পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

’কিসাস’ শব্দের অর্থ অনুগামী হওয়া, অনুসরণ করা। কিসাস এ নামকরণ এজন্য হয়েছে যে, নিহতের অভিভাবক প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে হত্যাকারীর ন্যায় আচরণ করে থাকে, অর্থাৎ তার কাজের অনুসরণ করে। তাই এ প্রতিশোধকে কিসাস বলা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


৩৪৪৬-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম বান্দা সাক্ষ্য দেয় যে, ’’আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল’’, তার রক্তপণ তিনটি কারণ ব্যতীত হালাল নয়ঃ (১) প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, (২) বিবাহিত ব্যভিচারীকে [রজম করা], (৩) দীন ইসলাম পরিত্যাগকারী- মুসলিম জামা’আত হতে সম্পর্কচ্ছেদকারীকে হত্যা করা। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: النَّفْسُ بِالنَّفْسِ وَالثَّيِّبُ الزَّانِي وَالْمَارِقُ لدينِهِ التَّارِكُ للجماعةِ

عن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يحل دم امرى مسلم يشهد ان لا اله الا الله واني رسول الله الا باحدى ثلاث النفس بالنفس والثيب الزاني والمارق لدينه التارك للجماعة

ব্যাখ্যা : হাদীসে উল্লেখিত (امْرِئٍ) দ্বারা পুরুষ ও নারী উভয়ই শামিল। অর্থাৎ যে কোনো নারী বা পুরুষ যারা এ কথা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসী সকলের জন্য আল্লাহর রসূল, সে ব্যক্তি মুসলিম বলে গণ্য হবে। কোনো মুসলিম যখন এ সাক্ষীর উপর অটল থাকবে তখন তার রক্ত হালাল নয় অর্থাৎ তাকে হত্যা করা যাবে না।

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এই যে, যখন কোনো ব্যক্তি উপরে বর্ণিত দু’টি বিষয়ে সাক্ষ্য দিবে তখন তার রক্ত প্রবাহিত করা হারাম বলে গণ্য হবে। উসামাহ্ বর্ণিত হাদীস, তুমি ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বিষয়ে ঠিক করবে, এ অর্থটাই জোরদার করে। তবে সে যদি নিমেণাক্ত তিনটি অন্যায় করে তাহলে তার ওপর শারী‘আতের বিধান আরোপ করতে হবে। ১. সে যদি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। ২. সে যদি বিবাহিত হওয়ার পরও যিনায় লিপ্ত হয়। ৩. সে যদি দীন ত্যাগ করে অর্থাৎ মুরতাদ হয়ে যায়। এসব অপরাধে লিপ্ত হলে তার জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৮৭৮; শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৬৭৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৪৭-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মু’মিন তার দীনে পরিপূর্ণরূপে নিরাপদে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অনৈতিক হত্যায় লিপ্ত না হয়। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَنْ يَزَالَ الْمُؤْمِنُ فِي فُسْحَةٍ مِنْ دِينِهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لن يزال المومن في فسحة من دينه ما لم يصب دما حراما رواه البخاري

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ইবনু মালিক (রহঃ) বলেনঃ যখন কোনো মুসলিমের দ্বারা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যার মতো ঘটনা না ঘটে তখন তার জন্য শারী‘আতের বিধান পালন করা সহজ হয়। সে নেক ‘আমল করতে আগ্রহী থাকে।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তার জন্য আল্লাহর রহমাত আশা করা যায়। আর যখন সে কাউকে হত্যা করে তখন আল্লাহর রহমাত তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। আর সে হতাশাগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহর রহমাত থেকে বঞ্চিত হয়। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে হত্যার ব্যাপারে সাহায্য করে যদি তা হয় সামান্য একটি কথা তবুও আল্লাহ তা‘আলা তাকে স্বীয় রহমাত থেকে বঞ্চিত করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৮৬২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৪৮-[৩] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম রক্তপাতের (হত্যার) ফায়সালা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاء»

وعن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اول ما يقضى بين الناس يوم القيامة في الدماء

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সর্বপ্রথম রক্তের হিসাব গ্রহণ করবেন। কেননা বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক ভয়াবহ। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এ কথার দ্বারা রক্তের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। এ হাদীস (أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ الْعَبْدُ عَلَيْهِ صَلَاتُه) কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেয়া হবে। হাদীসের বিপরীত কোনো হাদীস নয়। কেননা সালাত হলো আল্লাহর হক। আর রক্তের বিষয়টা বান্দার সাথে সম্পৃক্ত।

গ্রন্থাকার (রহঃ) বলেনঃ রক্তের বিষয়টা নিষিদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত আর সালাতের বিষয়টা আদেশের সাথে সম্পৃক্ত। অথবা হিসাবের দিক থেকে প্রথম হবে সালাতের হিসাব আর বান্দার মধ্যকার পরস্পরের মাঝে ফায়সালার ক্ষেত্রে রক্তের ফায়সালা প্রথম হবে। এর সমর্থনে নাসায়ীতে ইমাম মাস্‘ঊদ থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে-

