পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮০-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি অবনত করে ও লজ্জাস্থানের অধিক অধিক হিফাযাত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোযা) রাখে। কেননা, সওম তার জন্য ঢালস্বরূপ (অর্থাৎ- অবৈধ যৌনচাহিদা থেকে বিরত রাখে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»

عن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج ومن لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء»

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেনঃ الْبَاءَةَ ‘‘বাআত’’ এর উদ্দেশ্য নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে দু’টি অগ্রগণ্য মত রয়েছে। তন্মধ্যে অধিক বিশুদ্ধ মত হলো, الْبَاءَةَ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সহবাস। সুতরাং মূল কথা হলো যে, সহবাসে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে। আর যে স্ত্রীর ভরণ-পোষণে অক্ষম ও সহবাসে অক্ষম, তার যৌন চাহিদা দমন করার জন্য সিয়াম পালন করতে হবে আর এটাই তার খারাপ মনোবৃত্তি দূর করবে।

দ্বিতীয় মত হলো, বিবাহের খরচাদি বহনের সক্ষমতা (অর্থাৎ- দেন-মোহর, ওয়ালীমা ইত্যাদি)। সুতরাং হাদীসটির উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি বিবাহের সমস্ত খরচ পরবর্তী স্ত্রী খরচাদি বহনে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে। আর যে এতে অক্ষম সে তার প্রবৃত্তি দমনে সিয়াম পালন করবে। তবে আমি (‘আসকালানী) বলবঃ হাদীসে উল্লেখিত বাক্যে (مَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ) এখানে الْبَاءَةَ এর মধ্যে সহবাসে সক্ষমতা ও স্ত্রীর যাবতীয় খরচাদিসহ সবই রয়েছে। কারণ তিরমিযীতে আস্ সাওরী (রহঃ)-এর সূত্রে আ‘মাশ হতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি الْبَاءَةَ করতে সক্ষম নয় সে সিয়াম পালন করবে। তিরমিযীর বর্ণনায় আবূ ‘আওয়ানাহ্-এর সূত্রে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি বিবাহ করতে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে। আবার নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, যার সামর্থ্য আছে সে বিবাহ করবে।

ইবন হাযম (রহঃ) বলেনঃ সহবাসে সক্ষম ব্যক্তি মাত্র সবার ওপর বিবাহ করা ফরয, যদি তার বিবাহ করার সামর্থ্য থাকে। এতে যদি সে অক্ষম হয় তবে বেশী বেশী সিয়াম পালন করবে। আর এটাই এক দল সালাফগণের বক্তব্য।

ইবনুল বাত্ত্বল (রহঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা দ্বারা বিবাহ ওয়াজিব প্রমাণিত হয় না। কারণ বিবাহের পরিবর্তে সিয়াম পালন ওয়াজিব না, সুতরাং বিবাহটা অনুরূপই হবে। সিয়াম পালনের নির্দেশ রয়েছে সহবাসে অক্ষমতার কারণে, সুতরাং তা আবশ্যকীয় নয়। ব্যাপারটা এ রকম যে, কেউ কাউকে বলল, এ কাজ তোমার জন্য করা ওয়াজিব, তবে তা যদি না পার তবে তোমার জন্য এটা করা ভালো।

আহমাদ-এর প্রসিদ্ধ বক্তব্য রয়েছে যে, পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে বিবাহ করা ওয়াজিব নয়। ‘আল্লামা কুরতুরী (রহঃ) বলেনঃ সামর্থ্যবান ব্যক্তির যদি বিবাহ ছাড়া নিজের ওপর কিংবা দীনের ব্যাপারে ক্ষতির (যিনায় লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা) আশঙ্কা থাকে এবং বিবাহ ছাড়া যদি এ অবস্থা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা না থাকে তবে তার জন্য বিবাহ করা ওয়াজিব। এতে কারো দ্বিমত নেই। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৬৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮১-[২] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেন ’উসমান ইবনু মায্’ঊন -এর বিবাহ না করার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করার। যদি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও তাঁকে এরূপ অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরা সকলে খোজা বা খাসি হয়ে যেতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: رَدَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى عُثْمَان ابْن مَظْعُونٍ التَّبَتُّلَ وَلَوْ أَذِنَ لَهُ لَاخْتَصَيْنَا

وعن سعد بن أبي وقاص قال: رد رسول الله صلى الله عليه وسلم على عثمان ابن مظعون التبتل ولو أذن له لاختصينا

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পুরুষত্ব নষ্ট করা, সৃষ্টির পরিবর্তন করা ও নি‘আমাত অস্বীকার করা- এসবই ভ্রান্ত চিন্তা; কেননা মানুষের পুরুষ হিসেবে জন্ম নেয়া একটি বড় নি‘আমাত যখন এটা দূর করবে তখন সে মহিলার সাদৃশ্য হবে এটি পূর্ণতার উপর অপূর্ণতাকে মনোনীত করা।

‘আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ আদাম সন্তান ছাড়া অন্যান্য প্রাণীগুলোর ক্ষেত্রে উপকার পাওয়ার স্বার্থ ছাড়া খাসি করা জায়িয নেই। ‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেনঃ যে সকল প্রাণীর গোশত খাওয়া হয় না সে সব প্রাণীকে খাসি করা সম্পূর্ণ হারাম। আর সে সব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল সে সব প্রাণী ছোট থাকা অবস্থায় খাসি করা জায়িয, বড় হওয়ার পর তা জায়িয নয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৭৩-৭৪)

‘আল্লামা বাগাবী (রহঃ) অনুরূপ কথা বলেছেন, অর্থাৎ- যে সব প্রাণীর গোশত খাওয়া হয় না সে সব প্রাণী খাসি করা হারাম। আর যে সব প্রাণী গোশত খাওয়া যায় সে সব প্রাণী ছোট থাকাতে খাসি করা জায়িয। বড় হলে তা হারাম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮২-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)! (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَات الدّين تربت يداك

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تنكح المرأة لأربع: لمالها ولحسبها ولجمالها ولدينها فاظفر بذات الدين تربت يداك

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের বিশুদ্ধ অর্থ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের ক্ষেত্রে লোকজন যা করত তাই উল্লেখ করেছেন। লোকজন উল্লেখিত চারটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিত। আর এ সবগুলোর পর ছিল দীনদারিত্বের বিষয়, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে সঠিক পথের সন্ধানী! তুমি দীন-দারিত্বকেই প্রাধান্য দাও। তবে এটি এ মর্মে নির্দেশ নয়।

‘আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসের অর্থে চারটি বৈশিষ্ট্য যা নারীর বিবাহের প্রতি আগ্রহ যোগায়, তা নির্দেশ বা ওয়াজিব নয়। বরং এ বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা বৈধ, তবে দীন-দারিত্ব দেখাটা অধিক অগ্রগণ্য। তিনি আরো বলেন যে, এ হাদীস থেকে এটা মনে করা যাবে না যে, নারী পুরুষের কুফু বা সমতা এ চারটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৯০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮৩-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার সমস্ত কিছুই (তুচ্ছ ও ক্ষণস্থায়ী) ধন-সম্পদ। (তন্মধ্যে) মুসলিম সতীসাধ্বী রমণী সর্বশ্রেষ্ঠ ধন। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَة الصَّالِحَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الدنيا كلها متاع وخير متاع الدنيا المرأة الصالحة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: দুনিয়ার ভোগসামগ্রী অতি সামান্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে রসূল! আপনি বলুন দুনিয়ার ভোগবিলাশ অতি নগণ্য’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৭৭)। এ মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলার কাছে দুনিয়া যদি একটি মশার ডানার সমতুল্য হত তাহলে কাফিরদেরকে দুনিয়াতে পানিও পান করতে দিতেন না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৩২০)

