পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫১৯-[৬] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর নিকট একজন চিকিৎসক পাঠালেন, সে তার একটি রগ কেটে পরে তা দাগাল। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أُبيِّ بن كَعْب طَبِيبا فَقَطَعَ مِنْهُ عِرْقًا ثُمَّ كَوَاهُ عَلَيْهِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ চিকিৎসা যে ধরনেরই হোক না কেন তা অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে হওয়া উচিত। এটাই প্রকৃত নিয়ম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৯-[১৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তর তথা ঝাড়ফুঁক করা হতে নিষেধ করেছেন। (এ নিষেধের পর) ’আমর ইবনু হাযম-এর বংশের কয়েকজন লোক এসে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কাছে এমন একটি মন্ত্র আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি মন্তর পড়া হতে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তারা মন্ত্রটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়ে শুনাল। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো এটার মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব, তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الرُّقَى فَجَاءَ آلُ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ كَانَتْ عِنْدَنَا رُقْيَةٌ نَرْقِي بِهَا مِنَ الْعَقْرَبِ وَأَنْتَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقَى فَعَرَضُوهَا عَلَيْهِ فَقَالَ: «مَا أَرَى بِهَا بَأْسًا مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসটি হতে বুঝা যায় যে, যে ঝাড়ফুঁকের মধ্যে কোন কুফরী কালাম, শির্কী শব্দ না থাকে, সে ঝাড়ফুঁক দ্বারা মানুষের চিকিৎসা করা বৈধ। আর যে ঝাড়ফুঁকের শব্দ গুলো বুঝা যায় না, তাতে শির্ক থাকার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এ জাতীয় শির্কী মন্ত্র দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হারাম। এ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। পক্ষান্তরে যে মন্ত্র শির্কমুক্ত তা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা উত্তম কাজ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘‘তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে, নিঃসন্দেহে শির্কমুক্ত ঝাড়ফুঁক একটি বড় উপকারমূলক কাজ, যা মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে উপকারে আসে।’’ সুতরাং শির্কমুক্ত ঝাড়ফুঁক করে সমাজকে শির্কমুক্ত করে সুস্থ সমাজ গঠন করা প্রত্যেক ঝাড়ফুঁককারীর জন্য জরুরী। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৫৪৩-[৩০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিতম্বে ব্যথা হওয়ায় তিনি সে স্থানে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ جَابِرٌ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ احْتَجَمَ عَلَى وَرِكِهِ مِنْ وَثْءٍ كَانَ بِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مِنْ وَثْءٍ) হাড় ভাঙ্গা ব্যতীত কোন অঙ্গে ব্যথা পাওয়ার কারণে। এটাও বলা হয় যে, বয়স হওয়ার কারণে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে।
কমূস এর মধ্যে وَثْءٍ-এর সম্বন্ধে বলা হয়েছে, এটা এমন ব্যথা যা গোশতের উপর লেগেছে কিন্তু তা হাড় পর্যন্ত পৌঁছায়নি। অথবা হাড়ে ব্যথা হয়েছে কিন্তু ভেঙ্গে যায়নি। অথবা হাড় বিচ্ছিন্ন হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৫৫৩-[৪০] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নুশরাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, উত্তর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা তো শয়তানের কাজ। (আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن جَابر قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ النُّشْرَةِ فَقَالَ: «هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ‘নুশরাহ্’ এক প্রকারের ঝাড়ফুঁক ও চিকিৎসা। জাহিলী যুগে কোন ব্যক্তি জীন-পরী দ্বারা প্রভাবিত হলে উক্ত বিশেষ ঝাড়ফুঁক দ্বারা তাকে চিকিৎসা করা হত। ‘নুশরাহ্’ নামকরণের কারণ হলো যে রোগ বিস্তার লাভ করেছিল। তাই এটা দ্বারা দূর করার দরুন একে ‘নুশরাহ্’ বলা হয়েছিল।
হাসান (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নুশরাহ্’ এক ধরনের যাদু। ‘ফাতহুল ওয়াদূদ’ কিতাবে এসেছে, সম্ভবত তা (‘নুশরাহ্) ব্যবহৃত হয় শয়তানদের নামে, অথবা এমন ভাষায় যা বোঝা যায় না, আর সে কারণেই একে যাদু বলা হয়। এর দ্বারা রোগ বিস্তার লাভ করার কারণে এবং বালা-মুসীবাত ছড়ানোর কারণে একে ‘নুশরাহ্’ নামকরণ করা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৬৪)
هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ অর্থাৎ এটা সেই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত যেটা দিয়ে জাহিলী যুগের লোকেরা চিকিৎসা করত এবং তাতে তারা বিশ্বাস রাখত। পক্ষান্তরে যাতে কুরআনুল মাজীদের আয়াতসমূহ বিদ্যমান থাকে, মহান আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ থাকে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশুদ্ধ দু‘আসমূহ থাকে তাতে কোন সমস্যা নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৬৪)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮০-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, রোগে ছোঁয়াচে লাগা, সফর মাস অশুভ হওয়া বা ভূত-প্রেতের ধারণার কোন অস্তিত্ব নেই। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا عَدْوَى وَلَا صَفَرَ وَلَا غُولَ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (وَلَا غُولَ) জামহূর ‘উলামা বলেনঃ ‘আরবদের বিশ্বাস ছিল যে, এক শ্রেণীর জীন-শয়তান মাঠে ময়দানে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে কোন পথিকের উপর সওয়ার হয় (ভর করে), ফলে সে পথহারা অবস্থায় এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকে। অবশেষে তাকে ধ্বংস করে ছাড়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধারণাটিকে বাতিল বলেছেন। অন্যরা বলেছেন, হাদীসে কিন্তু এদের অস্তিত্বের অস্বীকার করা হয়নি। এ হাদীসে কেবল ‘আরবদের ভ্রান্ত ধারণা জীন-শয়তান বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে এ ধারণাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা হাদীসে এসেছে, إِذَا تَغَوَّلَتِ الْغِيلَانُ فَبَادِرُوا بِالْأَذَانِ অর্থাৎ যখন তোমাকে ভূত-প্রেত রাস্তাচ্যুত করে দেয় তাহলে তুমি আযানের প্রতি অগ্রসর হও। অর্থাৎ আযান দিতে থাকে। যাতে তার ক্ষতি হতে মুক্তি লাভ করতে পার। এ হাদীস থেকে তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২২২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৫-[১০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে তাকে নিজের খাদ্যপাত্রে খাওয়ায় শরীক করে নিলেন, অতঃপর বললেন, তুমি খাও আল্লাহ তা’আলার ওপরে পূর্ণ ভরসা এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল সহকারে। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘মুফায্যাল ইবনু ফুযালাহ্’’ নামের বর্ণনাকারী যিনি য‘ঈফ। দেখুন- আল ইলালুল মুতানাহিয়্যাহ্ ইবনুল জাওযী ৮৬৯ পৃঃ, য‘ঈফাহ্ ১১৪৪।
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ فَوَضَعَهَا مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ وَقَالَ: «كُلْ ثِقَةً بِاللَّهِ وَتَوَكُّلًا عَلَيْهِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ) আরদাবীলী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা ‘উমার (রাঃ) যে কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে প্লেটে বসান এবং এক সাথে খাবার খান তার নাম মু‘আয়ক্বীব ইবনু আবূ ফাতিমা আদ্ দাওসী।
(فِي الْقَصْعَةِ) এখানে দুই দিক থেকে তাওয়াক্কুলের চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। প্রথমটি হলো তার হাত ধরা। আর দ্বিতীয় হলো তার সাথে খাওয়া।
আবূ যার থেকে ইমাম ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, তুমি কোন অসুস্থ ব্যক্তির সাথে খাবার খাও তোমার রবের প্রতি বিনয়ী ও ঈমান সহকারে।
(كُلْ ثِقَةً بِاللهِ) অর্থাৎ তুমি আমার সাথে খাও, আমি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছি। অর্থাৎ তার প্রতি আমি নির্ভর করেছি এবং তার প্রতি সকল বিষয় সোপর্দ করেছি।
ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন এবং তাকে প্লেটে বসিয়ে তার সাথে খেলেন, এটা ঐ ব্যক্তির অধিকার যে অপছন্দীয় বিষয়ের ক্ষেত্রেও ধৈর্য ধরতে পারে এবং নিজের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিতে পারে।
আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ ‘‘তুমি কুষ্ঠরোগী হতে পলায়ন কর যেমনিভাবে তুমি বাঘ থেকে পলায়ন কর’’। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী সাক্বীফ গোত্রের কুষ্ঠরোগীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন, এতে অধিকার আছে সেই ব্যক্তির জন্য যে অপছন্দনীয় বিষয়ের উপর অক্ষম এবং ধৈর্য ধরতে পারে না। শারী‘আতের দৃষ্টিকোণে এটিও জায়িয রয়েছে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কুষ্ঠরোগীর ঘটনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন আসার (সাহাবীগণের বর্ণনা) এসেছে। এ থেকে দু’টি হাদীস প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ فِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ এ হাদীসটি এবং الْمَجْذُومِ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ ‘‘সাক্বীফ গোত্রের কুষ্ঠরোগী’’। আর জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠরোগীর সাথে বসে খেয়েছেন আর তাকে বলেছেন, তুমি খাও আল্লাহর ওপরে পূর্ণ ভরসা এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল সহকারে। মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমাদের একটি কুষ্ঠরোগী দাসী ছিল। সে আমার প্লেটে খেত, আমার গ্লাসে পানি পান করত এবং আমার বিছানায় ঘুমাত। নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘উমার অন্যান্য সালাফগণ কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া যায় মর্মে মত পোষণ করেছেন। আর তারা মনে করেন যে, তার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়ার হাদীস রহিত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হলো সেই কথা যা অধিকাংশের বক্তব্য। তারা বলেন, এটা রহিত হয়নি। বরং উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। তার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ হলো মুস্তাহাব। এটা সতর্কতামূলক তবে ওয়াজিব নয়। আর তার সাথে বসে খাওয়ার বিষয়টি হলো তা জায়িযের দলীল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯২০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮১৭)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৩-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে খারাপ মনে করে, তখন সে যেন নিজের বামদিকে তিনবার থুথু ফেলে। আর আল্লাহর কাছে তিনবার শয়তান হতে পানাহ চায় এবং স্বপ্ন দেখার সময় যে পাঁজরে শায়িত ছিল, সে যেন পাঁজর পরিবর্তন করে নেয়। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَى أَحَدُكُمُ الرُّؤْيَا يَكْرَهُهَا فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلَاثًا وَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ثَلَاثًا وَلْيَتَحَوَّلْ عَنْ جَنْبِهِ الَّذِي كانَ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীস এবং পূর্বের হাদীসের মানে স্বপ্নের আদব বর্ণনা করা হয়েছে। ভালো স্বপ্নের আদবগুলো হলো আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা, সুসংবাদ গ্রহণ করা, জ্ঞানী ব্যক্তি বা নিকটতম ব্যক্তির নিকট তা বর্ণনা করা। আর খারাপ স্বপ্নের বৈশিষ্ট্য হলো : আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া শয়তানের অনিষ্টতা হতে পানাহ চাওয়া, বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলা, ঘুমের মাঝে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া, কারো কাছে তা প্রকাশ না করা, দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করা।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ তিনবার থুথু ফেলা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ শয়তানকে তাড়ানোর যে উপস্থিত হয়ে অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখায় এবং তাকে তুচ্ছ করা। এগুলো বাস্তবায়ন করলে মানুষ শয়তানের অনিষ্ট হতে দূরে থাকবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২২৭৭)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ থুথু ফেলার বিষয়টি সম্পর্কে, থুথু নিক্ষেপ করার দ্বারা ঐ শয়তানকে তাড়ানো যে মানুষের নিকট খারাপ স্বপ্ন উপস্থাপনা করে এবং তাকে অপমান, লাঞ্ছনা করা এবং তার কাজকে ঘৃণা করা। আর বাম পার্শ্বকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ কারণে যে, এ স্থান থেকে নোংরা, অপছন্দনীয় কাজ সংঘটিত হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৬১৬-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি আমার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তার কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং বললেনঃ শয়তান যখন তোমাদের কারো সাথে ঘুমের মধ্যে তামাশা করে, তখন তা কোন মানুষের কাছে বর্ণনা করা উচিত নয়। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن جَابر قَالَ: جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: رَأَيْتُ فِي الْمَنَامِ كَأَنَّ رَأْسِي قُطِعَ قَالَ: فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «إِذَا لَعِبَ الشَّيْطَانُ بِأَحَدِكُمْ فِي مَنَامِهِ فَلَا يُحَدِّثْ بِهِ النَّاس» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, খারাপ স্বপ্ন বা এমন স্বপ্ন যার মাঝে শয়তানের প্রভাব রয়েছে তা মানুষের বলা উচিত নয়।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এ ধরনের স্বপ্নের মাঝে সম্ভাবনা রয়েছে যে, তা খারাপ স্বপ্ন হবে অথবা তাতে শয়তানের পক্ষ হতে এমন বিবাদে লাগিয়ে দেয়া হয় যা অপছন্দনীয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীগণ বলেছেন, তাদের গ্রন্থসমূহের মাঝে : মাথাকাটা অর্থ নি‘আমাত ছিনিয়ে নেয়া, সমাজ হতে, বিচ্ছিন্ন হওয়া নেতৃত্ব চলে যাওয়া, মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া সকল ক্ষেত্রে, দাসের স্বাধীন হওয়া, অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থ হওয়া, ঋণী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ হওয়া। আর যে ব্যক্তি হজ্জ করেনি তার হজ্জ করা ভীতু ব্যক্তির নিরাপদ হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা অধিক ভালো জানেন। (শারহুন নাবাবী ২২৬৮/১৪)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৫৩-[২৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কথাবার্তা বলার পূর্বেই সালাম দিতে হবে। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার।][1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّلَامُ قَبْلَ الْكَلَامِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث مُنكر