(عن ابن مَسْعُودٍ مَرْفُوْعًا أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ الْعَبْدُ عَلَيْهِ صَلَاتُه وَأَوَّلُ مَا يُقْضٰى بَيْنَ النَّاسِ فِي الدِّمَاءِ)

অর্থাৎ- বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব গ্রহণ করা হবে। বান্দার মাঝে সর্বপ্রথম রক্তের ফায়াসালা করা হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৫৩৩; শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৬৭৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৪৯-[৪] মিকদাদ ইবনুল আস্ওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি পরস্পরে যুদ্ধে কোনো কাফিরের সম্মুখীন হই, আর তরবারি দ্বারা আঘাত করে সে আমার হাত কেটে ফেলে। তারপর সে আমার নিকট থেকে দূরে সরে কোনো গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে বলে উঠে, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে মুসলিম হয়ে গেছি (অর্থাৎ- ইসলাম কবুল করেছি)। অন্য বর্ণনায় আছে, যখন আমি তাকে হত্যা করতে উদ্যত হই, তখন সে বলে উঠে, ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো উপাস্য নেই)। অতএব এ সাক্ষ্য দেয়ার পরও কি আমি তাকে হত্যা করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে হত্যা করো না। তিনি (মিকদাদ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! সে তো আমার হাত কেটে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে হত্যা করো না। কেননা তুমি যদি তাকে হত্যা কর, তাহলে সে ঐ অবস্থায় পৌঁছে যাবে, যেখানে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে ছিলে। আর তুমি সে অবস্থায় পৌঁছে যাবে, যেখানে সে ঐ কালিমা পড়ার পূর্বে ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ لَقِيتُ رَجُلًا مِنَ الْكُفَّارِ فَاقْتَتَلْنَا فَضَرَبَ إِحْدَى يَدَيَّ بِالسَّيْفِ فقطعهما ثُمَّ لَاذَ مِنِّي بِشَجَرَةٍ فَقَالَ: أَسْلَمْتُ لِلَّهِ وَفِي رِوَايَةٍ: فَلَمَّا أَهْوَيْتُ لِأَقْتُلَهُ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أَأَقْتُلُهُ بَعْدَ أَنْ قَالَهَا؟ قَالَ: «لَا تَقْتُلْهُ» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ قَطَعَ إِحْدَى يَدَيَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقْتُلْهُ فَإِنْ قَتَلْتَهُ فَإِنَّهُ بِمَنْزِلَتِكَ قَبْلَ أَنْ تَقْتُلَهُ وَإِنَّكَ بِمَنْزِلَتِهِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ كَلِمَتَهُ الَّتِي قَالَ»

وعن المقداد بن الاسود انه قال يا رسول الله ارايت ان لقيت رجلا من الكفار فاقتتلنا فضرب احدى يدي بالسيف فقطعهما ثم لاذ مني بشجرة فقال اسلمت لله وفي رواية فلما اهويت لاقتله قال لا اله الا الله ااقتله بعد ان قالها قال لا تقتله فقال يا رسول الله انه قطع احدى يدي فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تقتله فان قتلته فانه بمنزلتك قبل ان تقتله وانك بمنزلته قبل ان يقول كلمته التي قال

ব্যাখ্যা: কালিমাহ্ পড়া তথা ঈমান আনয়ন করার পর কাউকে হত্যা করা হারাম। কালিমাহ্ গ্রহণ করার পূর্বে হত্যা করা যেমন হালাল ছিল ঠিক তেমনি ঈমান আনয়নের কারণে তাকে হত্যা করা হারাম, হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির স্থলাভিষিক্ত হবে।

‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ যখন কোনো কাফির বলে যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি বা আমি মুসলিম, তখন তাকে মুসলিম হিসেবে গণ্য করতে হবে। তাকে হত্যা করা যাবে না। কোনো মুসলিম যখন কোনো কাফিরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং কাফির কর্তৃক আহত হওয়ার পর যদি কাফির মুসলিম হয়ে যায় তখন প্রথম মুসলিম নতুন মুসলিমকে হত্যা করতে পারবে না যে ইতিপূর্বে কাফির ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০১৯; শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ৯৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৪১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিকদাম (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫০-[৫] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহায়নাহ্ নামক গোত্রের লোকেদের বিরুদ্ধে (জিহাদে) পাঠালেন। অতঃপর আমি যখন তাদের এক ব্যক্তির সামনাসামনি তরবারি দ্বারা আঘাত হানতে উদ্যত হলাম, তখন সে বলে উঠল ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। কিন্তু আমি তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করে ফেললাম। অতঃপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি তার ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ সাক্ষ্য দেয়ার পরও তাকে হত্যা করেছ? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে তো স্বীয় জীবন রক্ষার্থে এরূপ বলেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তার অন্তর ভেদ করে দেখলে না কেন? (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أُنَاسٍ مِنْ جُهَيْنَةَ فَأَتَيْتُ عَلَى رَجُلٍ مِنْهُمْ فَذَهَبْتُ أَطْعَنُهُ فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَطَعَنْتُهُ فَقَتَلْتُهُ فَجِئْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: «أقَتلتَه وقدْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ؟» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّمَا فَعَلَ ذَلِكَ تَعَوُّذًا قَالَ: «فهَلاَّ شقَقتَ عَن قلبه؟»