আর দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য হলো সতী নারী, কারণ এটা আখিরাতের কর্মের উপর নির্ধারিত। আর আল্লাহ তা‘আলার কথা, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২০) ‘আলী এর ব্যাখ্যা করেছেন সতী নারী ও ‘আখিরাতে কল্যাণ দান করুন’ এর ব্যাখ্যা করেছেন জান্নাতের হূর। অর্থাৎ- আখিরাতে জান্নাতী হূর দানের মাধ্যমে কল্যাণ দান করুন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮৪-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উট আরোহণকারিণীদের মধ্যে সর্বোত্তম নারী কুরায়শ বংশের নারীগণ, তারা শৈশবকালে সন্তানের প্রতি অধিক স্নেহপরায়ণা হয় এবং স্বামীর ধন-সম্পদের উত্তম রক্ষনাবেক্ষণকারিণী হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ نسَاء ركبن الْإِبِل صَالح نسَاء قُرَيْش أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ وَأَرْعَاهُ عَلَى زَوْجٍ فِي ذَاتِ يَدِهِ»

وعن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خير نساء ركبن الإبل صالح نساء قريش أحناه على ولد في صغره وأرعاه على زوج في ذات يده»

ব্যাখ্যা: মারইয়াম (আঃ)-এর বর্ণনা সংক্রান্ত হাদীসের শেষে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর কথা (মারইয়াম বিনতু ‘ইমরান (আঃ) কখনই উটের পিঠে সওয়ার হননি) এর থেকে বুঝা যায় যে, হাদীসে উল্লেখিত গুণাবলী থেকে মারইয়াম (আঃ)-কে তিনি আলাদা করছেন। কারণ তিনি তো উঠের পিঠে সওয়ার হননি, কাজেই কুরায়শী নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব তো তার ওপর বর্তায় না। তবে কুরায়শী সকল নারীদের ওপর মারইয়াম (আঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, নারীদের মধ্যে উত্তম নারী হলেন মারইয়াম (আঃ), নারীদের মধ্য উত্তম নারী হলো খাদীজাহ্ (রাঃ)। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (خَيْرُ نِسَاءِ رَكَبْنَ الْإِبِلَ) এটা দ্বারা আরবের নারীদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ তাদের অধিকাংশই উটের পিঠে সওয়ার হতেন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৮২)

আর কুরায়শী নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব হাদীসে উল্লেখিত গুণাবলীর কারণে। সেগুলো হলো, সন্তানদের প্রতি রক্ষণশীল হওয়া, তাদের প্রতি স্নেহশীল হওয়া, উত্তমভাবে তাদের প্রতিপালন করা তারা ইয়াতীম হলে তাদের প্রতিপালনে অবিচল থাকা। অনুরূপভাবে স্বামীর সম্পদের ক্ষেত্রে তার হক আদায় করা, তা সংরক্ষণ করা, আমানত রক্ষা করা, খরচ বা অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনা করা সহ বিবিধ গুণাবলীর কারণে আরবের নারীরা অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ। (শারহে মুসলিম ১৫/১৬ খন্ড, হাঃ ২৫২৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮৫-[৬] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার (ইন্তেকালের) পরে আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য নারী অপেক্ষা অধিক ফিতনার শঙ্কা আর কিছুতেই রেখে যাইনি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ من النِّسَاء»

وعن أسامة بن زيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما تركت بعدي فتنة أضر على الرجال من النساء»

