৬২৬১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২৬১-[৬৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বলল, আমি অতিশয় ক্ষুধার্ত। তখন তিনি (সা.) কোন এক লোককে তার একজন স্ত্রীর কাছে আঠালেন। তিনি (বিবি) এই বলে উত্তর পাঠালেন যে, সে মহান সত্তার শপথ। যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। অতঃপর তিনি (সা.) আরেক স্ত্রীর কাছে পাঠালেন। তিনিও অনুরূপ উত্তর পাঠালেন। এভাবে সকল স্ত্রীগণ সেই একই কথা বলে পাঠালেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, কে এই লোকটির মেহমানদারি করবে? আল্লাহর তা’আলা তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন। তখন আনসারদের একজন- যাকে আবূ ত্বলহাহ্ ডাকা হত, তিনি বললেন, আমি, হে আল্লাহর বসল! এই বলে তিনি লোকটিকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কাছে (খাওয়ার) কোন কিছু আছে কি? স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের খাবার ব্যতীত আর কিছুই নেই। তখন আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বিবিকে বললেন, বাচ্চাদেরকে কোন একটি জিনিস দ্বারা ভুলিয়ে ঘুম পাড়াও। আর মেহমান যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তাকে এমন ভাব দেখাবে যে, আমরাও তার সাথে খানা খাচ্ছি। অতঃপর মেহমান যখন খাওয়ার জন্য হাত বাড়াবে, তখন তুমি দাড়িয়ে প্রদীপটি ঠিক করছ ভান করে তা নিভিয়ে ফেলবে। অতএব (স্বামীর কথানুযায়ী) স্ত্রী তাই করলেন। অতঃপর যখন সকাল হলো। আবূ ত্বলহাহ্ সকাল বেলায় রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তা’আলা অমুক পুরুষ ও অমুক মহিলার ক্রিয়াকলাপকে অতিশয় পছন্দ করেছেন অথবা বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তাতে সন্তুষ্ট হয়েছেন।
অপর একটি বর্ণনাতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, তবে তাতে আবূ তলহাহ-এর নাম উল্লেখ করা হয়নি। এবং হাদীসটির শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে, তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন, অর্থাৎ ’আনসারদের অন্যতম গুণ এই যে, তারা নিজেদের ওপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেন, অভাবগ্রস্ততা এবং দারিদ্র্য তাঁদের সাথে হলেও।’ (বুখারী ও মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ إِنِّي مَجْهُودٌ فَأَرْسَلَ إِلَى بَعْضِ نِسَائِهِ فَقَالَتْ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا عِنْدِي إِلَّا مَاءٌ ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُخْرَى فَقَالَتْ مِثْلَ ذَلِكَ وَقُلْنَ كُلُّهُنَّ مِثْلَ ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «من يضيفه وي» فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ يُقَالُ لَهُ أَبُو طَلْحَةَ فَقَالَ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَانْطَلَقَ بِهِ إِلَى رَحْلِهِ فَقَالَ لِامْرَأَتِهِ هَلْ عِنْدَكِ شَيْءٌ قَالَتْ لَا إِلَّا قُوتُ صِبْيَانِي قَالَ فَعَلِّلِيهِمْ بِشَيْءٍ وَنَوِّمِيهِمْ فَإِذَا دَخَلَ ضَيْفُنَا فَأَرِيهِ أَنا نَأْكُل فَإِذا أَهْوى لِيَأْكُلَ فَقُومِي إِلَى السِّرَاجِ كَيْ تُصْلِحِيهِ فَأَطْفِئِيهِ فَفعلت فقعدوا وَأكل الضَّيْف فَلَمَّا أَصْبَحَ غَدَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ عَجِبَ اللَّهُ أَوْ ضَحِكَ اللَّهُ مِنْ فُلَانٍ وَفُلَانَةٍ» وَفِي رِوَايَةٍ مِثْلَهُ وَلَمْ يُسَمِّ أَبَا طَلْحَةَ وَفِي آخِرِهَا فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى [وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ] مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (4889) و مسلم (172 / 2054)، (5359) ۔ (مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (إِنِّي مَجْهُودٌ) অর্থাৎ ক্ষুধার কষ্ট আমাকে পেয়েছে। এ ঘটনা ইসলামের প্রথম যুগে খায়বার ও অন্যান্য যুদ্ধে বিজয় ও গনীমাত লাভ করার পূর্বের সময়ের। ইবনুত্ তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আনসারী ব্যক্তির নাম ছিল সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাস (রাঃ) ইসমাঈল কাযী আহকামুল কুরআনে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তবে তার বর্ণনা প্রসঙ্গ ইঙ্গিত করে যে, সেটা অন্য ঘটনা ছিল। সে বর্ণনা হলো -  (ان رجلامن الأنصار عبد عليه ثه أيام لا يجد ما يفطر عليه و يصبح صائما حتى فطن ر جل من الأ نصار يقال اله ثابت بن قيس) এক আনসারী ব্যক্তি তিনদিন যাবৎ ইফত্বার করার কিছু না পেয়ে সকাল করে সিয়াম অবস্থায় (অবশেষে অপর আনসারী ব্যক্তি বুঝতে পেরেছিলেন, যার নাম সাবিত ইবনু কায়স)। অতঃপর তিনি ঘটনা বর্ণনা করলেন। এ আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপটও মেহমানের ওপর অনুগ্রহ করার একাধিক ঘটনাকে বাধা দেয় না।
ইবনু বাশকুয়াল বলেন, কেউ বলেন, তিনি হলেন আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহাহ্। তবে তিনি এ কথা আস্থার সাথে উল্লেখ করেননি। য'ঈফ মাতরূক রাবীদের অন্যতম কাযী আবূ বুখতারী তাঁর “কিতাবুয যু'আফাতুন্ নবী (সা.)” গ্রন্থে বলেন, তিনি হলেন হাদীস বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)। সঠিক হল যা মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসে সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে। যেমন তাতে উল্লেখ হয়েছে (فقام ر جل من الأ نصار يقال له أبو طلحة) অর্থাৎ আনসারীদের মধ্যে হতে একব্যক্তি বলল; যাকে আবূ ত্বলহাহ্ বলা হয়। খত্বীব সাহেব নিশ্চিতভাবে এটাই বলেছেন। কিন্তু তিনি বলেন, আমার মনে হয় তিনি প্রসিদ্ধ আবূ ত্বলহাহ্ যায়দ ইবনু সাহল নন। এটা দুটো কারণে সুদূর পরাহত মনে করা হয়।
(এক) প্রসিদ্ধ আবূ ত্বলহাহু যায়দ ইবনু সাহল-এর ব্যাপারে এভাবে বলা ভালো মনে হয় না যে, (فقام ر جل من الأنصار يقال له أبوطلحت) অর্থাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়ালেন, তার নাম আবূ ত্বলহাহ্।
(দুই) ঘটনার বর্ণনায় বুঝা যায় যে, তাঁর নিকটে কিছু ছিল না যে, তার দ্বারা তিনি এবং তার পরিবার রাতের আহার করবেন, ফলে বাতি নিভানোর প্রয়োজন হবে। অথচ মদীনায় আনসারদের মধ্যে আবূ ত্বলহাহ যায়দ ইবনু সাহল-এর সম্পদ সবচাইতে বেশি ছিল। অতএব তার ব্যাপারে কম সম্পদের কথা উল্লেখ করা দূরের ব্যাপারে। এ দু' অসম্ভব বিষয়ই তার উত্তরের জন্য সম্ভাবনা আছে, আল্লাহ অধিক জানেন। (إِلَّا قُوتُ صِبْيَانُىْ) “কিন্তু আমার সন্তানদের খাবার রয়েছে। সম্ভবত তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রাতের আহার করছিলেন। আর তার সন্তানরা ব্যস্ত ছিল অথবা ঘুমন্ত ছিল। তাই তাদের প্রয়োজন মতো খাবার রাখলেন। অথবা রাতের খাবারকে তারা সন্তান বলে অভিহিত করেছেন। কারণ তাদের জন্য রাতের খাবারের খুবই দরকার এটা নির্ভরযোগ্য কথা। যেহেতু আবূ উসামার বর্ণনায় এসেছে, (ونطوبطوننا الليلة) “রাতে আমাদের পেটকে ক্ষুধার্ত রেখেছি”। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, (فاصبحا طاويين) “তার নিকট শুধুমাত্র নিজের ও স্বীয় সন্তানদের খাবার রয়েছে”।
সহীহ মুসলিমে ওয়াক্বী’র বর্ণনায় রয়েছে, (فَلَمْ يَكُنْ عِنْدَهُ إِلَّاقُوتُهُ وَقُوتُ صِبْيَانِهِ) “তাঁর কাছে তাঁর ও সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাদ্য ব্যতীত আর কিছু ছিল না।”
(لَقَدْ عَجِبَ اللَّهُ أَوْ ضَحِكَ اللَّهُ مِنْ فُلَانٍ وَفُلَانَةٍ) এ হাদীস দ্বারা মহান আল্লাহর হাসির গুণ তাঁর অন্যান্য গুণের মতো প্রমাণিত হয় যা পূর্বে একাধিক জায়গায় উল্লেখ হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৮৬)

(وَ یُؤۡثِرُوۡنَ عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ وَ لَوۡ کَانَ بِهِمۡ خَصَاصَۃٌ ؕ۟ وَ مَنۡ یُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِهٖ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ) ...আর তাদেরকে (অর্থাৎ মুহাজিরদেরকে) নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়- নিজেরা যতই অভাবগ্রস্ত হোক না কেন। বস্তুত যাদেরকে হৃদয়ের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই সফলকাম।” (সূরাহ্ আল হাশর ৫৯: ৯)
এ আয়াত নাযিল হওয়ার সর্বাধিক বিশুদ্ধ ঘটনা এটাই। ইবনু মারদুওয়াইহ-এর বর্ণনায় আছে, “এক ব্যক্তিকে একটি ছাগলের মাথা হাদিয়্যাহ্ দেয়া হলে তিনি বলেন, এটা আমাদের চাইতে আমার ভাই ও তার পরিবারে বেশি প্রয়োজন। অতঃপর তিনি তা পাঠিয়ে দেন। এভাবেই একজন অপরজনের নিকটে পাঠাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তা সাতজনের কাছে ঘুরার পর প্রথমজনের নিকটে ফিরে চলে আসে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল হয়। সম্ভবত এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে এটা নাযিল হয়।
কেউ বলেন, অল্প ক্ষতি করে ছোট ছেলেদের অভুক্ত রেখে পিতার এমন আচরণ করার প্রমাণ এ হাদীসে রয়েছে। (ফাতহুল বারী হা. ৩৭৯৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