হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩৭৬

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মিসওয়াক করা প্রসঙ্গে

سِوَاكٌ (সিওয়া-ক) শব্দটি মিসওয়াক করা এবং যার মাধ্যমে মিসওয়াক করা হয় উভয়কেই বুঝায়। তবে এখানে سِوَاكٌ দ্বারা মিসওয়াক করা উদ্দেশ্য। ’আল্লামা জাযারী বলেনঃ যেসব কাষ্ঠ খণ্ডের মাধ্যমে দাঁত মাজা হয় তাকে سِوَاكٌ এবং مِسْوَاكٌ বলে।


৩৭৬-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দেরীতে আদায় করতে ও প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْمِسْوَاكِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُهُمْ بِتَأْخِيرِ الْعشَاء وبالسواك عِنْد كل صَلَاة»

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক ফরয ও নফল সালাতের সময় মিসওয়াক করা সুন্নাত। তবে কিছু লোক এটিকে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত করেননি। তারা সুস্পষ্ট এই সহীহ হাদীসটির ভিত্তিহীন কিছু ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। যথা- ১। মিসওয়াক করার ফলে মাঢ়ি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। আর রক্তক্ষরণের ফলে হানাফীদের মতে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বাতিল হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো এটি সমস্যার সৃষ্টি করে।

* (আমরা এর প্রত্যুত্তরে বলব) প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা ভিন্ন অন্য স্থান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়া উযূ ভঙ্গের কারণ এ ভিত্তিতে সুস্পষ্ট বক্তব্যের মোকাবেলায় প্রদত্ত ব্যাখ্যার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাবে না। যেহেতু এটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। যদি তাদের মিসওয়াকের ফলে মাঢ়ি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার দাবী মেনে নেয়া হয় তাহলে যার এ আশংকা রয়েছে সে মাঢ়ি ব্যতীত দাঁত এবং জিহবা মিসওয়াক করবে।

২। মিসওয়াকের মাধ্যমে দাঁতের ময়লা পরিষ্কার করণের মতো এ কাজ মসজিদে সমুচীন নয়।

(এর প্রত্যুত্তরে আমরা বলব) এ ব্যাখ্যাটিও প্রত্যাখ্যাত। ‘আল্লামা ‘আযীম আবাদী غاية المقصود গ্রন্থে বলেছেন, আমরা মিসওয়াকের মাধ্যমে ময়লা পরিষ্কার করণের এ দাবী মানি না। আর কিভাবে তা হতে পারে, যেখানে যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)-এর মতো সাহাবী লেখকের ন্যায় কানের উপর কলম নিয়ে সালাতে উপস্থিত হতেন এবং যখনই সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখনই মিসওয়াক করতেন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আরম্ভ হয়ে গেলে মিসওয়াকটি আগের স্থানে রেখে দিতেন। এ ছাড়াও খত্বীব বাগদাদী ও ইবনু আবী শায়বাহ্ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এবং ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস নিয়ে এসেছেন, যেখানে বলা হয়েছে সাহাবীগণের কানের উপর মিসওয়াক থাকতো সালাতের আগে মিসওয়াক করতেন আবার তার কানের উপর রেখেই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করতেন।

৩। যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এটা প্রমাণিত নয় যে, তিনি সালাতে দাঁড়ানোর সময় মিসওয়াক করেছেন, তাই কোন কোন বর্ণনা হতে প্রাপ্ত عند كل وضوء (প্রত্যেক উযূ (ওযু/ওজু/অজু) র সময়) এর ভিত্তিতে অত্র হাদীসটিকেও প্রত্যেক সালাতের উযূর সময় এর উপর ধারণ করা হবে।

(আমরা এর প্রত্যুত্তরে বলব) এটি একেবারেই অসম্ভব যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতকে প্রত্যেক সালাতের সময় গুরুত্বসহকারে মিসওয়াক করার আদেশ দিবেন আর তিনি সে ‘আমল না করে পরিত্যাগ করবেন। বরং এ বিষয়ে তাঁর সুস্পষ্ট ‘আমল প্রমাণিত হয়েছে। ত্ববারানীতে যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক না করে গৃহ হতে কোন সালাতের জন্য বের হতেন না। ‘আল্লামা হায়সামী বলেছেন, এ হাদীসের রাবীগণ বিশ্বস্ত। আর এ বিষয়টি সুবিদিত যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযান শ্রবণ করার পর ইক্বামাতের সময়েই গৃহ হতে বের হতেন। অতএব, গৃহে তিনি সালাতে দাঁড়ানোর সময়ই মিসওয়াক করতেন। আর উভয় বর্ণনার মাঝে এমন কোন বৈপরীত্য নেই যে, সালাতের সময়ের বর্ণনাটি উযূর ক্ষেত্রে নিতে হবে, বরং এটা বলা যেতে পারে যে, উভয়টিই সুন্নাত।

সালাতের দাঁড়ানোর সময় মিসওয়াক সুন্নাহ হওয়ার রহস্য হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অবস্থা হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। অতএব ‘ইবাদাতের সম্মান প্রদর্শনার্থে সেটি পূর্ণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নাবস্থায় থাকা চাই। মুসনাদে বাযযারে ‘আলী (রাঃ) হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এসেছে মালাক মুসল্লীর কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের জন্যে তার নিকটবর্তী হতেই থাকে এমনকি সে মুখে মুখ লাগিয়ে দেয়, ফলে মুসল্লীর মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হলে মালাক সে দুর্গন্ধে কষ্ট পায়। এজন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াকের নিয়ম চালু করলেন যাতে ফেরেশতা কষ্ট না পায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