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, নারীদের ফিতনা অবশ্যই অন্যান্য বিষয়গুলো থেকে অধিক কঠিন এবং আল্লাহর বাণী এটাই সমর্থন করে, ‘‘মানব জাতিকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৪)। তিনি তাদেরকে দুনিয়ার মোহ ভালোবাসার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কোনো কোনো ‘উলামাগণ বলেন, নারীদের সবকিছুতে অনিষ্টতা আছে, বিশেষ করে তাদের হার না মানা স্বভাবে আরো বেশী অনিষ্টতা রয়েছে। সেই সাথে তাদের জ্ঞানের কমতি ও দীনের কমতিও রয়েছে। জ্ঞানের কমতি হলো, পুরুষকে তার মোহে অন্ধ করা। আর দীনের কমতি হলো, দীনের কর্মের বিষয়ে উদাসীন থাকা এবং দুনিয়া অনুসন্ধানের ফলে পরকালীন ধংস ডেকে আনা। আর এটাই বড় ফাসাদ বা বিপর্যয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৯৬; শারহে মুসলিম ১৭/১৮ খন্ড, হাঃ ২৭৪০; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮৬-[৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া হলো চিত্তাকর্ষক সবুজের সমারোহ। আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমরা কিরূপে আ’মাল কর। সুতরাং (দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে) আল্লাহর ভয় কর এবং নারীদের ব্যাপারে সাবধান থাক। কেননা, বনী ইসরাঈলদের মধ্যে সর্বপ্রথম নারীদের মধ্যেই ফিতনা সংঘটিত হয়েছিল। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاء» . رَوَاهُ مُسلم

وعن أبي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن الدنيا حلوة خضرة وإن الله مستخلفكم فيها فينظر كيف تعملون فاتقوا الدنيا واتقوا النساء فإن أول فتنة بني إسرائيل كانت في النساء» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: নারীদের থেকে বেঁচে থাক, কারণ তোমরা তাদের কারণে শারী‘আতের নিষিদ্ধ কর্মগুলোতে পতিত হতে পার এবং তাদের কারণে দুনিয়ার ফিতনায় পতিত হয়ে যাবে। কারণ দুনিয়ার প্রথম ফিতনাহ্ তাদের কারণেই হয়েছে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তোমরা তাদের (নারীদের) দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে বেঁচে থাক এবং তাদের কথা গ্রহণ থেকে বেঁচে থাক। কারণ তাদের জ্ঞান কম এবং তাদের অধিকাংশ কথায় কোনো কল্যাণ নেই। (শারহে মুসলিম ১৫/১৬ খন্ড, হাঃ ২৭৪২; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮৭-[৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অকল্যাণ নিহিত রয়েছে নারী ও আরোহণে (গাড়িতে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, অকল্যাণ তিন প্রকার জিনিসে- নারী, বাড়িতে ও আরোহণে (চতুস্পদ জন্তু হতে)।

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الشُّؤْمُ فِي الْمَرْأَةِ وَالدَّارِ وَالْفَرَسِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ: الشُّؤْمُ فِي ثَلَاثَة: فِي الْمَرْأَة والمسكن وَالدَّابَّة

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الشؤم في المرأة والدار والفرس» . متفق عليه. وفي رواية: الشؤم في ثلاثة: في المرأة والمسكن والدابة

ব্যাখ্যা: অপর বর্ণনায় রয়েছে, যদি অশুভ লক্ষণ থাকত তবে তা ঘোড়া, বাড়ী ও নারীর মধ্যেই থাকত। ‘উলামাগণ এ ব্যাপারে কিছুটা ইখতিলাফ করেছেন। ইমাম মালিক ও একদল ‘উলামাগণের মতে বাড়ী কখনও কখনও আল্লাহ তা‘আলা ক্ষতি কিংবা ধ্বংসের কারণ হিসেবে গণ্য করেন। অনুরূপ নির্ধারিত মহিলা অথবা ঘোড়া কিংবা খাদিম, এগুলোতে কখনও আল্লাহর ফায়সালাতেই ক্ষতি বা ধ্বংস থাকতে পারে।

