হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫৫৯৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা

৫৫৯৮-[৩৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের কবীরা গুনাহকারীগণ বিশেষভাবে আমার শাফা’আত লাভ করবে (অন্য উম্মতেরা শাফা’আত লাভ করতে পারবে না)। (তিরমিযী ও আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل: «شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد صحیح ، رواہ الترمذی (2435 وقال : حسن صحیح غریب) و ابوداؤد (4739) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: কবীরা গুনাহগারদের ক্ষমার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শাফা'আত হলো খাস, এটা অন্য কোন উম্মতের জন্য হবে না। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো কবীরা গুনাহের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য আমার শাফা'আত একমাত্র বিশেষায়িত।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আতের মাযহাব বা মত হলো কুরআনুল কারীমের সরীহ বা স্পষ্ট আয়াত দ্বারা গুনাহগারদের জন্য শাফা'আত প্রমাণিত। যেমন আল্লাহর বাণী: (یَوۡمَئِذٍ لَّا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَهُ الرَّحۡمٰنُ وَ رَضِیَ لَهٗ قَوۡلًا) “সেদিন সুপারিশ কারো কাজে আসবে না, কিন্তু দয়াময় (আল্লাহ) যাকে অনুমতি দিবেন এবং তার কথার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।” (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১০৯)
এছাড়া মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা কিয়ামাতের শাফা'আত প্রমাণিত। এটা সালাফে সালিহীন এবং তৎপরবর্তী আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াস জামা'আতের সর্ববাদী সম্মত মত। কিন্তু খারিজী সম্প্রদায় এবং কতিপয় মু'তাযিলা আহলে কাবায়িরদের জন্য শাফা'আত বৈধ হওয়া এবং গ্রহণ হওয়াকে অস্বীকার করে থাকে, ফলে তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে মনে করে।
যেমন মহান আল্লাহর বাণী: (فَمَا تَنۡفَعُهُمۡ شَفَاعَۃُ الشّٰفِعِیۡنَ) অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না।” (সূরাহ্ আল মুদ্দাসসির ৭৪ : ৪৮)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, (.... مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ حَمِیۡمٍ وَّ لَا شَفِیۡعٍ یُّطَاعُ) “...সেদিন যালিমদের কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং এমন কোন সুপারিশকারীও থাকবে না যার কথা গ্রহণ হয়।” (সূরাহ আল মু'মিন ৪০ : ১৮)
মু'তাযিলা ও খারিজীদের ধারণা ও প্রদত্ত দু’টি দলীলের জওয়াবে আমরা বলব যে, উক্ত আয়াতদ্বয় কাফিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, আর যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শিরক। তারা শাফা'আতের তাবীল বা ব্যাখ্যায় বলে থাকে যে, শাফা'আত হবে জান্নাতীদের মর্যাদা বাড়ানোর জন্য (কবীরা গুনাহগারদের মুক্তির জন্য নয়) তাদের এ ব্যাখ্যা বাতিল বা অগ্রহণযোগ্য। কবীরা গুনাহগার জাহান্নামীদের জন্য শাফা'আত গ্রহণের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ভূরিভূরি হাদীস কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। বক্ষমাণ হাদীসটি এর প্রামাণ্য দলীল।

শাফা'আত পাঁচ প্রকার:
* প্রথম প্রকার শাফাআত যা আমাদের নবীর জন্য খাস বা বিশেষিত; সেটা হলো হাশরের মাঠের দুঃসহ অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দ্রুত হিসাবের ব্যবস্থার জন্য শাফা'আত।
* দ্বিতীয় প্রকার হলো এক শ্রেণির মানুষকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের জন্য শাফা'আত। এটাও আমাদের নবীর মাধ্যমে সম্পাদিত হবে।
* তৃতীয় প্রকার হলো ঐ সম্প্রদায়ের জন্য শাফা'আত যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যাবে। তাদের জন্য আমাদের নবী (সা.) শাফা'আত করবেন এবং আল্লাহ তা'আলা অন্য যাদের চান সেও শাফা'আত করবেন।
* চতুর্থ প্রকার তাদের জন্য শাফা'আত যারা গুনাহের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। তাদের জন্য আমাদের নবী শাফা'আত করবেন, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) শাফা'আত করবেন ঐ সকল গুনাহগারদের মুমিন ভাইয়েরা শাফা'আত করবেন। এরপর যারা “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” পাঠ করেছে আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং নিজে তাদের বের করবেন।
* পঞ্চম প্রকার শাফাআত হলো জান্নাতীদের জান্নাতের মধ্যে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফা'আত, অবশ্য এ শাফা'আতকে খারিজী ও মুতাযিলীগণ অস্বীকার করে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪৩৫)