পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিয্ইয়াহ্-এর বর্ণনা

৪০৩৬-[২] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে ইয়ামানে (শাসনকর্তা নিযুক্ত করে) পাঠালেন, তখন প্রত্যেক (অমুসলিম) প্রাপ্তবয়স্ক হতে এক দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) অথবা তার সমপরিমাণ ইয়ামানের তৈরি মু’আফিরী কাপড় আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবূ দাঊদ)[1]

عَنْ مُعَاذٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا وَجَّهَهُ إِلَى الْيَمَنِ أَمْرَهُ أَنْ يَأْخُذَ مِنْ كُلِّ حَالِمٍ يَعْنِي مُحْتَلِمٍ دِينَارًا أَوْ عَدْلَهُ مِنَ الْمَعَافِرِيِّ: ثِيَابٌ تَكُونُ بِالْيمن. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

عن معاذ ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لما وجهه الى اليمن امره ان ياخذ من كل حالم يعني محتلم دينارا او عدله من المعافري ثياب تكون باليمن رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (أَمْرَه أَنْ يَأْخُذَ مِنْ كُلِّ حَالِمٍ يَعْنِىْ مُحْتَلِمٍ دِيْنَارًا أَوْ عَدْلَه مِنَ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয -কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি যেন প্রত্যেক বালেগের নিকট থেকে এক দীনার অথবা তার সমমূল্যের মা‘আফিরী কাপড় জিয্ইয়াহ্ হিসেবে গ্রহণ করে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ অত্র হাদীসের অর্থ থেকে বুঝা যায় যে, বালেগ পুরুষ ব্যতীত অন্য কারো নিকট থেকে জিয্ইয়াহ্ নেয়া যাবে না। ইবনুল হুমাম বলেনঃ নারী, শিশু ও পাগলের উপর সর্বসম্মতক্রমে জিয্ইয়াহ্ নেই। অনুরূপভাবে অন্ধ, বিকলাঙ্গ এবং উপার্জনে অক্ষম বৃদ্ধের ওপরও কোনো জিয্ইয়াহ্ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(دِيْنَارًا أَوْ عَدْلَه) এক দীনার অথবা তার সমপরিমাণ। তূরিবিশতী বলেনঃ عَدْلَه আইন বর্ণে যবার দিয়ে এর অর্থ তার সমপরিমাণ অন্য কোনো বস্তু। মুখতাসারুল নিহায়াহ্-এর গ্রন্থকার বলেন, আইনবর্গ যবার অথবা যের দিয়ে عَدْلٌ ও عِدْلَ উভয়টির অর্থ সমপরিমাণ। এও বলা হয়ে থাকে যে, আইন বর্ণে যবার দিয়ে عَدْلٌ বলা হয় তখন যখন সমজাতীয় বস্তু পরিমাণে সমান হয়। আর আইন বর্ণে যের দিয়ে عِدْلٌ বলা হয় তখন যখন ভিন্ন জাতীয় বস্তু পরিমাণে সমান হয়।

খত্ত্বাবী বলেনঃ عَدْلَه অর্থাৎ এক দীনার সমমূল্যের কাপড়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৩৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিয্ইয়াহ্-এর বর্ণনা

৪০৩৭-[৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একই দেশে (বিপরীতমুখী) দু’ ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র লোক বসবাস করা সঙ্গত নয় এবং কোনো মুসলিম থেকে জিয্ইয়াহ্ নেয়া হবে না। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَصْلُحُ قِبْلَتَانِ فِي أَرْضٍ وَاحِدَةٍ وَلَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِ جِزْيَةٌ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تصلح قبلتان في ارض واحدة وليس على المسلم جزية رواه احمد والترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (لَا تَصْلُحُ قِبْلَتَانِ فِى اَرْضٍ وَاحِدَةٍ) ‘‘একই ভূখণ্ডে দু’ ক্বিবলাহ্ একত্রে হওয়া সম্ভব নয়।’’ তূরিবিশতী বলেনঃ একই ভূখণ্ডে দু’ ধর্মের লোক বিজয়ী হতে পারে না। মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে কাফিরদের মাঝে বসবাস করবে। কেননা কোনো মুসলিম যদি তা করে তাহলে সে নিজেকে মুসলিম দেশে যিম্মির মতো করে ফেললো। আর মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে এ ধরনের যিল্লাতি নিয়ে বসবাস করবে। আবার কোনো অমুসলিম মুসলিম দেশে জিয্ইয়াহ্ ব্যতীত বসবাস করতে পারবে না। সেই সাথে তাকে স্বীয় ধর্ম প্রচার করার সুযোগ দেয়া যাবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ৬৩৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)

(لَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِ جِزْيَةٌ) ‘‘মুসলিমের ওপর জিয্ইয়াহ্ নেই’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য সে ভূমি, যে ভূমি বিজয় করা হয়েছে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে এবং তার অধিবাসীদের ওপর করারোপ করা হয়েছে এই শর্তে যে, নির্ধারিত করের বিনিময়ে তারা উক্ত ভূমির মালিক থেকে যাবে। তবে যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাদের ভূমির উপর থেকে কর রহিত হয়ে যাবে এবং ব্যক্তির ওপর থেকে জিয্ইয়াহ্ রহিত হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি কোনো ভূমি যুদ্ধ করে বিজয় করা হয় অথবা জমির মালিকানা মুসলিমদের হবে- এই শর্তে সন্ধি চুক্তি করা হয় এবং ঐ ভূমিতে অমুসলিমগণ বাস করবে কর দেয়ার বিনিময়ে তাহলে এ কর অব্যাহত থাকবে তা কোনভাবেই রহিত হবে না যদিও তার অধিবাসীগণ পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ অথবা মৃত্যুবরণ করে।

ইবনুল হুমাম বলেনঃ যে যিম্মির উপর জিয্ইয়াহ্ ধার্য আছে সে যদি বৎসর পূর্ণ হওয়ার পরও ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তার থেকে জিয্ইয়াহ্ রহিত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে সে যদি বৎসরের মাঝখানে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তার জিয্ইয়াহ্ রহিত হয়ে যাবে। তবে ইমাম শাফি‘ঈ-এর মতে তার ওপর ঐ বৎসরের কর থেকে যাবে। সে বৎসরের মাঝখানে ইসলাম গ্রহণ করুক অথবা বৎসরের শেষে ইসলাম গ্রহণ করুক। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ মুসলিমদের ওপর জিয্ইয়াহ্ নেই- এর দু’টি ব্যাখ্যা হতে পারে :

১. এখানে জিয্ইয়াহ্ অর্থ ভূমিকর। অর্থাৎ যদি কোনো ইয়াহূদীর আয়ত্তে এমন ভূমি থাকে যার ওপর কর ধার্য আছে সে যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তার ওপর থেকে জিয্ইয়াহ্ রহিত হয়ে যাবে এবং ঐ ভূমির করও রহিত হয়ে যাবে। এটাই সুফ্ইয়ান সাওরী এবং ইমাম শাফি‘ঈ-এর অভিমত।

২. যে যিম্মি বৎসরের কিয়দংশ পার হয়ে যাওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করে তার নিকট থেকে বৎসরের ঐ অংশের জিয্ইয়াহ্ আদায় করা হবে না। যেমন কোনো মুসলিম যদি বৎসরের কিছু অংশ চলে যাওয়ার পর তার পশুপাল বিক্রি করে তাহলে তার নিকট থেকে ঐ বৎসরের পশুর যাকাত আদায় করা হবে না। কেননা বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর পশুতে যাকাত ওয়াজিব হয়। আর সে পশু বিক্রি করেছে বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই। তাই তার ওপর ঐ পশুতে যাকাত ওয়াজিব হয়নি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৫১)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিয্ইয়াহ্-এর বর্ণনা

৪০৩৮-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)-কে দূমাহ্-এর শাসক উকায়দির-এর বিরুদ্ধে অভিযানে পাঠালে, তারা তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার খুন মাফ করে দিলেন এবং জিয্ইয়াহ্ আদায়ের শর্তে তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن أنس قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيدِ إِلَى أُكَيْدِرِ دُومَةَ فَأَخَذُوهُ فَأَتَوْا بِهِ فَحَقَنَ لَهُ دَمَهُ وَصَالَحَهُ على الْجِزْيَة. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن انس قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم خالد بن الوليد الى اكيدر دومة فاخذوه فاتوا به فحقن له دمه وصالحه على الجزية رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (أُكَيْدِرِ دُوْمَةَ) ‘‘দূমাহ্ অঞ্চলের উকাইদির’’ দূমাহ্ শামের কোনো শহর অথবা কোনো দুর্গের নাম যা তাবূকের নিকটবর্তী এলাকায় অবস্থিত। উকাইদির দূমাহ্ অঞ্চলের বাদশাহর নাম। তিনি হলেন উকাইদির ইবনু ‘আব্দুল মালিক আল কিন্দী। তিনি খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে সেনাদল প্রেরণ করেছিলেন। এই সেনাদলের মুহাজিরদের নেতৃত্বে ছিলেন আবূ বাকর আর গ্রাম্য লোকেদের নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ। এ সেনাদলটি চাঁদনী রাতে দুর্গের নিকট পৌঁছে।

তখন উকাইদির তার স্ত্রীর সাথে দুর্গের ছাদে ছিলেন। কোনো কারণে তিনি তার ভাই এবং স্বীয় পরিবারের লোকেদের সাথে নীচে নেমে আসলে মুসলিম বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং তার ভাইকে হত্যা করে ফেলে।

(فَحَقَنَ لَه دَمَه) ‘‘তার রক্ত নিষেধ করলেন।’’ অর্থাৎ তাকে হত্যা করতে নিষেধ করে তার রক্ত সংরক্ষণ করলেন।

(وَصَالَحَه عَلَى الْجِزْيَةٌ) ‘‘জিয্ইয়াহ্ প্রদানের শর্তে তার সাথে সন্ধি চুক্তি করেন।’’ ফলে পরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনি একজন উত্তম মুসলিমে পরিণত হন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

খত্ত্বাবী বলেনঃ দূমার উকাইদির এক ‘আরব ব্যক্তি ছিলেন। তাকে গাসসানও বলা হয়।

অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, ‘আরবদের নিকট থেকেও জিয্ইয়াহ্ গ্রহণ করা বৈধ। যেমনটি অনারবদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করা বৈধ। ইমাম আবূ ইউসুফ-এর মতে ‘আরবদের নিকট থেকে জিয্ইয়াহ্ গ্রহণ করা বৈধ নয়। ইমাম মালিক, আওযা‘ঈ ও শাফি‘ঈ-এর মতে ‘আরব ও অনারব জিয্ইয়ার ক্ষেত্রে সবাই সমান। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৩৫)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিয্ইয়াহ্-এর বর্ণনা

৪০৩৯-[৫] হারব ইবনু ’উবায়দুল্লাহ (রহঃ) তাঁর নানার মাধ্যমে তিনি তাঁর বাবা হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারাগণ (খ্রীষ্টানেরা) দশমাংশ ’উশূর (কর) আদায় করতে বাধ্য থাকবে, কিন্তু মুসলিমের ওপর ’উশূর নেই। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ حَرْبِ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ عَنْ جَدِّهِ أبي أُمِّه عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّمَا الْعُشُورُ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى وَلَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ عُشُورٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ

وعن حرب بن عبيد الله عن جده ابي امه عن ابيه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال انما العشور على اليهود والنصارى وليس على المسلمين عشور رواه احمد وابو داود

ব্যাখ্যা: (لَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ عُشُوْرٌ) মুসলিমদের ওপর ‘উশূর নেই। ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেনঃ এখানে عُشُوْرٌ দ্বারা উদ্দেশ্য ব্যবসায়ী মালের উপর ধার্য কর। জমিনে উৎপাদিত শস্যের ‘উশূর উদ্দেশ্য নয়। খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ মুসলিমদের নিকট থেকে ফসলের ‘উশূর ব্যতীত ব্যবসায়ী মালের কোনো কর নেই। ইয়াহূদী, নাসারাদের ওপর ‘উশূর প্রযোজ্য। এর দ্বারা উদ্দেশ্য তাদের সাথে যে শর্তের ভিত্তিতে সন্ধি চুক্তি হয়েছে সে চুক্তি অনুযায়ী জিয্ইয়াহ্ এবং ব্যবসায়ী মালেও কর দিবে। যদি সন্ধির সময়ে এ ধরনের চুক্তি না হয়ে থাকে তাহলে জিয্ইয়াহ্ ব্যতীত কোনো কর দিবে না। ইমাম শাফি‘ঈ-এর মতানুসারে ইয়াহূদী ও নাসারাদের জমিনে উৎপাদিত ফসলে তাদের কোনো ‘উশূর নেই। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে তারা যদি তাদের দেশে মুসলিম ব্যবসায়ীদের থেকে কর নিয়ে থাকে তাহলে আমরাও তাদের কাছ থেকে কর তথা ‘উশূর নিবো। আর তারা যদি তা না নিয়ে থাকে তাহলে আমরাও নিবো না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০৪৪)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিয্ইয়াহ্-এর বর্ণনা

৪০৪০-[৬] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! (যুদ্ধাভিযানে) আমরা কখনো কখনো এমন জনপদের উপর দিয়ে যাই যারা আমাদের আতিথেয়তা করে না, এমনকি তাদের ওপর আমাদের জন্য যতটুকু সহানুভূতি করা কর্তব্য তারা তাও পালনে অনীহা করে। আর আমরাও জোরপূর্বক তাদের নিকট হতে কিছু আদায় করি না। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (তোমাদের সংকটাপন্ন অবস্থায়) যদি তারা স্বেচ্ছায় আদায় না করে, তবে তোমরা (প্রয়োজন অনুপাতে) জোরপূর্বক আদায় করতে পার। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نَمَرُّ بِقَوْمٍ فَلَا هُمْ يُضَيِّفُونَا وَلَا هُمْ يُؤَدُّونَ مَا لنا عَلَيْهِم منَ الحقِّ وَلَا نَحْنُ نَأْخُذُ مِنْهُمْ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ أَبَوْا إِلَّا أنْ تأخُذوا كُرهاً فَخُذُوا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن عقبة بن عامر قال قلت يا رسول الله انا نمر بقوم فلا هم يضيفونا ولا هم يودون ما لنا عليهم من الحق ولا نحن ناخذ منهم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان ابوا الا ان تاخذوا كرها فخذوا رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (إِنْ أَبَوْا إِلَّا أنْ تَأخُذُوْا كُرْهًا فَخُذُوْا) ‘‘বাধ্য না করলে যদি তারা তোমাদের প্রাপ্য দিতে অস্বীকার করে তাহলে তাদেরকে বাধ্য করো।’’ অর্থাৎ তোমাদের যে অধিকার রয়েছে তাদের ওপর, যেমন : মেহমানদারী করা, নগদে অথবা বাকীতে পণ্য বিক্রয় করা তারা যদি এর কোনটাই না করে তাহলে বলপূর্বক তোমরা তাদের কাছ থেকে অধিকার আদায় করে নিবে। ইবনুল মালিক উল্লেখ করেছেন যে, মুহীউস্ সুন্নাহ্’য় বলা হয়ে থাকে যে, মুসলিমদের এই পথ অতিক্রম ছিল যিম্মিদের নিকট দিয়ে। আর তাদের ওপর শর্ত ছিল যে, কোনো মুসলিম বাহিনী তাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তাদের কর্তব্য ঐ মুসলিম বাহিনীর মেহমানদারী করা। যদি কারো ওপর এরূপ শর্ত না থাকে এবং মুসলিম বাহিনীও কারো সাহায্য নিতে বাধ্য না হয় তাহলে অন্যের মাল বলপূর্বক নেয়া অবৈধ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে যখন বায়তুল মাল ছিল না তখন মুসলিম বাহিনীকে সহযোগিতা করা এবং তাদের মেহমানদারী করা সকলের কর্তব্য ছিল। অতঃপর যখন বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আর মুসলিমদের মালের মধ্যে অন্যের কোনো অধিকার নেই। ইবনু বাত্ত্বল বলেনঃ ইসলামের প্রথম যুগে এ ধরনের সহযোগিতা বাধ্যতামূলক ছিল। পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে গিয়েছে। ইমাম নববী বলেনঃ ইমাম আহমাদ এবং লায়স অত্র হাদীসের বাহ্যিক অর্থই গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ মেহমানের মেহমানদারী করা বাড়ীওয়ালার কর্তব্য। স্বেচ্ছায় মেহমানদারী না করলে মেহমান বলপূর্বক তার হক আদায় করে নিবে।

জুমহূর ‘আলিমগণ এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ না করে তারা এর ব্যাখ্যা করেছেন বিভিন্নভাবে :

১. মুসলিম বাহিনী যদি কারো সহযোগিতা নিতে বাধ্য হয় তাহলে তাদের মেহমানদারী করা ওয়াজিব, নচেৎ নয়।

২. হাদীসের অর্থ হলো তারা যদি তোমাদের মেহমানদারী না করে তাহলে তাদের সম্মানহানীমূলক কথা অন্যের কাছে বলতে পারো।

৩. এটা ইসলামের প্রাথমিক যুগের অবস্থা, পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে গেছে।

(তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৮৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে