমাকে পান করিয়েছিলাম। আর একজন বলবে, আমি সেই লোক যে একদিন তোমাকে উযূর জন্য পানি দিয়েছিলাম। তখন সে জান্নাতী লোক তার জন্য সুপারিশ করবে এবং জান্নাতে নিয়ে যাবে। (ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُصَفُّ أَهْلَ النَّارِ فَيَمُرُّ بِهِمُ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ الرَّجُلُ مِنْهُمْ: يَا فُلَانُ أَمَا تَعْرِفُنِي؟ أَنَا الَّذِي سَقَيْتُكَ شَرْبَةً. وَقَالَ بَعْضُهُمْ: أَنَا الَّذِي وَهَبْتُ لَكَ وَضُوءًا فَيَشْفَعُ لَهُ فَيُدْخِلُهُ الْجَنَّةَ . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (3685) * یزید الرقاشی : ضعیف ، و الاعمش مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে জাহান্নামীগণ দ্বারা গুনাহগার মুমিনদেরকে বুঝানো হয়েছে, আর তাদের মধ্যে যারা পুণ্যবান নেক লোকদের খিদমাত বা সহযোগিতা করেছে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিন উক্ত নেককার ব্যক্তিরা শাফা'আত করার অধিকার পাবে। ফলে তাদের সুপারিশের ফলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিরক্বাতুর মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৪-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর পথে এক সকাল এবং এক সন্ধ্যা কাটানো দুনিয়া ও তার সকল সম্পদ থেকে উত্তম। যদি জান্নাতবাসিনী কোন নারী (হুর) পৃথিবীর দিকে উঁকি দেয়, তবে সমগ্র জগৎটা (তার রূপের ছটায়) আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে মোহিত করে ফেলবে। এমনকি তাদের (হুরদের) মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া এবং সম্পদরাশি থেকে উত্তম। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعت إِلى الأَرْض لَأَضَاءَتْ مابينهما وَلَمَلَأَتْ مَا بَيْنَهُمَا رِيحًا وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (2796) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ফযীলত বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিসগণ বলেন, (غَدْوَةٌ) শব্দটি দিনের প্রথমাংশ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, আর (رَوْحَةٌ) শব্দটি দিনের শেষাংশ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল ও এক বিকাল ব্যয় করা সমগ্র দুনিয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। এই অতিবাহিত করাটা আল্লাহর রাস্তায় সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য জিহাদ, হিজরত হতে পারে। এরপর উক্ত হাদীসে জান্নাতের হুরদের অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি ঐ সকল হুরেরা পৃথিবীতে একবার উঁকি মারতো তাহলে পুরো পৃথিবীতে আলোকিত হয়ে যেত।
ইমাম আযহারী (রহিমাহুল্লাহ) (نَصِيفٌ) শব্দের অর্থ (خِمَارٌ) (ওড়না) যা হুরেরা পাগড়ীর মতো পেঁচিয়ে রাখবে তাও পুরো দুনিয়া থেকে অনেক উত্তম হবে। (ফাতহুল বারী হা. ৬৫৬৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৮-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে একটি বাজার আছে। জান্নাতবাসীগণ সপ্তাহের প্রত্যেক জুমু’আর দিন সেখানে একত্রিত হবে। তখন উত্তরী বাতাস প্রবাহিত হবে এবং তা তাদের মুখমণ্ডলে ও কাপড়চোপড়ে সুগন্ধি নিক্ষেপ করবে, ফলে তাদের রূপ-সৌন্দর্য আরো অধিক বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর যখন তারা বর্ধিত সুগন্ধি ও সৌন্দর্য অবস্থায় নিজেদের স্ত্রীদের কাছে যাবে, তখন স্ত্রীগণ তাদেরকে বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমাদের অবর্তমানে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফেলেছ। তার উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহ শপথ! আমাদের অনুপস্থিতিতে তোমাদের রূপ-সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَسُوقًا يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ فَتَحْثُو فِي وُجوهِهم وثيابِهم فيزدادونَ حُسنا وجمالاً فيرجعونَ إِلى أَهْليهمْ وَقَدِ ازْدَادُوا حُسُنًا وَجَمَالًا فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَقُولُونَ وَأَنْتُم واللَّهِ لقدِ ازددتم حسنا وجمالا»
رواہ مسلم (13 / 2833)، (7146) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَسُوقًا) জান্নাতে একটি বাজার থাকবে উক্ত বাজার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সৌন্দর্য ও কমনীয়তা বৃদ্ধির কেন্দ্র। যেখানে জান্নাতবাসীরা একত্রিত হবেন। আর সেখানে বিভিন্ন ধরনের হৃদয়গ্রাহী, মনোরম ও সুশ্রী আকৃতি-প্রকৃতি প্রতিচ্ছবি উপস্থিত থাকবে। আর প্রত্যেক জান্নাতী তাঁর পছন্দ মতে যে আকৃতি ধারণের ইচ্ছা করবে তা অবলম্বন করতে পারবে।
