হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩৫৪৬

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে

৩৫৪৬-[১৪] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিয্ইয়ার (করের) মাধ্যমে জমিন কিনে নিল (গ্রহণ করল), সে যেন তার হিজরতকে ফিরিয়ে দিতে চাইল। আর যে কোনো কাফিরের অপমান-অপদস্থের দায়িত্ব স্বীয় ঘাড়ে নিয়ে নিল, সে ইসলামকে তার পিঠের জন্য কর্তৃত্বশীল বানাল। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَخَذَ أَرْضًا بِجِزْيَتِهَا فَقَدِ اسْتَقَالَ هِجْرَتَهُ وَمَنْ نَزَعَ صَغَارَ كَافِرٍ مِنْ عُنُقِهِ فَجَعَلَهُ فِي عُنُقِهِ فَقَدْ وَلّى الإِسلامَ ظهرَه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: হাদীসে جزية বলতে ভূমিকে বুঝানো হয়েছে। কারণ ভূমিকর যুক্ত থাকে করযুক্ত জমিনের সাথে। খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীস প্রমাণ করে যে, যখন মুসলিম করযুক্ত জমিন কোনো কাফিরের নিকট থেকে ক্রয় করে তখন তার ওপর থেকে ভূমিকর বাতিল হয় না।

যুক্তিবাদীদের মতও এটাই। তবে তাদের মতো করযুক্ত জমির উৎপাদিত ফসলে উশর দিতে হবে না। তারা বলে ‘উশ্র ও কর একত্রিত হতে পারে না। সাধারণ সব ‘আলিমের মত হলো জমির উৎপাদিত ফসল পাঁচ ওয়াসাক পরিমাণ হলে ‘উশর ওয়াজিব।

ইমাম শাফি‘ঈ-এর নিকট خراج তথা কর দুই ধরনের- (১) جزية [জিয্ইয়াহ্] তথা কর, (২) ভাড়া। অতএব যখন কোনো ভূখণ্ড সন্ধির মাধ্যমে এই শর্তে বিজয় হয় যে, ভাড়া জমিটা তার মালিকের নিকট থাকবে। তখন এর জন্য যে, কর নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা جزية (জিয্ইয়াহ্) বা কররূপে গণ্য হবে। যা তাদের মাথা পিছু হারে নেয়া হবে। তাদের মধ্যে যে ইসলাম গ্রহণ করবে তার ওপর অর্পিত ভূমিকর বাদ হয়ে যাবে। যেমন প্রত্যেকের জিয্ইয়াহ্ রহিত হয়ে যায়। আর তাকে জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের উশর দিতে হবে। আর যদি বিজয় এরূপ হয় যে, জমিগুলো মুসলিমদের জন্য। তারা প্রতি বছর জমির জন্য কিছু প্রদান করবে। আর জমি মুসলিমদের জন্যই থাকবে। এক্ষেত্রে যা কিছু তাদের নিকট থেকে নেয়া হবে তা ভাড়া হিসেবে গণ্য হবে। চাই সে ইসলাম গ্রহণ করুক বা কাফির হয়ে থাকুক, উভয় সমান। তার ওপর শর্তানুযায়ী বিধান প্রযোজ্য হবে। আর এদের কেউ কোনো জমি বিক্রয় করলে তা বাতিল হবে। কারণ সে এমন বস্তু বিক্রয় করেছে যার সে মালিক নয়।

শায়খ ‘আল্লামা আরদাবীলী তাঁর ‘মাসাবীহ’-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘‘আল আযহার’’ নামক গ্রন্থে বলেন, যিম্মি বা অন্য কারো নিকট থেকে করযুক্ত জমি ক্রয় করার ব্যাপারে এই হাদীসে নিষেধ রয়েছে। কারণ এতে অপমান-লাঞ্ছনা রয়েছে। আর মু’মিন সম্মানিত। মু’মিন অপমানিত-লাঞ্ছিত হয় না। ইসলাম হলো শক্তিশালী ও সম্ভ্রান্ত আর কুফ্র হলো লাঞ্ছিত ও অপদস্ত। যখন মুসলিম লাঞ্ছনাকে বেছে নিবে তখন সে যেন ইসলামী রীতিকে তার পিঠের উপর নেতৃত্ব দান করবে। বিদ্বানগণ বলেন, করযুক্ত জমি বা খেরাজী জমি কয়েক ধরনের- (১) ইমাম কোনো শহরকে বলপূর্বক বিজয় করবে আর তা বিজয়ীদের মাঝে মূল্যের বিনিময়ে প্রদান করবেন এবং মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ করে দিবেন, তবে এর উপর কর নির্ধারণ করবে না। যেমন ‘উমার ইরাকের আবাদী জমির ক্ষেত্রে করেছিলেন।

(২) ইমাম কোনো শহরকে এই চুক্তিতে বিজয় করবেন যে, তথাকার জমি আমাদের জন্য থাকবে এবং কাফিরেরা কর পরিশোধ করে বসবাস করবে। এই করকে বলা হয় ভাড়া, যা তাদের ইসলাম গ্রহণে বাতিল হবে না।

(৩) ইমাম কোনো শহরকে এই চুক্তিতে বিজয় করেন যে, জমি মালিকের নিকটে থাকবে আর তারা কর দিয়ে বসবাস করবে। এই করকে جزية (জিয্ইয়াহ্) বলা হয়, যা ইসলাম গ্রহণ করলে রহিত হয়ে যায়। ‘আলিমদের মতে এই প্রকারটি হচ্ছে হাদীসের ব্যাখ্যা। হিদায়াহ্ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, সঠিক কথা হলো- নিশ্চয় সাহাবীগণ (রাঃ) খিরাজী জমি ক্রয় করলে তারা জমির কর আদায় করতো। বায়হাক্বী বলেন, ইবনু মাস্‘ঊদ, খাববাব বিন আর্ত, হুসায়ন বিন ‘আলী এবং শুবাইহ প্রমুখ -এর খিরাজী জমি ছিল। ‘উতবাহ্ বিন ফারকাদ আস্ সুলামী একবার ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব -কে বললেন- আমি আবাদী জমি ক্রয় করেছি। ‘উমার বললেনঃ জমির পূর্বের মালিক যেমন করতো তু্মি তাই করো।

বাহজুল মালিক গোত্রের এক মহিলা ইসলাম গ্রহণ করলে ‘উমার তাকে চিঠি লিখে পাঠিয়ে বললেনঃ যদি সে তার জমি নিতে চায় এবং জমি কর প্রদান করে তবে তোমরা তাকে তার জমিতে ছেড়ে দাও। অন্যথায় মুসলিমদেরকে প্রদান করো।

ইবনু আবী শায়বাতে বর্ণিত আছে, বাহজুল মালিকের অধিবাসীদের জমিদারগণকে ‘উমার বললেন, তাদের জমি তাদেরকে কর দেয়ার শর্তে দিয়ে দাও।

ইবনু আবূ শায়বাহ্, ‘উমার ও ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেন- যখন কেউ ইসলাম কবুল করে তার জিয্ইয়াহ্ মাফ করে দিবো কিন্তু তার জমির কর গ্রহণ করবো।

একদা ‘আলী -এর যুগে এক জমিদার ইসলাম গ্রহণ করলে বললেন- যদি তুমি তোমার জমিতে বসবাস করতে চাও তাহলে মাথাপিছু কর রহিত করে দিলাম। আর তোমার জমির কর গ্রহণ করবো। আর যদি তুমি তা ছেড়ে দাও তাহলে আমরা এর অধিক হকদার। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৮০)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবুদ দারদা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