২৩০৩

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্‌দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব

২৩০৩-[১০] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা তখন উচ্চস্বরে তাকবীর বলছিল। (তাকবীর শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের নাফসের উপর রহম করো। কেননা তোমরা তাকবীরের মাধ্যমে কোন বধিরকে বা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না, তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি তোমাদের সব কথা শুনেন ও দেখেন। তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। তোমরা যাঁকে ডাকছ তিনি তোমাদের প্রত্যেকের বাহনের গর্দান থেকেও বেশি নিকটে। আবূ মূসা আল আশ্’আরী বলেন, আমি তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোন উপায় নেই)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! (আবূ মূসার ডাক নাম) আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? আমি বললাম, অবশ্যই দেবেন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা হলো ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ ثَوَابُ التَّسْبِيْحِ وَالتَّحْمِيْدِ وَالتَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِنَّكُمْ لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا وَهُوَ مَعَكُمْ وَالَّذِي تَدْعُونَهُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلَتِهِ» قَالَ أَبُو مُوسَى: وَأَنَا خَلْفَهُ أَقُولُ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ فِي نَفْسِي فَقَالَ: «يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ قَيْسٍ أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟» فَقُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ»

ব্যাখ্যা: (كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ فِىْ سَفَرٍ) অন্য এক বর্ণনাতে যুদ্ধের কথা আছে আর এ যুদ্ধ খায়বারের যুদ্ধ। যেমন এ ব্যাপারে বুখারীর বর্ণনাতে মাগাযী পর্বে খায়বারের যুদ্ধ অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে এসেছে।

(فَجَعَلَ النَّاسُ يَجْهَرُونَ بِالتَّكْبِيرِ) অর্থাৎ- যখনই তারা উঁচু স্থানে আরোহণ করল তাকবীরের মাধ্যমে আওয়াজ উঁচু করতেছিল এবং আওয়াজ প্রকাশে বাড়াবাড়ি করতেছিল। তাকবীর দ্বারা উদ্দেশ্য (لا إله إلا الله الله أكبر) বলা। বুখারীর এক বর্ণনাতে আছে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে যুদ্ধ করলেন মানুষ উপত্যকার উপর উঠে দেখল অতঃপর (الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله) তাকবীরের মাধ্যমে তাদের আওয়াজ উঁচু করল।

(ارْبَعُوا عَلَى انْفُسِكُمْ) অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের আওয়াজ নীচু করার মাধ্যমে নিজেদের প্রতি সদয় হও, নিজের উপর কষ্ট প্রয়োগ করো না। অর্থাৎ- তাকবীর প্রকাশে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। অথবা নাফসের প্রতি সদয় হওয়া, তার ওপর কঠোরতা আরোপ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তোমাদের নিজেদের ওপর অনুগ্রহ কর। কারী বলেন, নিজেদের প্রতি সদয় হও এবং তোমাদের ক্ষতি সাধন করে এমন আওয়াজ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাক। এতে ঐ ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তারা আওয়াজ প্রকাশ ও উঁচু করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছিল। এতে সাধারণভাবে আওয়াজ উঁচু করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক হয়ে পড়ছে না।

(لَا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا) কিরমানী বলেন, তুমি যদি বল হাদীসে (ولا أعمى) টি বলা যথোপযুক্ত ছিল। তাহলে আমি বলব, অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টি দ্বারা অনুভব করা থেকে গায়ব বা অন্তরায় এবং অনুপস্থিত ব্যক্তি দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিকে না দেখার ক্ষেত্রে অন্ধ ব্যক্তির মতো। সুতরাং তা নাফিকে (নিষেধকে) আবশ্যক করে নিয়েছে যাতে তার প্রয়োগ পূর্ণাঙ্গ, ব্যাপক হয় এবং নিকটবর্তীকে বৃদ্ধি করে। (অর্থাৎ- অন্য এক বর্ণনাতে আসছে) কেননা অনেক শ্রবণকারী ও দর্শনকারী আছে অনুভূতি থেকে দূরে থাকার কারণ শুনতে পায় না, দেখতে পায় না। সুতরাং এর মাধ্যমে তিনি নিকটবর্তী হওয়াকে সাব্যস্ত করলেন যাতে চাহিদা এবং প্রতিবন্ধক না থাকা স্পষ্ট হয়ে যায়। আর নিকটবর্তী দ্বারা পরিসীমার নিকটবর্তীতাকে উদ্দেশ্য করেননি। বরং বিদ্যার মাধ্যমে নিকটবর্তী হওয়াকে উদ্দেশ্য করেছেন। হাফেয বলেন, আওয়াজ উঁচু করা থেকে নিষেধ করার কারণে বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে (غائب) শব্দের প্রয়োগ অনুকূল হয়েছে। (سميعا بصيرا) অনুরূপভাবে বুখারীর বর্ণনাতে দু‘আ শেষে যখন উপরে আরোহণ করবে তখন দু‘আ অধ্যায়ে এবং কদর পর্বে এসেছে এবং বুখারীতে মাগাযী পর্বে (سميعا قريبا) এসেছে। এভাবে মুসলিমে তাওহীদে (سميعا بصيرا قريبا) এসেছে। তিনি লাম্‘আতে বলেন, তার (سميعا) উক্তির অনুকূল হওয়ার কারণে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তার (بصيرا) উক্তি বৃদ্ধি করার, কারণ শব্দদ্বয় অধিকাংশ স্থানে এক সাথে উল্লেখ হয়েছে। অথবা আওয়াজ প্রকাশ করা, উঁচু করার প্রয়োজন নেই- এ কথা বর্ণনা করে দেয়ার জন্য তা অতিরিক্ত করা হয়েছে। কেননা তিনি আওয়াজ প্রকাশ ও উঁচু না করলেও শোনেন, এ ছাড়াও তিনি তোমাদেরকে দেখেন এবং তোমাদের আকৃতি গঠনের অবস্থা তিনি জানেন।

ইমাম ত্বীবী বলেন, (بصيرا) উক্তি বৃদ্ধি করার উপকারিতা হল নিশ্চয়ই (السميع) এবং (البصير) শব্দদ্বয় (السميع الأعمى) হতে অধিক অনুভূতিশীল। ইবনু হাজার বলেন, (سميعا) শব্দটি (أصم) এর বিপরীতে নিয়ে আসা হয়েছে এবং (بصيرا) কে নিয়ে আসা হয়েছে, কেননা যিকিরের ক্ষেত্রে (السميع) কে আবশ্যকীয়। যাদের পরস্পরের মাঝে অনুভূতি সম্পর্ক আছে।

(وَهُوَ مَعَكُمْ) অর্থাৎ- ব্যাপকভাবে বিদ্যা, ক্ষমতা ও আয়ত্বের মাধ্যমে বিশেষভাবে অনুগ্রহ দয়ার মাধ্যমে। কারী বলেন, তোমরা যেখানেই থাক না কেন চাই প্রকাশ্যে থাক চাই গোপনে থাক তিনি তোমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, বিদ্যার মাধ্যমে তোমাদের সাথে আছে। আর বাহ্যিকভাবে এটি (ولا غائبا) এর বিপরীত। অতঃপর তিনি চূড়ান্ত মর্যাদার উপর প্রমাণ বহনকারী ‘‘সাথে’’ অর্থের বিশ্লেষণ (আর তোমরা যাকে আহবান করছ তিনি তোমাদের কারো বাহনের গর্দান অপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী) এ উক্তিকে বৃদ্ধি করেছেন। আর এ বাক্যটি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন, বুখারী এটি উল্লেখ করেননি। আর এটি একটি উপমা পেশকরণ ও বুঝ শক্তির নিকটবর্তীকরণ, অন্যথায় তিনি শাহরগ (গ্রীবাদেশের প্রধান রগ) থেকেও অধিক নিকটবর্তী।

ইমাম নাবাবী বলেন, তার উক্তি (هُوَ مَعَكُمْ) অর্থাৎ- বিদ্যা ও আয়ত্বের মাধ্যমে তিনি তোমাদের সাথে আছেন এবং তার উক্তি (والذى تدعونه أقرب) শেষ পর্যন্ত বিগত হয়ে যাওয়া অর্থে ব্যবহৃত। এর সারাংশ হচ্ছে নিশ্চয়ই তা রূপক যেমন আল্লাহর বাণী, وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ অর্থাৎ- ‘‘আমি বিদ্যার মাধ্যমে তার শাহরগ হতেও অধিক নিকটবর্তী’’- (সূরা কাফ ৫০ : ১৬)। তার গোপনীয় বিষয় থেকে আমার কাছে কোন কিছু গোপন থাকে না। যেন তার সত্তা তার অপেক্ষা নিকটবর্তী, এর সারাংশ হল বিদ্যার নিকটবর্তী অপেক্ষা সত্তার নিকটবর্তী হওয়া বৈধ। ইমাম যাহাবী কিতাবুল উলুব্বি-তে আবূল হাসান আল আশ্‘আরী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যেভাবে ইচছা তার সৃষ্টির নিকটবর্তী হন, যেমন তিনি বলেন, (ونحن أقرب إليه من حبل الوريد)

তার উক্তি (فى نفسى) ইমাম বুখারী একে এককভাবে বর্ণনা করেছেন আর তা দা‘ওয়াতে ও তাওহীদে আছে। আর বুখারীতে মাগাযীতে আছে, আর আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহনের পিছনে ছিলাম।

(يَا عَبْدَ اللّٰهِ) এটি আবূ মূসার নাম।

(أَلَا أَدُلُّكَ عَلٰى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ؟) উক্ত জিকির পাঠ গচ্ছিত সম্পদ এভাবে যে, নিশ্চয়ই তা জিকির পাঠকারীর জন্য প্রস্ত্তত রাখা হবে এবং পাঠকারীর জন্য তা সাওয়াব হিসেবে সঞ্চয় করে রাখা হবে। যা ব্যক্তি জান্নাতে পাবে আর তা দুনিয়ার গচ্ছিত সম্পদের মতো সারাংশ, নিশ্চয়ই তা জান্নাতের সঞ্চয় বা জান্নাতের উৎকৃষ্ট অর্জন।

(لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ) বাক্যটি উহ্য উদ্দেশের বিধেয়। যার মূলরূপ (هو أو كنز الجنة)

অর্থাৎ- এ কালিমা পাঠ করাটাই জান্নাতের গচ্ছিত সম্পদ। আর তা হলঃ لا حول ولا قوة إلا بالله

ইমাম নাবাবী বলেনঃ বিদ্বানগণ বলেন, এর কারণ হল নিশ্চয়ই এটি আত্মসমর্পণ, নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়া, তার আনুগত্য স্বীকার করা। নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া কোন স্রষ্টা নেই, তার নির্দেশের কোন প্রত্যাখ্যানকারী নেই, নিশ্চয়ই বান্দা কোন জিনিসের ক্ষমতা রাখেন না। আর এখানে (كنز) এর অর্থ হল নিশ্চয়ই তা জান্নাতের সঞ্চয় করা পুণ্য আর তা উৎকৃষ্ট পুণ্য, যেমন গচ্ছিত সম্পদ তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ। অভিধানবেত্তাগণ বলেন, (الحول) এর অর্থ কৌশল করা, অর্থাৎ- আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন গতি নেই, কোন সক্ষমতা নেই, কৌশল নেই।

এক মতে বলা হয়েছে, এর অর্থ কল্যাণ অর্জনে আল্লাহ ছাড়া কোন পরিবর্তনকারী নেই, কোন ক্ষমতা নেই। একমতে বলা হয়েছে, আল্লাহর সংরক্ষণ ছাড়া তাঁর অবাধ্যতা থেকে পরিবর্তনকারী কেউ নেই আর তাঁর সাহায্য ছাড়া তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে কোন শক্তি নেই। এ মতটি ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ থেকে বর্ণিত আছে বাযযার গ্রন্থে যা মারফূ‘ সূত্রে। হাদীসটিকে ইমাম বুখারী জিহাদ, মাগাযী, দা‘ওয়াত, কদর ও তাওহীদে সংকলন করেছেন। মুসলিম কাছাকাছি শব্দে দা‘ওয়াতে। তবে উল্লেখিত বাচনভঙ্গি বুখারী, মুসলিমের কারো না বরং তথা বুখারী মুসলিমের উভয়ের সামষ্টিকতা থেকে গৃহীত।