৩৩৫৯

পরিচ্ছেদঃ পুরো সম্পদ দান না করে কিছু দান করার নির্দেশ, কেননা এটিই উত্তম

৩৩৫৯. কা’ব ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “তাবূক যুদ্ধের আগ পর্যন্ত বদর যুদ্ধ ছাড়া কোন যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ না করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছে পড়ে থাকিনি। তবে যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তাদের কাউকেও আল্লাহর নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোষারোপ করেননি। বস্তুত সে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলমাত্র কুরায়শদের একটি বানিজ্যিক কাফিলাকে ধরার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। আর কুরাইশ বাহিনী তাদের বানিজ্যিক কাফেলাকে সাহায্য করার জন্য বের হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মুসলিম ও কাফিরদের অনির্ধারিত সময়ে একত্রিত করে দিলেন, যেমনটা মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন। আমার আয়ুষ্কালের প্রভুর কসম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুদ্ধসমূহের মাঝে বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশী মর্যাদাবান।  আর আমি পছন্দ করি না যে, আমি ’আকাবার রাত্রে উপস্থিত হওয়ার পরিবর্তে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।  আকাবায় আমরা ইসলামের উপর অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। তারপর তাবূক যুদ্ধ পর্যন্ত আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন গাজওয়ায় অংশগ্রহণ না করে পিছে পড়ে থাকিনি। এটা ছিল তাঁর সর্বশেষ যুদ্ধ।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে বের হওয়ার জন্য লোকদের ঘোষনা দিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন যে, লোকজন তাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুক। সময়টা ছিল প্রখর রৌদ্রময় আর গাছের ফলও পেকে গিয়েছিল। তিনি প্রায় সব যুদ্ধেই তাওরিয়া করতেন। তিনি বলতেন, “যুদ্ধ হলো কৌশল।” কিন্তু তিনি তাবূক যুদ্ধে চাচ্ছিলেন যে, লোকজন তাদের যুদ্ধের জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করুক। এসময় আমি ছিলাম অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে স্বচ্ছল। আমি দুটি বাহন একত্রিত করেছিলাম। আমি এমন অবস্থাতেই ছিলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহস্প্রতিবার সকালে দাঁড়ান। তিনি বৃহস্প্রতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দ করতেন। তিনি সকালে যাত্রা শুরু করেন। তখন আমি বললাম, আমি বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় মাল-সামান ক্রয় করবো। তারপর আমি তাদের সাথে গিয়ে যুক্ত হবো। পরের দিন সকালে আমি বাজারে যাই। আমার কোন কাজে আমি জটিলতায় পড়ে যাই। ফলে আমি বাড়িতে ফিরে আসি। তারপর আমি বলি, ইনশাল্লাহ আমি আগামীকাল সকালে বের হয়ে তাদের সাথে যুক্ত হবো। অতঃপর সেদিনও আমার কোন কাজে আমি জটিলতায় পড়ে যাই। অতঃপর সেই অবস্থাতেই থেকে যাই। এভাবে পাপ আমাকে পেয়ে বসে। আমি রাসূল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছে থেকে যাই।

অতঃপর আমি হাট-বাজার ও মদীনার বিভিন্ন প্রান্তে বের হতাম, অতঃপর আমাকে এই বিষয়টি পীড়া দিতো যে, নিফাকের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যুদ্ধে যায়নি এমন কাউকে দেখতে পেতাম না। যেই যুদ্ধে থেকে পিছে ছিল, তার ব্যাপারেই আমার এমনটাই মনে হতো। আমি মনে করতাম যে, বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গোপন থাকবে (কারণ এতো বিপুল সংখ্যক সাহাবীর মাঝে আসলো আর কে আসলো না, সেটা নির্ণয় করা কঠিন বটে)। লোক সংখ্যা ছিল অনেক বেশি যা, কোন রেকর্ড বই ধারণ করতে পারবে না। আর যারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছে পড়ে ছিলো, তাদের সংখ্যা ৮০ জনের বেশি ছিল।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক পৌঁছার আগ পর্যন্ত আমার কথা আলোচনা করেননি। অতঃপর যখন তাবুক পৌঁছেন, তখন তিনি বলেন, “কা’ব ইবনু মালিকের কী হয়েছে?” তখন আমার গোত্রের এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তার জোড়া জামা এবং সুন্দর পোশাকের দিকে তার দৃষ্টিপাত তাকে বিরত রেখেছে।

তখন মুআয ইবনু জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তুমি অনেক খারাপ কথা বলছ। আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তার ব্যাপারে ভাল ছাড়া মন্দ কিছু জানি না।”

রাবী বলেন, “আমরা এই অবস্থার মাঝেই ছিলাম। এমন সময় একজন ব্যক্তিকে দেখা গেলো, যার ব্যাপারে মরীচিকা দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করছিল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আবু খাইসামা হতে পারে।” অতঃপর দেখা গেল, তিনি আবু খাইসামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ।

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ শেষ করে মদীনার ফিরে আসেন।  যখন তিনি মদীনার কাছাকাছি আসেন, তখন আমি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম যে, কী বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্রোধ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারি এবং আমি আমার পরিবারে সকল জ্ঞানী লোকদের এই ব্যাপারে সহযোগিতা নিব।

পরিশেষে যখন আমাকে বলা হলো যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালেই পৌঁছবেন, তখন আমার থেকে মিথ্যা অপসারিত হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি যে, আমি কেবল সত্যের মাধ্যমেই মুক্তি পেতে পারি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুর্বাহ্ণে সফর থেকে আগমন করেন। তারপর তিনি মাসজিদে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করেন। তিনি যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন তিনি এরকম করতেন। মাসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করেন।  তারপর তিনি বসেন, অতঃপর যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তারা এসে শপথ করে অজুহাত দেয়া শুরু করে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাদের বাহ্যিক কথাবার্তা গ্রহণ করেন আর তাদের গোপন বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করেন।

তারপর আমি মাসজিদে প্রবেশ করি। আমি তাঁকে বসা দেখতে পাই। যখন তিনি আমাকে দেখেন, তখন তিনি ক্রুদ্ধ লোকের হাসির মতো মুচকি হাসলেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর সামনে বসি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রশ্ন করলেন, “তুমি কি সওয়ারী কিনে ছিলে না?” আমি বললাম, “জ্বী, হ্যাঁ। হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!” তখন তিনি বলেন, “কিসে তোমাকে পিছনে ফেলে রেখেছিল?” আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর শপথ, আমি যদি আপনি ছাড়া দুনিয়ার অন্য কোন মানুষের সামনে বসতাম তবে আমি ওজর পেশ করে তার ক্রোধ হতে বের হয়ে যেতাম। অবশ্যই আমাকে যথেষ্ট যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার পারদর্শিতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর শপথ, আমি জানি, যদি আমি সত্য কথা বলি এবং এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবে এতে আল্লাহর তরফ হতে আমি কল্যাণজনক পরিণামের প্রত্যাশা রাখি।

আর আজ যদি আমি মিথ্যা কথা বলি যাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন, তবে শীঘ্রই হয়তো আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আমার ব্যাপারটি অবহিত করবেন। আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যখন আমি আপনার থেকে পিছনে ছিলাম, তখন আমি যতটা স্বচ্ছল ছিলাম, ততটা স্বচ্ছল আমি কখনই ছিলাম না এবং এই সময়ের চেয়ে বেশি অবসর আর কখনই ছিলাম না।”

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি সত্য কথা বলেছে। যাও, যতক্ষন না আল্লাহ তোমার ব্যাপারে ফায়সালা করেন।” তারপর আমি চলে যাই। তখন আমার গোত্রের কিছু লোক দ্রুত আমার নিকটে এসে আমাকে তিরস্কার করেন। তারা বলেন, আল্লাহর কসম আমরা তো ইতোপূর্বে তোমাকে কোন অন্যায় করতে দেখিনি। তুমি কেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এমন ওজর পেশ করলে না, যাতে তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতেন, তারপর তিনি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, আর তুমি এমন অবস্থানে থাকতে না, যেখানে আমরা জানি না যে, কী ফায়সালা করা হবে?!” এভাবে তারা আমাকে তিরস্কার করতেই থাকে, এমনকি ইচ্ছা করলাম যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে গিয়ে নিজেকে মিথ্যাবাদী দাবি করবো। এসময় আমি বললাম, “আমি ছাড়া এরকম আরো কেউ বলেছে কী?” লোকজন বললেন, “হ্যাঁ। এরকম কথা হিলাল বিন উমাইয়্যা ও মুরারাহ বিন রাবিআহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন।

কা’ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তারা আমার কাছে এমন দু লোকের কথা বর্ণনা করল, যারা ছিলেন সৎকর্মশীল, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী। তাদের মাঝে আমার জন্য আদর্শ ছিলো।  তখন আমি বললাম, “আল্লাহর কসম, আমি এই তাঁর কাছে কখনই যাব না। আমি নিজেকে মিথ্যাবাদী দাবি করবো না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তিন জনের সাথে মুসলিমদের কথা বলতে নিষেধ করে দিলেন। আমি বাজারে যেতাম, কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলতো না। আমাদের সাথে লোকদের আচরন এমনভাবে বদলে গেলো যেন আমরা তাদেরকে চিনি না। আমাদের কাছে বাগানের চেহারা পাল্টে গেলো, এমনকি মনে হলো এ যেন আমাদের চিরচেনা সেই বাগান নয়। আমাদের কাছে জমিনের চেহারা পাল্টে গেলো, এমনকি মনে হলো এ যেন আমাদের জানাশুনা সেই জমিন নয়। আমি আমার সঙ্গীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলাম। ফলে আমি বাজারে হাঁটাহাঁটি করতাম, মাসজিদে গমন করতাম। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতাম, তাঁকে সালাম দিতাম। আমি মনে মনে বলতাম, দেখি তিনি ঠোট নাড়িয়ে সালামের জবাব দেন কিনা। আমি যখন খুঁটি সামনে রেখে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতাম, তখন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চোখের কোণায় আমার দিকে তাকাতেন। আর যখন আমি তাঁর দিকে তাকাতাম, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন।

আমার অপর দুই সঙ্গী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা রাত-দিন কাঁদতে থাকেন। তারা মাথাও তুলতেন না। তিনি বলেন, “আমি বাজারে ঘুরছিলাম, এমন সময় একজন খ্রীষ্টান ব্যক্তি বাজারে খাদ্য নিয়ে এসেছিল, বিক্রি করার জন্য। সে বলে, “আমাকে কা‘ব বিন মালিকের সন্ধান কে দিতে পারবে?” তখন লোকজন আমার দিতে ইশারা করতে থাকে। অতঃপর সে আমাকে গাসসানের অধিপতির কাছ থেকে একটি চিঠি দেয়। অতঃপর আমি দেখতে পাই সেখানে লেখা আছে,  “অতঃপর, নিশ্চয়ই আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, আপনার সঙ্গী আপনার সাথে রুঢ় আচরণ করছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার জন্য অবমাননাকর ও অধিকারবঞ্ছিত জায়গা নির্ধারণ করেননি। সুতরাং আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন, আমরা আপনার সমব্যথি হবো।”

কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তখন আমি বললাম, এটাও একটা পরীক্ষা। ফলে আমি চুলা জ্বালালাম। অতঃপর আমি সেটা আগুনে জ্বালিয়ে দেই। এভাবে যখন ৪০ দিন অতিবাহিত হয়ে যায়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন দূত আমার কাছে এসে বলেন, “আপনি আপনার স্ত্রীকে আলাদা করে দিন।” তখন আমি বললাম, “আমি কি তাকে তালাক দিবো?” জবাবে তিনি বলেন, “না, তবে তার কাছে যাবে না।”

তারপর হিলাল বিন উমাইয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী এসে বলেন, “হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নিশ্চয়ই হিলাল বিন উমাইয়্যাহ একজন দুর্বল বৃদ্ধ মানুষ। আপনি কি আমাকে তার খেদমত করার অনুমতি দিবেন?” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হ্যাঁ। তবে সে যেন অবশ্যই তোমার নিকটবর্তী না হয়।” তার স্ত্রী বলেন, “হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার তো কোন কিছুর জন্য নড়াচড়া করার ক্ষমতা নেই। তার এই ব্যাপারটি ঘটার পর থেকে তিনি হেলান দিয়ে রাত-দিন শুধু কান্না করেই যাচ্ছেন!”

কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যখন আমার বিপদ দীর্ঘ হয়ে গেলো, তখন আমি আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাগানে প্রবেশ করি। আবূ কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার চাচাতো ভাই ছিলো। আমি তাকে সালাম দিলাম। কিন্তু তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। তখন আমি বললাম, “আবূ কাতাদা, আমি তোমার আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, তুমি কি জানো যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসি? অতঃপর তিনি চুপ থাকেন। আমি তাকে আবার বললাম, “আবূ কাতাদা, আমি তোমার আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, তুমি কি জানো যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসি? অতঃপর তিনি চুপ থাকেন। আমি তাকে পুনরায় বললাম, “আবূ কাতাদা, আমি তোমার আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, তুমি কি জানো যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসি? তখন তিনি বলেন, “আল্লাহ ও  তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল জানেন।” তখন আমি নিজেকে সংবরণ করতে পারলাম না। ফলে আমি কেঁদে ফেললাম। তারপর আমি বাগান থেকে বের হয়ে আসি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করার পর যখন ৫০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো, তখন আমি আমাদের ঘরের ছাদে ফজরের সালাত আদায় করছিলাম, এসময় আমি সেই বাড়িতে ছিলাম, যে ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন যে, জমিন প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও, তা আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো, আমাদের নিজেদের জীবন আমাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো! এসময় আমি আমি সাল‘ পাহাড়ের চূড়া থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম, “কা‘ব বিন মালিক, শুভ সংবাদ গ্রহণ করুন।” তখন আমি সাজদায় লুটিয়ে পড়লাম। আমি বুঝতে পারলাম যে, মহান আল্লাহ আমাদের বিপদমুক্তি নিয়ে এসেছেন। তারপর এক ব্যক্তি আমাকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য ঘোড়ায় পদাঘাত করে আরোহন করে আসেন। তার আওয়াজ ঘোড়ার চেয়ে দ্রুত গতির ছিল। আমাকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাকে আমার জামা দিয়ে দেই। আর আমি অন্য দুটি জামা পরিধান করি। আমাদের তাওবার বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার সময় অবতীর্ণ হয়। তখন উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমরা কি কা‘ব বিন মালিককে সুসংবাদ দিব না?” জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তাহলে লোকজন তোমাদের কাছে এসে ভীড় জমাবে এবং সারা রাত তোমাদের ঘুমাতে দিবে না।”

কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “উম্মু সালামাহ আমার সাথে ভাল আচরণ করেন। তিনি আমার ব্যাপারে আমাকে খবর জানান।

তারপর আমি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাই, অতঃপর আমি তাঁকে মাসজিদে বসা অবস্থায় দেখতে পাই। তাঁর পাশে মুসলিমগণ ছিলেন। এসময় তিনি চাদের ন্যায় আলোকোজ্জ্বল ছিলেন। যখন তাঁর কাছে কোন খুশির কিছু ঘটতো, তখন তিনি নূরান্বিত হয়ে যেতেন। আমি এসে তাঁর সামনে বসলাম। তখন তিনি বলেন, “হে কা‘ব বিন মালিক, তোমার মা যেদিন তোমাকে জন্ম দিয়েছেন, সেদিন থেকে অদ্যবধি শ্রেষ্ঠ দিনের শুভ সংবাদ গ্রহণ করো, যেই শুভদিন তোমার কাছে এসেছে!”

কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাকি আপনার পক্ষ থেকে?” জবাবে তিনি বলেন, “বরং এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তারপর তিনি এই আয়াত পাঠ করে শুনান,

لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ ...هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

“অবশ্যই আল্লাহ নাবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবূল করেছেন... তিনি তাওবা কবূলকারী ও সবিশেষ করুনাময়।” (সূরা আত তাওবাহ: ১১৭-১১৮)

তিনি বলেন, “আমাদের ব্যাপারে এই আয়াতটিও অবতীর্ণ হয়,

اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

“তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।” (সূরা আত তাওবাহ: ১১৯)

তিনি বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এটা আমার তাওবার অন্তর্ভুক্ত ছিল যে, আমি কেবল সত্য কথাই বলবো এবং আমি আমার সমস্ত সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে সাদাকাহ করবো।” তখন তিনি বলেন, “তুমি তোমার কিছু সম্পদ রেখে দাও। এটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।”

তিনি বলেন, “আমি বললাম, আমি আমার খায়বারের অংশ রেখে দিবো।” তিনি আরো বলেন, “ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহ আমাকে যত নি'আমত দান করেছেন, তন্মধ্যে আমার মনে সবচেয়ে বড় নি'আমত ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সত্য বলা, যখন আমি ও আমার দুই সঙ্গী সত্য কথা বলেছিলাম। আমরা মিথ্যা বলি নাই, অন্যথায় আমরা ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেভাবে ওরা ধ্বংস হয়ে গেছে!

তারপর আমি ইচ্ছাকৃতভাবে আর কখনই মিথ্যা কথা বলি নাই। আর আমি আশাবাদী যে, মহান আল্লাহ আমাকে বাকী দিনগুলোতেও হিফাযত করবেন।”

ইমাম যুহরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “কা‘ব বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের কাছে এই হাদীসটিই পৌঁছেছে।”[1]

ذِكْرُ الْأَمْرِ لِلْمَرْءِ بِتَرْكِ صَدَقَةِ مَالِهِ كُلِّهِ وَالِاقْتِصَارِ عَلَى الْبَعْضِ مِنْهُ إِذْ هُوَ خَيْرٌ

3359 - أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ قُتَيْبَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي السَّرِيِّ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ: أَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ: عَنْ أَبِيهِ قَالَ: لَمْ أَتَخَلَّفْ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غزوة غَزَاهَا حَتَّى كَانَتْ غَزْوَةَ تَبُوكَ إِلَّا بَدْرٍ وَلَمْ يُعَاتِبِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَدًا تخلَّف عَنْ بَدْرٍ إِنَّمَا خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدُ الْعِيرَ وَخَرَجَتْ قُرَيْشٌ مُغِيثِينَ لِعِيرِهِمْ فَالْتَقَوْا عَلَى غَيْرِ مَوْعِدٍ كَمَا قَالَ اللَّهُ وَلَعَمْرِي إِنَّ أَشْرَفَ مَشَاهِدِ رسول الله صلى الله عليه وسلم في النَّاسِ لَبَدْرٌ وَمَا أُحِبُّ أَنِّي كُنْتُ شَهِدْتُهَا مَكَانَ بَيْعَتِي لَيْلَةَ الْعَقَبَةِ حِينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الْإِسْلَامِ وَلَمْ أَتَخَلَّفْ بَعْدُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا حَتَّى كَانَتْ غَزْوَةُ تَبُوكَ وَهِيَ آخِرُ غَزْوَةٍ غَزَاهَا آذَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (النَّاسَ) بِالرَّحِيلِ وَأَرَادَ أَنْ يَتَأَهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهِمْ وَذَلِكَ حِينَ طَابَ الظِّلَالُ وَطَابَتِ الثِّمَارُ وَكَانَ قَلَّمَا أَرَادَ غَزْوَةً إِلَّا ورَّى غَيْرَهَا وَكَانَ يَقُولُ: (الْحَرْبُ خُدْعَةٌ) فَأَرَادَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ تَبُوكَ أَنْ يَتَأَهَّبَ النَّاسُ أُهْبَتَهُ وَأَنَا أَيْسَرُ مَا كُنْتُ قَدْ جَمَعْتُ راحلتين لي فلم أزال كَذَلِكَ حَتَّى قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَادِيًا بِالْغَدَاةِ وَذَلِكَ يَوْمُ الْخَمِيسِ ـ وَكَانَ يُحب أَنْ يَخْرُجَ يَوْمَ الْخَمِيسِ ـ فَأَصْبَحَ غَادِيًا فَقُلْتُ: أَنْطَلِقُ إِلَى السُّوقِ وَأَشْتَرِي جِهَازِي ثُمَّ أَلْحَقُ بِهَا فَانْطَلَقْتُ إِلَى السُّوقِ مِنَ الْغَدِ فعَسُرَ عَلَيَّ بَعْضُ شَأْنِي فَرَجَعْتُ فَقُلْتُ: أَرْجِعُ غَدًا ـ إِنْ شَاءَ اللَّهُ ـ فَأَلْحَقُ بِهِمْ فعَسُرَ عَلَيَّ بَعْضُ شَأْنِي أَيْضًا فَلَمْ أَزَلْ كَذَلِكَ حَتَّى لبَّسَ بِيَ الذَّنْبُ وَتَخَلَّفْتُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلْتُ أَمْشِي فِي الأسواق وأطراف المدنية فيُحزنني أَنْ لَا أَرَى أَحَدًا تَخَلَّفَ عَنْ رسول الله صلى الله عليه وسلم ألا رَجُلًا مَغْمُوصًا عَلَيْهِ فِي النِّفَاقِ وَكَانَ لَيْسَ أَحَدٌ تَخَلَّفَ إِلَّا أَرَى ذَلِكَ سَيَخْفَى لَهُ وَكَانَ النَّاسُ كَثِيرًا لَا يَجْمَعُهُمْ دِيوَانٌ وَكَانَ جَمِيعُ مَنْ تَخَلَّفَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَضْعَةً وَثَمَانِينَ رَجُلًا وَلَمْ يَذْكُرْنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَلَغَ تبوكاً فلما بلغ تبوكاً قَالَ: (مَا فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ)؟ فَقَالَ رجل من قومي: خَلَّفَهُ يارسول اللَّهِ بُردَاهُ وَالنَّظَرُ فِي عِطْفَيْهِ فَقَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ: بِئْسَ مَا قُلْتَ وَاللَّهِ يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَا نَعْلَمُ إِلَّا خَيْرًا قَالَ: فَبَيْنَا هُمْ كَذَلِكَ إِذَا رَجُلٌ يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (كُنَّ أَبَا خَيْثَمَةَ) فَإِذَا هُوَ أَبُو خَيْثَمَةَ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ تَبُوكَ وَقَفَلَ وَدَنَا مِنَ الْمَدِينَةِ جَعَلْتُ أَتَذَكَّرُ مَاذَا أَخْرُجُ بِهِ مِنْ سَخَطِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَسْتَعِينُ عَلَى ذَلِكَ بِكُلِّ ذِي رَأْيٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي حَتَّى إِذَا قِيلَ: النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُصَبِّحُكُمْ بِالْغَدَاةِ رَاحَ عَنِّي الْبَاطِلُ وَعَرَفْتُ أَنِّي لَا أَنْجُو إِلَّا بِالصِّدْقِ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحًى فَصَلَّى فِي الْمَسْجِدِ رَكْعَتَيْنِ ـ وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ فَعَلَ ذَلِكَ: دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ ـ فَجَعَلَ يَأْتِيهِ مَنْ تَخَلَّفَ فَيَحْلِفُونَ لَهُ وَيَعْتَذِرُونَ إِلَيْهِ فَيَسْتَغْفِرُ لَهُمْ وَيَقْبَلُ عَلَانِيَتَهُمْ ويَكِلُ سَرَائِرَهُمْ إِلَى اللَّهِ فَدَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا هُوَ جَالِسٌ فَلَمَّا رَآنِي تبسَّم تبسُّم الْمُغْضَبِ فَجِئْتُ فَجَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (أَلَمْ تَكُنِ ابْتَعْتَ ظَهْرًا)؟ قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللَّهِ فَقَالَ: (مَا خَلَّفَكَ عَنِّي)؟ فَقُلْتُ: وَاللَّهِ لَوْ بَيْنَ يَدَيْ أَحَدٍ مِنَ النَّاسِ غَيْرِكَ جَلَسْتُ لَخَرَجْتُ مِنْ سَخَطِهِ عَلَيَّ بعُذر وَلَقَدْ أُوتِيتُ جَدَلًا وَلَكِنِّي قَدْ عَلِمْتُ ـ يَا نَبِيَّ اللَّهِ ـ أَنِّي إِنْ حَدَّثْتُكَ الْيَوْمَ بِقَوْلٍ تجدُ عَلَيَّ فِيهِ وَهُوَ حَقٌّ فَإِنِّي أَرْجُو فِيهِ عُقْبَى اللَّهِ وَإِنْ حَدَّثْتُكَ الْيَوْمَ بِحَدِيثٍ تَرْضَى عَنِّي فِيهِ وَهُوَ كَذِبٌ أَوْشَكَ أَنْ يُطْلِعَكَ اللَّهُ عَلَيَّ وَاللَّهِ يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَا كُنْتُ قطُّ أَيْسَرَ وَلَا أَخَفَّ حَاذًا مِنِّي حَيْثُ تَخَلَّفْتُ عَلَيْكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (أَمَا هَذَا فَقَدْ صَدَقَكُمُ الْحَدِيثَ قُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللَّهُ فِيكَ) فَقُمْتُ فَثَارَ عَلَى أَثَرِي نَاسٌ مِنْ قَوْمِي يُؤَنِّبُونَنِي فَقَالُوا: وَاللَّهِ مَا نَعْلَمُكَ أَذْنَبْتَ ذَنْبًا قَطُّ قَبْلَ هَذَا فَهَلَّا اعْتَذَرْتَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعُذْرٍ يَرْضَاهُ عَنْكَ فِيهِ وَكَانَ اسْتِغْفَارُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيَأْتِي مِنْ وَرَاءِ ذَلِكَ وَلَمْ تَقِفْ مَوْقِفًا لَا نَدْرِي مَاذَا يُقضَى لَكَ فِيهِ فَلَمْ يَزَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى هَمَمْتُ أَنْ أَرْجِعَ فأُكذِّب نَفْسِي فَقُلْتُ: هَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ غَيْرِي؟ قَالُوا: نَعَمْ قَالَهُ هِلَالُ بْنُ أُمَيَّةَ وَمُرَارَةُ بْنُ رَبِيعَةَ فَذَكَرُوا رَجُلَيْنِ صَالِحَيْنِ شَهِدَا بَدْرًا , لِيَ فِيهِمَا أُسْوَةٌ فَقُلْتُ: وَاللَّهِ لَا أَرْجِعُ إِلَيْهِ فِي هَذَا أَبَدًا وَلَا أكذِّب نَفْسِي وَنَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ كَلَامِنَا أَيُّهَا الثَّلَاثَةُ فَجَعَلْتُ أَخْرُجُ إِلَى السُّوقِ وَلَا يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ وتنكَّر لَنَا النَّاسُ حَتَّى مَا هُمْ بِالَّذِينَ نَعْرِفُ وَتَنَكَّرَ لَنَا الْحِيطَانُ حَتَّى مَا هِيَ بِالْحِيطَانِ الَّتِي نَعْرِفُ وَتَنَكَّرَتْ لَنَا الْأَرْضُ حَتَّى مَا هِيَ بِالْأَرْضِ الَّتِي نَعْرِفُ وَكُنْتُ أَقْوَى أَصْحَابِي فَكُنْتُ أَخْرُجُ فَأَطُوفُ فِي الْأَسْوَاقِ فَآتِي الْمَسْجِدَ وَآتِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَأَقُولُ: هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْهِ بِالسَّلَامِ فَإِذَا قُمْتُ أُصَلِّي إِلَى سَارِيَةٍ وَأَقْبَلْتُ عَلَى صَلَاتِي نَظَرَ إِلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمُؤَخَّرِ عَيْنَيْهِ وَإِذَا نَظَرْتُ إِلَيْهِ أَعْرَضَ عَنِّي وَاشْتَكَى صَاحِبَايَ فَجَعَلَا يبكيان الليل والنهار ولا يُطلعان رؤوسهما. قَالَ: فَبَيْنَا أَنَا أَطُوفُ فِي الْأَسْوَاقِ إِذَا رَجُلٌ نَصْرَانِيٌّ قَدْ جَاءَ بِطَعَامٍ لَهُ يَبِيعُهُ يَقُولُ: مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ فطفق الناس يشيرون له إلي فأتاني وأتى بِصَحِيفَةٍ مِنْ مَلِكِ غَسَّانَ فَإِذَا فِيهَا: أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَأَقْصَاكَ وَلَسْتَ بِدَارِ هَوَانٍ وَلَا مَضْيَعَةٍ فَالْحَقْ بِنَا نُوَاسِكَ فَقُلْتُ: هَذَا أَيْضًا مِنَ الْبَلَاءِ فَسَجَرْتُ لَهَا التَّنُّورَ فَأَحْرَقْتُهَا فِيهِ فَلَمَّا مَضَتْ أَرْبَعُونَ لَيْلَةً إِذَا رَسُولٌ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَتَانِي فَقَالَ: اعْتَزَلِ امْرَأَتَكَ فَقُلْتُ: أطلِّقها؟ قَالَ: لَا وَلَكِنْ لَا تَقْرَبْهَا فَجَاءَتِ امْرَأَةُ هِلَالِ بْنِ أُمَيَّةَ فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّ هِلَالَ بْنَ أُمَيَّةَ شَيْخٌ ضَعِيفٌ فَهَلْ تَأْذَنْ لِي أَنْ أَخْدُمَهُ قَالَ: (نَعَمْ وَلَكِنْ لَا يَقْرَبَنَّكِ) قَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ مَا بِهِ حَرَكَةٌ لِشَيْءٍ مَا زَالَ مُتَّكِئًا يَبْكِي اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ مُذْ كَانَ مِنْ أَمْرِهِ مَا كَانَ. قَالَ كَعْبٌ: فَلَمَّا طَالَ عَلَيَّ الْبَلَاءُ اقْتَحَمْتُ عَلَى أَبِي قَتَادَةَ حَائِطَهُ ـ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي ـ فسلَّمت عَلَيْهِ فَلَمْ يرد علي فَقُلْتُ: أَنْشُدُكَ اللَّهَ يَا أَبَا قَتَادَةَ أَتَعْلَمُ أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ؟ فَسَكَتَ فَقُلْتُ: أَنْشُدُكَ الله يا أبا قتادة أتعلم أني أحب اللَّهَ وَرَسُولَهُ؟ فَسَكَتَ فَقُلْتُ: أَنْشُدُكَ اللَّهَ يَا أبا قتادة أتعلم أني أحب الله ورسوله فَقَالَ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: فَلَمْ أَمْلِكْ نَفْسِي أَنْ بَكَيْتُ ثُمَّ اقْتَحَمْتُ الْحَائِطَ خَارِجًا حَتَّى إِذَا مَضَتْ خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ كَلَامِنَا صَلَّيْتُ عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ لَنَا صَلَاةَ الْفَجْرِ وَأَنَا فِي الْمَنْزِلَةِ الَّتِي قَالَ اللَّهُ: قَدْ ضَاقَتْ عَلَيْنَا الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْنَا أَنْفُسُنَا إِذْ سَمِعْتُ نِدَاءً مِنْ ذِرْوَةِ سَلْعٍ أنْ أَبْشِرْ يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ فَخَرَرْتُ سَاجِدًا وَعَرَفْتُ أَنَّ اللَّهَ قَدْ جَاءَنَا بِالْفَرَجِ ثُمَّ جَاءَ رَجُلٌ يَرْكُضُ عَلَى فَرَسٍ يُبَشِّرُني فَكَانَ الصَّوْتُ أَسْرَعَ مِنْ فَرَسِهِ فَأَعْطَيْتُهُ ثَوْبِي بِشَارَةً وَلَبِسَتْ ثَوْبَيْنِ آخَرِينَ وَكَانَتْ تَوْبَتُنَا نَزَلَتْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُلُثَ اللَّيْلِ فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَلَا نبشِّرُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ فَقَالَ: (إِذًا يَحْطِمُكُمُ النَّاسُ وَيَمْنَعُونَكُمُ النَّوْمَ سَائِرَ اللَّيْلَةِ) قَالَ: وَكَانَتْ أُمُّ سَلَمَةَ مُحْسِنَةً فِي شَأْنِي تُخْبِرُنِي بِأَمْرِي فَانْطَلَقْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا هُوَ جَالِسٌ فِي الْمَسْجِدِ وَحَوْلَهُ الْمُسْلِمُونَ وَهُوَ يَسْتَنِيرُ كَاسْتِنَارِ الْقَمَرِ وَكَانَ إِذَا سُرَّ بِالْأَمْرِ اسْتَنَارَ فَجِئْتُ فَجَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ: (يَا كَعْبُ بْنَ مَالِكٍ أَبْشِرْ بِخَيْرِ يَوْمٍ أَتَى عَلَيْكَ مُنْذُ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ) قَالَ: فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَمِنْ عِنْدِ اللَّهِ أُمْ مِنْ عِنْدِكَ؟ قَالَ: (بَلْ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ) ثُمَّ تَلَا عَلَيْهِمْ: {لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ} [التوبة: 117] حَتَّى بَلَغَ {هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ} [التوبة: 17 ـ 18] قَالَ: وَفِينَا نَزَلَتِ {اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ} [التوبة: 119] قَالَ: فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنِّي لَا أُحَدِّثُ إِلَّا صِدْقًا وَأَنْ أنخلع من مالي كله صدقة إلى الله وَإِلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: (أَمْسِكْ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ) قَالَ: فَقُلْتُ: فَإِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِيَ الَّذِي بِخَيْبَرَ قَالَ: فَمَا أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنْ نِعْمَةٍ بَعْدَ الْإِسْلَامِ أَعْظَمَ فِي نَفْسِي مِنْ صِدْقِي رسول الله صلى الله عليه وسلم حين صَدَقْتُهُ أَنَا وَصَاحِبَايَ أَنْ لَا نَكُونَ كَذَبْنَا فَهَلَكْنَا كَمَا هَلَكُوا وَمَا تعمَّدتُ لكَذْبَةٍ بَعْدُ وَإِنِّي لَأَرْجُو أَنْ يَحْفَظَنِيَ اللَّهُ فِيمَا بَقِيَ. قَالَ الزُّهْرِيُّ: فَهَذَا مَا انْتَهَى إِلَيْنَا مِنْ حديث كعب بن مالك الراوي : كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ | المحدث : العلامة ناصر الدين الألباني | المصدر : التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان الصفحة أو الرقم: 3359 | خلاصة حكم المحدث: صحيح - ((الإرواء)) (2/ 231 ـ 232/ 473) , ((تخريج فقه السيرة)) (48) , ((صحيح الأدب المفرد)) (739) , ((صحيح أبي داود)) (1312 و 2370): ق.


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