অতএব, হাদীসের অর্থ হলো, কখনও কখনও উল্লেখিত তিনটির মাধ্যমে অকল্যাণ অর্জিত হতে পারে। খত্ত্বাবী বলেন, এ তিনটিতে সত্বাগতভাবে কোনো অকল্যাণ নেই। বরং এগুলোর মাঝে আল্লাহর ফায়সালাতেই কখনও কখনও অকল্যাণ এসে পরে। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৯৩; শারহে মুসলিম ১৩/১৪ খন্ড, হাঃ ২২২৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩০৮৮-[৯] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক যুদ্ধে শরীক ছিলাম। (যুদ্ধ শেষে ফেরার সময়) যখন আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন সদ্যবিবাহিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বিবাহ করেছ! উত্তরে বললাম, জী হ্যাঁ। (পুনরায়) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম, বিধবা। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তাহলে তুমিও তার সাথে আমোদ-প্রমোদ করতে এবং সেও তোমার সাথে মন খুলে আমোদ-প্রমোদ করত।

জাবির(রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা যখন মদীনায় পৌঁছলাম, তখন আমরা নিজ ঘরে প্রবেশে উদ্যত হলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ থাম! রাত (সন্ধ্যা) পর্যন্ত অপেক্ষা কর (এখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করো না), আমরা রাতে নিজ নিজ ঘরে প্রবেশ করব। কেননা স্ত্রী তার অবিন্যস্ত চুল আঁচড়ে (পরিপাটি হতে) নিতে পারে এবং স্বামী বিচ্ছিন্না (প্রবাসী স্বামীর) নারী ক্ষুর ব্যবহার করে অবসর হয় (অর্থাৎ- নাভির নীচের চুল পরিষ্কার করে নিতে পারে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ جَابِرٍ: قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ فَلَمَّا قَفَلْنَا كُنَّا قَرِيبًا مِنَ الْمَدِينَةِ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي حَدِيثُ عَهْدٍ بعرس قَالَ: «تَزَوَّجْتَ؟» قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: «أَبِكْرٌ أَمْ ثَيِّبٌ؟» قُلْتُ: بَلْ ثَيِّبٌ قَالَ: «فَهَلَّا بِكْرًا تلاعبها وتلاعبك» . فَلَمَّا قدمنَا لِنَدْخُلَ فَقَالَ: «أَمْهِلُوا حَتَّى نَدْخُلَ لَيْلًا أَيْ عشَاء لكَي تمتشط الشعثة وتستحد المغيبة»

وعن جابر: قال: كنا مع النبي صلى الله عليه وسلم في غزوة فلما قفلنا كنا قريبا من المدينة قلت: يا رسول الله إني حديث عهد بعرس قال: «تزوجت؟» قلت: نعم. قال: «أبكر أم ثيب؟» قلت: بل ثيب قال: «فهلا بكرا تلاعبها وتلاعبك» . فلما قدمنا لندخل فقال: «أمهلوا حتى ندخل ليلا أي عشاء لكي تمتشط الشعثة وتستحد المغيبة»

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রয়েছে যে, (কুমারী) মহিলাকে বিবাহ করা উত্তম এবং স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের সাথে খেল-তামাশা করা ভালো। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সাইয়িবা (তালাকপ্রাপ্তা) মহিলার অন্তর পূর্ব স্বামীর দিকে ঝুকে থাকে বিধায় তার পূর্ণ ভালোবাসা সে দিতে পারে না, যা কুমারী মহিলা দিতে পারে। যেমনটি বর্ণিত রয়েছে তোমরা কুমারী মহিলা বিয়ে কর, কেননা তারা অধিক প্রেমময়ী।

(لِكَىْ تَمْتَشِطَ الشِّعْثَةَ وَتَسْتَحِدَّ الْمَغِيْبَةَ) এর অর্থ হলো, যাতে স্ত্রী তার স্বামীর উপভোগের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে। সুতরাং পরিবারের কাছে সফর থেকে আগমনের সংবাদ না পৌঁছিয়ে পরিবারের কাছে হঠাৎ যাওয়া বিধিসম্মত নয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২৪৭; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ৪১৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح) 13. Marriage
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে