পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সন্ধি স্থাপন

৪০৪৬-[৫] মিস্ওয়ার ও মারওয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা (কুরায়শরা) মুসলিমদের সাথে (হুদায়বিয়াহ্-তে) দশ বৎসরের জন্য যুদ্ধ স্থগিত রাখতে সন্ধিপত্র করেছিল, যেন জনসাধারণ নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদে থাকতে পারে। তাতে এটাও উল্লেখ ছিল যে, আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ করব না এবং পরস্পরের মধ্যে গোপনে বা প্রকাশ্যে কেউ চুরি বা বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নেব না। (আবূ দাঊদ)[1]

عَن المِسْوَرِ وَمَرْوَانَ: أَنَّهُمُ اصْطَلَحُوا عَلَى وَضْعِ الْحَرْبِ عَشْرَ سِنِينَ يَأْمَنُ فِيهَا النَّاسُ وَعَلَى أَنَّ بَيْنَنَا عَيْبَةً مَكْفُوفَةً وَأَنَّهُ لَا إِسْلَالَ وَلَا إِغْلَالَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

عن المسور ومروان: أنهم اصطلحوا على وضع الحرب عشر سنين يأمن فيها الناس وعلى أن بيننا عيبة مكفوفة وأنه لا إسلال ولا إغلال. رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: (اصْطَلَحُوْا عَلٰى وَضْعِ الْحَرْبِ عَشْرَ سِنِيْنَ) ‘তারা দশ বছর যুদ্ধ নয়’ চুক্তি করেছিল। অর্থাৎ মক্কার মুশরিকগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হুদায়বিয়াতে দশবছরের জন্য যুদ্ধ নয় চুক্তি করেছিল। এ চুক্তিতে বানূ বাকর মক্কার কুরায়শদের পক্ষ গ্রহণ করে। আর খুযা‘আহ্ গোত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ নেয়। চুক্তির পর সতের বা আঠার মাস অতিবাহিত না হতেই বানূ বাকর যারা কুরায়শদের পক্ষ নিয়েছিল তারা খুযা‘আহ্ গোত্রের ওপর আক্রমণ চালায় যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষাবলম্বন করেছিল। আর যুদ্ধে কুরায়শগণ খুযা‘আদের বিরুদ্ধে বাকর গোত্রকে সাহায্য করে এই ভেবে যে, রাতের বেলার আক্রমণে কে কাকে সাহায্য করেছে কেউ তা দেখতে পাবে না। তাই তারা বানূ বাকরকে অস্ত্র এবং বাহন দিয়ে সাহায্য করে। এদিকে খুযা‘আহ্ গোত্রের পক্ষ থেকে ‘আমর ইবনু মালিক এ সংবাদ নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চলে গিয়ে তাকে বিষয়টি অবহিত করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমরকে বলেনঃ হে ‘আমর! তোমাকে সাহায্য করা হবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের মক্কা আক্রমণ করার জন্য প্রস্ত্ততি নিতে বললেন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন তিনি যেন বিষয়টি মক্কার কাফিরদের থেকে আড়াল করে রাখেন। এভাবেই মক্কা বিজয়ের ঘটনা ঘটে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(وَعَلٰى اَنَّ بَيْنَنَا عَيْبَةً مَكْفُوْفَةً) চুক্তির মধ্যে এও ছিল যে, আমাদের দরজা বন্ধ থাকবে। ইমাম শাওকানী ‘নায়লুল আওত্বার’-এ বলেনঃ অর্থাৎ ইতোপূর্বে আমাদের মাঝে যুদ্ধের যে সমস্ত কারণ রয়েছে সেজন্য আমরা কেউ কাউকে দোষারোপ করবো না। বরং আমাদের মাঝে যে চুক্তি হয়েছে তা সংরক্ষণ করবো।

(لَا إِسْلَالَ وَلَا إِغْلَالَ) ‘‘চুরিও হবে না এবং খিয়ানাতও হবে না।’’ অর্থাৎ লোকজন একে অপর থেকে জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৬৩)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সন্ধি স্থাপন

৪০৪৭-[৬] সফ্ওয়ান ইবনু সুলায়ম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সংখ্যক সাহাবীর সন্তানদের হতে বর্ণনা করেন। তারা তাঁদের পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো লোকের ওপর অন্যায়-জুলুম করে যার সাথে তার সন্ধি হয়েছে, অথবা তার কোনো ক্ষতি সাধন করে, অথবা সাধ্যাতীত তাকে কষ্ট দেয়, অথবা তার কাছ থেকে জোরপূর্বক কোনো কিছু আদায় করে, কিয়ামতের দিন আমিই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ عَنْ عِدَّةٍ مِنْ أَبْنَاءِ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ آبَائِهِمْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَلَا مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن صفوان بن سليم عن عدة من أبناء أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم عن آبائهم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ألا من ظلم معاهدا أو انتقصه أو كلفه فوق طاقته أو أخذ منه شيئا بغير طيب نفس فأنا حجيجه يوم القيامة» . رواه أبو داود

ব্যাখ্যা: (مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا) ‘‘যে ব্যক্তি অঙ্গীকারাবদ্ধ ব্যক্তির প্রতি জুলুম করবে’’। অর্থাৎ যিম্মী অথবা ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে।

(أَوِ انْتَقَصَه أَوْ كَلَّفَه) ‘‘অথবা সাধ্যের চেয়ে বেশী কষ্ট চাপিয়ে দিবে।’’ অর্থাৎ জিয্ইয়াহ্ অথবা কর আদায়ের ক্ষেত্রে জুলুম করবে এভাবে যে, যার ওপর জিয্ইয়াহ্ ওয়াজিব নয় তার জিয্ইয়াহ্ আদায় করবে অথবা যা ওয়াজিব তার চাইতে অধিক আদায় করবে।

(أَنَا حَجِيجُه يَوْمَ الْقِيَامَةِ) কিয়ামত দিবসে আমি তার বিরুদ্ধে লড়বো। অর্থাৎ বিচার দিবসে আমি মাযলূমের পক্ষ নিয়ে যালিমের বিরুদ্ধে দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করবো। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মাবূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৫০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সন্ধি স্থাপন

৪০৪৮-[৭] উমায়মাহ্ বিনতু রুকয়কাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক মহিলার সাথে আমিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়’আত করলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেনঃ আমি তোমাদের নিকট হতে এমন কিছু বিষয়ের শপথ নিলাম, যা পালনে তোমরা সক্ষম। আমি বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের জন্য আমাদের নিজেদের চেয়ে অধিক দয়াময়। অতঃপর আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে বায়’আত করে নিন। অর্থাৎ- (পুরুষদের ন্যায়) আমাদের হাতে হাত ধরে বায়’আত গ্রহণ করুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ শুনো, আমার মুখের বাণী (কথা) দ্বারা একশত মহিলার বায়’আত গ্রহণ করা, একজন মহিলার বায়’আত গ্রহণ করার অনুরূপ। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ ও মুয়াত্ত্বা মালিক)[1]

وَعَن أُميمةَ بنت رقيقَة قَالَتْ: بَايَعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نِسْوَةٍ فَقَالَ لَنَا: «فِيمَا اسْتَطَعْتُنَّ وَأَطَقْتُنَّ» قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَرْحَمُ بِنَا مِنَّا بِأَنْفُسِنَا قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بَايِعْنَا تَعْنِي صَافِحْنَا قَالَ: «إِنَّمَا قَوْلِي لِمِائَةِ امْرَأَةٍ كَقَوْلِي لِامْرَأَةٍ وَاحِدَةٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَمَالِكٌ فِي الْمُوَطَّأ

وعن أميمة بنت رقيقة قالت: بايعت النبي صلى الله عليه وسلم في نسوة فقال لنا: «فيما استطعتن وأطقتن» قلت: الله ورسوله أرحم بنا منا بأنفسنا قلت: يا رسول الله بايعنا تعني صافحنا قال: «إنما قولي لمائة امرأة كقولي لامرأة واحدة» . رواه الترمذي والنسائي وابن ماجه ومالك في الموطأ

ব্যাখ্যা: (فَقَالَ لَنَا : «فِيْمَا اسْتَطَعْتُنَّ وَأَطَقْتُنَّ») তিনি আমাদের বললেনঃ সাধ্যানুযায়ী তোমরা যা পারো অর্থাৎ তোমরা যে শর্তের উপর বায়‘আত করলে সাধ্যানুযায়ী তা পালন করবে।

(قُلْتُ : اللّٰهُ وَرَسُوْلُه أَرْحَمُ بِنَا مِنَّا بِأَنْفُسِنَا) আমরা আমাদের নাফসে্র প্রতি যত না দয়াশীল আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের প্রতি তার চাইতে অধিক দয়াশীল। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের স্বার্থের দিকে আমাদের চাইতে অধিক লক্ষ্য রাখেন। আর এটা এজন্য যে, তিনি ও তাঁর রসূল আমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।

(يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ! بَايِعْنَا) হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদের বায়‘আত নিন। অর্থাৎ আপনি কথার মাধ্যমে তো আমাদের অঙ্গীকার নিয়েছেন। এবার আমাদের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার নিন যেরূপ পুরুষদের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার নিয়ে থাকেন।

(إِنَّمَا قَوْلِىْ لِمِائَةِ امْرَأَةٍ كَقَوْلِىْ لِامْرَأَةٍ وَاحِدَةٍ) একশত মহিলার সাথে আমার কথা বলা এক মহিলার সাথে কথা বলার মতই। অর্থাৎ যেহেতু আমি মহিলাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের হাত স্পর্শ করি না শুধু কথা বলার মাধ্যমে তার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে থাকি, তাই তাদের একজনের সাথে যেমন কথা বলি অনুরূপ একশত জনের সাথেও শুধুমাত্র কথাই বলি। কোনো মহিলার হাতের সাথে হাত মিলিয়ে অঙ্গীকার গ্রহণ করি না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৯৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে