লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ (৯) নফল সাদাকাহ
৩২৯৭. জারীর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা একদিন দিনের প্রথম ভাগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ছিলাম। এমন সময় নগ্নপদ, বস্ত্রহীন একদল লোক শরীরে চাদর জড়িয়ে আসেন। তাদের কাঁধে ছিল তরবারী। এদের অধিকাংশই মুযার গোত্রের লোক ছিল। বরং সবাই মুযার গোত্রের লোক ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাদের অভাবী অবস্থা দেখলেন, তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। রাবী বলেন, “তারপর তিনি হুজরায় প্রবেশ করেন এবং বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আযান দেওয়ার পর ইকামত দিলে, তিনি হুজরা থেকে বের হন এবং সালাত আদায় করেন। তারপর তিনি বলেন, “হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি তাদের থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার মাধ্যমে তোমরা পরস্পরের নিকট প্রার্থনা করো। আর রক্ত সম্পর্কসমূহের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষনকারী।” (সূরা নিসা: ১), “তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। মানুষ যেন লক্ষ্য করে সেই জিনিসের প্রতি, যা সে আগে পাঠিয়েছে।” (সূরা হাশর: ১৮)
প্রতিটি ব্যক্তি যেন তার দীনার, দিরহাম, কাপড়, এক সা‘ গম, এক সা‘ যব দান করে।” রাবী বলেন, এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক টুকরো খেজুর দান করার কথাও বলেন। তারপর আনসারী এক ব্যক্তি এক প্যাকেট খাবার নিয়ে আসেন, যা তিনি তুলতেই পারছিলেন না। তারপর লোকজন অব্যাহতভাবে দান করতে থাকেন। এমনকি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দুই ঢিপি কাপড় ও খাদ্য দেখলাম। আমি দেখতে পেলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা স্বর্ণের ন্যায় চিকচিক করছে। তারপর তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ইসলামে ভালো রীতি চালু করে, অতঃপর লোকজন তদনুযায়ী আমল করে, তবে সে ব্যক্তি সেটার এবং সেটা অনুযায়ী যারা আমল করবে, তার সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি মন্দ রীতি চালু করে, অতঃপর লোকজন তদনুযায়ী আমল করে, তবে সে ব্যক্তির উপর সেটার এবং পরবর্তীতে সেটা অনুযায়ী যারা আমল করবে, তার গুনাহের বোঝা আরোপিত হবে।”[1]
আবূ হাতিম ইবনু হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন, “এই হাদীস প্রমাণ করে যে, আল্লাহর বাণী “কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” (সূরা আনআম: ১৬৪) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কিছু পাপের বোঝা; সব পাপের বোঝা নয়। কেননা কুরআনের আয়াতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যাকারী (অর্থাৎ আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যাখ্যা করেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামে মন্দ রীতি চালু করে, অতঃপর লোকজন তদনুযায়ী আমল করে, তবে সে ব্যক্তির উপর সেটার এবং পরবর্তীতে সেটা অনুযায়ী যারা আমল করবে, তার গুনাহের বোঝা আরোপিত হবে।” কাজেই মহান আল্লাহ যেন বলেছেন, “কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না, তবে আমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বর্ণনা করেছেন, সেটা বহন করবে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কথার মাধ্যমে যে খাছ করেছেন, সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলেছেন। মহান আল্লাহ সেটার সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, “তিনি প্রবৃত্তি থেকে কোন কথা বলেন না। এটা তো কেবল অহী, যা অহী করা হয়।” (সূরা নাজম: ৪)
অনুরুপ কথা প্রযোজ্য আল্লাহর এই বাণীর ক্ষেত্রেও। তিনি বলেছেন, “তোমরা জেনে রেখো, নিশ্চয়ই যা কিছু গনীমত লাভ করো, তবে সেটার এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য ...।” (সূরা তাওবা: ৪১) আল্লাহর এই বাণী নিচের এই বাণী “কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” এর মতই আম বা সাধারণ ব্যাপক অর্থবোধক। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কাউকে (যুদ্ধে) হত্যা করবে, তবে সে নিহত ব্যক্তির মাল-সামান পাবে।”
এই হাদীস প্রমাণ করে যে, নিহত ব্যক্তির মাল-সামান থেকে এক-পঞ্চমাংশ বের করা হবে না। নিহত ব্যক্তির সামান্য মাল-সামান এককভাবে হত্যাকারীর জন্য হবে। কাজেই এটি পূর্বের আম বর্ণনাকে খাস করে দেয়।”
9 - بَابُ صَدَقَةِ التَّطَوُّعِ
3297 - أَخْبَرَنَا الْفَضْلُ بْنُ الْحُبَابِ حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ: سَمِعْتُ الْمُنْذِرَ بْنَ جَرِيرٍ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ صَدْرِ النَّهَارِ فَجَاءَ قومٌ حفاةٌ عراةٌ مُجْتَابِي النَّمارِ عَلَيْهِمْ سيوفٌ عامَّتُهم مِنْ مُضَرَ بَلْ كُلُّهم مِنْ مُضَرَ فَرَأَيْتُ وَجْهَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَغَيَّرَ لَمَّا رَأَى مِنْهُمْ مِنَ الْفَاقَةِ قَالَ: فَدَخَلَ فَأَمَرَ بِلَالًا فأذَّنَ ثُمَّ أَقَامَ فَخَرَجَ فَصَلَّى ثُمَّ قَالَ: ({يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً واتَّقوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا} [النساء: 1] {اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لغدٍ} [الحشر: 18] يَتَصَدَّقُ امْرُؤٌ مِنْ دِينَارِهِ وَمِنْ دِرْهَمِهِ وَمِنْ ثَوْبِهِ وَمِنْ صَاعِ بُرِّهِ وَمِنْ صَاعِ شَعِيرِهِ) حَتَّى ذَكَرَ شِقَّ تَمْرَةٍ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ بصُرَّةٍ كَادَتْ تَعْجِزُ كَفَاهُ بَلْ قَدْ عَجَزَتْ ثُمَّ تَتَابَعَ النَّاسُ حَتَّى رَأَيْتُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَوْمَيْنِ مِنَ الثِّيَابِ وَالطَّعَامِ فَلَقَدْ رَأَيْتُ وَجْهَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَهَلَّلَ حَتَّى كَأَنَّهُ مُذْهَبَةٌ ثُمَّ قَالَ: (مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَعَمِلَ بِهَا مَنْ بَعْدَهُ كَانَ لَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ يَعْمَلُ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ وَمَنْ سَنَّ سُنَّةً سيِّئةً فَعَمِلَ بِهَا مَنْ بَعْدَهُ كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ من عَمِلَ بها من بعده) الراوي : جَرِير | المحدث : العلامة ناصر الدين الألباني | المصدر : التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان الصفحة أو الرقم: 3297 | خلاصة حكم المحدث: صحيح - ((أحكام الجنائز)) (224 ـ 226) , ((التعليق الرغيب)) (1/ 47): م. قَالَ أَبُو حَاتِمٍ هَذَا الْخَبَرُ دَالٌ عَلَى أَنَّ قَوْلَ اللَّهِ جَلَّ وَعَلَا {لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى} [الأنعام: 164] أَرَادَ بِهِ بَعْضَ الْأَوْزَارِ لَا الْكَلَّ إِذْ أَخْبَرَ المبيِّنُ عَنْ مُرَادِ اللَّهِ جَلَّ وَعَلَا فِي كِتَابِهِ أَنَّ مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً فَعَمِلَ بِهَا مَنْ بَعْدَهُ كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ , فَكَأَنَّ اللَّهَ جَلَّ وَعَلَا قَالَ: لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى إِلَّا مَا أَخْبَرَكُمْ رَسُولِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهَا تَزِرُ وَالْمُصْطَفَى صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَقُلْ ذَلِكَ وَلَا خَصَّ عُمُومَ الْخِطَابِ بِهَذَا الْقَوْلِ إِلَّا مِنَ اللَّهِ شَهِدَ اللَّهُ لَهُ بِذَلِكَ حَيْثُ قَالَ {وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى} [النجم: 4] صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَظِيرُ هَذَا قَوْلُهُ جَلَّ وَعَلَا: {وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ} [الأنفال: 41] فَهَذَا خَطَّابٌ عَلَى الْعُمُومِ كَقَوْلِهِ تَعَالَى: {لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى} [الأنعام: 164] ثُمَّ قَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَنْ قَتَلَ قَتِيلًا فَلَهُ سَلَبُهُ) فَأَخْبَرَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ السَّلَبَ لَا يُخمَّس وَأَنَّ الْقَلِيلَ يَكُونُ مُنْفَرِدًا بِهِ فَهَذَا تَخْصِيصُ بَيَانٍ لِذَلِكَ الْعُمُومِ الْمُطَلِّقِ.