وعن اسامة بن زيد قال بعثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم الى اناس من جهينة فاتيت على رجل منهم فذهبت اطعنه فقال لا اله الا الله فطعنته فقتلته فجىت الى النبي صلى الله عليه وسلم فاخبرته فقال اقتلته وقد شهد ان لا اله الا الله قلت يا رسول الله انما فعل ذلك تعوذا قال فهلا شققت عن قلبه

ব্যাখ্যা: কোনো লোক অন্তর হতে প্রকৃতভাবে ঈমান আনয়ন করেছে কিনা- তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই অবগত আছেন। সুতরাং কোনো ব্যক্তি বাহ্যিক ও মৌখিক কালিমাহ্ পাঠ করলে এবং কালিমাকে স্বীকার করে নিলে সে মুসলিম বলে গণ্য হবে। অতএব মুখে কালিমাহ্ স্বীকারকারী প্রত্যেক মুসলিমের নিকট অপর মুসলিমের রক্ত যেমন হারাম তেমনি যে কেউ তাৎক্ষণিক ঈমান আনলে তার রক্তও অপর মুসলিমের জন্য হারাম বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ কোনো মুসলিম তাকে হত্যা করতে পারবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৮৭২; শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ৯৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫১-[৬] জুনদুব ইবনু ’আব্দুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে অপর এক বর্ণনায় আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ তোমার বিরুদ্ধে (হত্যার) অভিযোগ করবে, তখন তুমি কি উত্তর দেবে? এ কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একাধিকবার উচ্চারণ করলেন। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَفِي رِوَايَةِ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَيْفَ تَصْنَعُ بِلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟» . قَالَهُ مِرَارًا. رَوَاهُ مُسلم

وفي رواية جندب بن عبد الله البجلي ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال كيف تصنع بلا اله الا الله اذا جاءت يوم القيامة قاله مرارا رواه مسلم

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক (بِلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ إِذَا جَاءَتْ) এ কথাটি বার বার বলার কারণ হলো- এ কথা দ্বারা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কালিমাহ্ পাঠ করার মর্যাদা ও গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ‘আল্লামা কাযী (রহঃ) বলেনঃ যখন কেউ মুসলিম হয়ে যায় তখন তার অধিকার এই হয় যে, তাকে হত্যা করা যাবে না। বরং তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫২-[৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মু’আহিদ (মুসলিমদের প্রতিশ্রুতিতে আশ্রিত)-কে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূর হতে পাওয়া যায়। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا تُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أربعينَ خَرِيفًا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن عبد الله بن عمرو رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قتل معاهدا لم يرح راىحة الجنة وان ريحها توجد من مسيرة اربعين خريفا رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী যিম্মি বা কাফির নিরাপত্তার শর্তে যখন বসবাস করে তখন তার জান-মাল মুসলিমের ন্যায় সংরক্ষিত, তাদেরকে হত্যা করাও জঘন্যতম অপরাধ। ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) (مُعَاهِدًا) এর ব্যাখ্যায় বলেন- জিয্ইয়াহ্ (কর) দেয়ার শর্তে মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী ভিন্ন ধর্মের লোকেদের (مُعَاهِدًا) বলা হয়। অথবা মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তার চুক্তিতে অবস্থানকারী। মুসলিমের নিরাপত্তায় থাকা অবস্থায় কোনো কাফিরকে হত্যা করা যাবে না। মুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিমের নিরাপত্তায় থাকা কোনো কাফিরকে যদি কেউ হত্যা করে তবে সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। এর দ্বারা এ উদ্দেশ্য নয় যে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কেননা শারী‘আতের বিধান মতে কবীরা গুনাহের শাস্তির পর প্রত্যেক মুসলিম জান্নাতে প্রবেশ করবে একমাত্র কাফির চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫৩-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে ঐরূপভাবে জাহান্নামের মাঝে সর্বদা নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। আর যে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে, সেও সর্বদা ঐরূপভাবে জাহান্নামে স্বীয় হাতে বিষপানরত থাকবে। আর যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐরূপ ধারালো অস্ত্র দ্বারা স্বীয় হাতে নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ يَتَرَدَّى فِيهَا خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ تَحَسَّى سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَسُمُّهُ فِي يَدِهِ يَتَحَسَّاهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ فَحَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جهنَّمَ خَالِدا مخلَّداً فِيهَا أبدا»

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تردى من جبل فقتل نفسه فهو في نار جهنم يتردى فيها خالدا مخلدا فيها ابدا ومن تحسى سما فقتل نفسه فسمه في يده يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها ابدا ومن قتل نفسه بحديدة فحديدته في يده يتوجا بها في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها ابدا

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের আলোকে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির শেষ পরিণতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামী হবে। এখন প্রশ্ন হলো যে, আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, যদি আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি আত্মহত্যার সময় ঈমানের সাথে থাকে তবে সে এ পাপের শাস্তি ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আর যদি সে ঈমান ত্যাগ করে মারা যায় তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। হাদীসের উক্তি (خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا) এর দ্বারা তাকিদ আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যেন আত্মহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ না করে, এ কথা দ্বারা সেদিকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অথবা এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি শাস্তির উপযোগী হয়ে পড়েছে। অথবা এর দ্বারা দীর্ঘস্থায়ী শাস্তির কথা বুঝানো হয়েছে (‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায-এর অভিমত এটাই)। আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি যে মাধ্যমে আত্মহত্যা করবে জাহান্নামে বসে সে নিজের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করবে, অর্থাৎ কেউ যদি বিষপানে আত্মহত্যা করে তবে সে জাহান্নামে ও বিষপান করতে থাকবে আবার যে ব্যক্তি নিজেকে কোনো ধারালো ছুরির আঘাতে হত্যা করবে জাহান্নামে বসেও সে নিজেকে ধারালো ছুরি দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ আত্মহত্যাকারী যদি এ কাজকে হালাল মনে করে তাহলে সে কাফির হওয়ার কারণে চীর জাহান্নামী হবে, অন্যথায় নয়।

আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির জন্য জানাযা সালাত আদায় করা যাবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে, প্রত্যেক কালিমাহ্ স্বীকারকারীর ব্যক্তির জানাযা হবে। যদি কালিমাহ্ স্বীকারকারী কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে তার জানাযা হবে। এ মর্মে মারফূ‘ সূত্রে ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিত হাদীস (صَلُّوا خَلْفَ مَنْ قَالَ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَصَلُّوا عَلٰى مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ) অর্থাৎ- তোমরা তার পিছে সালাত আদায় কর, যে لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ স্বীকার করে এবং যে لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ স্বীকার করে তার জানাযা আদায় কর। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫৪-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (স্বীয় গলায়) ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে, জাহান্নামেও সে অনুরূপভাবে নিজেকে ফাঁসি দিতে থাকবে। আর যে অস্ত্রাঘাতে আত্মহত্যা করে, জাহান্নামেও সে অনুরূপভাবে নিজেকে অস্ত্রাঘাতে আত্মহত্যা করতে থাকবে। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِي يَطْعَنُهَا يَطْعَنُهَا فِي النَّارِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الذي يخنق نفسه يخنقها في النار والذي يطعنها يطعنها في النار رواه البخاري

ব্যাখ্যা : এ হাদীসে আত্মহত্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। দুনিয়াতে বসে আত্মহত্যাকারী যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করেছে জাহান্নামেও সে সেই পদ্ধতিতে শাস্তি ভোগ করবে। যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামেও নিজ হাতে ফাঁসীর শাস্তি ভোগ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫৫-[১০] জুনদুব ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্বকালে জনৈক লোক (হাতে রক্তাক্ত অবস্থায়) আহত হয়েছিল। সে তার ব্যথা সহ্য করতে না পেরে একটি ছুরির আঘাতে স্বীয় হাতটি কেটে ফেলে, তারপরও রক্তক্ষরণ রোধ হলো না। পরিশেষে সে মৃত্যুবরণ করল। আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে অত্যন্ত তাড়াহুড়া করল। অতএব আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ بِهِ جُرْحٌ فجزِعَ فأخذَ سكيّناً فحزَّ بِهَا يَدَهُ فَمَا رَقَأَ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: بَادَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ فَحَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجنَّة

وعن جندب بن عبد الله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كان فيمن كان قبلكم رجل به جرح فجزع فاخذ سكينا فحز بها يده فما رقا الدم حتى مات قال الله تعالى بادرني عبدي بنفسه فحرمت عليه الجنة

