১০০৯

পরিচ্ছেদঃ ১৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

১০০৯-[৩২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্যে বের হলেন। যখন তাকবীর দিলেন তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পেছনের দিকে ফিরলেন এবং সাহাবীদেরকে ইশারা করে বললেন, তোমরা যেভাবে আছো সেভাবে থাকো। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বের হয়ে গেলেন। গোসল করলেন। তারপর আসলেন। এমতাবস্থায় তার চুল থেকে পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর যখন সালাত শেষ করলেন তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি অপবিত্র ছিলাম। গোসল করতে ভুলে গিয়েছিলাম। (আহমাদ)[1]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ إِلَى الصَّلَاةِ فَلَمَّا كَبَّرَ انْصَرَفَ وَأَوْمَأَ إِلَيْهِمْ أَنْ كَمَا كُنْتُمْ. ثُمَّ خَرَجَ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ جَاءَ وَرَأَسُهُ يَقْطُرُ فَصَلَّى بِهِمْ. فَلَمَّا صَلَّى قَالَ: «إِنِّي كُنْتُ جُنُبًا فنسيت أَن أَغْتَسِل» . رَوَاهُ أَحْمد

ব্যাখ্যা: (فَلَمَّا كَبَّرَ انْصَرَفَ) ‘তিনি তাকবীর তাহরীমা বলার পর স্বীয় কক্ষে ফিরে এলেন’ এতে বুঝা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা বলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করার পরে ফিরে এলেন। তবে বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে প্রবেশ না করেই ফিরে গেলেন। বুখারীর বর্ণনা এরূপ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এমতাবস্থায় যে, তখন সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা হয়েছিল এবং কাতারগুলো সোজা করা হয়েছিল, এমনকি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন স্বীয় সালাতের স্থানে দাঁড়ালেন এবং আমরা তার তাকবীরের অপেক্ষা করছিলাম তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা স্বীয় স্থানে অবস্থান কর আর মুসলিমের বর্ণনা এরূপ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এমনকি তিনি যখন স্বীয় সালাতের স্থানে দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বলার আগে তার স্মরণ হলে তিনি ফিরে গেলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের বললেনঃ তোমরা স্বীয় জায়গায় অবস্থান কর।

এ হাদীস পূর্বের বর্ণিত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। এ হাদীসদ্বয়ের সমন্বয় এভাবে করা যেতে পারে যে, অত্র হাদীসে বর্ণিত كَبَّرَ ‘তিনি তাকবীর বললেন’। এর উদ্দেশ্য হল তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার ইচ্ছা করলেন। অনুরূপভাবে তিনি সালাতে প্রবেশ করলেন, এর উদ্দেশ্য তিনি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার স্থানে দাঁড়ালেন এবং তাকবীরে তাহরীমা বলার জন্য প্রস্তুত হলেন। এও হতে পারে যে, আহমাদ ও ইবনু মাজাহর বর্ণনা এক ঘটনা। আর বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা ভিন্ন ঘটনা। বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় তাকবীরে তাহরীমা বলার পূর্বের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে আর মুসনাদে আহমাদে ও ইবনু মাজাহতে তাকবীরে তাহরীমা বলার পরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

আমার (মুবারকপূরী) মতে উভয় বর্ণনা একই ঘটনা। আর كَبَّرَ এর অর্থ তিনি তাকবীর বলার ইচ্ছা করেছিলেন। এ দ্বারা বুঝা গেল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এবং সাহাবীগণ কেউই সালাতে প্রবেশ করেননি।

হাদীসের শিক্ষাঃ

  1. নাবীগণও ‘ইবাদাতের কোন বিষয় ভুলে যেতে পারেন। আর এর পিছনে কারণ হলো ইসলামের বিধান বর্ণনা করা।
  2. উযূ (ওযু/ওজু/অজু) গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি পবিত্র।
  3. ইক্বামাত ও সালাতের মাঝে ব্যবধান তথা বিলম্ব করা।
  4. ধর্মীয় কাজে লজ্জাবোধ না করা।
  5. মসজিদে কারো স্বপ্নদোষ হলে সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য তায়াম্মুম করা জরুরী নয়।
  6. সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও ইক্বামাতের মাঝখানে কথা বলা বৈধ।
  7. জুনুবী ব্যক্তির জন্য গোসলে বিলম্ব করা বৈধ।
  8. সালাতের জন্য ইক্বামাত বলার পর প্রয়োজনে ইমামের মাসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া বৈধ।

হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