আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস পাওয়া গেছে ৪৫৩৬ টি

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা

৪২৭৭-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিছু পান করার সময়) পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُتَنَفَّسَ فِي الْإِنَاءِ أَوْ يُنْفَخَ فِيهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার সময় পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। এই ভয়ে মুখের লালা বা থুথু পানীয়ের মধ্যে পড়তে পারে।

সবচেয়ে উত্তম হলো নিঃশ্বাস নিবে, না ফুঁ দিবে, না অপেক্ষা করবে ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত আর যদি কোন ময়লা দেখে তাহলে তা আঙ্গুল, কাঠি বা অন্য কোন জিনিস দিয়ে উঠাবে বা সরাবে। আর গরম অবস্থায় খাবে না, কেননা বারাকাত চলে যায় আর গরম হলো জাহান্নামীদের খাদ্য। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭২৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা

৪২৭৮-[১৬] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা উটের ন্যায় এক শ্বাসে পান করবে না; বরং দু’ কিংবা তিন শ্বাসে পান করবে। আর যখন পান করবে (শুরুতে) বিসমিল্লা-হ পড়বে এবং যখন (পানান্তে) পেয়ালা মুখ হতে আলাদা করবে, তখন আলহামদুলিল্লা-হ বলবে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَشْرَبُوا وَاحِدًا كَشُرْبِ الْبَعِيرِ وَلَكِنِ اشْرَبُوا مَثنى وثُلاثَ وَسَمُّوا إِذَا أَنْتُمْ شَرِبْتُمْ وَاحْمَدُوا إِذَا أَنْتُمْ رفعتُم» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যাঃ (وَسَمُّوا إِذَا أَنْتُمْ شَرِبْتُمْ) যখন তোমরা পান করার ইচ্ছা পোষণ কর, বল- ‘‘বিসমিল্লা-হি’’ আর যখনই পাত্রকে মুখ থেকে সরাবে অথবা পানের শেষে আল্লাহর প্রশংসা করবে। এমনটি মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন।

আমি (ভাষ্যকার) বলি : হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) তিনি ফাতহুল বারীতে হাদীস নিয়ে এনেছেন যা ত্ববারানীতে এসেছে সহীহ সনদে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَشْرَبُ فِي ثَلَاثَةِ أَنْفَاسٍ إِذَا أَدْنَى الْإِنَاءَ إِلٰى فِيهِ يسمي الله فإذا أخره حمد الله بفعل ذلك ثلاثا

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন নিঃশ্বাসে পান করতেন। আর যখনই পাত্রকে মুখের নিকট নিয়ে আসে তখন বিসমিল্লা-হ বলতেন আর যখন বিলম্বিত করতেন আলহামদুলিল্লা-হ বলতেন এমনটি তিনবার করেছেন।

মূলত হাদীসটির উদ্দেশ্য পানের শুরুতে বিসমিল্লা-হ এবং শেষে আলহামদুলিল্লা-হ বলা।

(তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৮৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পানীয় দ্রব্যের বর্ণনা

৪২৮৩-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায়, তখন সে যেন এ দু’আটি পড়ে- اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَاَطْعِمْنَا خَيْرًا مِّنْهُ. ’’আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়া আত্ব’ইমনা- খয়রম্ মিনহু’’ (হে আল্লাহ! তার মধ্যে আমাদের জন্য বারাকাত দাও এবং তা অপেক্ষা উত্তম খাদ্য দান করো)। আর যখন দুধ পান করবে তখন যেন বলে, ’’আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়াযিদনা- মিনহ’’ (হে আল্লাহ! এর মধ্যে আমাদের জন্য বারাকাত দাও এবং তা আরো অধিক দান করো)। কেননা দুধ ব্যতীত অন্য কোন জিনিসই খাদ্য ও পানীয় উভয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَامًا فَلْيَقُلِ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ. وَإِذَا سُقِيَ لَبَنًا فَلْيَقُلِ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ فَإِنَّهُ لَيْسَ شَيْء يجزى مِنَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ إِلَّا اللَّبَنُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে দুধের চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই। এজন্য নবজাত শিশুর খাদ্য হলো দুধ আর তাতে আল্লাহর সুস্পষ্ট নিদর্শনও রয়েছে, যেমন বলেনঃ

نُسْقِيكُمْ مِمَّا فِي بُطُونِه# مِنْ بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِلشَّارِبِينَ

‘‘তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমরা তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমূহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দু যা পানকারীদের জন্য উপাদেয়।’’ (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ৬৬)

হাদীসের শেষাংশে উত্তম হওয়ার কারণও বর্ণনা করা হয়েছে।

(فَإِنَّهٗ لَيْسَ شَيْء يُجْزِىُ مِنَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ إِلَّا اللَّبَنُ) কেননা দুধ ব্যতীত অন্য কোন জিনিসই খাদ্য ও পানীয় উভয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাক্বী‘ ও নবীয সম্পর্কীয় বর্ণনা

৪২৮৮-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য রাত্রের প্রথম ভাগে নবীয তৈরি করা হত। তিনি তা পরবর্তী দিন সকালে, এর পরের রাত্রে, দ্বিতীয় দিনে ও দ্বিতীয় রাত্রে এবং তৃতীয় দিন ’আসর পর্যন্ত পান করতেন। এরপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকত, তা চাকর-বকরদেরকে পান করাতেন অথবা ফেলে দেয়ার জন্য নির্দেশ করতেন, তখন তা ফেলে দেয়া হত। (মুসলিম)[1]

بَابُ النَّقِيعِ وَالْأَنْبِذَةِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُنْبَذُ لَهُ أَوَّلَ اللَّيْلِ فَيَشْرَبُهُ إِذَا أَصْبَحَ يَوْمَهُ ذَلِكَ وَاللَّيْلَةَ الَّتِي تَجِيءُ وَالْغَدَ وَاللَّيْلَةَ الْأُخْرَى وَالْغَدَ إِلَى الْعَصْرِ فَإِنْ بَقِيَ شَيْءٌ سَقَاهُ الْخَادِمَ أَوْ أَمَرَ بهِ فصُبَّ. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যাঃ হাদীস প্রমাণ করে নবীয বৈধ যতক্ষণ না তার মিষ্টতা পরিবর্তন হয় এবং নেশা পরিগণিত না হয়, এটার উপর সকলের ইজমা।

(سَقَاهُ الْخَادِمَ أَوْ أَمَرَ بِه فَصُبَّ) চাকরদের পান করাতেন অথবা ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিতেন। কখনও কখনও পান করাতেন আবার কখনও ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিতেন, এটা নবীযের অবস্থায় উপর নির্ভর করে। যদি নবীযে নেশার ছাপ স্পষ্ট না হয় অথবা নেশার ভাব হওয়ার পূর্বেই চাকরদেরকে পান করাতেন আর ফেলে দিতেন না, কারণ অযথা সম্পদ নষ্ট করা হারাম। আর যদি নেশার ছাপ চলে আসে এবং মদে রূপান্তরিত হয় তাহলে খাওয়াতেন না এবং ফেলে দিতে বলতেন, কারণ তা হারাম এবং অপবিত্র হয়ে গেছে।

আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস সকালের নবীয বিকালে আর বিকালের নবীয সকালে পান করা। ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসের বিপরীত না। কেননা ঋতু বা মওসুমের পরিবর্তনে নবীযের মধ্যে নেশা সৃষ্টি হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে সময়ের ব্যবধান হয়। যেমন গ্রীষ্মের মওসুমে কোন জিনিস যত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় শীতের সময়ে তত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না। অতএব ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস গরম বা গ্রীষ্মের সময়ে যাতে এক দিনের ঊর্ধ্বেই নষ্ট হয়ে যায়। আর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস অন্য সময়ে যে সময়ে তিনদিনের পূর্বে নষ্ট হয় না। অথবা হতে পারে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস স্বল্প নবীয একদিনে সমাপ্ত হয়। আর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস অধিক পরিমাণ নবীয যা একদিনে সমাপ্ত হয় না। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০০৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - থালা-বাসন ইত্যাদি ঢেকে রাখা প্রসঙ্গে

৪৩০৩-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন একটি ইঁদুর জ্বলন্ত একটি সলতে টেনে আনল এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখের চাটাইয়ের উপর রেখে দিলো, যার উপরে তিনি উপবিষ্ট ছিলেন। ফলে তার এক দিরহামের জায়গা পরিমাণ জ্বলে গেল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ (রাতে) যখন তোমরা ঘুমাবে, তখন চেরাগ, বাতি ইত্যাদি নিভিয়ে ফেলবে। কেননা শয়তান এ জাতীয় অনিষ্টকর প্রাণীকে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে তারা তোমাদের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: جَاءَتْ فَأْرَةٌ تَجُرُّ الْفَتِيلَةَ فَأَلْقَتْهَا بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْخَمْرَةِ الَّتِي كَانَ قَاعِدًا عَلَيْهَا فَأَحْرَقَتْ مِنْهَا مِثْلَ مَوْضِعِ الدِّرْهَمِ فَقَالَ: «إِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوا سُرُجَكُمْ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدُلُّ مِثْلَ هَذِهِ عَلَى هَذَا فَيَحْرِقُكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَهَذَا الْبَاب خَال من الْفَصْل الثَّالِث

ব্যাখ্যাঃ (إِذَا نِمْتُمْ) যখন তোমরা ঘুমাও ঘুমকে নির্দিষ্টের কারণ হলো অধিকাংশ সময় উদাসীনতা ঘুমের মাধ্যমে অর্জিত হয়। আর এজন্য বলা হয় যখন উদাসীনতা আসে বিবেকবর্জিত কাজ সংঘটিত হয়।

(فَيَحْرِقُكُمْ) তোমাদের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়, এর কারণ শয়তানই। যেমন আল্লাহ বলেন,

(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا) ‘‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু তাকে প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর’’- (সূরাহ্ আল ফাত্বির ৩৪ : ৬)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৩৭৮-[৭৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু রেশমের তৈরি কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। তবে (চার আঙ্গুল পরিমাণ) রেশমের ঝালর অথবা কাপড়ে নকশা হিসেবে ব্যবহারে কোন দোষ নেই। (আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: إِنَّمَا نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ثَوْبِ الْمُصْمَتِ مِنَ الْحَرِيرِ فَأَمَّا الْعَلَمُ وَسَدَى الثَّوْبِ فَلَا بَأْسَ بِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যাঃ ইবনু রসলান বলেন, (الثَّوْبُ الْمُصْمَتِ مِنَ الْحَرِيرِ) অর্থ হচ্ছে নিরেট রেশমের তৈরি কাপড়। যে কাপড়ে অন্য কোন উপাদান নেই। কিন্তু ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘‘আস্ সাওবুল মুসমাত মিনাল হারীর’’ হলো যে কাপড়ের শুধু লম্বার দিকের ঝালর বা প্রস্তের দিকের ঝালর রেশমী সূতায় তৈরি। মূলকথা হলো লম্বার দিকের ঝালর যদি রেশমের হয় কিন্তু প্রস্তের দিকের ঝালর রেশমী সূতার না হয়ে অন্য কোন সূতা বা পশমের হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। কারণ প্রস্তের দিকের ঝালর ছাড়া কাপড় পূর্ণতা পায় না। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যদি সামান্য কিছু রেশমী ঝালর হিসেবে কাপড়ে ব্যবহার করা হয় তা পুরুষের জন্য হারাম হবে না। এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামার মত। তারা চার আঙ্গুল পরিমাণ রেশম ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। তবে সাহাবীগণের মধ্যে কেউ কেউ যেমন ইবনু ‘উমার (রাঃ) আবার তাবি‘ঈদের মধ্য থেকে কেউ কেউ যেমন ইবনু সীরীন প্রমুখ এই সামান্য রেশমী ব্যবহারও পুরুষের জন্য হারাম মনে করেন। তারা দলীল দেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিস্‌সী কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। কিস্‌সী কাপড় হলো যে কাপড়ের সাথে রেশমীর সংমিশ্রণ রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ইতিপূর্বে হয়ে গেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৫১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৩৮০-[৭৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মনে যা চায় তা খাও এবং যা ইচ্ছা হয় পরিধান করো, যে পর্যন্ত না তুমি দু’টির মধ্যে পতিত হও- অপব্যয় ও অহংকার। (বুখারী হাদীসটি তাঁর কিতাবের শিরোনামে বর্ণনা করেছেন।)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كُلْ مَا شِئْتَ وَالْبَسْ مَا شِئْتَ مَا أَخْطَأَتْكَ اثْنَتَانِ: سَرَفٌ وَمَخِيلَةٌ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ فِي تَرْجَمَة بَاب

ব্যাখ্যাঃ এ মাওকূফ হাদীসে যা ইচ্ছা খাওয়ার ও যা ইচ্ছা পরার যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা অনুমতি অর্থে ব্যবহৃত হবে। তবে খাওয়া ও পোশাক পরার ক্ষেত্রে কোন ধরনের অপচয়, অপব্যয় করা বৈধ নয়। ব্যয় করার ক্ষেত্রে অপব্যয় না করার নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا

‘‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।’’ (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫ : ৬৭)

খাওয়া ও পোশাক পরার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন এসব ক্ষেত্রে অহংকার চলে না আসে। অপচয় ও অহংকার থেকে মুক্ত থেকে প্রয়োজন অনুয়ায়ী খাওয়া ও পোশাক পরা বৈধ এবং জরুরী। তবে ইসলামে খাওয়া ও পরিধানের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-বিধান রয়েছে যা কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সেগুলো মেনে খাওয়া ও পরিধান করা উচিত। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা

৪৩৮৫-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির হাতে একটি স্বর্ণের আংটি দেখতে পেলেন। তখনই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার হাত হতে তা খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ কি জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে নিজ হাতে রাখতে চায়? (এটা বলে) অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলে লোকেরা তাকে বলল, তুমি তোমার আংটিটি তুলে নাও এবং তা হতে (অন্য কোনভাবে) উপকৃত হও। তখন সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি তা কখনো তুলে নেব না, যা স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেলে দিয়েছেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْخَاتَمِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِي يَدِ رَجُلٍ فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ فَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ؟» فَقِيلَ لِلرَّجُلِ بَعْدَمَا ذَهَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خُذْ خَاتَمَكَ انْتَفِعْ بِهِ. قَالَ: لَا وَاللَّهِ لَا آخُذُهُ أَبَدًا وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে আংটিওয়ালা লোকটির কথা; যখন তার সাথীরা তাকে বলেছিল আংটি উঠিয়ে নাও। তখন তিনি বলেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ফেলে দিয়েছেন তা আমি আর নেব না। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ পালন ও নিষেধাজ্ঞামূলক কথাবলী বর্জনের উপর দৃঢ় প্রত্যয় প্রমাণিত হয়। আর দুর্বল ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিষিদ্ধ কোন কিছুর অনুমোদন অনুসন্ধান না করার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করা বুঝায়। তবে আংটিওয়ালা ব্যক্তি যদি আংটিটি উঠিয়ে নিতেন এবং বিক্রি কিংবা যার এটার প্রয়োজন রয়েছে তাকে সাদাকা করে দিতেন তাতে দোষের কিছু ছিল না। কেননা আংটিটি পরিবর্তন করে অন্যান্য কিছু বানানো যাবে না বা এর দ্বারা অন্য কোন উপকার নেয়া যাবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কিছুই বলেননি। বরং তিনি তা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। অতএব উক্ত আংটি দ্বারা অন্য কাজ যেমন- আংটি থেকে মহিলাদের অলংকার ও তা বিক্রি করে অন্য যে কোন কাজ করা বৈধ। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৯০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা

৪৪০৫-[২৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আংটি (মোহর) প্রস্তুত করলেন এবং তা পরলেন। পরে (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেনঃ এ আংটিটি আজ আমাকে তোমাদের হতে গাফিল (অমনোযোগী) করে রেখেছে। ফলে আমি কখনো আংটির দিকে তাকাই আবার কখনো তোমাদের দিকে। এ কথা বলে তিনি আংটিটি খুলে ফেললেন। (নাসায়ী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّخَذَ خَاتَمًا فَلَبِسَهُ قَالَ: «شَغَلَنِي هَذَا عَنْكُمْ مُنْذُ الْيَوْمَ إِلَيْهِ نَظْرَةٌ وإِليكم نظرة» ثمَّ أَلْقَاهُ. رَوَاهُ النَّسَائِيّ

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) শারহু মুসলিমে উল্লেখ করেছেন যে, রৌপ্যের আংটি পুরুষদের জন্য বৈধ- এ ব্যাপারে সকল বিদ্বানদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে সিরিয়ার পূর্ববর্তী কতিপয় ‘উলামা বাদশাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য আংটি পরিধান করা মাকরূহ বলেছেন এবং এ দাবির স্বপক্ষে তারা একটি আসার (সাহাবীদের কথা) উল্লেখ করেছেন, যা শায (বিরল) এবং প্রত্যাখ্যাত। কেননা আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার হাতের আংটি ফেলে দিলেন তখন সাহাবীগণও তাদের আংটি ফেলে দিলেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানাতেই সাহাবীগণ বাদশা না হয়েও আংটি পরিধান করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা

৪৪১৩-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্যান্ডেলে দু’টি ফিতা ছিল এবং প্রত্যেকটি ফিতা ছিল দু’ ভাগ। (তিরমিযী)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ لِنَعْلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِبَالَانِ مُثَنًّى شراكهما. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা

৪৪১৭-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কেউ যখন বসে, তখন সুন্নাত হলো স্বীয় জুতা খুলে বসবে এবং নিজের এক পার্শ্বে তা রেখে দেবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: مِنَ السُّنَّةِ إِذَا جَلَسَ الرَّجُلُ أَنْ يَخْلَعَ نَعْلَيْهِ فَيَضَعَهُمَا بِجَنْبِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

ব্যাখ্যাঃ ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় জুতাদ্বয় খুলে তার বামপার্শ্বে রাখতেন’’ ডান পার্শ্বে রাখতেন না ডান পার্শ্বের সম্মানে। সামনে রাখতেন না ক্বিবলার সম্মানে এবং পিছনে রাখতেন চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় না। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) অনুরূপ বর্ণনাই করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৩৪)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৫-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে সমস্ত ব্যাপারে কোন নির্দেশ (বা ওয়াহী) নাযিল হয়নি, সেসব বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে কিতাবদের সাথে সামঞ্জস্য স্থাপন করাকে পছন্দ করতেন। তৎকালের আহলে কিতাবগণ তাদের মাথার চুলকে সোজা ছেড়ে রাখত। আর মুশরিকরা সিঁথি কেটে চুলগুলোকে দু’ভাগ করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিই সোজাসুজি পিছনের দিকে ঝুলিয়ে রাখতেন (সিঁথি কাটত না)। অবশ্য পরে তিনি সিঁথি কেটেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيهِ وَكَانَ أَهْلُ الْكِتَابِ يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ وَكَانَ الْمُشْرِكُونَ يَفْرِقُونَ رؤوسهم فَسَدَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاصِيَتَهُ ثمَّ فرق بعدُ

ব্যাখ্যাঃ (يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيهِ) অর্থাৎ যেসব বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী নাযিল হয়নি সেসব বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণ ভালোবাসতেন।

বিভিন্ন বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে বিরোধিতা করার কথা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। ইতোপূর্বে খিযাবের হাদীসে আমরা দেখেছি যে, আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করতেই খিযাব করতে বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাই ওয়াহী না আসা বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণের ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী, কাযী ‘ইয়ায-এর বরাতে বলেনঃ যেসব বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী আসেনি সেসব বিষয়ে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্যের ব্যাখ্যায় ‘উলামারা ইখতিলাফ করেন। কেউ কেউ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কাজটি ইসলামের সূচনালগ্নে আহলে কিতাবদের মনকে আকৃষ্ট করা এবং মূর্তি পূজার বিরোধিতায় তাদের সাথে তাঁর ঐকমত্য দেখানোর জন্য ছিল। পরবর্তীতে যখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আকৃষ্ট করা থেকে অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং ইসলামকে সব দীনের উপর জয় দান করেন, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে বিরোধিতার ঘোষণা দেন। যেমন চুলে খিযাবের বিষয়। আবার কেউ কেউ বলেন, এমনও হতে পারে যে, যেসব বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ওয়াহী অবতীর্ণ হয়নি, সেসব বিষয়ে তাঁকে আহলে কিতাবদের শারী‘আতের অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল। আর এটা নিশ্চয় তাদের শারী‘আতের ঐসব বিষয়ে যেগুলোকে তারা পরিবর্তন করেনি। (শারহুন নাবাবী হাঃ ২৩৩৬, অধ্যায় : রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুলের সিফাত)

(يَسْدُلُونَ أَشْعَارَهُمْ) তারা তাদের চুলকে ছেড়ে দিত। চুলকে ছেড়ে দেয়া বলতে, চুলকে দুই ভাগে ভাগ করে ডান দিকে এক ভাগ এবং বাম দিকে এক ভাগ না করেই তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় মাথার আশপাশে ছেড়ে দেয়া।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর শারহু মুসলিমে রয়েছে, ‘উলামায়ে কিরাম বলেনঃ চুলের ক্ষেত্রে ‘সাদল’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, চুলকে কপালের উপর ছেড়ে দেয়া এবং তাকে বাটির মতো বানিয়ে ফেলা। আর ‘ফারক’ তথা সিঁথি হলো চুলকে একে অপর থেকে পৃথক করা। কেউ কেউ বলেন, ‘সাদল’ হচ্ছে, চুলকে দ্বিখন্ড- বণ্টন না করে পিছন দিকে ছেড়ে দেয়া। আর ‘ফারক’ বা সিঁথি হলো তাকে দ্বিখন্ড- ভাগ করা।

(فَسَدَلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاصِيَتَهٗ) তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে ‘সাদল’ করতেন। অর্থাৎ মদীনায় এসে আহলে কিতাবদের সাথে ঐকমত্য পোষণ করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদ্ল করেন।

(ثُمَّ فَرَّقَ بَعْدُ) এরপর সিঁথি করেন। অর্থাৎ মদীনার আসার পর কিছুকাল যাওয়ার পর সিঁথি করেন। ইবনুল মালিক বলেনঃ জিবরীল এসে তাকে সিঁথি করার নির্দেশ দেন। তাই তিনি সিঁথি করেন এবং মুসলিমরাও তাদের মাথা সিঁথি করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখ্য যে, চুলে ‘সাদ্ল’ তথা সিঁথি না করে ছেড়ে দেয়া অথবা ‘ফার্ক’ তথা সিঁথি করা কোনটি শার‘ঈ দিক নির্দেশনা হিসেবে ছিল না। তাই রসূলের সিঁথির ‘আমলের মাধ্যমে ‘সাদল’-এর হুকুম রহিত হয়ে গেছে এমন নয়।

ফাতহুল বারীতে রয়েছে, ‘সাদল’ মানসূখ বা রহিত হলে সব সহাবা বা অধিকাংশরা তা ছেড়ে সিঁথি করতেন। আর সাহাবীদের থেকে বর্ণিত যে, তাদের কেউ কেউ সিঁথি করতেন, কেউ কেউ সিঁথি করতেন না। অথচ কেউ কাউকে দোষারোপ করতেন না। আর সহীহ বর্ণনায় রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুল বাবরী ছিল, তাতে সিঁথি হলে তিনি তা সিঁথি করতেন, না হলে ছেড়ে দিতেন। অতএব বিশুদ্ধ মত হলো, সিঁথি মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯১৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৮-[১০] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারিণী নারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেনঃ তাদেরকে তোমাদের ঘর হতে বের করে দাও। (বুখারী)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: لعن الله الْمُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَقَالَ: «أخرجوهم من بُيُوتكُمْ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যাঃ (الْمُخَنَّثِينَ) শব্দটির ‘নূন’ হরফে তাশদীদ সহকারে যবর বা যের দিয়ে দু’ভাবেই উচ্চারণ করা যায়। তবে যবর দিয়ে পড়া অধিক প্রসিদ্ধ। এর অর্থ হলো নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী। এই সাদৃশ্য অবলম্বন অবয়ব, পোশাক, খিযাব, আওয়াজ, আকৃতি, কথা বলা এবং যে কোন চাল-চলনে হতে পারে। এ কর্মটি নিষেধ। কেননা এতে আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটানো হয়।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মুখান্নাস অর্থাৎ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী ব্যক্তি দুই প্রকারের। এক : যে সৃষ্টিগতভাবে কিছুটা নারী প্রকৃতির। সে কৃত্রিমভাবে নারীর সাদৃশ্যতা অবলম্বন করেনি। এতে কোন দোষ, গোনাহ নেই। কেননা সে অপারগ। দুই : যে কৃত্রিমভাবে চাল-চলন, কথা-বার্তা এবং অবয়ব ইত্যাদিতে নারীর আকৃতি অবলম্বন করে, সে ব্যক্তির এ কাজ দোষণীয় যার অভিশাপ হাদীসে এসেছে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৮৫)

(الْمُتَرَجِّلَاتِ) ‘জিম’ অক্ষরে তাশদীদ ও যের দিয়ে উচ্চারিত। অর্থাৎ পুরুষের সাথে চাল চলন, আকার আকৃতি, হাঁটা চলা এবং উচ্চ আওয়াজ ইত্যাদিতে সাদৃশ্য অবলম্বনকারিণী নারী। এ বৈশিষ্ট্যের নারী পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করা পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনের মতই দোষণীয়। তবে জ্ঞান ও বিচক্ষণতায় নারী পুরুষের সাদৃশ্য হওয়া দোষণীয় নয়। বরং তা প্রশংসিত। যেমন বর্ণনায় রয়েছে- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) পুরুষের মতো রায় তথা অভিমতের অধিকারিণী ছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৮৫)

(أخرجوهم من بيوتكم) তাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও। অর্থাৎ তোমাদের এলাকা ও শহর থেকে বের করে দাও। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

সহীহুল বুখারীর বর্ণনায় আরো রয়েছে-

قال فأخرج النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فلانا وأخرج عمر فلانا অর্থ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুককে বের করে দেন এবং ‘উমার  অমুককে বের করে দেন। ‘আনজাশা’ নামক এক কালো দাস নারীদের বেশভূষা অবলম্বনের কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এলাকা থেকে বের করে দেন বলে বর্ণনায় রয়েছে। ‘উমার (রাঃ) যাকে বের করেন তার নাম কোন বর্ণনায় আসেনি। তবে কোন কোন বর্ণনায় فلانا এর স্থলে فلانة শব্দ এসেছে। অর্থাৎ তিনি কোন এক নারীকে পুরুষের বেশ অবলম্বনের কারণে বের করেছিলেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৮৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৯-[১১] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর লা’নাত সে পুরুষদের ওপর যারা নারী সাদৃশ্য ধারণ করে এবং সে সকল নারীদের ওপর যারা পুরুষ সাদৃশ্য ধারণ করে। (বুখারী)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ والمتشبِّهات من النِّسَاء بِالرِّجَالِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যাঃ বর্ণিত হাদীস ও উপরোক্ত হাদীসের মর্ম একই। উভয় হাদীসে কেবল শব্দের ভিন্নতার মাঝে কম-বেশি হয়েছে। হাদীসটি উপরোক্ত হাদীসের অর্থকে পরিষ্কার করে দিচ্ছে।

‘আল্লামা ইবনু হাজার বলেনঃ নিষিদ্ধ সাদৃশ্য হলো কথাবার্তা ও চাল-চলনে। তবে পোশাকের ডিজাইন বিভিন্ন দেশের রীতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোন কোন সম্প্রদায়ে পুরুষ ও মহিলার পোশাকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তবে মহিলারা হিজাব ও পর্দার মাধ্যমে পুরুষ থেকে আলাদা হবে।

আমার সাদৃশ্যতার এই তিরস্কার ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে ইচ্ছা করে এমনটি করে। তবে যে পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই চাল চলনে নারী সাদৃশ্য বা যে নারী পুরুষ সাদৃশ্য তাকে ধীরে ধীরে তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয়া যাবে। যদি সে তা ছাড়তে চেষ্টা না করে ঐ রীতির উপরেই থাকাকেই আঁকড়ে ধরে তবে সেও এই তিরস্কারের অন্তর্ভুক্ত হবে, বিশেষ করে সে যদি এতে সন্তুষ্ট থাকে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৮৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩৭-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের গোঁফ কাটতেন অথবা বলেছেনঃ তা ছাঁটতেন। আল্লাহর বন্ধু ’ইব্রাহীম (আ.)-ও এরূপ করতেন। (তিরমিযী)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُصُّ أَوْ يَأْخُذُ مِنْ شَارِبِهِ وَكَانَ إِبْرَاهِيمُ خَلِيلُ الرَّحْمَنِ صَلَوَاتُ الرَّحْمَنِ عَلَيْهِ يَفْعَله. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোঁফ কর্তন বা মুণ্ডন করতেন। এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ। তবে আমরা অন্যান্য হাদীসে দেখেছি যে, গোঁফের বেলায় কর্তন ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমল। তবে কর্তন বা মুণ্ডন যাই হোক এটি ইবরাহীম (আ.) করতেন বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। গোঁফ কর্তন ইবরাহীম (আ.)-এর কর্ম বলে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে তাঁর পিতা ইবরাহীম (আ.)-এর অনুকরণ করতেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৬০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৫২-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভূত হবে, যারা কবুতরের বক্ষের ন্যায় এ কালো খিযাব ব্যবহার করবে, ফলে তারা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَكُونُ قَوْمٌ فِي آخِرِ الزَّمَانِ يَخْضِبُونَ بِهَذَا السَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لَا يَجِدُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ

ব্যাখ্যাঃ (كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ) অর্থ কবুতের পাকস্থলীর ন্যায়। তবে এখানে পাকস্থলী বলতে পাকস্থলীর উপরের অংশ তথা বুক বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কবুতরের বুক যেমন কালো হয় তারা কালো রঞ্জক দিয়ে খিযাব করে চুল ও দাড়িকে তেমন করবে। আবার সব কবুতরের বুক কালো হয় না। তাই এখানে সব কবুতর উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ কিছু কিছু কবুতরের বুক, যেমন কালো চিকচিকে থাকে তারা এমন কালো রঞ্জক ব্যবহার করবে। কালো খিযাব ব্যবহারের ক্ষেত্রে যারা শক্ত আপত্তি আরোপ করে হারাম বলেন- এ হাদীসটি তাদের স্বপক্ষের একটি দলীল। তবে যারা বৈধতার পক্ষ মত দেন, তারা এ হাদীসটি রহিত মনে করেন। আবার অনেকেই হাদীসটির দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, কালো খিযাবের হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে এ হাদীসটি অকাট্য প্রমাণ বহন করে না; কেননা এই হাদীসে শেষ যামানার একদল লোক এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে তারা জান্নাতের সুগন্ধি না পাওয়া কেবল এ কারণেই বলে হাদীসটি স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে না। বরং হাদীসটিতে শেষ যামানার একদল যারা জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না, তাদের এই সিফাত থাকবে বলে বলা হচ্ছে। এ কারণে তারা জাহান্নামে যাবে এর উল্লেখ নেই।

(لَا يَجِدُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ) ‘তারা জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না।’ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, জান্নাতের সুঘ্রাণ পাঁচশত বছরের দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যায়। অতএব কেবল এই গুনাহর কারণে জান্নাতের ঘ্রাণ না পাওয়ার বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধমকের স্বরে বলেছেন বলে মনে করেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম। অথবা হাদীসটি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে এর ব্যবহারকে বৈধ মনে করবে। অথবা জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে কবরে থাকা অবস্থায় সে সুঘ্রাণ পাবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২০৮; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৫৪-[৩৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দিয়ে এমন এক ব্যক্তি অতিক্রম করল যে মেহেদীর দ্বারা খিযাব লাগিয়েছিল। তাকে দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এটা কতই না চমৎকার! বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করল সে মেহেদী ও কাতাম ঘাস উভয়টি দ্বারা খিযাব করেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে দেখে বললেন, এটা আরো তো উত্তম। অতঃপর আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করল, সে হলুদ রং দ্বারা খিযাব লাগিয়েছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে দেখে বললেনঃ এটা সর্বাপেক্ষা উত্তম। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَرَّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ قَدْ خَضَبَ بِالْحِنَّاءِ فَقَالَ: «مَا أَحْسَنَ هَذَا» . قَالَ: فَمَرَّ آخَرُ قَدْ خَضَبَ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ فَقَالَ: «هَذَا أَحْسَنُ مِنْ هَذَا» ثُمَّ مَرَّ آخَرُ قَدْ خَضَبَ بِالصُّفْرَةِ فَقَالَ: «هَذَا أَحْسَنُ مِنْ هَذَا كُله» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যাঃ مَا أَحْسَنَ هٰذَا আশ্চর্যবোধক ক্রিয়া। সৌন্দর্যের আধিক্যতা বুঝাতে ব্যবহার করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদীস থেকে কেবল মেহেদী দ্বারা খিযাব করার সৌন্দর্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে এর চেয়ে মেহেদীর সাথে কাতাম মিশ্রিত করে খিযাব করলে তা আরো বেশি সুন্দর। এ হাদীস দ্বারা তাদের প্রত্যাখ্যান হয় যারা মনে করেন মেহেদীর সাথে কাতাম মিশালে রং কালো বর্ণ ধারণ করে। অথচ নিরেট কালো খিযাবের ব্যবহার হাদীসে নিষেধ রয়েছে। আর এখানে মেহেদীর সাথে কাতাম মিশানো খিযাবের প্রশংসা করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ দ্বারা বুঝা যায় যে, মেহেদী ও কাতাম মিশালে রং নিরেট কালো হয় না। বরং লালের মাঝে কালচে ভাব আসে।

হাদীসটি থেকে হলুদ খিযাব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সবচেয়ে পছন্দ লাগে বলে প্রমাণিত হয়।

(‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২০৭; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৫৭২)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৬৮-[৫০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সে নারীর ওপর লা’নাত, যে অন্যের মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করে এবং যে নিজের মাথায় কৃত্রিম চুল লাগায় এবং যে অন্য নারীর চুল উপড়ায় অথবা নিজের ভ্রু উপড়ায়। আর যে নারী কোন ব্যাধি ব্যতীত অপরের সঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে অথবা নিজের অঙ্গেও করায়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: لُعِنَتِ الْوَاصِلَةُ وَالْمُسْتَوْصِلَةُ وَالنَّامِصَةُ وَالْمُتَنَمِّصَةُ وَالْوَاشِمَةُ والمشتوشمة من غير دَاء. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যাঃ (لُعِنَتِ الْوَاصِلَةُ) অর্থ- যে তার চুলকে অন্যের চুলে সাথে মিলায় তাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে। অভিশাপ দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা অথবা রসূলের যবান দ্বারা তাদের ওপর অভিশাপ দেয়া হয়েছে। অভিশাপের কারণ হলো, এতে মিথ্যা ও প্রতারণার রূপ রয়েছে। পূর্বে এই মর্মের আরো হাদীস অতিবাহিত হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৭২-[৫৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইসমিদ সুরমা লাগাও। কেননা তা দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে এবং পলকের চুল অধিক জন্মায়। বর্ণনাকারী ইবনু ’আব্বাস(রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি সুরমাদানি ছিল, তিনি প্রত্যেক রাত্রে তা হতে এ চোখে তিনবার, ঐ চোখে তিনবার সুরমার শলাকা লাগাতেন। (তিরমিযী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اكْتَحِلُوا بِالْإِثْمِدِ فَإِنَّهُ يَجْلُو الْبَصَرَ وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ» . وَزَعَمَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ لَهُ مُكْحُلَةٌ يَكْتَحِلُ بِهَا كُلَّ لَيْلَةٍ ثَلَاثَةً فِي هَذِهِ وَثَلَاثَةً فِي هَذِه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যাঃ (اكْتَحِلُوا بِالْإِثْمِدِ) তোমরা ইসমিদের সুরমা লাগাও। "إثمد" শব্দটির ‘হামযা’ ও ‘মীম’ হরফে যের দিয়ে ইসমিদ। আবার ‘মীম’ হরফে পেশ দিয়ে ইসমুদও পড়া যায়। ইসমিদ বা ইসমুদ এক জাতের পাথর যা থেকে সুরমা তৈরি হয়। কেউ কেউ বলেন, সুরমা বলে আমরা যেটাকে জানি সেটাই ইসমুদ। তবে বাহ্যত বুঝা যায়, এটি সুরমার বিশেষ একটি প্রকার। যেমন আবূ দাঊদে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- وَإِنَّ خَيْرَ أَكْحَالِكُمُ الإِثْمِدُ ‘‘আর তোমাদের সুরমাসমূহের মাঝে সর্বধিক উত্তম হলো ইসমিদ।’’

তিরমিযীর বর্ণনার শব্দ- وخير ما اكتحلتم به الإثمد ‘‘আর তোমরা যা দিয়ে সুরমা ব্যবহার করো তন্মধ্যে উত্তম হচ্ছে ইসমিদ।’’ (তিরমিযী হাঃ ২০৪৮)

তিরমিযীর বর্ণনাটি আমরা সামনেই দেখব। এসব বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, ইসমিদ হচ্ছে সুরমার একটি প্রকার এবং তা সবচেয়ে ভালো মানের সুরমা।

(فَإِنَّهٗ يَجْلُو الْبَصَرَ) কেননা তা দৃষ্টি প্রকাশ করে। এটি সুরমা ব্যবহারের একটি উপকার। দৃষ্টি প্রকাশ করে অর্থাৎ দৃষ্টিকে সুন্দর এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং চোখের মধ্যে মাথা থেকে নেমে আসা ময়লা পরিষ্কার করে। এর মাধ্যমে মূলত দৃষ্টিকে স্বচছ রাখে।

(وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ) আর চুল গজায়। এটি সুরমা ব্যবহারের দ্বিতীয় উপকার। এখানে চুল বলতে চোখের চুল তথা চোখের পাপড়ি উদ্দেশ্য।

(وَزَعَمَ) "زعم" এর শাব্দিক অর্থ ধারণা করা। তবে অনেক সময় শব্দটি নিশ্চিত কথার ওপর প্রয়োগ হয়। এখানে এই অর্থই উদ্দেশ্য। এখানে রসূলের সুরমা ব্যবহারের রীতির ধারণাকারী বা কথাটির প্রবক্তা হলেন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)। বিভিন্ন বর্ণনা থেকেও তা প্রমাণিত হয়। তবে কেউ কেউ বলেন, এ কথার প্রবক্তা হলেন হাদীসটির বর্ণনাকারী ইমাম তিরমিযীর শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু হুমায়দ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(ثَلَاثَةً فِي هٰذِه وَثَلَاثَةً فِي هٰذِه) তিনবার এ চোখে তিনবার ওই চোখে। অর্থাৎ ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার। প্রতি রাতে এ চোখে তিনবার আর ও চোখে তিনবারের অর্থ এই নয় যে, রাতে তিন সময়ে সুরমা লাগাতেন। বরং উদ্দেশ্য হলো, সুরমা ব্যবহারের সময় সুরমার ব্যবহারে কাঠি বা শলা তিন বার চোখে লাগাতেন এবং প্রতিবার শলায় সুরমা নিতেন। যেমন কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে- مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ অর্থাৎ যে সুরমা ব্যবহার করবে সে যেন বিজোড় করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৫৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৭৩-[৫৫] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে শোয়ার পূর্বে প্রত্যেক চোখে তিন তিন শলাকা ইসমিদ সুরমা লাগাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেনঃ যে সব জিনিস দ্বারা তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম-লাদূদ, সাঊত, শিঙ্গা লাগানো এবং জোলাপ নেয়া। যে সব সুরমা তোমরা ব্যবহার করো তার মধ্যে ইসমিদ সর্বোত্তম। তাতে চোখের দৃষ্টিশক্তি সতেজ হয় এবং চোখের পলকের চুল অধিক জন্মায়। আর শিঙ্গা লাগানোর জন্য উত্তম দিন হলো চাঁদের সতের, ঊনিশ ও একুশ তারিখ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন মি’রাজ হয়েছিল, তখন তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছিলেন যে, আপনি অবশ্যই শিঙ্গা লাগাবেন। (তিরমিযী; এবং তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও গরীব।)[1]

وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْتَحِلُ قَبْلَ أَنْ يَنَامَ بِالْإِثْمِدِ ثَلَاثًا فِي كُلِّ عَيْنٍ قَالَ: وَقَالَ: «إِنَّ خَيْرَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ اللَّدُودُ وَالسَّعُوطُ وَالْحِجَامَةُ وَالْمَشِيُّ وَخَيْرَ مَا اكْتَحَلْتُمْ بِهِ الْإِثْمِدُ فَإِنَّهُ يَجْلُو الْبَصَرَ وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ» وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ عُرِجَ بِهِ مَا مَرَّ عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

ব্যাখ্যাঃ (اللَّدُودُ) মুখের পার্শ্ব দিয়ে যে ঔষধ সেবন করানো হয় তাকে ‘লাদূদ’ বলা হয়। সম্ভবত এটি সে সময়কার বিশেষ এক প্রকার উত্তম ঔষধ, যা ঐভাবে (ফোঁটা ফোঁটা করে মুখের ঔষধ) সেবন করানো হত।

(السَّعُوطُ) ড্রপ দিয়ে (ফোঁটা ফোঁটা করে নাকের ঔষধ) নাকে ব্যবহারের ঔষধ। সে সময়কার উত্তম ঔষধের মাঝে এটিকে গণ্য করা হয়েছে।

(الْحِجَامَةُ) রক্তমোক্ষণ চিকিৎসা। শিঙ্গা ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত রক্ত উঠানোর মাধ্যমে এই চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আধুনিক কালে এর নতুন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।

(الْمَشِيُّ) শব্দটির ‘মীম’ হরফে যবর, ‘শিন’ অক্ষরে যের এবং পরবর্তীতে ‘ইয়া’ তাশদীদযুক্ত। পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত যে কোন ঔষধকেই ‘মাশিয়্যু’ বলা হয়। শব্দটি (الْمَشِيُّ) থেকে উদগত। যার অর্থ চলাফেরা। তুরিবিশতী বলেনঃ পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত ঔষধকে ‘মাশিয়্যু’ বলার কারণ হলো, এই ঔষধ সেবনকারী বাথরুমে যাওয়া আসা বেড়ে যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

এই চারটি চিকিৎসাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা বলে আখ্যায়িত করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এগুলোই হয়ত সে সময়কার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা ছিল।

(وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ إِحْدٰى وَعِشْرِينَ) শিঙ্গা লাগিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন কোন হাদীসে কিছু তারিখকে উত্তম বলা হয়েছে। যেমন বর্ণিত হাদীসে চান্দ্র মাসের ১৭, ১৯, ২১ তারিখে হিজামাহ্ উত্তম বলা হয়েছে। কোন হাদীসে সপ্তাহের কিছু দিনে শিঙ্গা লাগাতে উৎসাহিত করা হয়েছে আবার কিছু দিনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন সোমবার ও মঙ্গলবারে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং অন্যদিন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

তবে নির্ধারিত তারিখ বা নির্ধারিত দিনে হিজামাহ্ সম্পর্কে যত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তার সবই দুর্বল বলে মত দিয়েছেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম। মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেনঃ নির্ধারিত দিনে হিজামার প্রতি উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিতের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কিছু নেই।

(حَيْثُ عُرِجَ بِه) অর্থাৎ মি‘রাজ রজনীতে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আকাশে চড়ানো হচ্ছিল, তখন যখনই তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) দল অতিক্রম করেছেন, মালায়িকাহ্ তাকে বলেছে- (عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ) তোমার জন্য হিজামা জরুরী বা তুমি হিজামাকে আঁকড়ে ধরো। হাদীসটি সহীহ হলে হিজামার গুরুত্ব আরো অনেক বেশি বেড়ে যেত। তবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজামাহ্ দ্বারা চিকিৎসা করেছেন তা বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত এবং উপকার ও গুরুত্বও প্রমাণিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
দেখানো হচ্ছেঃ ৩৫৪১ থেকে ৩৫৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪৫৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 175 176 177 178 179 · · · 224 225 226 227 পরের পাতা »