ব্যাখ্যা: আত্মহত্যা করা জঘন্য পাপ। কোনো মুসলিম যদি আত্মহত্যা করে তবে তাকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। যদি সে জায়িয মনে না করে থাকে তবে সে শাস্তি ভোগের পর মুক্তি পাবে, কিন্তু যে ব্যক্তি আত্মহত্যাকে জায়িয ও হালাল মনে করে সে জাহান্নামী হবে। কেননা সে শারী‘আতের একটি হারাম কাজকে হালাল মনে করার দ্বারা কাফির হয়ে গেল। আর কাফির তো জাহান্নামী হবে। কোনো অবস্থাতেই আত্মহত্যা করা যাবে না। জীবনে চলার পথে যতই কষ্ট বা বিপদাপদ নেমে আসুক না কেন সর্বদাই আত্মহত্যা করা হারাম। এ হাদীসে সে দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫৬-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করেন তখন তুফায়ল ইবনু ’আমর আদ্ দাওসী -ও তাঁর সাথে হিজরত করলেন, সাথে তার স্বগোত্রীয় এক লোকও হিজরত করে এসেছিল এবং সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। এতে লোকটি অসুস্থতায় অধৈর্য হয়ে ছুরি নিয়ে স্বীয় হাতের কব্জি কেটে ফেলল। ফলে দ্রুতবেগে রক্তক্ষরণের দরুন সে মৃত্যুবরণ করল। অতঃপর তুফায়ল ইবনু ’আমর তাকে স্বপ্ন দেখলেন যে, তার অবয়ব ও বেশভূষা খুবই সুন্দর; কিন্তু তার হাত দু’টি আবৃত করা। তুফায়ল তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার রব্ তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? উত্তরে সে বলল, আল্লাহ তা’আলা আমাকে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হিজরত করার কারণে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তুফায়ল পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, আমি তোমার হাত দু’টি আবৃত দেখছি, তার কারণ কি? সে বলল, আল্লাহ তা’আলা আমাকে বলেছেন, তুমি ইচ্ছাকৃতভাবে যা ক্ষতি করেছ, আমি কক্ষনো তা ঠিক করব না। অতঃপর তুফায়ল এতদসম্পর্কে পুরো বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তার হাত দু’টিকেও ক্ষমা করে দিন। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ جَابِرٍ: أَنَّ الطُّفَيْلَ بْنَ عَمْرٍو الدَّوْسِيَّ لَمَّا هَاجَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْمَدِينَةِ هَاجَرَ إِلَيْهِ وَهَاجَرَ مَعَهُ رَجُلٌ مِنْ قَوْمِهِ فَمَرِضَ فَجَزِعَ فَأَخَذَ مَشَاقِصَ لَهُ فَقَطَعَ بِهَا بَرَاجِمَهُ فَشَخَبَتْ يَدَاهُ حَتَّى مَاتَ فَرَآهُ الطُّفَيْلُ بْنُ عَمْرٍو فِي مَنَامِهِ وَهَيْئَتُهُ حسنةٌ ورآهُ مغطيّاً يدَيْهِ فَقَالَ لَهُ: مَا صنع بِكُل رَبُّكَ؟ فَقَالَ: غَفَرَ لِي بِهِجْرَتِي إِلَى نَبِيِّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: مَا لِي أَرَاكَ مُغَطِّيًا يَدَيْكَ؟ قَالَ: قِيلَ لِي: لَنْ تصلح مِنْكَ مَا أَفْسَدْتَ فَقَصَّهَا الطُّفَيْلُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ وَلِيَدَيْهِ فَاغْفِر» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر ان الطفيل بن عمرو الدوسي لما هاجر النبي صلى الله عليه وسلم الى المدينة هاجر اليه وهاجر معه رجل من قومه فمرض فجزع فاخذ مشاقص له فقطع بها براجمه فشخبت يداه حتى مات فراه الطفيل بن عمرو في منامه وهيىته حسنة وراه مغطيا يديه فقال له ما صنع بكل ربك فقال غفر لي بهجرتي الى نبيه صلى الله عليه وسلم فقال ما لي اراك مغطيا يديك قال قيل لي لن تصلح منك ما افسدت فقصها الطفيل على رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اللهم وليديه فاغفر رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের আলোকে বুঝা যাচ্ছে যে, কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি নিজের অঙ্গকে নষ্ট বা অকেজো করতে পারবে না। যতই কষ্ট হোক না কেন ধৈর্যধারণ করতে হবে। এ হাদীসের আলোকে আরো বুঝা গেল যে, যদি কেউ তার কোনো অঙ্গকে নষ্ট করে ফেলে তবে আল্লাহ তা‘আলা তার এ অঙ্গকে কখনও ঠিক করে দিবেন না যদিও সে জান্নাতী হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫৭-[১২] আবূ শুরাইহ আল কা’বী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কা বিজয়ের খুৎবাতে) বলেছেন, হে খুযা’আহ্ গোত্র! তোমরা এই হুযায়ল গোত্রের লোকটিকে হত্যা করেছ। আল্লাহর কসম! আমি তার দিয়াত (রক্তপণ) আদায় করবো। অতঃপর যে কেউ কোনো লোককে হত্যা করবে, তখন নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের দু’টির মধ্যে যে কোনো একটি করার অধিকার থাকবে। যদি তারা হত্যাকারী থেকে প্রতিশোধ নিতে চায়, তাহলে কিসাস (প্রতিশোধ) স্বরূপ তাকে হত্যা করবে। আর যদি দিয়াত গ্রহণ করতে চায়, তাও করতে পারবে। (তিরমিযী ও শাফি’ঈ)[1]

আর শারহুস্ সুন্নাহ্-এর কিতাবে ইমাম শাফি’ঈ (রহঃ)-এর সানাদে বর্ণিত আছে। হাদীসটি শুরাইহ আল কা’বী -এর মাধ্যমে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়নি।

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن أبي شُرَيحٍ الكعبيِّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ثُمَّ أَنْتُمْ يَا خُزَاعَةُ قَدْ قَتَلْتُمْ هَذَا الْقَتِيلَ مِنْ هُذَيْلٍ وَأَنَا وَاللَّهِ عَاقِلُهُ مَنْ قَتَلَ بَعْدَهُ قَتِيلًا فَأَهْلُهُ بَيْنَ خِيرَتَيْنِ: عَن أَحبُّوا قتلوا وَإِن أَحبُّوا أخذا العقلَ . رَوَاهُ الترمذيُّ وَالشَّافِعِيّ. وَفِي شرح السنَّة بإِسنادِه وَصَرَّحَ: بِأَنَّهُ لَيْسَ فِي الصَّحِيحَيْنِ عَنْ أَبِي شُرَيْح وَقَالَ:

وعن ابي شريح الكعبي عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ثم انتم يا خزاعة قد قتلتم هذا القتيل من هذيل وانا والله عاقله من قتل بعده قتيلا فاهله بين خيرتين عن احبوا قتلوا وان احبوا اخذا العقل رواه الترمذي والشافعي وفي شرح السنة باسناده وصرح بانه ليس في الصحيحين عن ابي شريح وقال

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ক্বিসাসের বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যদি কেউ কাউকে হত্যা করে তাহলে তার ফায়সালা কিভাবে হবে সে সম্পর্কে এ হাদীসে আলোকপাত করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ হত্যাকারীর কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারবে। হত্যার পরিবর্তে হত্যা অথবা নিহত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দিয়াত তথা রক্তপণ দাবী করলে হত্যাকারী তা পরিশোধের মাধ্যমে এ অপরাধ থেকে মুক্তি পাবে। ক্ষতিপূরণের দাবীদার কে কে হবেন? নিহত ব্যক্তির পরিবারের নারী-পুরুষসহ সকল সদস্যবৃন্দ স্বামী-স্ত্রীও এদের অন্তর্ভুক্ত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ শুরায়হ্ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫৮-[১৩] আর তিনি (শারহুস্ সুন্নাহ্-এর গ্রন্থাকার) বলেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে সমঅর্থে বর্ণনা করেছেন।[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَأَخْرَجَاهُ مِنْ رِوَايَةِ أَبِي هُرَيْرَةَ يَعْنِي بِمَعْنَاهُ

واخرجاه من رواية ابي هريرة يعني بمعناه

ব্যাখ্যা : অর্থাৎ শব্দের মধ্যে মিল না থাকলেও অর্থের মধ্যে মিল রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৫৯-[১৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহূদী একটি মেয়ের মাথা দু’টি পাথরের মাঝে রেখে ছেঁচে দিল। অতঃপর মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করা হলো, কে তোমার সাথে এরূপ করেছে? অমুক, না অমুক? পরিশেষে এক ইয়াহূদীর নাম উল্লেখ করা হলে মেয়েটি মাথা নাড়িরে ইশারায় সম্মতি জানাল। অতঃপর সেই ইয়াহূদীকে উপস্থিত করা হলে সে তার দোষ স্বীকার করল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথাটিও পাথর দ্বারা ছেঁচে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তার মাথাটিও অনুরূপভাবে ছেঁচে দেয়া হলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ يَهُودِيًّا رَضَّ رَأْسَ جَارِيَةٍ بَيْنَ حَجَرَيْنِ فَقِيلَ لَهَا: مَنْ فَعَلَ بِكِ هَذَا؟ أَفُلَانٌ؟ حَتَّى سُمِّيَ الْيَهُودِيُّ فَأَوْمَأَتْ بِرَأْسِهَا فَجِيءَ بِالْيَهُودِيِّ فَاعْتَرَفَ فَأَمَرَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُضَّ رَأْسُهُ بِالْحِجَارَةِ

وعن انس ان يهوديا رض راس جارية بين حجرين فقيل لها من فعل بك هذا افلان حتى سمي اليهودي فاومات براسها فجيء باليهودي فاعترف فامر به رسول الله صلى الله عليه وسلم فرض راسه بالحجارة

