পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা

রিয়া হচ্ছে মূলত মানুষকে দেখানোর উদ্দেশে কোন নেক আমল করা। আর সুম’আহ্ হচ্ছে, মানুষকে শুনানোর জন্য কোন ভালো কাজ বা ভালো কথা বলা। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা আসল উদ্দেশ্য থাকে না। কখনো উভয় শব্দকে এই অর্থ বুঝানোর জন্য তাগিদ হিসেবে নিয়ে আসা হয়। এর বিপরীত শব্দ হচ্ছে ইখলাস তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একনিষ্ঠভাবে কোন কাজ করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


৫৩১৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের বাহ্যিক আকৃতি ও সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও ’আমলের প্রতি দৃষ্টি দেন। (মুসলিম)

 

الفصل الاول (بَاب الرِّيَاء والسمعة)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ لَا ينظر إِلَى صوركُمْ وَلَا أموالِكم وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

رواہ مسلم (34 /2564)، (6543) ۔
(صَحِيح)

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله لا ينظر الى صوركم ولا اموالكم ولكن ينظر الى قلوبكم واعمالكم رواه مسلمرواہ مسلم 34 2564 6543 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (إِنَّ اللَّهَ لَا ينظر إِلَى صوركُمْ وَلَا أموالِكم) নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তোমাদের সুন্দর বা বিশ্রী চেহারার দিকে বিবেচনার দৃষ্টিতে তাকান না। যেহেতু সুন্দর হওয়া বা না হওয়ার মধ্যে কোন মূল্যায়ন নেই। এমনিভাবে তোমাদের সম্পদের আধিক্য বা স্বল্পতার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না। বরং তিনি লক্ষ্য করেন তোমাদের অন্তরের দিকে সেখানে কি একনিষ্ঠতা, সত্যবাদিতা এবং দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে নাকি। উক্ত ‘আমলের দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে লৌকিকতা বা সুনাম, সুখ্যাতি অর্জন করা এবং সর্বপ্রকার মন্দ স্বভাব।

(وَأَعْمَالِكُمْ) এমনিভাবে তিনি লক্ষ্য করেন তোমাদের ‘আমলের দিকে অর্থাৎ তার যথার্থতা ও খারাপের দিকে এবং এর উপর ভিত্তি করেই তিনি তোমাদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ইবনু মাজাহ ৩/৪১৪৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা

৫৩১৫-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি অংশীস্থাপনকারীদের হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে লোক কোন ’আমলে (ইবাদতে) আমার সাথে অন্যকে শরীক করে, আমি তাকেও তার সেই শিরকসহ বর্জন করি। অপর এক বর্ণনায় আছে, তার সাথে। 

الفصل الاول (بَاب الرِّيَاء والسمعة)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ وَفِي رِوَايَةٍ: فَأَنَا مِنْهُ بَرِيءٌ هُوَ لِلَّذِي عَمِلَهُ . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (46 / 2985)، (7475) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى انا اغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا اشرك فيه معي غيري تركته وشركه وفي رواية فانا منه بريء هو للذي عمله رواه مسلمرواہ مسلم 46 2985 7475 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ) আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি অংশীদারীর অংশীদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। অর্থাৎ যে কাজ কেবলমাত্র একনিষ্ঠতার সাথে আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা হবে, আমি কেবল ঐ ‘আমলকেই গ্রহণ করব শির্কযুক্ত ‘আমলকে নয়। এর সমর্থন হচ্ছে হাদীসের পরবর্তী বাক্য-
(نْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন কাজ করবে এবং তাতে আমার সন্তুষ্টির পাশাপাশি অন্য কোন মাখলুকের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করবে তাহলে আমি তাকে আমার রহমতের দৃষ্টি থেকে পরিত্যাগ করব এবং তা শিরকযুক্ত ‘আমলকে কবুল করা থেকে বর্জন করব। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা

৫৩১৬-[৩] জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি খ্যাতি অর্জনের জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ-ক্রটিকে লোক সমাজে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে লোক দেখানোর আচরণ করবেন (প্রকৃত সাওয়াব হতে সে বঞ্চিত থাকবে)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الرِّيَاء والسمعة)

وَعَنْ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6499) و مسلم (48 / 2987)، (7477) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن جندب قال قال النبي صلى الله عليه وسلم من سمع سمع الله به ومن يراىي يراىي الله به متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6499 و مسلم 48 2987 7477 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা : (مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ) যে ব্যক্তি মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি অর্জন ও প্রশংসা কুড়ানোর জন্য কোন ‘আমল করবে। আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতে তার প্রসিদ্ধি ঘটাবেন এবং পরকালে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে তাকে অপমানিত করবেন।
(وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ) আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য দুনিয়াতে কোন ‘আমল করবে আল্লাহ তাআলা তার প্রতিদান এভাবে দিবেন যে, তা মানুষকে দেখিয়েই শেষ, পরকালে এর কোন সাওয়াব পাবে না।
সহীহ মুসলিমে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মানুষের নিকট নিজের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য লোক দেখানো ‘আমল করবে, আল্লাহও তা দেখিয়ে দিবেন তথা তার গোপন রহস্য মানুষের নিকট প্রকাশ করে দিবেন। অথবা, হাদীসের অর্থ হচ্ছে যারা মানুষের দোষ-ক্রটি শুনিয়ে বেড়ায় আল্লাহ ও তার দোষকে প্রকাশ করে দেন। অথবা, এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা তার প্রতিদান দেখাবেন কিন্তু তাকে প্রদান করবেন না যাতে এর জন্য তার আক্ষেপ হয়। অথবা, এর অর্থ হচ্ছে, যারা মানুষকে জানানোর জন্য ‘আমল করবে আল্লাহ তা'আলা তা মানুষকে শুনিয়ে দিবেন এটাই তার অংশ হবে, কিন্তু বাস্তবে কোন সাওয়াব নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১১/৬৪৯৯, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬/২৩৮১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - লোক দেখানো ও শুনানোর ব্যাপারে বর্ণনা

৫৩১৭-[8] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করা হলো, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি, যে কোন ভালো কাজ করে আর লোকেরা তার সেই কাজের কারণে তার প্রশংসা করে। অপর বর্ণনায় রয়েছে, “এই কাজের কারণে লোকে তাকে পছন্দ করে।” (এতে কি তার সাওয়াব বাতিল হয়ে যাবে?) তিনি বললেন, (এরূপ প্রশংসিত হওয়া) এটা মু’মিনদের নগদ সুসংবাদ। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الرِّيَاء والسمعة)

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرَأَيْتَ الرَّجُلَ يَعْمَلُ الْخَيْرِ وَيَحْمَدُهُ النَّاسُ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ: يُحِبُّهُ النَّاسُ عَلَيْهِ قَالَ: «تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمُؤْمِنِ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (166 / 2642)، (6721) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي ذر قال قيل لرسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت الرجل يعمل الخير ويحمده الناس عليه وفي رواية يحبه الناس عليه قال تلك عاجل بشرى المومن رواه مسلمرواہ مسلم 166 2642 6721 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : (قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرَأَيْتَ الرَّجُلَ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করা হলো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন ভালো কাজ করে কিন্তু মানুষ এর জন্য তার প্রশংসা করে, সে ব্যাপারে আপনার মতামত কি? অপর বর্ণনা মতে, মানুষ তাকে এজন্য ভালোবাসে।
(الَ: «تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمُؤْمِنِ») রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, মুমিনের জন্য প্রশংসা বা মুহাব্বাত পার্থিব জীবনে নগদ সুসংবাদ। বস্তুত আখিরাতে তার সাওয়াব বাকী থাকবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে