পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৬৯-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) উরু অথবা গোড়ালি হতে কাপড় খোলা অবস্থায় নিজ গৃহে শুয়ে ছিলেন। এমন সময় আবূ বা সিদ্দীক্ব (রাঃ) গৃহে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তাঁকে প্রবেশের সম্মতি দিলেন এবং সেই অবস্থায় তাঁর সাথে কথাবার্তা বললেন। অতঃপর “উমার ফারূক (রাঃ) এসে সম্মতি চাইলেন। তাঁকেও সম্মতি দিলেন। তখন তিনি ঐ অবস্থায়ই তার সাথে কথাবার্তা বললেন। এরপর ’উসমান গনী (রাঃ) এসে সম্মতি চাইলেন। এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বসে পড়লেন। এবং কাপড় ঠিক করে নিলেন। এরপর যখন ’উসমান (রাঃ) চলে গেলেন, তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করলেন, আবূ বকর আসলেন, তখনো আপনি তার জন্য একটু নড়েননি এবং তাঁর প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। তারপর ’উমার আসলেন, তখনো আপনি তার জন্য নড়েননি এবং ভ্রুক্ষেপও করেননি তাঁর প্রতি। অতঃপর ’উসমান আসলেন, তখন আপনি বসে পড়লেন এবং নিজ কাপড়চোপড় ঠিক করলেন? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, আমি কি সেই লোক হতে লজ্জাবোধ করব না, যাকে দেখলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ)-ও লজ্জাবোধ করেন?

অপর এক বর্ণনাতে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: উসমান হলেন একজন অত্যধিক লজ্জাশীল লোক। অতএব আমি আশঙ্কা করলাম, যদি আমি তাঁকে এ অবস্থায় প্রবেশের অনুমতি প্রদান করি, তাহলে তিনি লজ্জায় আগমনের উদ্দেশ্য আমার কাছে উল্লেখ করতে পারবে না। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب عُثْمَان)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُضْطَجِعًا فِي بَيْتِهِ كَاشِفًا عَنْ فَخِذَيْهِ - أَوْ سَاقَيْهِ - فَاسْتَأْذَنَ أَبُو بَكْرٍ فَأَذِنَ لَهُ وَهُوَ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ فَتَحَدَّثَ ثُمَّ اسْتَأْذَنَ عُمَرُ فَأَذِنَ لَهُ وَهُوَ كَذَلِكَ فَتَحَدَّثَ ثُمَّ اسْتَأْذَنَ عُثْمَانُ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسَوَّى ثِيَابَهُ فَلَمَّا خَرَجَ قَالَتْ عَائِشَةُ: دَخَلَ أَبُو بَكْرٍ فَلَمْ تَهْتَشَّ لَهُ وَلَمْ تُبَالِهِ ثُمَّ دَخَلَ عُمَرُ فَلَمْ تَهْتَشَّ لَهُ وَلَمْ تُبَالِهِ ثُمَّ دَخَلَ عُثْمَان فَجَلَست وسوَّيت ثِيَابك فَقَالَ: «أَلا أستحي من رجل تَسْتَحي مِنْهُ الْمَلَائِكَةُ؟» وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «إِنَّ عُثْمَانَ رَجُلٌ حَيِيٌّ وَإِنِّي خَشِيتُ إِنْ أَذِنْتُ لَهُ عَلَى تِلْكَ الْحَالَةِ أَنْ لَا يَبْلُغَ إِلَيَّ فِي حَاجته» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (26 / 2401) و الروایۃ الثانیۃ ، رواھا مسلم (27 / 2402)، (6209 و 6210) ۔
(صَحِيح)

عن عاىشة قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم مضطجعا في بيته كاشفا عن فخذيه او ساقيه فاستاذن ابو بكر فاذن له وهو على تلك الحال فتحدث ثم استاذن عمر فاذن له وهو كذلك فتحدث ثم استاذن عثمان فجلس رسول الله صلى الله عليه وسلم وسوى ثيابه فلما خرج قالت عاىشة دخل ابو بكر فلم تهتش له ولم تباله ثم دخل عمر فلم تهتش له ولم تباله ثم دخل عثمان فجلست وسويت ثيابك فقال الا استحي من رجل تستحي منه الملاىكة وفي رواية قال ان عثمان رجل حيي واني خشيت ان اذنت له على تلك الحالة ان لا يبلغ الي في حاجته رواه مسلمرواہ مسلم 26 2401 و الروایۃ الثانیۃ رواھا مسلم 27 2402 6209 و 6210 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُضْطَجِعًا فِي بَيْتِهِ كَاشِفًا عَنْ فَخِذَيْهِ) ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করে থাকে মালিকী মাযহাব ও অন্যান্যরা। যারা বলে থাকেন উরু সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীস হুজ্জত বা দলীল হতে পারে না। কেননা হাদীসে রাবীর সন্দেহ পরিলক্ষিত হয় তা হলো নবী (সা.) -এর দুই উরু অথবা দুই নলার কোন একটি খোলা অবস্থায় ছিল কিনা। অতএব দৃঢ়ভাবে বলা যায় না যে, উরু খুলে রাখা জায়িয আছে। আমি বলব, উরু খুলে রাখা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যার নিচে কোন কাপড় তথা লুঙ্গি ছিল যা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর পরবর্তী কথা হতে অনুধাবন করা যায়।
(وَسَوَّى ثِيَابَهُ) তিনি উঠে বসলেন কাপড় ঠিক করলেন। এখানেই ইঙ্গিত রয়েছে যে, তিনি (সা.) দুই উরু হতে কাপড় খোলা অবস্থায় ছিলেন না বরং উভয় উরুর উপর কাপড় তথা লুঙ্গি রাখা ছিল। এজন্য হাদীসে এ কথা বলা হয়নি যে, তিনি তার উরু ঢাকলেন। অতএব এ বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকল না। আল্লাহ ভালো জানেন।
(أَلا أستحي من رجل تَسْتَحي مِنْهُ الْمَلَائِكَةُ؟) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে ‘উসমান (রাঃ)-এর সুস্পষ্ট মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। আর লজ্জা হলো সুন্দর একটি গুণ মালায়িকার (ফেরেশতাদের)।
ইমাম ইবনু মাজাহ (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে বলেন, উক্ত হাদীস প্রমাণ বহন করে যে, রাসূল (সা.) -এর নিকট ‘উসমান (রাঃ) কতটা মর্যাদাবান ছিলেন। হাসান (রাঃ) ‘উসমান (রাঃ)-এর লজ্জা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি যখন বাড়ীর ভিতরে দরজা বন্ধ করে কাপড় খুলে গোসল করতে ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে শরীরে পানি ঢালতে লজ্জা পেতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুনন নাবাবী ১৫/২৪০২)
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, “উসমান (রাঃ) যখন পথ চলতেন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) তাকে দেখে লজ্জা পেত।
ইবনু উমার (রাঃ) হতে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আমার উম্মতের সর্বাধিক লজ্জাশীল ব্যক্তি হলো ‘উসমান ইবনু আফফান। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, আমি আল্লাহর কাছে চাইলাম যেন তার হিসাব গোপনে নেয়া হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)