ব্যাখ্যাঃ সুন্নাত হলো কথা বলার পূর্বে সালাম দিয়ে শুরু করা। কারণ সালাম দ্বারা আরম্ভ করা নিরাপত্তা ও সুলক্ষণের ইঙ্গিত বাহক। এর দ্বারা সম্বোধিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়। আবার আল্লাহর জিকর দ্বারা আরম্ভ হওয়ার বারাকাত হাসিল করা হয়।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা শুভেচ্ছা। যা শুরুতে করা হয়। সুতরাং কথা দ্বারা আরম্ভ করলে তা বাদ পড়ে যায়। যেমন তাহিয়্যাতুল মসজিদ যাকে বসার পূর্বে আদায় করতে হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৯)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৫৭-[৩০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ অন্য কাউকে চিঠি লেখে, তখন তাতে যেন (লেখা শেষে) মাটি লাগিয়ে দেয়। কেননা এটা উদ্দেশ্য পূরণে অধিকতর সফলকারী। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার][1]
হাদীসটির য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘হামযা নাসিবী’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) তাকে মাতরূক ও হাদীস জাল করার অভিযোগ অভিযুক্ত করে করেছেন। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৭৩৮, হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৩১৮ পৃঃ।
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذا كتب أحدكُم كتابا فليتر بِهِ فَإِنَّهُ أَنْجَحُ لِلْحَاجَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث مُنكر
ব্যাখ্যাঃ মাজমা' গ্রন্থে বলা হয়েছে, উদ্দেশ্য সাধনে আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা রাখার জন্য চিঠিকে মাটিতে ফেলা হয়। অথবা মাটি লাগানো হয়।
ইমাম মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ লেখক যেন অধিক নমনীয়তার সাথে সম্বোধন করে। আর মাটিময় করার অর্থ হলো সম্বোধনে অধিক নমনীয়তা প্রদর্শন করা।
কেউ কেউ বলেনঃ মাটি লাগানোর উদ্দেশ্য হলো লিখনী মুছে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য। ভেজা কালিকে শুকিয়ে নেয়া। নিঃসন্দেহে লিখনী স্বঅবস্থায় বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন পূরণে অব্যর্থ ব্যবস্থা। আর সেটা মিটে যাওয়া উদ্দেশ্য সাধনের প্রতিবন্ধক স্বরূপ। তিরমিযীর ভাষ্যকার বলেনঃ মাটিযুক্ত করার নির্ভরযোগ্য অর্থ হলো সেটাকে শুকিয়ে নেয়া।
(فَإِنَّهٗ أَنْجَحُ لِلْحَاجَةِ) অর্থাৎ এটা উদ্দেশ্য পূরণে সর্বাধিক নিকটতম ও সহজ উপায়।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১৩)
তবে যেহেতু হাদীসটি য‘ঈফ তথা মুনকার, সেহেতু এর উপর ‘আমল করা বৈধ নয়। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬৫-[৩৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন : (হে আল্লাহর রসূল!) আমার বাগানে অমুক ব্যক্তির একটি খেজুর গাছ আছে। তার এ খেজুর গাছ আমাকে কষ্ট দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি তোমার খেজুর গাছটি আমার কাছে বিক্রয় করো। লোকটি বলল : না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তবে আমাকে দান করো। লোকটি বলল : না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবারো বললেনঃ জান্নাতের একটি খেজুর গাছের বিনিময়ে ওটা আমার নিকট বিক্রয় করো। লোকটি এবারও বলল : না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার তুলনায় অধিক কৃপণ আর কাউকে দেখিনি। কিন্তু হ্যাঁ, যে ব্যক্তি সালাম করতে কৃপণতা করে। (আহমাদ ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’)[1]
وَعَن جَابر
قَالَ: أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: لِفُلَانٍ فِي حَائِطِي عَذْقٌ وَأَنَّهُ آذَانِي مَكَانُ عَذْقِهِ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنْ بِعْنِي عَذْقَكَ» قَالَ: لَا. قَالَ: «فَهَبْ لِي» . قَالَ: لَا. قَالَ: «فَبِعْنِيهِ بِعَذْقٍ فِي الْجَنَّةِ» ؟ فَقَالَ: لَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَأَيْتُ الَّذِي هُوَ أَبْخَلُ مِنْكَ إِلَّا الَّذِي يَبْخَلُ بِالسَّلَامِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّه آذَانِىْ) অর্থাৎ- সে সময়ে অসময়ে আসে, এর কারণে আমাদের কষ্ট দেয়। فَهَبْ لِي অর্থাৎ যদি তুমি আমার নিকট বিক্রি করতে লজ্জাবোধ কর, তাহলে এভাবে দান করে দাও যাতে আমি বাগানওয়ালাকে দান করে দেই।
(مَا رَأَيْتُ الَّذِىْ هُوَ أَبْخَلُ مِنْكَ) এর অর্থ হলো যে ব্যক্তি সালামের জবাব দেয় না সে তোমার চাইতে অধিক কৃপণ। কারণ সে অল্প কাজের দ্বারা অধিক সাওয়াব অর্জন করে না। বিদ্বানগণ বলেন, এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে সুপারিশ হিসেবে আবেদন করেছেন, নির্দেশ হিসেবে নয়। এ ছাড়া সে কিভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশকে উপেক্ষা করল? ঐ ব্যক্তি মুসলিম ছিল বলে বুঝা যায়। এর প্রমাণ এই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি জান্নাতী গাছের বিনিময়ে গাছটি দিয়ে দাও। অবশ্য লোকটি খুব শক্ত মনের ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, উর্দূ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা ৪র্থ খন্ড, ২০ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা
৪৬৬৯-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতার গৃহীত ঋণের লেনদেনের ব্যাপারে একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? আমি বললামঃ আমি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি, আমি (তথা পরিচয় কি?)। সম্ভবতঃ তিনি এরূপ বলাকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَيْنٍ كَانَ عَلَى أَبِي فَدَقَقْتُ الْبَابَ فَقَالَ: «مَنْ ذَا؟» فَقُلْتُ: أَنَا. فَقَالَ: «أَنَا أَنا» . كَأَنَّهُ كرهها
ব্যাখ্যাঃ মুহাল্লাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا ‘আমি’ এখানে অপছন্দ হওয়ার কারণ হলো, এতে স্পষ্ট পরিচয় ফুটে উঠে না। তবে যদি অনুমতিদাতা অনুমতি প্রার্থীকে চিনতে পারে এবং অন্য কারো সাথে তালগোল পাকিয়ে না যায় তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশয় সৃষ্টি হয়েই থাকে।
মাওয়ারদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা অপছন্দ করার কারণ হলো, সে প্রশ্নের দাবী অনুযায়ী জবাব দেয়নি। কারণ যখন সে দরজায় নক করল তখন তো বুঝা গেল যে, এখানে একজন করাঘাতকারী আছে। অতঃপর যখন সে ‘‘আমি’’ বলে জানান দিতে চাইল যে দরজায় নককারী এখানে, এতে কিন্তু দরজায় আওয়াজ করাতে যতটুকু জানা গিয়েছিল তার চাইতে বেশি কিছু জানতে পারা যায়নি। সঙ্গত কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করেছেন।
খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا আমি কথাটি উপযুক্ত জবাব নয় এবং যে উদ্দেশে এটার ব্যবহার হয়েছে তা অর্জন হয়নি। এভাবে বলা উপযুক্ত জবাব ছিল যে, انا جابر ‘‘আমি জাবির’’। যাতে প্রত্যাশিত দাবী অনুযায়ী স্পষ্ট পরিচয় প্রকাশ পেত। যেমন ইমাম বুখারী ‘‘আদাবুল মুফরাদ’’ বুরয়দাহ্-এর হাদীসে বর্ণনা করেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এসেছেন আর আবূ মূসা (রাঃ) (কুরআন) পড়ছিলেন, তখন আমি আসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, এটা কে? আমি বললাম যে, আমি বুরয়দাহ্। অনুরূপ উম্মু হানী একদিন রসূলের দরবারে এসে বললেন, আমি উম্মু হানী। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যখন কেউ তার উপনাম ছাড়া পরিচয় বলতে পারে না তখন এভাবে স্বীয় নাম বলা অপছন্দের কিছু নয়। অতএব যখন কারো ‘‘আমি শায়খ অমুক’’ ‘‘আমি অমুক কারী’’ বা ‘‘আমি কাযী অমুক’’ বলা ছাড়া পার্থক্য করতে না পারে তখন এরূপ বলাতে কোন দোষ নেই।
ইবনু জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا ‘আমি’ বলা অপছন্দ হওয়ার কারণ হলো ‘আমি’ বলাতে গর্বের গন্ধ পাওয়া যায়। যেন ‘আমি’ বলা ব্যক্তি বুঝাতে চাচ্ছে যে, আমি এমন ব্যক্তি যার নাম ও বংশ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এর বিপরীত মত পোষণ করেন মুগলাত্বয় (مغلطاي)। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য জাবির-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যদি জাবির এরূপই হতেন তাহলে তিনি এটা ছেড়ে দেয়ার জন্য শিক্ষা না দিয়ে এতে অভ্যস্ত থাকতেন।
ইবনুল ‘আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জাবির হাদীসে দরজায় করাঘাত করার প্রমাণ রয়েছে। আদাবুল মুফরাদে রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজায় নখ দ্বারা আঘাত করা হতো। তবে এটা বলা যায় যে, নখ দ্বারা দরজায় আঘাত করা হলো উন্নত আদব। দরজার নিকটে থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রে এরূপ নখ দ্বারা করাঘাত করা ভালো। আর যদি সে দরজা থেকে এমন দূরে অবস্থান করে যে, নখ দ্বারা আওয়াজ দিলে তার কাছে আওয়াজ পৌঁছে না তখন প্রয়োজনমত অন্য কিছু দ্বারা আঘাত করা মুস্তাহাব। সুহায়লী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজায় কড়া না থাকায় সাহাবীগণ নখ দ্বারা আঘাত করতেন। তারা এভাবে করাঘাত করতেন তার সম্মান, মর্যাদা ও আদবের প্রেক্ষিতে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ২৬৫০)
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা
৪৬৭৬-[১০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম না করবে, তাকে তোমরা অনুমতি দেবে না। [ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি শু’আবুল ঈমানে বর্ণনা করেন।][1]
وَعَنْ
جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَأْذَنُوا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأْ بالسلامِ» رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, অনুমতি নেয়ার পূর্বে সালাম দেয়া আবশ্যক। এ অধ্যায় থেকে এটাও জানা গেল যে কারো বাড়িতে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করা নিষেধ এবং এটা জরুরী বিষয়। এ রীতি মত, আদর্শ, জ্ঞানী ও সভ্য মু’মিনের। কিন্তু জাহিল, মূর্খ ও অসভ্য লোকেরা অন্য ডাক দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং অপমান লাঞ্ছনা-গঞ্ছনার স্বীকার হয়। যারা বাড়িতে সবসময় যাওয়া আসা করে তাদেরও তিন সময়ে অনুমতি নেয়া উচিত। একবার ফজরের সালাতের পূর্বে, একবার দুপুরের পরে যখন মানুষেরা বিশ্রাম নিবে। আর একবার ‘ইশা সালাতের পরে যেমন কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। এ বিধান এজন্য যে, মানুষ কখনো নিজের স্থানে ব্বিস্ত্র হয়ে থাকতে পারে অথবা স্ত্রী কিংবা দাসীদের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত থাকতে পারে। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪র্থ খন্ড, ২৫ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা
৪৭০৯-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে চিৎ হয়ে শুয়ে এক পা খাড়া করে অপর পা তার উপরে রাখতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْجُلُوْسِ وَالنَّوْمِ وَالْمَشْىِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَرْفَعَ الرَّجُلُ إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى وَهُوَ مُسْتَلْقٍ عَلَى ظَهْرِهِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ দু’টি হাদীসের মাঝে দ্বন্দ্ব ও সমাধান: জাবির (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, চিৎ হয়ে এক পায়ের উপর অপর পা তুলে শয়ন করা নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে ‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রাঃ) হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এরূপ শয়ন করেছেন। সুতরাং বাহ্যিকভাবে উভয় হাদীসে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। মুহাদ্দিসগণ যেভাবে সমাধান দিয়েছেন তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
ক. ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সম্ভাবনা রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে চিৎ হয়ে শয়ন করা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, যা হারাম বুঝায় না। বরং সাবধানতার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
খ. কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সম্ভবত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনে এভাবে শয়ন করেছিলেন, তার ক্লান্তি দূর করা ক্ষণিকের জন্য ‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রাঃ) যেভাবে দেখেছিলেন, সেভাবে শুয়েছিলেন।
গ. ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, জাবির (রাঃ)-এর হাদীস ‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
ঘ. তাছাড়া আব্বাদ (রাঃ)-এর হাদীসটি ফে‘লী ও জাবির (রাঃ)-এর হাদীসটি কওলী- এ ধরনের হাদীসদ্বয়ের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে কওলী হাদীসকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
ঙ. ‘আব্বাদ (রাঃ)-এর হাদীসটি হা-বোধক, আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীসটি না-বোধক, এরূপ ক্ষেত্রে না-বোধক হাদীস প্রাধান্য লাভ করে থাকে।
চ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পা খাড়া করে তার উপর অপর পা রেখে শয়ন করেননি। হয়তো বা শয়ন করে থাকলেও সাথে সাথে উভয় পা সোজা করেছেন। বর্ণনাকারী যে অবস্থায় দেখেছেন তাই বর্ণনা করেছেন।
মন্তব্য: কাজেই বুঝা গেল চিৎ হয়ে শয়ন করলে সাবধান থাকা চাই। এটা হারাম নয় বরং অনুত্তম। সুতরাং হাদীস দু’টিতে কোন দ্বন্দ্ব নেই। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ৪০৯৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৪৭০৮ ও ৪৭০৯)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা
৪৭১০-[৪] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কখনো এমনভাবে চিৎ হয়ে শয়ন করবে না যে, এক পা খাড়া করে অপর পা তার উপর থাকে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْجُلُوْسِ وَالنَّوْمِ وَالْمَشْىِ
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يستلقين أحدكُم ثمَّ يضع رجلَيْهِ على الْأُخْرَى» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ চিৎ হয়ে শোয়া বলতে বুঝায় পিঠ নিচে রেখে বুক উপরের দিকে দিয়ে শয়ন করাকে চিৎ হয়ে শয়ন করা বুঝায়। এটা আবার দু’ ধরনের হতে পারে। ক. দুই পা সোজাভাবে বিছিয়ে এক পায়ের উপর অপর পা রাখা। এ অবস্থায় সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বিধায় এভাবে শয়ন করা জায়িয। খ. চিৎ হয়ে শয়ন করে এক পায়ের হাঁটু খাড়া করে অপর পা তার উপর রাখা এভাবে শয়ন করা সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বিধায় এরূপ শয়ন করা নিষিদ্ধ। (মিনহাতুল মুসলিম ৭০/২০৯৯)
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা
৪৭২১-[১৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে এমন ছাদের উপর শয়ন করতে নিষেধ করেছেন, যেখানে পর্দার অন্তরাল না থাকে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ
قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنَامَ الرَّجُلُ عَلَى سطحٍ لَيْسَ بمحجورٍ عَلَيْهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাদের উপর শয়ন করতে নিষেধ করেছেন। চাই তা রাতে হোক বা দিনে হোক যে সমস্ত ছাদের বেষ্টন বা দেয়াল নেই। ছাদ হতে নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সতর্কতার জন্য সে সকল ছাদে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ সর্বদা মুসলিমগণ নিজের জানের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৭২১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৫১-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার নামে নাম রাখতে পার; কিন্তু আমার নামে নাম রেখ না। কেননা আমাকে বণ্টনকারী নিয়োগ করা হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে থাকি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَسَامِىْ
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سموا باسمي وَلَا تكنوا بِكُنْيَتِي فَإِنِّي إِنَّمَا جُعِلْتُ قَاسِمًا أَقْسِمُ بَيْنَكُمْ» مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে নাম রাখা আদেশ পাওয়া যায় উপনামে নাম রাখা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্মান করার জন্য। যাকে আহবান করা হয়, উপনামের কারণে সে কষ্ট পায়। এটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকারে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইযযত করা। এর মধ্যে কাউকেও অংশীদার না করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا ৭৩ ‘‘রসূলের ডাককে তোমরা তোমাদের একের প্রতি অন্যের ডাকের মতো গণ্য করো না’’- (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৬৩)। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা ‘কাসিম’ অর্থাৎ বণ্টনকারী বানিয়েছেন সবার মাঝে। جامع (জামি‘)-এর বর্ণনায় রয়েছে, আমি প্রেরিত হয়েছি, কাসিম হিসেবে আমি বণ্টনকারী ‘ইলম’ গনীমাত এরূপ আরো অনেক কিছু। শুভ সংবাদ নেক বান্দার জন্য। মানতের বস্তু খারাপ ব্যক্তির জন্য। মূলকথা হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু তার সন্তানদের জন্য ‘আবুল কবাসিম’ নন বরং তিনি দুনিয়া ও আখিরাতের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সর্বকালের জন্য ‘কাসিম’।
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আপনার মৃত্যুর পর আমার সন্তান হয় আমি কি তার নাম মুহাম্মাদ এবং আপনার উপনামে নাম রাখতে পারব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ। এ মত ইমাম মালিক-এর। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ এ মত অধিকাংশ সালাফের ও মিসরের ফকীহগণের।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, أن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى أن يجمع بين اسمه وكنيته অর্থাৎ নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন তার নাম ও উপনামে একত্র করা হতে। একই ব্যক্তির মাঝে । (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪২)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রসূলুল্লাহ উপাধি কোন অবস্থায় কারো জন্য বৈধ নয়। মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) নামে কারো নাম রাখা নিষেধ।
‘আবদুল্লাহ ইবনু জাবির হতে বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমে নিষেধ রয়েছে, হাদীসটি নিম্নে বর্ণিত হলো,
عن عبد الله بن جرار "سموا بأسماء الانبياء ولاتسموا بأسماء الملائكة". (متفق عليه)
নামের প্রসঙ্গে শাফি‘ঈ ও আহলুয্ যাহির সতর্কতা অবলম্বনে যা বলেছেন আবুল কাসিম উপনামে কারো নাম রাখা কখনও বৈধ নয়, সঠিক কথা হলো তার নামে রাখা বৈধ, তাঁর উপনামে ডাকা তার থেকে নিষেধ। তার বেঁচে থাকা অবস্থায় কঠিনভাবে নিষেধ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ) [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৫৪-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছা করলেন যে, তিনি লোকেদেরকে ইয়া’লা, বারাকাহ্, আফলাহ, ইয়াসার, নাফি’ এবং অনুরূপ নাম রাখতে নিষেধ করবেন। তারপর দেখলাম, তিনি ইচ্ছা পোষণ করার পর নিশ্চুপ থাকলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল হলো, অথচ তিনি এরূপ নাম রাখতে নিষেধ করেননি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَسَامِىْ
وَعَن جَابر قَالَ أَرَادَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنْهَى عَنْ أَنْ يُسَمَّى بِيَعْلَى وَبِبَرَكَةَ وَبِأَفْلَحَ وَبِيَسَارٍ وَبِنَافِعٍ وَبِنَحْوِ ذَلِكَ. ثُمَّ سَكَتَ بَعْدُ عَنْهَا ثُمَّ قُبِضَ وَلَمْ يَنْهَ عَنْ ذَلِك. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে نافع، يسار، افلح، بركة، يعلى (নাফি‘, ইয়াসার, আফলাহ, বারাকাহ্, ইয়া‘লা-) এ জাতীয় আরো নাম এবং সামুরাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেন চারটি নাম رباح، نافع، يسار، افلح (রবাহ, নাফি‘, ইয়াসার, আফলাহ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ বর্ণিত হাদীসে ইমাম ত্ববারানী হাসান সনদে বর্ণনা করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম وليذ، حرب، يسار، نجيح، افلح، ابوالحكم، الحكم، امرأة (ওয়ালীয, হারব, ইয়াসার, নাজীহ, আফলাহ, আবুল হাকাম, আল হাকাম, আমরিআহ্/আমরাআহ্) এবং ইমাম ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ) বুরয়দাহ্ হতে বর্ণিত كلب ، كليب কাল্ব ও কুলায়ব নাম রাখতে নিষেধ করেছেন।
শিক্ষা : আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে উল্লেখিত নিষেধকৃত নাম রাখা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকার তাওফীক দান করুন এবং বিরত থাকা আমাদের সকলের উচিত যেহেতু হাদীসে নিষেধ রয়েছে।
(শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ১৩-[২১৩৮]; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৩৫) [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৭০-[২১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা আমার নামে নাম রাখবে, তখন আমার উপনামে উপনাম রাখবে না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব। আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার নামে নাম রাখবে, সে আমার উপনামে উপনাম রাখবে না। আর যে ব্যক্তি আমার উপনামে উপনাম রাখবে, সে আমার নামে নাম রাখবে না।
وَعَنْ
جَابِرٌ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: «إِذَا سَمَّيْتُمْ بِاسْمِي فَلَا تَكْتَنُوا بِكُنْيَتِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ: «مَن تسمَّى باسمي فَلَا يَكْتَنِ بِكُنْيَتِي وَمَنْ تَكَنَّى بِكُنْيَتِي فَلَا يَتَسَمَّ باسمي»
ব্যাখ্যাঃ ‘আওনুল মা‘বূদের মধ্যে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسَمَّوْا بِاسْمِي وَلَا تَكَنَّوْا بِكُنْيَتِي
অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নামকরণ করতে পার এবং আমার উপনামে ডাকিও না। এ প্রসঙ্গে পূর্বেও আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইমাম আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদি গ্রন্থে শাব্দিক কিছু পরিবর্তন সহকারে নিষেধ করা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৫৭)
তুহফাতুল আহ্ওয়াযীতে রয়েছে, জাবির বর্ণিত হাদীসে এরূপ, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
إذا سميتم بِي فَلَا تَكَنَّوْا بِي
অর্থাৎ- যখন তোমরা আমার নামে নামকরণ করবে বা নাম রাখবে তখন তোমরা আমার উপনামে নামকরণ করবে না বা উপনামে ডাকবে না।
* উপনাম ও মূল নাম একত্রকরণ বৈধ হওয়ার দলীল এবং এটা কোন সময় বৈধ- এ ব্যাপারে আলোচনা উল্লেখ করা হলো,
عن محمد بن الحنفية قال قال علي ؓ الله قلت يا رسول الله ان ولد لى من بعدك ولد اسميه باسمك وأكنيه بكنيتك؟ قال نعم
অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনু হানাফিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী বললেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আমার সন্তান হয় আপনার (মৃত্যুর পর) আমি কি তার নাম রাখতে পারি আপনার নামে এবং আমি কি আপনার উপনামে তার নাম রাখতে পারি বা তাকে আপনার উপনামে ডাকতে পারি? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, (উপনামে নাম রাখতে পার বা ডাকতে পার)। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪২)
শিক্ষা : নিষেধাজ্ঞা সীমাবদ্ধ তার বেঁচে থাকা অবস্থায়, অতঃপর বৈধ হবে উভয়ের মাঝে একত্র করা তার মৃত্যুর পর- এ মত ব্যক্ত করেন ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)। অধিকাংশ ‘উলামার মত যেমন নাবাবীর আলোচনায় রয়েছে এবং ইমাম শাফি‘ঈ ও আহলুয্ যাহির বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম কারো জন্য কখনও জায়িয নেই চাই তার নাম মুহাম্মাদ অথবা আহমাদ অথবা না হোক। আনাস -এর বাহ্যিক হাদীসের দৃষ্টিতে যা অধ্যায়ের মধ্যে রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৯৮-[১৬] ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) জাবির (রাঃ) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, লোকেরা জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! আমরা তো اَلثَّرْثَارُوْنَ এবং اَلْمُتَشَدِّقُوْنَ-এর অর্থ বুঝলাম; কিন্তু اَلْمُتَفَيْهِقُوْنَ কারা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ অহংকারীরা।[1]
وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ
نَحْوَهُ عَنْ جَابِرٍ وَفِي رِوَايَتِهِ قَالُوا: يَا رَسُول الله قد علمنَا الثرثارونَ والمتشدقون فَمَا المتفيقهون؟ قَالَ: «المتكبرون»
ব্যাখ্যাঃ (الثَّرْثَارُوْنَ) অনর্থক ও অন্যায়মূলক বিষয়ে বেশি কথা যারা বলে তাদের ثرثارون বলা হয়।
(الْمتَشَدِّقُوْنَ) সংযত ও সতর্ক না হয়ে যারা কথা বলে।
(الْمُتَفَيْهِقُوْنَ) অহংকারবশত যারা কথা বলে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০১৮)