৩০৩৬

পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কুড়িয়ে পাওয়া দ্রব্য-সামগ্রী

৩০৩৬-[৪] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গাছে ঝুলন্ত ফলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি কোনো অভাবগ্রস্ত তা হতে কিছু খায় তাতে কিছুই নেই, যদি আঁচলে ভরে কিছু না নিয়ে যায়। হ্যাঁ, যদি তার কিছু নিয়ে যায়, তবে তার ওপর দুই গুণ দণ্ড বর্তাবে, তারপর শাস্তিও হবে। আর যে তার কিছু চুরি করবে শস্য মাড়াইয়ের স্থানে বা শস্য শুকানোর ওঠানে আশ্রয় দেয়ার পর, যার মূল্য একটি ঢাল পরিমাণ, তার হাত কাটা যাবে। উল্লেখ্য যে, ’আমর (রাঃ)-এর দাদা হারানো উট ও ছাগলের বর্ণনা করেন যেভাবে অন্যরা উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরো বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হারানো জিনিস সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যা চলমান পথে-ঘাটে অথবা ঘনবসতি এলাকায় পাওয়া যায়, তবে তার জন্য সে এক বছর প্রচার করবে, তারপর যদি তার মালিক আসে, তবে তো তা তাকে দিয়ে দেবে, আর যদি এর মালিক না আসে, তবে তা তোমার (অধিকার) হবে। আর যা জনমানবহীন জায়গায় পাওয়া যায় তাতে এবং মাটিতে প্রোথিত গুপ্তধনের এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে (সরকারী কোষাগারে) দিতে হবে (আর অবশিষ্টটা তোমার হবে)। (নাসায়ী)[1]

আবূ দাঊদ ’হারানো জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো’ হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الثَّمَرِ الْمُعَلَّقِ فَقَالَ: «مَنْ أَصَابَ مِنْهُ مِنْ ذِي حَاجَةٍ غَيْرَ مُتَّخِذٍ خُبْنَةً فَلَا شَيْءَ عَلَيْهِ وَمَنْ خَرَجَ بِشَيْءٍ مِنْهُ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوبَةُ وَمَنْ سَرَقَ مِنْهُ شَيْئًا بَعْدَ أَنْ يُؤْوِيَهُ الْجَرِينَ فَبَلَغَ ثَمَنَ الْمِجَنِّ فَعَلَيْهِ الْقَطْعُ» وَذَكَرَ فِي ضَالَّة الْإِبِل وَالْغنم كَمَا ذكر غَيْرُهُ قَالَ: وَسُئِلَ عَنِ اللُّقَطَةِ فَقَالَ: «مَا كَانَ مِنْهَا فِي الطَّرِيقِ الْمِيتَاءِ وَالْقَرْيَةِ الْجَامِعَةِ فَعَرِّفْهَا سَنَةً فَإِنْ جَاءَ صَاحِبُهَا فَادْفَعْهَا إِلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَأْتِ فَهُوَ لَكَ وَمَا كَانَ فِي الْخَرَابِ الْعَادِيِّ فَفِيهِ وَفِي الرِّكَازِ الْخُمُسُ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَرَوَى أَبُو دَاوُدَ عَنْهُ مِنْ قَوْله: وَسُئِلَ عَن اللّقطَة إِلَى آخِره

ব্যাখ্যা: (الثَّمَرِ الْمُعَلَّقِ) কাটা এবং শুকানোর পূর্বে খেজুর যা ঝুলন্ত ছিল তা উদ্দেশ্য। الثمر (ফল) শব্দটি খেজুর, আঙ্গুর ও অন্যান্য ফল থেকে আর্দ্র, শুকনো উভয় ধরনের ফলকে অন্তর্ভুক্ত করে।

(وَمَنْ خَرَجَ بِشَيْءٍ مِنْهُ) অর্থাৎ- লুঙ্গির ভাঁজ, কাপড়ের কিনারা, তথা সে যেন তা থেকে তার কাপড়ে গ্রহণ না করে। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এ রকম আছে। (غَيْرَ مُتَّخِذٍ خُبْنَةً) উল্লেখিত হাদীসাংশে রয়েছে, ফলের গাছ হতে কোনো ফল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া হারাম। অতঃপর যদি কোনো ফল নিয়ে বেরিয়ে যায় তাহলে তা ঐ ফল গাছ থেকে কেটে খুলায় তাকে আশ্রয় দেয়ার পূর্বে অথবা এরপর হওয়া থেকে মুক্ত নয়। সুতরাং তা যদি কাটার পূর্বে হয় তাহলে ঐ ব্যক্তির ওপর জরিমানা এবং শাস্তি বর্তাবে। আর যদি তা কাটা এবং খুলায় তাকে আশ্রয় দেয়ার পর হয়, তাহলে তার।

(فَبَلَغَ ثَمَنَ الْمِجَنِّ) ‘‘অতঃপর তা ঢালের মূল্যের সমপরিমাণে পৌঁছে’’ এ উক্তির কারণে গৃহীত অংশ যদি নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তাহলে তার হাত কাটতে হবে আর এটা ঐ কথার উপর নির্ভর করছে যে, খুলা সংরক্ষিতস্থল। অধিকাংশ সময় এমনই হয়ে থাকে, কেননা সংরক্ষিত স্থান হতে চুরি করা ছাড়া হাত কাটা জায়িয নয়। ‘‘সবুলুস্ সালামে’’ এভাবেই আছে।

(فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوبَةُ) শাস্তি বলতে তা‘যীর উদ্দেশ্য। বায়হাক্বী’র বর্ণনাতে আছে, (بِأَنَّ الْعُقُوبَة جَلَدَات نَكَال) অর্থাৎ- নিশ্চয় শাস্তি বলতে শাস্তির চাবুক। এর দ্বারা তিনি সম্পদের মাধ্যমে শাস্তি বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ গ্রহণ করেছেন, কেননা তার দ্বিগুণ শাস্তি সম্পদ দ্বারা শাস্তির অন্তর্ভুক্ত। প্রবীণ মতে ইমাম শাফি‘ঈ একে বৈধ বলেছেন, অতঃপর এ মত থেকে তিনি প্রত্যাবর্তন করেছেন। আর বলেছেন, কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে কারো ওপর দ্বিগুণ জরিমানা করা যাবে না। শাস্তি কেবল দেহে, সম্পদে না। তিনি বলেন, এটা রহিত হয়ে গেছে। আর একে রহিতকারী হলো- আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণীর মালিকের ব্যাপারে ফায়সালা দিয়েছেন, প্রাণী রাত্রে যা ধ্বংস করবে তার কারণে প্রাণীর মালিককে জরিমানা করা হবে। তিনি বলেন, তারা এমন ব্যক্তিকে মূল্যের মাধ্যমে জরিমানা করতেন। খত্ত্বাবী বলেন, এ ব্যাপারটি তা‘যীর স্বরূপ হওয়ার সাথে সাদৃশ্য রাখছে। উদ্দেশ্য- ফলে ঐ কাজের কর্তা ঐ কাজ থেকে বিরত থাকবে। মূল হলো- কোনো বস্তু ধ্বংসকারীর উপর ঐ বস্তু অপেক্ষা বেশি ক্ষতিপূরণ দেয়া আবশ্যক নয়। একমতে বলা হয়েছে, এটা ইসলামের সূচনাতে ছিল, কর্মসমূহের উপর এ ধরনের কতিপয় শাস্তি সংঘটিত হত, অতঃপর তা রহিত হয়ে গেছে। গাছে ঝুলন্ত ফল চুরি করার ক্ষেত্রে হাত কাটার বিধান বাদ দেয়া হয়েছে। কেননা মদীনার বাগানসমূহের পাশ দিয়ে কোনো দেয়াল ছিল না।

(الْجَرِيْنُ) অর্থাৎ- খেজুর শুকানোর স্থান, খেজুরের জন্যও গম শুকানোর উঠানের মতো স্থান আছে। (ثَمَنَ الْمِجَنِّ) নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, المجن অর্থ ঢাল। কেননা এটা তার বাহককে আড়াল করে।

ঢালের মূল্য ছিল তিন দিরহাম, আর তা হলো দীনারের এক-চতুর্থাংশ। এটা হলো ইমাম শাফি‘ঈ-এর কাছে চুরির নিসাব যে পরিমাণ মূল্য চুরি করলে হাত কাটা যাবে।
(فِى الطَّرِيقِ الْمِيتَاءِ) الْمِيتَاءِ শব্দটির ‘মীম’ বর্ণটি অতিরিক্ত যা الْإِتْيَان হতে এসেছে। খত্ত্বাবী এবং ইবনুল আসীর বলেন, অবলম্বনীয় পথ, যে পথে মানুষ আসা-যাওয়া করে। (وَالْقَرْيَةِ الْجَامِعَةِ) অর্থাৎ- যে গ্রামে মানুষের আসা-যাওয়া আছে, তথা আবাদি গ্রাম যেখানে মানুষ বসবাস করে। (وَمَا كَانَ فِى الْخَرَابِ) খত্ত্বাবী বলেনঃ সাধারণ অনাবাদি জায়গা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৩য় খন্ড, হাঃ ১৭০৭)