(كُلَّ جُمُعَةٍ) “প্রত্যেক জুমু'আর দিন”, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রতি সপ্তাহে একদিন লোকজন একত্রিত হবেন। আর সপ্তাহ দ্বারাও পৃথিবীর মতো সপ্তাহ উদ্দেশ্য নয়। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাজার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জান্নাতীদের একত্রিত হওয়ার স্থান, তারা সেখানে প্রতি জুমু'আর একদিন একত্রিত হবে।
জান্নাতীরা জান্নাতে ‘আলিমদেরকে ভালোবাসবে এবং তাদের নিকট বিভিন্ন প্রয়োজনে মুখাপেক্ষী হবে এবং প্রতি জুমু'আর দিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, তোমাদের যা ইচ্ছা চাও তারা তাদের মন মতো বিভিন্ন জিনিস চাইবে তিনি তাদেরকে তাই প্রদান করবেন।
(رِيحُ الشَّمَالِ) ‘উত্তরী হাওয়া’ এ হাওয়া যেহেতু উত্তরদিক থেকে প্রবাহিত হয় তাই তাকে উত্তরী হাওয়া বলে। সাধারণত শীতপ্রধান দেশসমূহে লোহিত সাগরের উপর দিয়ে এই হাওয়া বয়ে যায় এবং যথেষ্ট ঠাণ্ডা হয়, ঠিক অনুরূপভাবে জান্নাতেও উত্তরী হাওয়া বইবে যা জান্নাতীদের শরীরকে আরামদায়ক ও প্রশান্তিময় করে দিবে। (শারহুন নাবাবী হা. ২৮৩৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬৩৬-[২৫] আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: জান্নাতী মুমিনদেরকে এত এত সহবাসের শক্তি প্রদান করা হবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! এক লোক এত শক্তি রাখবে কি? তিনি (সা.) বললেন, প্রত্যেক লোককে একশত পুরুষের শক্তি দান করা হবে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يُعْطَى الْمُؤْمِنُ فِي الْجَنَّةِ قُوَّةَ كَذَا وَكَذَا مِنَ الْجِمَاعِ» . قِيلَ: يَا رَسُولَ الله أَو يُطيق ذَلِكَ؟ قَالَ: «يُعْطَى قُوَّةَ مِائَةٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2536 وقال : صحیح غریب) * قتادۃ عنعن و للحدیث شواھد ضعیفۃ عند البزار (کشف الاستار 4 / 198 ح 3526) و البیھقی (البعث و النشور : 403) وغیرھما
ব্যাখ্যা: মুহাদ্দিসগণ বলেন, জান্নাতী একজন পুরুষকে বিশ ত্রিশ কিংবা তার চেয়ে বেশি স্ত্রীর সাথে সহবাস করার ক্ষমতা প্রদান করা হবে। কেউ কেউ বলেছেন, বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ কিংবা একশত বা তার চেয়ে বেশি স্ত্রী সাথে সহবাস করার ক্ষমতা দেয়া হবে। কারণ আল্লাহর রাসূলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, একজন পুরুষ কি এত স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারবে? উত্তরে তিনি (সা.) বলেছেন, একজন পুরুষকে একশতজন পুরুষের শক্তি দেয়া হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৩৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬৪১-[৩০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করা হলো, কাওসার কি? তিনি (সা.) বললেন, তা জান্নাতে অবস্থিত একটি নহর, যা আল্লাহ তা’আলা আমাকে দান করেছেন। তার পানি দুধ তুলনায় অধিক সাদা এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি। তাতে এমন কিছু পাখি থাকবে, যাদের ঘাঢ় উটের গর্দানের মতো (লম্বা-লম্বা)। ’উমার (রাঃ) বলে উঠলেন, ঐ সমস্ত পাখিগুলো নিশ্চয় খুব মোটাতাজা হবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে সমস্ত পাখিগুলো ভক্ষণকারীগণ তাদের চেয়েও হৃষ্টপুষ্ট হবে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ماالكوثر؟ قَالَ: «ذَاكَ نَهْرٌ أَعْطَانِيهِ اللَّهُ يَعْنِي فِي الْجَنَّةِ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ فِيهِ طَيْرٌ أَعْنَاقُهَا كَأَعْنَاقِ الْجُزُرِ» قَالَ عُمَرُ: إِنَّ هَذِهِ لَنَاعِمَةٌ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَكَلَتُهَا أَنْعَمُ مِنْهَا» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2542 وقال : حسن) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (ماالكوثر؟) মুহাদ্দিসগণ বলেন, (كوثر) এমন একটি নদী যা আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে দান করবেন। সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় এসেছে, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকটে বসছিলাম, এরপর তিনি (সা.) মাথা উঠিয়ে মুচকি হাসলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে কিসে হাসালো? তিনি (সা.) বলেন, এই মাত্র আমার ওপর একটি সূরাহ্ অবতীর্ণ হলো। এরপর তিনি (সা.) তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন,
(اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ) “আমি তোমাকে বিশেষ কল্যাণ ‘হাওযে কাওসার’ও দান করেছি (যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত)”- (সূরাহ্ আল কাওসার ১০৮ : ১)।
এরপর তিনি (সা.) বলেন, তোমরা কি জানো ‘কাওসার’ কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তখন তিনি (সা.) বলেন, সেটা এমন এক নদী আল্লাহ তা'আলা আমাকে দান করবেন। আর এটা সেই হাওয যার নিকটে এসে আমার উম্মত ভিড় করবে। ইমাম হাকিম (রহিমাহুল্লাহ) মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাঃ) থেকে যে, সেটা এমন এক নদী আল্লাহ তা'আলা আমাকে জান্নাতে দান করবেন। তার মাটি হবে মিশক আম্বরের চেয়ে সুগন্ধিময়, দুধের চেয়ে সাদা এবং তাঁর পানি হবে মধুর চেয়ে সুমিষ্ট।
(طَيْرٌ أَعْنَاقُهَا كَأَعْنَاقِ الْجُزُرِ) তাতে এক প্রকার পাখি থাকবে যেগুলোর ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের ন্যায় অর্থাৎ ঐ নদীর চতুষ্পর্শ্বে উক্ত পাখিগুলো বিচরণ করবে। সেগুলো দেখে ঐ পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর মনে হবে। আর সেই পাখিগুলো খুবই হৃষ্টপুষ্ট হবে। আর ঐ পাখিগুলো যারা খাবে তারা আরো অনেক হৃষ্টপুষ্ট হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ২৫৪২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৬৯-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে দুনিয়ার সর্বাধিক সম্পদশালী লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে চুবিয়ে উঠানো হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো আরাম-আয়েশ দেখেছ? পূর্বে কি কখনো তোমার নি’আমাতের সুখ অর্জিত হয়েছিল? সে বলবে, না আল্লাহর শপথ, হে আমার প্রভু! অতঃপর জান্নাতবাসীদের থেকে এমন এক লোককে উপস্থিত করা হবে, যে দুনিয়াতে সবচাইতে দুঃখ-কষ্টের জীবনযাপন করেছিল। তখন তাকে মুহুর্তের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে প্রশ্ন করা হবে, হে আদাম সন্তান! তুমি কি কখনো দুঃখ-কষ্ট দেখেছ? এবং তুমি কি কখনো কঠোরতার মুখোমুখী হয়েছিলে? সে বলবে, না আল্লাহর শপথ, হে আমার প্রভু! আমি কখনো দুঃখকষ্টে পতিত হইনি। আর কখনো কোন কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَغُ فِي النارِ صَبْغَةً ثمَّ يُقَال: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ قَطُّ؟ فَيَقُولُ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ وَيُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صَبْغَةً فِي الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ؟ وَهَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ. فَيَقُولُ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا مَرَّ بِي بُؤْسٌ قَطُّ وَلَا رَأَيْتُ شدَّة قطّ . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (55 / 2807)، (7088) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ) এখানে কথার মধ্যে অতিরিক্ততা আছে তা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, জাহান্নামী দুনিয়ার সমস্ত ভোগ বিলাসের কথা অস্বীকার করবে আর জান্নাতী দুনিয়ার সমস্ত কষ্ট-ক্লান্তির কথা অস্বীকার করবে। কেননা জাহান্নামের কঠোরতা জাহান্নামীকে সব ভুলিয়ে দিবে আর জান্নাতীকে জান্নাতের আরাম-আয়েশ দুনিয়ার সমস্ত কষ্টকে ভুলিয়ে দিবে। অতএব ঐ বিলাসিতায় কি লাভ আছে, যার শেষ হলো জাহান্নাম এবং ঐ দুঃখে কি সমস্যা আছে যার ভবিষ্যত হলো জান্নাত। (মিরকাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী হা. ১৭/২৮০৭)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৭০-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা কম ও সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত লোককে বলবেন, যদি গোটা পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ তোমার থাকত, তাহলে তুমি কি সেগুলোর বিনিময়ে এ শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে? সে বলবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আদমের ঔরসে থাকাকালে এর চেয়েও সহজতর বিষয়ে আমি আদেশ করেছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না, কিন্তু তুমি এটা অগ্রাহ্য করেছ এবং আমার সাথে শারীক করেছ। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ: لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ أَكَنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: أَرَدْتُ مِنْكَ أَهْوَنَ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ أَنْ لَا تُشْرِكَ بِي شَيْئًا فَأَبَيْتَ إِلَّا أَنْ تُشْرِكَ بِي . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6557) و مسلم (51 / 2805)، (7083) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: এটা হাদীসে কুদসী অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর থেকে বর্ণনা করেন,
(أَرَدْتُ مِنْكَ) এই হাদীসের বাহ্যিকটা মু'তাযিলাদের মতাদর্শের সমর্থন করে। কেননা তারা মনে করে যে, আল্লাহর ইচ্ছাশক্তিটা অস্থায়ী, স্থায়ী নয় অথচ আল্লাহ যেমন চিরস্থায়ী অনুরূপ তার ইচ্ছা, তার সমস্ত গুণাবলি স্থায়ী। অতএব এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো (إرارة) শব্দটি (امر) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, আর ইচ্ছা ও আদেশের মধ্যে পার্থক্য হলো, যে জিনিসটা দুনিয়াতে অবশ্যই একমাত্র তার ইচ্ছাতেই চলবে সেটা হলো ইচ্ছা। আর আদেশ হলো যে তার বিরোধিতাও করার শক্তি দেয়া হবে। অতএব আমি (মুল্লা আলী ক্বারী) বলছি, নিশ্চয় ঈমানের আদেশটা সমস্ত মুকাল্লাফ (শারী'আতের আদেশপ্রাপ্ত) ব্যক্তিদের ওপর করা হয়েছে আর ঈমান আনার ইচ্ছাটা কিছু কিছু মানুষের সাথে করা হয়েছে আর কিছু কিছু মানুষের সাথে কুফরীর ইচ্ছা করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৩৩৪, শারহুন নাবাবী হা. ১৭/২০০৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৮৫-[২১] আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সা.) বলেছেনঃ হে মানুষ সকল! তোমরা (আল্লাহর ভয়ে) খুব বেশি বেশি ক্রন্দন কর। যদি কাঁদতে ব্যর্থ হও, তাহলে ক্রন্দনের রূপ ধারণ কর। কেননা জাহান্নামী জাহান্নামের মধ্যে কাঁদতে থাকবে, এমনকি পানির নালার মতো তাদের চেহারার অশ্রু প্রবাহিত হবে। এমন সময় অশ্রুও শেষ হয়ে যাবে এবং রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে, তাতে তার চক্ষুসমূহে এমন গভীরভাবে ক্ষত হবে যে, যদি তাতে নৌকা চালাতে হয় তবে তাও চলবে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ ابْكُوا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِيعُوا فَتَبَاكَوْا فَإِنَّ أَهْلَ النَّارِ يَبْكُونَ فِي النَّارِ حَتَّى تَسِيلَ دُمُوعُهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ كَأَنَّهَا جَدَاوِلُ حَتَّى تَنْقَطِعَ الدُّمُوعُ فَتَسِيلَ الدِّمَاءُ فَتَقَرَّحَ الْعُيُونُ فَلَوْ أَنَّ سُفُنًا أُزْجِيَتْ فِيهَا لجَرَتْ» . رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (15 / 253 ح 4418) * فیہ یزید الرقاشی : ضعیف و عمران بن زید التغلبی : لین و للحدیث لون آخر عند ابن ماجہ (4324) و سندہ ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যাঃ (ابْكُوا) তোমরা তোমাদের গুনাহের উপর অনুতপ্ত হয়ে কাঁদো এবং তোমাদের রবের থেকে ক্ষমার আকাক্ষা করে কাঁদো।
‘আইন বর্ণমালায় পেশ দিয়ে এটা বহুবচন, একবচন হলো ‘আইন, যার অর্থ চোখ। অর্থাৎ চোখ অশ্রুশিক্ত হয়ে যাবে বা রক্তে রঞ্জিত হয়ে যাবে। (سُفُن) এটা (سَفِينَة) এর বহুবচন অর্থ হলো নৌকা। (أُزْجِيَتْ) এটা (الْإِزْجَاءِ) থেকে অর্থ পাঠানো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টি
৫৬৯৫-[২] আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: জাহান্নামে অবিরাম (জিন-ইনসানকে) নিক্ষেপ করা হবে। তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো বেশি কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ না মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তার মধ্যে নিজের পবিত্র পা রাখবেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে চেপে যাবে এবং বলবে, তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের শপথ। যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। আর জান্নাতের মধ্যে লোকেদের প্রবেশের পরও অতিরিক্ত স্থান থেকে যাবে, এমনকি আল্লাহ তা’আলা তার জন্য নতুন নতুন সৃষ্টজীব সৃষ্টি করে তাদেরকে জান্নাতের সেই সমস্ত খালি স্থানে অবস্থান করাবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
আর এ প্রসঙ্গে আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস (حُفَّتِ الجنَّةُ بالمكارِه) “জান্নাতকে কষ্টদায়ক জিনিস দ্বারা ঘিরে দেয়া হয়েছে” ’রিকাক’ (সদয় হওয়া) অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
الفصل الاول ( بَاب خلق الْجنَّة وَالنَّار)
وَعَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَزَالُ جَهَنَّمَ يُلْقَى فِيهَا وَتَقُولُ: هَلْ مِنْ مَزِيدٍ؟ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ العزَّةِ فِيهَا قدَمَه فينزَوي بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ فَتَقُولُ: قَطْ قَطْ بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ وَلَا يَزَالُ فِي الْجَنَّةِ فَضْلٌ حَتَّى يُنْشِئَ اللَّهُ لَهَا خَلْقًا فَيُسْكِنُهُمْ فَضْلَ الْجَنَّةِ . مُتَّفق عَلَيْهِ وذكرَ حَدِيث أنسٍ: «حُفَّتِ الجنَّةُ بالمكارِه» فِي «كتاب الرقَاق»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (7384) و مسلم (38 / 2848)، (7179) 0 حدیث ’’ حفت الجنۃ بالمکارہ ‘‘ تقدم (5160) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (وَلَا يَزَالُ فِي الْجَنَّةِ فَضْلٌ) জান্নাত সংস্কারের কাজ বাড়তেই থাকবে এমনকি আল্লাহ তার জন্য নতুন সৃষ্টজীব সৃষ্টি করবেন আর তারা জান্নাতের অতিরিক্ত অংশে বসবাস করাবেন।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটির হলো দলীল আহলুস সুন্নাহর নিকট সাওয়াব বা প্রতিদান আ'মালের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং কিছু লোককে সৃষ্টি করা হবে এবং কোন আ'মাল ছাড়াই জান্নাতে ঢুকানো হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী হা, ৪৮৪৮, শাহুন নাবাবী হা, ৩৭, ১৭/২৮৪৮)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টি
৫৬৯৭-[8] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। অতঃপর মিম্বারে উঠলেন এবং মসজিদের কিবলার দিকে হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেন, আমি এখন তোমাদেরকে সালাত আদায় করার সময় জান্নাত ও জাহান্নামকে এ দেয়ালের সামনে এক বিশেষ বিশেষ রূপ ও আকৃতিতে দেখতে পেয়েছি, কিন্তু আজকের মতো এত উত্তম এবং এত নিকৃষ্ট এর আগে আর কখনো দেখতে পাইনি। (বুখারী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب خلق الْجنَّة وَالنَّار)
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صلى بِنَا يَوْمًا الصَّلَاةَ ثُمَّ رَقِيَ الْمِنْبَرَ فَأَشَارَ بِيَدِهِ قِبَلَ قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ فَقَالَ: «قَدْ أُرِيتُ الْآنَ مُذْ صَلَّيْتُ لَكُمُ الصَّلَاةَ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ مُمَثَّلَتَيْنِ فِي قِبَلِ هَذَا الْجِدَارِ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ فِي الْخَيْر وَالشَّر» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (749) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مُمَثَّلَتَيْنِ) অর্থাৎ জান্নাত জাহান্নামের সামগ্রিক রূপ এবং বিশ্লেষণমূলক দুটি রূপই দেখেছি।
(فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ) অর্থাৎ আজকের মতো ভালোভাবে আর কোন দিন দেখিনি, ভালো ও মন্দ সবকিছু আজকে স্পষ্টভাবে বিস্তারিত দেখেছি। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৪৭১৯)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭০২-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা যখন জান্নাতে আদম (আঃ)-এর দেহ আকৃতি তৈরি করলেন এবং যতদিন ইচ্ছা তিনি এ অবস্থায় রেখে দিলেন, তখন ইবলীস উক্ত আকৃতির চতুস্পার্শ্বে ঘোরাফেরা করত এবং তার প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল তার মধ্যস্থল শূন্য, তখন সে বুঝতে পারল যে, এটা এমন একটি সৃষ্টিজীব যে নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَمَّا صَوَّرَ اللَّهُ آدَمَ فِي الْجَنَّةِ تَرَكَهُ مَا شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ يَنْظُرُ مَا هُوَ فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يتمالَكُ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (111 / 2611)، (6649) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: “যখন আল্লাহ তা'আলা আদমকে জান্নাতে সৃষ্টি করলেন।” তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার কাছে হাদীসটি অত্যন্ত জটিল মনে হয়; কেননা কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, আল্লাহ তা'আলা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর যখন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন তখন তিনি একজন জীবন্ত মানুষ। কুরআনের স্পষ্ট বাণী এ কথার সমর্থন করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন (وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ) “আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো”- (সূরাহ্ আল-বাকারা ২ : ৩৫)। তবে মাটি থেকে সৃষ্টি ও জান্নাতে আকৃতি প্রদানের মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা মাটি থেকে অংশ নেয়া হয়েছে, তারপর তাকে খামীরের মতো করা হয়েছে, তারপর শুকানোর জন্য আরো কিছু দিন রাখা হয়েছে, এভাবে কয়েকটি ধাপ যাওয়ার পর যখন মানবিক রূপ গ্রহণের উপযুক্ত হয়েছে তখন তাকে জান্নাতে নিয়ে আকৃতি দেয়া ও তার মাঝে আত্মা ফুকা হয়েছে। আর উপরোক্ত আয়াত অর্থাৎ “আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো।” এখানে এমন কিছু বুঝায় না যে, তার মাঝে আত্মা ফুকার পর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
(تَرَكَهُ مَا شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ) অর্থাৎ জান্নাতের যে কোন জায়গায় তাকে বিচরণ করতে ছেড়ে দিলেন। তবে নির্দিষ্ট গাছের কাছে যাওয়া নিষেধের ঘটনা আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ। তাই প্রকৃত অর্থ হবে, নিষিদ্ধ সেই গাছ ব্যতীত জান্নাতের যে কোন জায়গায় তার বিচরণের অনুমোদন ছিল।
(فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ يَنْظُرُ مَا هُوَ) অর্থাৎ ইবলীস প্রথমে আদমকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করল; যাতে তার ষড়যন্ত্র বিফলে না হয়ে যায়।
(فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يتمالَكُ) অর্থাৎ যখন দেখলো আদম পেটবিশিষ্ট, তখনই সে বুঝে নিলো তাকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তার মাঝে শক্তি ও দঢ়তা থাকবে না। বরং প্রতিজ্ঞা নড়বড়ে হবে, অবস্থা পরিবর্তনশীল হবে এবং বিপদ আপদের সম্মুখীন হবে। কেউ কেউ বলেন, ইবলীস বুঝে নিলো, এই সৃষ্টি প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কারো কারো মতে এর অর্থ: এই সৃষ্টি প্ররোচনা বারণ করতে পারবে না। কেউ কেউ বলেন, রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ
৫৭৪২-[8] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার অনুসারীদের সংখ্যা হবে সবচাইতে বেশি। আর আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খুলিয়ে নেব। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَكْثَرُ الْأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الجنةِ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (331 / 196)، (484) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (أَكْثَرُ الْأَنْبِيَاءِ تَبَعًا) অর্থাৎ সর্বাধিক অনুসারী বিশিষ্ট নবী। (تبعٌ) শব্দটি (تَابعٌ) এর বহুবচন। যার অর্থ অনুসারী। অনুসারীদের আধিক্য অনুসৃত ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। তাই এ হাদীসটিতেও রাসূল (সা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।
(أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ الجنةِ) অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশের জন্য সর্বপ্রথম রাসূল (সা.) কড়া নাড়বেন। তখন জান্নাতের দরজা খোলা হবে এবং তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ
৫৭৪৩-[৫] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় এসে তা খোলার জন্য বলব। তখন তার প্রহরী বলবেন, তুমি কে? বলব, আমি মুহাম্মাদ (সা.)! তখন প্রহরী বলবেন, আপনার সম্পর্কে আমাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনার আগে আমি যেন অন্য কারো জন্য এ দরজা না খুলি। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَأَقُولُ: مُحَمَّدٌ. فيقولُ: بكَ أمرت أَن لاأفتح لأحد قبلك . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (333 / 197)، (486) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: পূর্বের হাদীস ও এ হাদীসের মর্ম এক। অর্থাৎ রাসূল (সা.) জান্নাতের দরজা কড়া নাড়িয়ে জান্নাতে প্রবেশের আবেদন করবেন। রাসূল (সা.) কড়া নাড়লে মালাক (ফেরেশতা) জানতে চাইবেন, আপনি কে? জান্নাতের দরজায় পাহারায় নিয়োজিত থাকবেন একজন মালাক, যার নাম ‘খাযিন’। মালাক-এর প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) তাঁর নাম বলে পরিচয় দিলে খাযিন বলবেন, আপনার ব্যাপারে আমাকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আমি যেন আপনার পূর্বে আর কারো জন্য জান্নাতের দরজা না খুলি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মর্যাদা বর্ণনায় হাদীসটি স্পষ্ট। কেননা আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির জন্য জান্নাত তৈরি করেছেন। আর সেই জান্নাত যার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হবে তার শ্রেষ্ঠত্ব সবার উপর, তা একেবারে স্পষ্ট। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ
৫৭৪৪-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের জন্য শাফাআতকারী। আমার নুবুওয়্যাত ও রিসালাতকে এত অধিক সংখ্যক লোকে বিশ্বাস করেছে যে, কোন নবীকেই অনুরূপ সংখ্যক লোক বিশ্বাস করেনি এবং এমন নবীও অতিবাহিত হয়েছেন যার উম্মতের মধ্যে শুধু এক লোক তাকে বিশ্বাস করেছে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَوَّلُ شَفِيعٍ فِي الْجَنَّةِ لَمْ يُصَدَّقْ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مَا صُدِّقْتُ وَإِنَّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ نَبِيًّا مَا صَدَّقَهُ مِنْ أُمَّته إِلَّا رجل وَاحِد» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (332 / 196)، (485) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لَمْ يُصَدَّقْ نَبِيٌّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ مَا صُدِّقْتُ) “আমাকে যেভাবে সত্যায়ন করা হয়েছে কোন নবীকে সেভাবে সত্যায়ন করা হয়নি।” অর্থাৎ আমাকে সত্য বলে মেনে নেয়ার সংখ্যা বেশি তথা আমার অনুসারী বেশি। অথচ এমনও নবী রয়েছেন যাকে মাত্র একজন বিশ্বাস করেছেন। অন্য হাদীসে রয়েছে, এমনও নবী ছিলেন যাকে কেউ বিশ্বাস করেনি।
عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ فَجَعَلَ يَمُرُّ النَّبِيُّ مَعَهُ الرَّجُلُ وَالنَّبِيُّ مَعَهُ الرَّجُلاَنِ وَالنَّبِيُّ مَعَهُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيُّ لَيْسَ مَعَه“أَحَدٌ وَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الأُفُقَ فَرَجَوْتُ أَنْ تَكُونَ أُمَّتِي فَقِيلَ هٰذَا مُوسٰى وَقَوْمُه“ ثُمَّ قِيلَ لِي انْظُرْ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الأُفُقَ فَقِيلَ لِي انْظُرْ هٰكَذَا وَهٰكَذَا فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الأُفُقَ فَقِيلَ هَؤُلاَءِ أُمَّتُكَ
“আমার সামনে (পূর্ববর্তী নবীগণের) উম্মতদের পেশ করা হল। (আমি দেখলাম) একজন নবী যাচ্ছেন, তাঁর সাথে রয়েছে মাত্র একজন লোক এবং আর একজন নবী যার সঙ্গে রয়েছে দু’জন লোক। অন্য এক নবীকে দেখলাম, তাঁর সঙ্গে আছে একটি দল, আর একজন নবী তাঁর সাথে কেউ নেই। আবার দেখলাম, একটি বিরাট দল যা দিগন্ত জুড়ে আছে। আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, এ বিরাট দলটি যদি আমার উম্মাত হত। বলা হলো এটা মূসা ও তাঁর কওম। এরপর আমাকে বলা আপনি লক্ষ্য করে দেখুন, অতঃপর আমি দেখলাম যে, একটি বিশাল জামা'আত দিগন্ত জুড়ে আছে। আবার বলা হলো এ দিকে দেখুন, ওদিকে দেখুন। দেখলাম বিরাট বিরাট দল দিগন্ত জুড়ে ছেয়ে আছে। বলা হলো, ঐ সবই আপনার উম্মাত।” (সহীহুল বুখারী হা. ৫৭৫২)
এ সকল হাদীসের ইঙ্গিত হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মাত সকল নবীর চেয়ে বেশি। (সম্পাদকীয়)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ
৫৭৬৫-[২৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে কবর হতে উঠানো হবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম কবর হতে বের হয়ে আসব। আর যখন লোকেরা দলবদ্ধ হয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা হবে, তখন আমিই হব তাদের অগ্রগামী ও প্রতিনিধি, আর আমিই হব তাদের মুখপাত্র, যখন তারা নীরব থাকবে। আর যখন তারা আটক হবে, তখন আমিই হব তাদের সুপারিশকারী। আর যখন তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে, তখন আমিই তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করব। মর্যাদা এবং কল্যাণের চাবিসমূহ সেদিন আমার হাতে থাকবে। আল্লাহর প্রশংসার পতাকা সেদিন আমার হাতে থাকবে। আমার পতাকার কাছে আদমের সন্তানদের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান ও সম্মানী লোক হব। সেদিন হাজারখানেক সেবক আমার চতুষ্পর্শ্বে ঘোরাফেরা করবে, যেন তারা সুরক্ষিত ডিম কিংবা বিক্ষিপ্ত মুক্তা। [তিরমিযী ও দারিমী, ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا وَأَنَا قَائِدُهُمْ إِذَا وَفَدُوا وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا أَنْصَتُوا وَأَنَا مُسْتَشْفِعُهُمْ إِذَا حُبِسُوا وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا الْكَرَامَةُ وَالْمَفَاتِيحُ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَلِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي يَطُوفُ عَلَيَّ أَلْفُ خادمٍ كأنَّهنَّ بَيْضٌ مُكْنُونٌ أَوْ لُؤْلُؤٌ مَنْثُورٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3610) و الدارمی (1 / 26 ۔ 27 ح 49) * فیہ لیث بن ابی سلیم : ضعیف ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লেখিত মর্মগুলো পূর্বে বিক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ হয়েছে। এ হাদীসে অতিরিক্ত দু' একটি সহ পুনঃবার তা আলোচনা করা হয়েছে। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যে বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে:
এক: (أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا) অর্থাৎ কবর থেকে যখন পুনরুত্থানের জন্য উঠানো হবে সর্বপ্রথম বের হয়ে আমি হাশরের ময়দানের দিকে যাবো।
দুই: (وَأَنَا قَائِدُهُمْ إِذَا وَفَدُوا) অর্থাৎ যখন সবাই আল্লাহ তা'আলার কাছে আগমন করবে তখন আমি তাদের নেতা ও পরিচালক হব।
তিন: (وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا أَنْصَتُوا) সবাই যখন চুপ থাকবে, কেউ ওযর প্রকাশ করার সাহস পাবে না, সবাই পেরেশান থাকবে, তখন আমি সবার পক্ষ থেকে কথা বলব। সেদিন আমাকে ছাড়া কাউকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে না।
চার: (وَأَنَا مُسْتَشْفِعُهُمْ إِذَا حُبِسُوا) সবাইকে যখন আটকে দেয়া হবে তখন আমি সবার সুপারিশকারী হব। রাসূল (সা.)-এর বিশেষিত এই সুপারিশ বিচারকার্য শুরু করার সুপারিশ। কিয়ামতের ভয়াবহ ময়দানে সবার আকাঙ্ক্ষা থাকবে বিচারকার্য দ্রুত শুরু হয়ে যাওয়া। কিন্তু কেউ এর জন্য সুপারিশের সাহস করবে না। হাদীসের সকল গ্রন্থে বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
পাঁচ: (وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا) যেদিন সবাই নিরাশ হয়ে যাবে সেদিন আমি সবার সুসংবাদদাতা। নিরাশার সময় সুসংবাদ দিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করা আমার বৈশিষ্ট্য। বাহ্যত এই তিন বৈশিষ্ট্যের মর্ম এক। সবগুলোর সার হলো, কিয়ামত দিবসে কেউ যখন বিচারকার্য শুরু করার আবেদনের সাহস করবে না, তখন আমি কথা বলে সুপারিশ করে সবার জন্য সুসংবাদ এনে দিব।
ছয়: (وَالْمَفَاتِيحُ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي) অর্থাৎ সেদিন আমার হাতে চাবি থাকবে। চাবি দ্বারা জান্নাতে প্রথম প্রবেশ উদ্দেশ্য হবে। জান্নাতে সবার আগে প্রবেশের বৈশিষ্ট্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর, যা পূর্বে অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
সাত: (وَلِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي) প্রশংসার ঝাণ্ডা সেদিন আমার হাতে থাকবে। প্রশংসার ঝাণ্ডা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে থাকবে এবং এর দ্বারা তার মর্যাদা বুঝানো হয়েছে। আর তা রাসূল (সা.)-এর হাতে থাকার আলোচনা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
আট: (وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي) আমি আমার প্রতিপালকের কাছে আদম সন্তানদের মাঝে সবচেয়ে সম্মানী। রাসূল আদম সন্তানদের সরদার ও সবচেয়ে সম্মানী মর্মে পূর্বে আমরা কয়েকটি হাদীস দেখেছি।
(أَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا) যখন মু'মিন বান্দাগণ আল্লাহর রহমত, দয়া, অনুগ্রহ হতে নিরাশ হবে। তারা ভয় করবে হয়তো তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে তখন আমি তাদের সুসংবাদ দিব।
হাশরের ময়দান বিভিন্ন ধরনের অবস্থা হবে। কোন স্থান হবে যেখানে মানুষেরা ওযর পেশ করবে। আবার কোন স্থান হবে যেখানে কথা বলা ও ওযর পেশ করা নিষিদ্ধ থাকবে। এক আয়াতে কাফিরদের কথা বলা ও ওযর পেশ করার কথা রয়েছে। কিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে কবর থেকে উত্থিত করা হবে। তখন আমি সর্বপ্রথম কবর থেকে বের হয়ে আসব। যখন সকলে তাদের রবের নিকট যাবে ওযর পেশ করার জন্য ঐ সময় সকল মানুষের সামনে আমি আল্লাহ তা'আলার সাথে কথা বলব। মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করবেন। তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে কথা বলার জন্য সুযোগ দেয়া হবে না।
এ মর্মে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, “এটা এমন একদিন যেদিন না তারা কথা বলবে, আর তাদেরকে অজুহাত পেশ করার অনুমতিও দেয়া হবে না”- (সূরাহ আল মুরসালাত ৭৭: ৩৫-৩৬)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)