২৩৩৫

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৩৫-[১৩] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাইয়্যিদুল ইসতিগফার এভাবে পড়বে,

’’আল্ল-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা খলাকতানী, ওয়া আনা- ’আবদুকা, ওয়া আনা- ’আলা- ’আহদিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাস্‌তাত্ব’তু, আ’ঊযুবিকা মিন শার্‌রি মা- সনা’তু, আবূউলাকা বিনি’মাতিকা ’আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্‌বী ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই; তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি স্বীকার করি, আমার প্রতি তোমার দানকে এবং স্বীকার করি আমার গুনাহকে। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এ সাইয়্যিদুল ইসতিগফারের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে দিনে পড়বে আর সন্ধ্যার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে এ দু’আ রাতে পড়বে আর সকাল হবার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (বুখারী)[1]

بَابُ الْاِسْتِغْفَارِ وَالتَّوْبَةِ

وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعَتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ . قَالَ: «وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: (سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ) ‘আযীযী বলেন, অর্থাৎ- ক্ষমা প্রার্থনার শব্দাবলীর মাঝে এটি সর্বোত্তম, অর্থাৎ- আল্লাহর নিকট সাওয়াবের দিক দিয়ে অধিক। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, ইমাম বুখারী তাঁর (সর্বোত্তম ক্ষমা প্রার্থনার অধ্যায়) এ উক্তি দ্বারা এ হাদীসটির অধ্যায় বেঁধেছেন। হাফেয বলেন, সর্বোত্তম তা শব্দ দ্বারা অধ্যায় বেঁধেছেন অথচ হাদীসটি শুরু হয়েছে السيادة বা নেতৃত্ব শব্দ দ্বারা। সুতরাং তিনি যেন এর মাধ্যমে ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, السيادة বা নেতৃত্ব দ্বারা الأفضلية বা সর্বোত্তম উদ্দেশ্য। এর উদ্দেশ্য হল যে ব্যক্তি ক্ষমা প্রার্থনার এ দু‘আটি পাঠ করবে তার জন্য দু‘আটি অধিক উপকারী হবে। অর্থাৎ- এর মাধ্যমে উপকার এবং সাওয়াব ক্ষমা প্রার্থনাকারীর জন্য। স্বয়ং استغفار তথা ক্ষমা প্রার্থনার জন্য না। অর্থাৎ- এ শব্দ দ্বারা ক্ষমা প্রার্থনাকারী অন্য শব্দ দ্বারা ক্ষমা প্রার্থনাকারী অপেক্ষা অধিক সাওয়াব লাভ করবে। আর মাদানী অপেক্ষা মক্কা শ্রেষ্ঠ হওয়ার মতো। অর্থাৎ- মক্কাতে ‘ইবাদাতকারীর সাওয়াব মাদানীতে ‘ইবাদাতকারী অপেক্ষা বেশি। এ استغفار এ ধরনের হওয়ার কারণ জ্ঞান দ্বারা অনুভব করা যায় না। তা কেবল ঐ সত্তার কাছে সোপর্দকৃত যিনি ‘আমল অনুযায়ী সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ দু‘আটি তাওবার সকল অর্থকে শামিল করার কারণে একে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

(فَاغْفِرْ لِىْ فَإِنَّه لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ) এ বাণী থেকে গ্রহণ করা হয় যে, যে ব্যক্তি তার গুনাহের ব্যাপারে স্বীকার করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর অপবাদারোপিত দীর্ঘ হাদীসে স্পষ্ট এসেছে। আর তাতে আছে যেমন চারটি হাদীস পূর্বে গত হয়েছে। (العبد إذا اعترف بذنبه وتاب تاب الله إليه) অর্থাৎ- ‘‘বান্দা যখন তার গুনাহ স্বীকার করবে এবং তাওবাহ্ করবে তখন আল্লাহ তার তাওবাহ্কে গ্রহণ করবেন।’’ আর এ স্বীকারোক্তি বান্দার এবং তার প্রভুর মাঝে সীমাবদ্ধ, মানুষের কাছে তা প্রকাশ করা উচিত নয়। কেননা বান্দা যখন কোন গুনাহ করে তা গোপন করতে সক্ষম হয় তখন আল্লাহ তা মানুষের কাছে গোপন করতে ভালবাসেন।

(مِنَ النَّهَارِ) অর্থাৎ- দিনের কোন অংশে। নাসায়ীর বর্ণনাতে আছে, অতঃপর সে যদি তা সকালে উপনীত হওয়াবস্থায় পাঠ করে। তিরমিযীতে আছে, তোমাদের যে কেউ সন্ধ্যায় উপনীত হওয়াবস্থায় এ দু‘আ পাঠ করবে। অতঃপর সকালে উপনীত হওয়ার পূর্বে তার নির্দিষ্ট মৃত্যু সময় ঘনিয়ে আসবে অথবা যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হওয়া অবস্থায় এ দু‘আ পাঠ করবে, এরপর সন্ধ্যায় উপনীত হওয়ার পূর্বে তার নির্দিষ্ট মৃত্যু সময় ঘনিয়ে আসবে।

(مُوقِنًا بِهَا) অর্থাৎ- খাঁটি অন্তরে, পুণ্যের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে।

কারী বলেন, অর্থাৎ- সংক্ষিপ্ত অথবা বিস্তারিতভাবে সকল প্রমাণযোগ্য বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে।

(فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ) অর্থাৎ- সে বিশ্বাসী অবস্থায় মারা যাবে, অতঃপর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা শাস্তি ছাড়াই অথবা তা উত্তম পরিসমাপ্তির প্রতি শুভসংবাদ।

তিরমিযীর বর্ণনাতে আছে, (إلا وجبت له الجنة) অর্থাৎ- ‘‘তার জন্য জান্নাত আবশ্যক হয়ে যাবে’’। নাসায়ীর বর্ণনাতে আছে, (دخل الجنة) অর্থাৎ- ‘‘সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। সিনদী বলেন, সূচনাতেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে অন্যথায় প্রত্যেক মু’মিন তার ঈমানের দরুন জান্নাতে প্রবেশ করবে এটি আল্লাহর তরফ থেকে কৃপা। কিরমানী বলেন, যদি বলা হয় মু’মিন ব্যক্তি এ দু‘আটি পাঠ না করেই শুরুতে সে জান্নাতের অধিবাসী। আমি বলব, সে জাহান্নামে প্রবেশ না করেই শুরুতেই সে জান্নাতে প্রবেশ করা উদ্দেশ্য। কেননা অধিকাংশ সময় এ দু‘আর প্রকৃত অবস্থার প্রতি বিশ্বাসী ব্যক্তি সামষ্টিকভাবে মু’মিন, সে আল্লাহর অবাধ্য হয় না। অথবা আল্লাহ এ ক্ষমা প্রার্থনার বারাকাতে তার গুনাহ মোচন করেছেন। যদি কেউ বলে যে, এ দু‘আটি سيد الاستغفار হওয়ার হিকমাত কি? আমি বলব, এ দু‘আ এবং এর মতো অন্যান্য দু‘আ দ্বারা ‘ইবাদাতের বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন উদ্দেশ্য। আর আল্লাহই এ সম্পর্কে সর্বাধিক জানেন। তবে এতে পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর মাধ্যমে আল্লাহর জিকির আছে এবং বান্দার নিজের সংকীর্ণ অবস্থার বর্ণনা আছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর তা হল এমন এক সত্তার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের বিনয় যার অধিকার একমাত্র তিনি ছাড়া কেউ রাখেন না।