১০১৭

পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্

১০১৭-[৪] ইবনু সীরীন (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপরাহ্নের দু’ সালাতের (যুহর অথবা ’আসরের) কোন এক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আমাদেরকে নিয়ে আদায় করালেন, যার নাম আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছিলেন, কিন্তু আমি ভুলে গেছি। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সাথে নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে তারপর সালাম ফিরালেন। পরপরই মসজিদে আড়াআড়িভাবে রাখা একটি খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। মনে হচ্ছিল যে, তিনি খুব রাগতঃ অবস্থায় আছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন এবং স্বীয় ডান মুখমণ্ডল কে বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন। যাদের তাড়া আছে তারা জলদি মসজিদের বিভিন্ন দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। তারা বলতে লাগলো, সালাতকে কমানো হয়েছে? যারা তখনো মসজিদে ছিল তাদের মধ্যে আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ)ও ছিলেন। কিন্তু তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিল।

সাহাবীদের মধ্যে এক ব্যক্তি লম্বা হাত বিশিষ্ট ছিল। আর সেজন্য তাকে যুল্ ইয়াদায়ন অর্থাৎ দু’ হাতওয়ালা বলা হত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন বা সালাতকে কমানো হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি ভুলিনি, সালাতও কমানো হয়নি। তারপর তিনি সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরাও কি তাই বলছো যা যুল্ ইয়াদায়ন বলছে? সাহাবীরা আরয করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! এ কথা সঠিক। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে যে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছুটে গিয়েছিল তা পড়ে নিলেন। তারপর সালাম ফিরালেন তারপর তাকবীর বললেন। অতঃপর পূর্বের সাজদার মতো সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন বা তার চেয়েও বেশী লম্বা করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন তারপর তাকবীর দিলেন এবং সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তার অন্য সাজদার মতো বা তার চেয়ে বেশী লম্বা করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর দিলেন।

ইতোমধ্যে লোকসকল ইবনু সীরীনকে জিজ্ঞেস করল তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি সালাম ফিরালেন? তিনি বলেন যে, আমাকে অবহিত করা হয়েছে। যে ’ইমরান ইবনু হুসায়ন বলেছেন তারপর তিনি সালাম ফিরালেন। (বুখারী ও মুসলিম; মূল পাঠ বুখারীর। মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল্ ইয়াদায়নের জবাবে বললেন, ’’না ভুলেছি আর না সালাত কমানো হয়েছে’’। অন্য স্থানে বলেছেন, ’’যা তোমরা বলছো তার কোনটাই না। তিনি আবেদন করলেন, ’’হে আল্লাহর রসূল! এর কিছু একটা তো অবশ্যই হয়েছে।’’)[1]

بَابُ السَّهْوِ

وَعَن ابْن سِيرِين عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِحْدَى صَلَاتَيِ الْعشي - قَالَ ابْن سِيرِين سَمَّاهَا أَبُو هُرَيْرَةَ وَلَكِنْ نَسِيتُ أَنَا قَالَ فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ فَقَامَ إِلَى خَشَبَةٍ مَعْرُوضَةٍ فِي الْمَسْجِدِ فَاتَّكَأَ عَلَيْهَا كَأَنَّهُ غَضْبَانُ وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ وَوَضَعَ خَدَّهُ الْأَيْمَنَ عَلَى ظَهْرِ كَفه الْيُسْرَى وَخرجت سرعَان مِنْ أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ فَقَالُوا قَصُرَتِ الصَّلَاةُ وَفِي الْقَوْمِ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فَهَابَاهُ أَنْ يُكَلِّمَاهُ وَفِي الْقَوْمِ رَجُلٌ فِي يَدَيْهِ طُولٌ يُقَالُ لَهُ ذُو الْيَدَيْنِ قَالَ يَا رَسُول الله أنسيت أم قصرت الصَّلَاة قَالَ: «لَمْ أَنْسَ وَلَمْ تُقْصَرْ» فَقَالَ: «أَكَمَا يَقُولُ ذُو الْيَدَيْنِ؟» فَقَالُوا: نَعَمْ. فَتَقَدَّمَ فَصَلَّى مَا تَرَكَ ثُمَّ سَلَّمَ ثُمَّ كَبَّرَ وَسَجَدَ مِثْلَ سُجُودِهِ أَوْ أَطْوَلَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ وَكَبَّرَ ثُمَّ كَبَّرَ وَسَجَدَ مِثْلَ سُجُودِهِ أَوْ أَطْوَلَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ وَكَبَّرَ فَرُبَّمَا سَأَلُوهُ ثُمَّ سَلَّمَ فَيَقُولُ نُبِّئْتُ أَنَّ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ قَالَ ثمَّ سلم. وَلَفْظُهُ لِلْبُخَارِيِّ وَفِي أُخْرَى لَهُمَا: فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَدَلَ «لَمْ أَنْسَ وَلَمْ تُقْصَرْ» : «كُلُّ ذَلِكَ لَمْ يَكُنْ» فَقَالَ: قَدْ كَانَ بَعْضُ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ

ব্যাখ্যা: (الْعَشِيُّ) ‘বিকাল’- ইমাম যুহরী বলেনঃ আরবী ভাষীগণ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে ‘বিকাল’ বলে। হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমনঃ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে ‘সালাতটি যুহরের অথবা ‘আসরের কোন এক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছিল। বুখারীর এক বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যুহর অথবা ‘আসরের সালাত আদায় করালেন। মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে ‘যুহরের সালাত’। অতঃপর তিনি মসজিদের এক পাশে রাখা কাঠের নিকট গেলেন, অর্থাৎ সালাম ফিরানোর পর স্বীয় সালাতের স্থান ত্যাগ করে মসজিদের সম্মুখ ভাগে ক্বিবলার দিকে রাখা খেজুর কান্ডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন, যে কান্ডের উপর মসজিদের ছাদ নির্মিত ছিল।

(فَقَالُوا قَصُرَتِ الصَّلَاةُ) মিশকাতে সকল সংকলনে এবং বুখারীর এক বর্ণনাতে قَصُرَتِ শব্দটি হামযাহ্ ইস্‌তিফহাম (প্রশ্নবোধক হামযাহ্) ব্যতীতই বর্ণিত হয়েছে। তবে বুখারীর এ বর্ণনাটি হামযাহ ইস্‌তিফহাম সহ বর্ণিত হয়েছে। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ অন্য বর্ণনাগুলো অত্র বর্ণনার অর্থের উপর বহন করা হবে। অতএব এ বাক্যের অর্থ হবে ‘তারা জিজ্ঞেস করল সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে?’ তারা এভাবে জিজ্ঞেস করলেন এজন্য যে, সময়টি বিধান পরিবর্তনের সময় ছিল। (ذُو الْيَدَيْنِ؟) এটি তার উপাধি। তার নাম খিরবাক সুলামী, তিনি সুলায়ম গোত্রের লোক।

(لَمْ أَنْسَ وَلَمْ تُقْصَرْ) ‘আমি ভুলিও নেই, সালাতও কম করা হয়নি’ এটি অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে ‘এর কোনটিই হয়নি’। তখন যুল ইয়াদায়ন বললেনঃ ‘এর কিছু তো অবশ্যই ঘটেছে’। ফলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যুল ইয়াদায়ন যা বলছে ঘটনা কি তাই?’ অর্থাৎ সে যা বলছে তোমরা কি তাই বল?

তারা বললোঃ ‘হ্যাঁ’ অর্থাৎ আপনি তো সালাত দু’ রাক্‘আতের বেশী আদায় করেননি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চিত হলেন যে তিনি দু’ রাক্‘আত সালাত ছেড়ে দিয়েছেন। হয়ত তখন তাঁর স্মরণ হয়েছে অথবা প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি ছুটে যাওয়া সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। এতে সাব্যস্ত হয় যে, সালাতের রুকন ছুটে গেলে তা অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে। শুধুমাত্র সাহু সিজদা্ যথেষ্ট হবে না। ‘অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা পূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