ব্যাখ্যা: ক্বিসাসের বিধান হলো যে, হত্যাকারী বা আহতকারী যেভাবে নিহত ব্যক্তিকে বা আহত ব্যক্তিকে আঘাত করেছে তাকে সেভাবে আঘাত করতে হবে। আলোচ্য হাদীসে সেদিকে ইঙ্গিত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বর্ণিত বিষয়টির ফায়সালা দিলেন। অর্থাৎ কেউ যদি কারো নাক কেটে ফেলে তবে কিসাস স্বরূপ কর্তনকারীর নাক কেটে ফেলতে হবে। হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, এক বালিকাকে এক ইয়াহূদী পাথর দ্বারা আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিল আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও একই পদ্ধতিতেই ইয়াহূদীর মাথা ফাটানোর নির্দেশ দিলেন। এতে বুঝা যায়, ক্বিসাসের ক্ষেত্রে অপরাধীকে সেভাবে শাস্তি দিতে হবে যেভাবে সে নিহত ব্যক্তি বা আহত ব্যক্তিকে আঘাত করেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

এ হাদীসে দিয়াত তথা ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে দৃকপাত হয়েছে। শারী‘আতের বিধান হলো যদি কেউ কাউকে হত্যা করে তবে হত্যাকারীকেও হত্যা করতে হবে। কেউ যদি কাউকে আঘাত করে তবে তাকেও অনুরূপ আঘাত করতে হবে। কেউ যদি কারো অঙ্গ কেটে ফেলে তবে তারও অনুরূপ অঙ্গ কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু যদি নিহত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়াত তথা রক্তপণ/ক্ষতিপূরণ দাবী করে তাও জায়িয, আর উত্তম হলো হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছে তাদের দাবী কৃত ক্ষতিপূরণ সন্তুষ্টির সাথে পরিশোধ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৬০-[১৫] উক্ত রাবী [আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রুবাইয়ি’ (রাঃ); যিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর ফুফু, তিনি এক আনসারী মেয়ের সামনের দাঁত ভেঙ্গে দেয়। অতঃপর মেয়েটির গোত্রের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করলে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিসাস (প্রতিশোধ) গ্রহণের আদেশ দিলেন। তখন আনাস ইবনু মালিক -এর চাচা আনাস ইবনুন্ নযর বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এমনটি হতে পারে না। আল্লাহর কসম! রুবাইয়ি’-এর দাঁত ভাঙ্গতে দেয়া হবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনাস! আল্লাহর নির্দেশ হলো কিসাস নেয়া। অতঃপর নিহত ব্যক্তির গোত্রের লোকেরা ক্বিসাসের দাবির পরিবর্তে দিয়াত (রক্তপণ) গ্রহণ করতে সম্মত হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার এমন কিছু (নেক) বান্দা আছে, যারা আল্লাহর নামে কোনো শপথ করলে আল্লাহ তা’আলা তা পূরণ করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: كَسَرَتِ الرُّبَيِّعُ وَهِيَ عَمَّةُ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ثَنِيَّةَ جَارِيَةٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَأَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَمَرَ بِالْقِصَاصِ فَقَالَ أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ عَمُّ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ لَا وَاللَّهِ لَا تُكْسَرُ ثَنِيَّتُهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَنَسُ كِتَابُ اللَّهِ الْقِصَاصُ» فَرَضِيَ الْقَوْمُ وَقَبِلُوا الْأَرْشَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ مَنْ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى الله لَأَبَره»

وعنه قال كسرت الربيع وهي عمة انس بن مالك ثنية جارية من الانصار فاتوا النبي صلى الله عليه وسلم فامر بالقصاص فقال انس بن النضر عم انس بن مالك لا والله لا تكسر ثنيتها يا رسول الله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا انس كتاب الله القصاص فرضي القوم وقبلوا الارش فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان من عباد الله من لو اقسم على الله لابره

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস দাঁতের কিসাস বৈধ হওয়ার পক্ষে দলীল। কেউ যদি কারো দাঁত ভেঙ্গে ফেলে তবে তারও দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয় তবে তাও জায়িয। ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ ক্বিসাসের ক্ষেত্রে ক্ষমা করে দেয়া মুস্তাহাব এবং এর জন্য সুপারিশ করাও মুস্তাহাব। আর কিসাস নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিসাস নেয়া অথবা দিয়াত নেয়া- এ দু’টির যে কোনো একটি বেছে নেয়ার অধিকার বা নিহত ব্যক্তির পরিবারের হত্যাকারী বা আহতকারীর নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৫৭৯; শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৭৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৪৬১-[১৬] আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ’আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনে নেই এমন কিছু কি আপনার নিকট আছে? তখন তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি খাদ্য-শস্য অঙ্কুরিত করে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। কুরআনে যা আছে তা ব্যতীত অন্য কোনো কিছু আমাদের কাছে নেই। তবে হ্যাঁ, কিতাব (কুরআন) ও সহীফার (লিখিত হাদীস গ্রন্থের) মধ্যে বুঝার জন্য আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যে জ্ঞান দিয়ে থাকেন, তা আমাদের নিকট রয়েছে। আমি বললাম, সহীফার মধ্যে কি লেখা আছে? তিনি বললেন, দিয়াতের (রক্তপণের) বিধান, বন্দীদের মুক্তিপণ এবং এই ফায়সালা যে, কিসাসস্বরূপ কোনো মুসলিমকে কোনো কাফিরের বদলে হত্যার অনুমোদন নেই। (বুখারী)[1]

আর ইবনু মাস্’ঊদ হতে এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে ’’কোনো ব্যক্তিকে জুলুম ও নির্যাতনমূলক হত্যা করা যাবে না’’ যা ’ইলম পর্বে বর্ণিত হয়েছে।

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن أبي جُحيفةَ قَالَ: سَأَلْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ لَيْسَ فِي الْقُرْآنِ؟ فَقَالَ: وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ مَا عِنْدَنَا إِلَّا مَا فِي الْقُرْآنِ إِلَّا فَهْمًا يُعْطَى رَجُلٌ فِي كِتَابِهِ وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ قُلْتُ: وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ؟ قَالَ: الْعَقْلُ وَفِكَاكُ الْأَسِيرِ وَأَنْ لَا يُقْتَلَ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
وَذَكَرَ حَدِيثَ ابْنِ مَسْعُودٍ: «لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا» فِي «كتاب الْعلم»

وعن ابي جحيفة قال سالت عليا رضي الله عنه هل عندكم شيء ليس في القران فقال والذي فلق الحبة وبرا النسمة ما عندنا الا ما في القران الا فهما يعطى رجل في كتابه وما في الصحيفة قلت وما في الصحيفة قال العقل وفكاك الاسير وان لا يقتل مسلم بكافر رواه البخاريوذكر حديث ابن مسعود لا تقتل نفس ظلما في كتاب العلم

ব্যাখ্যা: এখানে ‘আলী (রাঃ)-এর কথা বিশেষভাবে বলার কারণ হলো যে, শী‘আ সম্প্রদায়ের লোকেরা ‘আলী -কে জ্ঞানের মূল কেন্দ্র হিসেবে মনে করে থাকে। ‘আলী -এর কথার দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রথমদিকে শুধু কুরআন লিখে রাখা হত।

এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে সব বিষয় তুলে ধরেছেন। ইবনু ‘আব্বাস বলেনঃ সকল জ্ঞান সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে তবে কমসংখ্যক লোক তা বুঝতে পারে।

‘আল্লামা কাযী (রহঃ) বলেনঃ শী‘আরা মনে করে যে, ‘ইল্মে ওয়াহী সম্পর্কে ‘আলী সবচেয়ে বেশী অবগত আছেন। আহলে বায়তদের মধ্যে ‘আলী -এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর জ্ঞান বলে গেছেন যা অন্য কাউকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি। কিন্তু ‘আলী শপথ করে তা অস্বীকার করে বললেন কুরআন ব্যতীত তার কাছে অন্য কিছু নেই। এ হাদীসে ক্বিসাসের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কোনো মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ কোনো কাফিরের বদলে হত্যা করা যাবে না।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) এ হাদীসের আলোকে বলেন, কোনো মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ কোনো কাফিরের হত্যার বদলে হত্যা করা যাবে না। আর সে কাফিরটা হারবী (অমুসলিম দেশের) হোক বা যিম্মি (মুসলিম দেশের) হোক।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, হারবী কাফিরের বদলে মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করা যাবে না, কিন্তু যিম্মি কাফিরের বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না।

‘আল্লামা কাযী (রহঃ) বলেনঃ কাফির সে যিম্মি হোক বা হারবী হোক কোনো অবস্থাতেই তার বদলে কোনো মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করা যাবে- এই কথা হলো ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, যায়দ ইবনু সাবিত প্রমুখ সাহাবীগণের এবং জুমহূর ‘উলামাগণের। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও তার অনুসারীদের মতে যিম্মি কাফিরের বদলে কিসাস স্বরূপ মুসলিমকে হত্যা করা যাবে। দলীল স্বরূপ তারা বলেন যে, ‘‘এক মুসলিম ব্যক্তি এক যিম্মিকে হত্যা করলে বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করার পর তিনি বলেন, তার যিম্মাদারী রক্ষার ক্ষেত্রে আমি অধিক হকদার’’ হাদীসটি বায়হাক্বী সুনানে (৮/৩০) এবং দারাকুত্বনী (৩/১৩৫) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর রাবীগণ অনির্ভরযোগ্য এবং সানাদ মুন্ক্বতি‘। এ হাদীসে আরো বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে জুলুম নির্যাতন করে হত্যা করা যাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৯০৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪১২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ জুহাইফাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص) 16. Retaliation
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে